প্রথমে সা.ইন আর ব্লগারদের ধন্যবাদ বিডিআর বিদ্রোহ সম্পর্কে প্রতি মিনিটেই আপডেটেড রাখার জন্য। অন্যকোন মিডিয়ার উপর ডিপেন্ড করতে হয়নি একেবারে? প্রথম গুলির শব্দ শুনে সেই যে পোস্ট দেওয়া শুরু হলো তারপর এখন পর্যন্ত সংবাদ, বিশ্লেষন ভিডিও ফুটেজ এবং মতামত সবই পেলাম। এই ব্লগের কল্যানে বাংলাদেশের প্রতিপাদ স্থানে বসেও মনে হচ্ছিলো আমি রাইফেলস স্কয়ারের সামনেই আছি।
এই ব্লগে অনেক দ্বন্দ সংঘাত দেখার পরেও একটি সংকট মুহুর্তে ব্লগারদের তথা সব মানুষের মনের ভালো দিকই প্রতিফলিত হয়েছে যে আমরা আসলে শান্তি দেখতে চাই। আমাদের সহানুভুতিশীল একটা মন আছে।
সবাই মনে প্রানে সংকটের সুষ্ঠ সমাধান চেয়েছেন। সবাই দেশ নিয়ে আসলে আমরা উৎকন্ঠিত থাকি। এমন ঘটনা কারো কাম্য নয়। এটাও ঠিক যে এসকল ঘটনা থেকে ফায়দা উঠানোর মত স্বার্থান্বেষী অমানুষও আছে সংখ্যায় নগন্য হলেও। তবে দেখে মনে হলো, আমরা যতই নিজেরা ঝগড়া ঝাটি করিনা কেন বৃহত্তর সংকটে বাংগালী ভালো বা সঠিক সিদ্ধন্তের দিকেই থাকে, কোন রকম হঠকারি আচরন করে না।
এবং আমরা যেন ভবিষ্যতেও যে কোন জাতীয় সংকটে ঐক্যবদ্ধ এবং সুশৃংখল থাকি।
এই ধরনের বিদ্রোহ রক্তপাতের সময় প্রথম এবং প্রধান প্রায়োরিটি উচিৎ যেকোন মুল্যে আত্মঘাতি সংঘর্ষ বন্ধ করা। আমার মতে শান্তিপুর্ন সমাধানের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করা উচিৎ। এমন কি এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়াও খারাপ নয় মোটেই। সুতরাং রক্তপাত এড়ানোর জন্য, বিদ্রোহীদের ঠান্ডা করার জন্য সাধারন ক্ষমা , দাবী মেনে নেওয়ার প্রতিস্রুতি সবই করা যায়।
আর এসব সিদ্ধান্ত দ্রুত হলেও খুবই ঠান্ডা মাথায় নিতে হয় এবং সঠিক সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে হয়। বিভিন্ন তাত্ত্বিক ও আদর্শিক দৃষ্টিভংগী থেকে বিশ্লেষন করলে এসবের হয়তো ভালো-খারাপ দিক বের করা যায় কিন্তু সবসময় এসব বিশ্লেষন করা ভালো না। কারন তা হলে গুরুত্বপুর্ন মুহুর্তে কোন সিদ্দ্বান্তই নেওয়া যাবে না।
দুইদিনের টান টান স্নায়ু নিয়ে ব্লগে বসে সবার পোস্ট পড়ার পরে এখন মনে হলো যে একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলা যায়। এখন কিছু বিশ্লেষন বা তর্ক বিতর্ক করা যায়।
আমার মনে হয় যে এই বিদ্রোহ কোন সুদুর প্রসারী পরিকল্পিত ব্যাপার ছিলো না। তাই আমি একে বিদ্রোহ বলার চেয়ে বিশৃংখালা বলবো। এখন পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি তাতে আমি যেটা কল্পনা করতে পারছি যে দরবার হলে বিক্ষুব্দ বিডিআর জোওয়ানদের প্রতি নিশ্চই এমন কিছু করা হয়েছিলো যাতে চেইন অব কমান্ড ভেংগে যায় এবং তারা আফিসারদের গুলি করতে বাধ্য হয়। এবং ব্যাপারটা সাময়িক উত্তেজনার ফসল। কিন্তু জওয়ানদের হাতে অফিসার মারা যাওয়ার পরেই তারা বুঝতে পারে যে তারা আসলে কমান্ডিং আফিসার যে কিনা আবার আর্মি, মেরে ফেলেছে।
এতে তারা আতংকিত হয়ে পরে এবং ভাবতে থাকে তাদের সব কিছুই শেষ হয়ে গেছে। আর্মি এসে তাদের টেক ওভার করবে, প্রতিশোধ নেবে এবং শাস্তি দেবে। সেকারনে তারা বিদ্রোহ করে এবং বাকি আফিসারদের জিম্মি করে। তখনই তারা এই বিদ্রোহের যুক্তি হিসাবে এতদিনের বন্চনার ব্যাপার গুলো সামনে নিয়ে আসে। সেনাবাহীনির আক্রমনের ভয়ে তারা গোলাগুলি করে চারদিকে।
