আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঈশ্বর বিহীন হিমু ও মিসির আলি - (২)

shamseerbd@yahoo.com ঘড়ির দিকে তাকিয়ে মিসির আলি বুঝলেন আসলেও বেলা হয়েছে। সকালের নাস্তা হয়নি তাই পেটটা কেমন চো চো করছে অনেকক্ষন ধরে । মিসির আলী রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। তাকের মাঝে একটা পাউরুটি আর ডিম চোখে পড়ছে। কখন এনেছেন সেটা মনে করতে পারলেননা ।

ডিম সিদ্ধ করবেন না ভাজবেন এই নিয়ে একটু দ্বিধায় আছেন তিনি। মিসির আলি হঠাৎ নিজের উপর বিরক্ত হলেন কিছুটা । এই বয়সে কেউ একা থাকে নাকি। নিদেন পক্ষে বাসায় অন্তত একটা কাজের মানুষ তো না থাকলেই নয় । বিরক্তিটা শেষ পর্যন্ত রাগে পর্যবসিত হয়ে গিয়ে পরল তার স্ত্রীর উপর।

এই বয়সে কোথায় স্বামী স্ত্রী দুজনে মিলে পান চিবুবেন না স্ত্রী তাকে ছেড়ে গিয়ে উঠেছেন আমারিকায় ছেলের সংসারে। এখনতো বাংলাদেশ নামটায় শুনতে পারেননা। কিছু বললে উল্টো সবাই মিলে তাকে বকাঝকা করা হয় কেন তিনি বাংলাদেশে পড়ে আছেন। বাংলাদেশে এই নাই ঐ নাই এমন হাজারটা লিস্টি সবাই মিলে তাকে শুনিয়ে দেওয়া হয় , শুনে হতাশ হয়ে ফোন রেখে দেওয়া ছাড়া তার কোন উপায় থাকেনা। তার স্ত্রী মনে হয় বেশ ভালই আছেন, অন্তত মিসির আলির তাই ধারনা।

নাতি নাতনীদের দেখা শোনা করেন, সপ্তাহে একদিন পার্কে বেড়াতে যান ছেলে আর বউ এর সাথে, ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ও ধুতে জানেন এখন। ভাবতে ভাবতে মিসির আলি একটু অসহায়ের হাসি হাসলেন- মনে পড়ল এইত সেদিনের ঘটনা গ্রাম থেকে বিয়ের পর বউ নিয়ে শহরে এসেছেন, হীটারে কি করে রান্না হয় এটাই তার বউ এর মাথায় ঢুকছিলনা কোন ধোঁয়া নেই বলে, আগুন দেখা যায়না বলে। তিনি হীটার অন করে দেবার পরও তার স্ত্রী অনেকক্ষন ধরে বসে থেকে তাকে ডেকে আনল চুলায় আগুন দেখা যাচ্ছেনা বলে । অনেকক্ষন নাকি লাল হয়ে থাকা কয়েলে ফুঁ দিচ্ছিলেন এটাকে কয়লা ভেবে , আগুন জ্বলে উঠার জন্য -এই ঘটনা শুনেত মিসির আলি হাসতে হাসতে শেষ। মনে হয় এইত সেদিনের ঘটনা ।

ছেলে যখন আমেরিকা থেকে কাগজ পত্র পাঠাল তার বউ এর খুশী দেখে কে, পুরা পাড়াপ্রতিবেশী অল্পসময়ের মাঝেই জেনে গেল তারা আমেরিকা যাচ্ছেন । ভীষন বিরক্ত হলেন তিনি স্ত্রীর এহেন কাজে। আরে যাবার সময়ত সবাই দেখবেই, তার আগেই এভাবে সবাইকে জানিয়ে দেয়ার কি হল। এক মাস থেকেই তিনি চলে এলেন, তারপর থেকেই তার এই একলা সংসার। মা ছেলে ভীষন রেগে আছে তার উপর, থাকুক তারা তাদের আমেরিকা নিয়ে।

ডিম ভাজির ডিসিশান বাদ দিয়ে দিলেন তিনি। গলির মুখের দোকান টাতে প্রায়ই দেখেন কি সুন্দর পরোটা ভাজে, কোনদিন খাওয়া হয়নি তার । আজকে তা দিয়েই নাস্তা করার জন্য তিনি বেড়িয়ে পরলেন। মিসির আলিকে দেখে ম্যানেজার ছোকরাটা একটু অবাক হল। এই লোককে কোনদিন সে তার দোকানে দেখেনি।

বেয়ারাকে সিট মুছে টেবিল পরিষ্কার করে দিতে বলল সে। এই পরোটা আর ডিম লাগাও- বলেই মিসির আলি নিজেও চমকে গেলেন, শেষ কবে এমন করেছেন তিনি মনে করতে পারলেননা, শেষ কবে হোটেলে খেয়েছেন এটাই তার মনে পরছেনা । তৃপ্তি নিয়েই খয়ে উঠলেন মিসির আলি। পরোটা- ডিম ভাজা - বুটের ডাল , বিগত দিন গুলোতে তিনি কেন এই খাওয়া প্রতিদিন খাননি তার জন্য কিছুটা আফসোস করলেন। মিসির আলির চোখে মুখে এই তৃপ্তি দেখে ম্যানেজার ছেলেটার বেশ ভাল লাগল, একা একা থাকেন এই লোক, কি না কি খান, আজকে তার দোকানে বেশ আয়েশ করে খেয়েছেন দেখে সে খুশী হল ।

