আমার মামার বাড়ী ছিল অজপাড়াগাঁয়ে নহাটার কাছে পলাশবেড়ে।
দাদু ছিলেন নড়াইলের জমিদার। দাদু নড়াইলে থাকতেন, মাঝে মাঝে দেশের বাড়ীতে আসতেন। আমার পলাশবেড়ে যেতে মোটেই ভালো লাগতো না। কেননা বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যেতে হত।
একবার মামার বাড়ী বেড়াতে গিয়েছিলাম। তখন শীতকাল। আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াতাম,দেখতাম নমশূদ্রদের ঘরে পিঠে তৈরী হচ্ছে। কি তার গন্ধ!অবাক হয়ে দেখতাম কাঁচি পোড়া পিঠে খেজুর রসের মধ্যে ফুটিয়ে তৈরী করছে।
একবার চেহারা দেখে খুব খেতে ইচ্ছা করছিল।
ওরা লক্ষ্য করেছিল বোধ হয়,আমাকে বলল, আমাদের তৈরী পিঠে তোমায় কি করে দেব? আমি লজ্জা পেয়ে চলে এলাম। পরদিন সকালে দেখি দু কলসী দুধ,এক ঠিলে রস আর কয়েকটা নারকেল নিয়ে এসে হাজির। দিদিমাকে বল্ল,আমাদের তৈরী পিঠে বাচ্চাটাকে দিতে পারিনি কত্তামা,তাই এইগুলো এনেছি। আপনি ওকে পিঠে বানিয়ে দেবেন।
ওরা সব দাদু যে জমিদারীতে কাজ করতেন তার প্রজা।
দাদু নিজের পুকুর থেকে মেয়ে আর নাতি নাতনীদের জন্য মাছ ধরালেন। পুকুরটা ছিল খুব গভীর । পুকুরটা নিয়েও অনেক গল্প শুনেছিলাম। অনেক রাতে পুকুর থেকে কলসি ডোবার শব্দ পাওয়া যেত । সবাই বলত কলসির ভেতর মোহর আছে।
বাড়ীর পাশে মামাদের কালীমন্দির ছিল। দেবী খুব জাগ্রতা ছিলেন। রোজ় পূজা হত। মায়ের মেজ জ্যাঠামশায় খুব কালী ভক্ত ছিলেন। মাকালী নাকি ওনাকে স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেছিলেন, আয় আমার সংগে আয় মোহর নিবি।
মার জ্যাঠামশায় সেই ডাক শুনে যেতে শুরু করেছিলেন ঘুমের মধ্যেই। ওনাকে পাওয়া গেছিল পুকুরের ধারে অজ্ঞান অবস্থায়।
পুকুরের পাশে একটা নিম গাছ ছিল,সেখানেও নাকি অনেকে ভয় পেয়েছে। মামাবাড়ি খুব ভুতের ভয়
ছিল। অজপাড়াগাঁ, রাত হলেই গা ছমছমে পরিবেশ।
মামাবাড়ির গ্রামে সবচেয়ে বড় যে বাড়ি ছিল সেটাও নাকি ছিল ভূতুড়ে। অনেকেই নাকি দেখেছে-রাতদুপুরে বাড়ীর ছাদে বিয়ের আসর বসেছে,সানাই বাজছে,উলু পড়ছে। সকাল হলে কিছুই নেই। ওই বাড়িতে মানুষ বাস করত। ঐ বাড়িরই একটা মেয়ে শীলার সংগে আমার বন্ধুত্ব হয়েছিল ।
ঐ বাড়িতে দুগা পূজা হত। অস্টমীর দিন পাঠা বলি হত। সেই পুজোর প্রসাদ সারা গ্রামের লোক খেত। সেবার অস্টমীতে মামার এক বন্ধু তুষার মামা পাঁঠা বলি দিল তিন কোপে। পাঁঠার কী কষ্ট, কী ছটফটানি।
পাঁঠার সেই যন্ত্রনা আমার শিশুমনকে খুব কস্ট দিয়ে ছিল। তারপর থেকে আমি আর পাঁঠার মাংস খেতাম না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।