মামার ক্ষমতা
৯ জুলাই ২০১৩
আমি তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। রোজ স্কুলে যাওয়ার সময় আমার একটাই দায়িত্ব ছিল আর তা হল আমার ছোটবোন মুনাকে স্কুলে পৌছে দেয়া। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি মুনা তখন হলিচাইল্ড একাডেমীতে ক্লাস টুতে পড়ে। পড়াশোনায় আমার বোন আমার থেকে অনেক ভাল। আমার পড়াশোনা ভাল লাগেনা।
কেবল পড়া ফাকি দিয়ে রহস্য রোমাঞ্চের খোঁজ করতে থাকতাম। আমার একমাত্র মামা আমার চেয়ে আমার বোনকে বেশি আদর করতো। তাই মামার উপর আমার খুব অভিমান হত। মাঝে মাঝে মনে হত মামার পাঞ্জাবীতে বিছুটি লাগিয়ে দিউ। কিন্ত আমিতো খুব ছোট,বয়স মাত্র এগার।
বিছুটি কোথায় পাওয়া যায় তাই জানিনা। আর তা ছাড়া আমার পিচ্চি বোন যদি জানতে পারে যে আমি মামার জামায় বিছুটি দিতে চাই তাহলে আর রক্ষা নেই। সে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেবে। কারণ ওর সবচেয়ে প্রিয় হল আমাদের একমাত্র মামা। আর সেই মামার জামায় বিছুটি দিলে ও আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করবে এটাই স্বাভাবিক।
আর আমার সবচেয়ে প্রিয় আমার বোন। সে যদি আমার সাথে কথা না বলে তবে আমিতো মরেই যাবো। শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম বোনের পছন্দ অপছন্দই আমার জীবনে সব। সুতরাং সব অভিমান ভুলে মামাকে আমারও ভাল লাগতে শুরু করলো। আমাদের একমাত্র মামার নাম সুফিয়ান।
সবাই বলে জুনিয়র সুফিয়ান। একদিন আমি আর আমার বোন স্কুল থেকে ফিরছিলাম। মোহিনী নদীর তীর দিয়ে আমরা যখন বাড়ির পথে হাটছিলাম তখন সন্ধ্যা হয় হয়। আমার ছোট বোনটার খুব ভয় হচ্ছিল। আমিওতো ছোট তাই আমারও ভয় হচ্ছিল।
শুনেছি সন্ধ্যায় ছেলে ধরা,ডাকাত আরো কত কিসিমের মানুষ বের হয়। যদি ওরকম কেউ এসে পড়ে তবে কি করে আমি আমার বোনকে রক্ষা করবো। সব দোষ ঐ পিটি স্যারের। ছুটির পর পারলে যেন বেধে রাখে। পিটি করাতে করাতে সন্ধ্যা লাগিয়ে দিল।
জলেশ্বরী তলা আসার পর খুব অন্ধকার হয়ে গেল। আমার ছোট্ট বোন মুনা আমার হাত ধরে গায়ে গা মিয়ে হাটতে লাগলো। ও ভয়ে কাপছিল আর আমি ওকে শান্তনা দিচ্ছিলাম ভয় কি মুনা তোর সাথে তোর ভাইয়া আছেনা! কেউ কিচ্ছু করতে পারবেনা। মনে মনে আমি রবীন্দ্রনাথের বীর পুরুষ কবিতাটি মনে করার চেষ্টা করছিলাম। হঠাৎ চার পাচজন বড় মানুষ আমাদের দুই ভাইবোনকে ঘিরে ধরলো।
মুনা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো ভাইয় এখন কি হবে। ওরাতো সত্যি সত্যি আমাদের ধরে নিয়ে যাবে। আমার বোনের বয়স সাত আর আমার বয়স এগার। আমি বুকে সাহস আনতে চেষ্টা করলাম। ফিসফিস করে বললাম ভয় নেই তোর সাথে তোর ভাইয়া আছে।
ওর ভয় একটু কমলো। এর মাঝে এক লোক বললো চলো খোকা খুকু আমাদের সাথে চলো। আমাদের দুই ভাই বোনের রক্ত হিম হয়ে গেল। তোতলাতে তোতলাতে বললাম কোথায় যাবো? কেন যাবো? তারা হুংকার দিয়ে বললো আমরা ছেলে ধরা তাই তোমাদের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দেব। এ কথা শুনে মুনা প্রায় কেদেই ফেলেছিল।
হঠাৎ আমার মামার কথা মনে পড়লো। আমি সাহস নিয়ে বললাম জানেন আমাদের মামা কে? লোক গুলো বড় বড় চোখে অবাক হয়ে তাকিয়ে একসাথে জিজ্ঞেস করলো তোমাদের মামা কে? এমন ভাবে জিজ্ঞেস করলো যে ভয়ে নিজের মামার নামটা ভুলে গেলাম। আমি তোতলাচ্ছিলাম তখন সাত বছরের মুনা কথা বলে উঠলো। আমাদের মামার নাম জেএস। আমিও ওর সাথে সুর মিলিয়ে বললাম আমাদের মামার নাম জেএস।