যাতে প্রতিয়মান হয় যে আক্রমন হলে তারা প্রতিরোধ করতে পারবে। কিন্তু প্রথম থেকেই তাদের মোটিভ ছিলো যে ঘটনা ঘটে গেছে সেটা থেকে উদ্ধার পাওয়া বা ক্ষমা পাওয়া।
সুতরাং যা বোঝা গেছে যে একটা উদ্ভুত সিচুয়েশন কন্ট্রোল করার ব্যাপারে বিডিআর এর ডিজি এর ব্যার্থতাই এমন একটা ঘটনা ঘটেছে। আর ডিজি যদি মারা গিয়ে থাকেন তবে উনি জীবনের বিনিময়ে এই ব্যার্থতার মুল্য শোধ করলেন। এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে কঠোর চেইন অব কমান্ড থাকলেও জওয়ানরা ও মানুষ।
আর এই যুগে তাদেরকে কন্ট্রোল করতে হলে অনেক অনেক বেশী স্মার্ট হতে হবে। কোন রকম দুর্নীতি বা স্বার্থ বিষয়ে জড়িত থাকলে সেই নৈতিক মনোবল বা স্মার্টনেস থাকেনা। আর খালি গালিগালাজ আর বাজখাই গলা দিয়ে চেইন অব কমান্ড থাকেনা।
জওয়ানদের বোঝা উচিৎ যে আজ তারা আসলে বিপদে পড়েছে এই কাজটা করে। আর মানুষও সেটা বুঝতে পেরেই কিন্তু তাদের প্রতি সহানুভুতি দেখাচ্ছে।
কিন্তু হঠকারি কোন ঘটনা থেকে যে ভালো কিছু আসে না সেটাও সত্য। বিশেষ করে দাবী আদায়ের জন্য সেনা বিদ্রোহ, এমন কিছু আমরা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনা। এটা কোন অপশন নয়। আমরা বাংগালীরা দাবী আদায়ের জন্য কত কিছু করি , হরতাল-ভাংচুর, ধ্বংসাত্নক কার্যকলাপ, কিন্তু আমরাও কোন মতেই দাবী আদায়ের জন্য সেনা বিদ্রোহ সমর্থন করবো না কখনো।
সরকার এ পর্যন্ত শান্তিপুর্ন উপায়ে সমাধানের চেস্টা করছে বলে ধন্যবাদ।
অনেক সমালোচনা, ষড়যন্ত্র হতে পারে, কিন্তু তরীর হাল যেহেতু আপনাদের হাতে, খুব খিয়াল কৈরা। কোন ঘটনাই কিন্তু রাজনীতি আর স্বার্থ হাসিলের বাইরে নয়। আমাদের সমাজে সবার মনেই কোন না কোন বন্চনা বা ক্ষোভের আগুন থাকতে পারে। সব আগুন তো আপনারা নিভিয়ে দিতে পারবেন না কিন্তু আপানাদের খেয়াল রাখা উচিৎ কাদের স্টকে প্রচুর ঘি আছে যে ক্ষোভের আগুনে ঢেলে ফায়দা হসিল করতে চাইবে। পরিকল্পিত বিদ্রোহ বা ক্যু না হলেও এখানে যে উস্কানি আছে সেটা কিন্তু বোঝা যাচ্ছে।
না হয় শত বছরের বন্চনা কেন এই মুহুর্তে বের হবে।
আর আমাদের এখন আসলেই সিরিয়াসলি ভেবে দেখার সময় এসেছে যে আমাদের আর্মড ফোর্সকে ব্যাবসায় নামিয়ে হালুয়া রুটি নিয়ে কামড়া কামড়ি করতে দেবো কিনা। অপারেশন ডাল-ভাত ,লাভ-লোকসান সেটা নিয়ে বিডিআর জওয়ান আর ডিজির সংঘর্ষ থেকে বিদ্রোহ রক্তপাত। থ্যাংকস গড যে খুব অল্পের উপর দিয়ে আমাদেরেক লক্ষন দেখিয়ে দিলেন যে বিদেশ শান্তি রক্ষ মিশন, বৈদেশীক মুদ্রার কাচাটাকা, আর সেনা কল্যান, ট্রাস্ট ব্যাংক , রেডিসন ওয়াটার গার্ডেন হোটেল, ব্লা..ব্লা..ব্লা এসবের হালুয়া রুটির ভাগা ভাগি নিয়ে যদি লাগে তবে কি হতে পারে। হালুয়ারুটি আর ভাগাভাগি থাকলে লাগতেই পরে।
কিয়ামত নেমে আসবে। আর আমরা সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়ে এই বাহীনি পুষি কি আমাদের মতই হালুয়া রুটির ভাগ নেবার জন্য? আমাদের উপর কিয়ামত নামানোর জন্য? অতএব সাধু সাবধান।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।