খুশী ভাবটা বেশিক্ষন তার চেহারায় থাকলনা, সেখানে ভর করল অবাক হওয়া চেহারা । মিসির আলি হোটেলের সামনের দোকান থেকে একটা পান মুখে দিয়ে সিগারেট ধরালেন দেখে । শেষ কবে সিগারেট খেয়েছেন এটাও মিসির আলি মনে করতে পারলেননা, তবে শুরুতে একটু তেতো লাগলেও দুটান দেয়ার পর তিনি বেশ মানিয়ে নিয়ে টানতে লাগলেন । লক্ষ্যহীন হাঁটছেন আর সিগারেট টানছেন। সিগারেট শেষ হবার পর মনে হল, জিনিসটা খারাপনা, মাঝে মাঝে খাওয়া যায়।

মিসির আলি এক প্যাকেট সিগারেট কিনে বাসায় ফিরলেন । বেশ আয়েশ করে আরেকটা সিগারেট ধরালেন। এমন সময় তার স্ত্রীর ফোন। চেহারা দেখে মনে হল সিগারেট খাবার এই সময়ে ফোন দেয়াতে তিনি বেশ বিরক্ত । মিসির আলির স্ত্রী তার এই সিগারেট খাওয়ার কথা শুনে চমকে উঠলেন।

তিনি কোনদিন তাকে সিগারেট হাতে দেখেছেন বলে মনে করতে পারলেননা। শরীর খারাপ বা কোন কিছু ঘটেছে কিনা জানতে চাইলে মিসির আলি বলেন তিনি খুব ভাল আছেন, পরে কথা বলবেন এখন একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন। ফোন রেখে তিনি বেশ আয়েশ করে সিগারেট খেতে খেতে ভাবতে লাগলেন হোটেলে এত চমৎকার রান্না হয়, তাও আবার কত রকমের আইটেম, আর তিনি কিনা এতদিন কস্ট করে নিজে রান্না করে খেয়েছেন। নিজের উপরই তার রাগ হল এমন বোকামির জন্য । ডিসিশান নিয়ে নিলেন আজ থেকে বাসায় রান্না বন্ধ, একেক বেলা একেক দিন বিভিন্ন হোটেলে তিনি খাবেন, মাস শেষে আশেপাশের সব হোটেল নিয়ে তার একটা ধারনা তৈরি হবে, সেখান থেকে তিনি একটা হট লিস্ট তৈরি করবেন পরবর্তী দিনগুললোতে নিয়মিত খাবারের জন্য।

সিগারেটের শেষ টান দিতে দিতে একটা পরিতৃপ্তির নিঃশ্বাস ছাড়লেন তিনি, খাওয়া দাওয়া সমস্যা একটা সুন্দর সমাধান করতে পেরেছেন দেখে। এই খুশীতে আরেকটা সিগারেট ধরালেন মিসির আলি । মোবাইলটা অনেক্ষন ধরে বেজে চলেছে । মিসির আলি সাহেবের ফোনটা ধরতে একটুও ইচ্ছে করছেনা। মোবাইল ফোন নামক এই জিনিসটার প্রতি তিনি যারপরনাই বিরক্ত।

নিজেকে কেমন বন্দী বন্দী মনে হয়, লোকজনের হাত থেকে কোন নিস্তার নেই, তার স্ত্রী চাইলে যোকোন সময়ই তার সাথে কথা বলতে পারেন - কি করছি , খেয়েছি কিনা এইগুলা কি কোন কথার পর্যায়ে পরে, তার ধারনা লোকজন মোবাইলে অপ্রয়োজনীয় কথায় বেশী বলে। ছেলের চাপাচাপি নয় বলা যায় একরকম নির্দেশেই এই কুৎসিত জিনিসটা সাথে নিয়ে তাকে ঘুরতে হয়। এমন না যে তারা সবসময় তাকে ফোন করছে, কিন্তু যখন করবে তখন যাতে পাওয়া যায় তার জন্য এই আয়োজন, ছেলের এক বন্ধু একদিন এসে এই জিনিস দিয়ে গেছে আর কিভাবে ব্যবহার করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়ে গেছে। চার্জ দেয়ার ব্যাপারটা ভুলে যাওয়ায় একদিন ফোন বন্ধ থাকায় পরদিন সকালে ছেলের বন্ধু এসে হাজির, এবার সে নিয়ম কানুন কাগজে কলমে লিখে দিয়ে গেছে । ব্যাপারটায় মিসির আলি বিরক্ত ।

তিনি ল্যান্ড ফোন আমলের মানুষ, ফোন জিনিসটা চার্জ দিতে হবে এটা কেমন কথা, চার্জের ব্যাপার যেহেতু আছে তার মানে জরুরী প্রয়োজনের সময় এই চার্জ নাও থাকতে পারে , সো ঝামেলা হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। আরেকটা জিনিস খেয়াল করলেন তিনি , এই মোবাইলের মালিক হওয়া তেমন গর্বের কিছু না, রাস্তা ঘাটে সবার হাতেই এই জিনিস, অথচ একসময় একটা ল্যান্ডফোন বাসায় থাকা মানে বিরাট একটা ব্যাপার ছিল। মোবাইলটা হাতে তুলে নিলেন তিনি। স্ক্রীনে রুপা নামটা দেখা যাচ্ছে । মোবাইলে তিনি কোন নাম্বারই সেভ করে রাখেন না, কাউকে ফোন যে করেন তাও না ।

এই মেয়েটি নিজেই তার নাম্বার সেভ করে দিয়ে গিয়েছিল।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।