কি জানি কি হয়ে গেল সেই ছেলে ধরা লোকগুলো খুব ভয় পেলো তারা একে অন্যের মূখের দিকে তাকালো। পরে একজন পকেট থেকে কিছু চকলেট আমাদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো তোমরা প্লিজ তোমাদের মামাকে আমাদের কথা বলোনা। চকলেট পেয়ে আমরা আরো অবাক হলাম। চারপাচজন বড় মানুষ যারা কিনা ছেলে ধরা তারা আমাদের মামার কথা শুনে ভয়ে ফিট। তারা চলে যাবার পর আমি আর আমার বোন হাটতে শুরু করলাম।
হঠাৎ মুনাকে জিজ্ঞেস করলাম এই মুনা তুই মামার নাম জেএস বললি কেন? আমার বোনটা তখন বললো খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই ছোট করে বলেছি। জে তে জুনিয়র আর এস তে সুফিয়ান। আমার বোনের বুদ্ধি দেখে আমার খুব খুশি লাগছিল। ছেলে ধরাদের দেয়া চকলেট খেতে খেতে দুই ভাই বোন বাড়িতে ফিরে এলাম। রাতে মামা ফিরতেই সব ঘটনা খুলে বললাম।
মামারতো মাথায় হাত। বলিস কিরে তোদেরকে ছেলে ধরাতে ধরেছিল আর আমার নাম বলতেই ছেড়েদিল? মামা এত অবাক হলো যেন কি অসম্ভব ঘটনা ঘটেছে। গল্পের পোকা আমি আর আমার বোন এটা সবাই জানে। তাই মামা ভেবেছিল আমরা দু ভাইবোন বানিয়ে বানিয়ে ওসব বলছি। কিন্ত যখন আরো কিছুটা বললাম তখন মামা বিশ্বাস করলো।
শেষে আমি আর মুনা জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা মামা তোমার নাম বলতেই ওরা ভয়ে পালিয়ে গেল কেন? তুমিকি পুলিশ না আরমি? আমাদের কথা শুনে মামা আরেকচোট হেসে নিলেন। দূর বোকা আমি পুলিশ বা আরমি হতে যাবো কেন?তোরা লোক গুলোকে কি নাম বলেছিলি? আমি কিছু বলার আগেই মুনা বলে উঠলো আমরা বলেছিলাম আমাদের মামার নাম জেএস। আর অমনি লোকগুলো ভয়ে জবুথবু হয়ে গেল। আর আমাদের হাতে চকলেট দিয়ে অনুরোধ করলো আমরা যেন তোমাকে না বলি। মুনার বলা শেষ হলে আমি জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা মামা এখন বলো তোমার নাম শুনে ওরা ভয়ে পালিয়ে গেল কেন? আর তোমাকে ওদের কথা বলতে নিষেধ করলো কেন? তুমিওকি ছেলে ধরা! আমার কথা শুনে মামা হো হো করে হেসে উঠলো।
আরে ছেলে ধরা হলেতো আগে তোদের দুই ভাই বোনকে ধরতাম! এবার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মামা বললো দুই ভাই বোনতো দারুন উপস্থিত বুদ্ধি দেখিয়েছিস! তোরাতো আসলে আমার নাম বলিসনি। মুনা বলে উঠলো কিন্ত মামা জেএস মানেতো জুনিয়র সুফিয়ান। মামা বললো সেটাতো ঠিক আছে কিন্ত তোদের জুনিয়র সুফিয়ান মামাকে কয়জন চেনে আর তার কী এমন ক্ষমতা আছে যে তার নাম শুনে ছেলে ধরারা তোদের ছেড়ে দেবে। আমরা দুই ভাই বোন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম মামা তাহলে...........?মামা বললেন জেএস মানে জ্যাকি সালমান। জ্যাকি সালমান হচ্ছে এলাকার কুখ্যাত সন্ত্রাসী।
সব সন্ত্রাসী চোর মাস্তান তার নাম শুনলে ভয়ে কেপে ওঠে। তাকে সবাই জেএস নামে চেনে। আসলে জেএস বলায় ওরা ভেবেছে তোরা জ্যাকি সালমানের ভাগ্নে ভাগ্নি তাই ভয়ে পালিয়েছে। জে এস মানে যাইহোক মামার নাম হিসেবে চালিয়ে সেদিন পার পেয়ে গেলাম। এরপর থেকে আর কখনো সন্ধ্যা করে স্কুল থেকে ফিরিনি।
স্কুল থেকে সোজা বাড়ি ফিরতে হয়। তা না হলে পথে যে কোন বিপদ ঘটতে পারে। এর পর থেকে মুনা রোজ বলতো দেখলি ভাইয়া মামার কত্ত পাওয়ার! মামা আমাদের দুই ভাই বোনের কথা শুনে মিটমিট করে হাসেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।