- - অ - -
হাবু ভাইয়ের মাথায় নতুন একটা আইডিয়া এসেছে। এই আইডিয়া নিয়ে সে দেশের কিছু মেধাবী তরুণের সাথে আলাপ করতে চায়। দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, মানে, চিকিৎসা, কারিগরী, শিল্প, সাহিত্য ইত্যাদি বিষয়ে সৃজনশীল মেধাবী তরুণদের একত্রিত করে তার আইডিয়াটা তুলে ধরতে চায় সে। এই উদ্দেশ্যে সে প্রথমেই গেলো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। কিন্তু এতে তার লক্ষ্য পূরণ হলো না।
কারণ, এরা এখনো শিক্ষানবিস। আর যারা শিক্ষার পাঠ চুকিয়ে ফেলেছে তারা তো ছড়িয়ে গেছে এক এক জায়গায়। কি করা যায়! ভাবছে সে। কেউ একজন পরামর্শ দিলো, বিভিন্ন যুব সংগঠনে খোঁজ করলে এ সব মেধাবী তরুণদের পাওয়া যেতে পারে। ভালো বুদ্ধি।
সে দেশের যুব সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করতে থাকলো। তবে রাজনৈতিক যুব সংগঠনগুলোকে বাদ দিয়ে রাখলো আগে থেকেই। রাজনৈতিক যুব সংগঠনগুলোতে কোন ধরনের যুবকেরা নেতৃত্ব দেয় সে বিষয়ে কম বেশি সকলেরই ধারনা আছে।
দেশের কয়েকটি যুব সংগঠন, একাধিক ইয়ুথ ফোরামএ যোগাযোগ করেও নিরাশ হতে হলো তাকে। এক আধজন স্বপ্নবাজ সৃজনশীল তরুণের দেখা পেলেও হাবু ভাইয়ের প্রয়োজন এ রকম একাধিক তরুণকে একত্রিত করে তার আইডিয়াটা উপস্থাপন করা।
কিন্তু কোথায় সে পাবে এদের? সে জায়গাটাই তো সে খুঁজে পাচ্ছে না। তার এ রকম নাজুক অবস্থায় সহায় হয়ে উপস্থিত হলেন এক জটাধারী বুড়ো। হাবু ভাইকে বললেন, অনেকগুলো মেধাবী তরুণকে এক সাথে পেতে চাইলে তোমাকে একটা কাজ করতে হবে।
হাবু ভাই বললো, কি কাজ? এক দল মেধাবী তরুণকে পেতে যতো কঠিন কাজই হোক আমি সেই কাজ করতে রাজি আছি।
পর দিন বুড়োর কথা মতো খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হাবু ভাই চলে গেলো গুলশানে, আমেরিকান এম্বাসীর সামনে, বৃটিশ এম্বাসীর সামনে, জার্মান, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা এম্বাসীর সামনে।
গিয়ে দেখে শতো শতো মেধাবী তরুণ পাসপোর্ট হাতে নিয়ে ভিসার জন্য সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে!!!
- - আ - -
সম্প্রতি ডাবলড হাপলয়েড পদ্ধতিতে (Doubled haploid breeding in wheat) উদ্ভাবিত স্পিটফায়ার প্রজাতির নতুন এক ঘরানার গম বীজের উৎপাদন বদলে দিয়েছে অষ্ট্রলিয়ার গম চাষের পুরনো অনেককিছু। ইংরেজি Spitfire শব্দের অর্থ আগুন বেরোয় এমন কোন জিনিস যেমনঃ কামান, আগ্নেয়গিরি এসব। স্পিটফায়ার প্রজাতির নতুন এই গম বীজের তেমনই আগুন প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে অস্ট্রেলিয়ার গম উৎপাদন ক্ষেত্রে। এই উদ্ভাবন কমিয়ে দিয়েছে নতুন প্রজাতির বীজ উৎপাদনের সময়। নতুন জাতের বীজের ৯৮% থেকে ১০০% ফলন দিচ্ছে।
ফলন বেড়েছে ৫৩% থেকে ৭৬%! এ আবিষ্কারের আগ পর্যন্ত সেদেশের সেরা জাতের গম ছিল অস্ট্রেলিয়ান প্রাইম হার্ড। কিন্তু নতুন এই জাতটি প্রাইম হার্ডের চেয়ে উন্নত ফলনশীল।
গম উৎপাদনে এই অসাধ্য সাধন করেছেন যিনি, তার নাম ডঃ নিজাম উদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশের ছেলে এই জেনেটিক সায়েন্টিস্ট’র বাড়ি চাঁদপুরের মতলবে। সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব এগ্রিকালচার, ফুড অ্যান্ড ন্যাচারাল রিসোর্সেস এর অধীনে রিসার্স ফেলো হিসাবে তিনি কাজ করছেন।
গম আর ভূট্টার জিনকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সন্নিবেশিত করে তুলনামূলক অধিক প্রোটিন আর ফলনের গমের নতুন জাত আবিষ্কারে ড নিজাম যে সাফল্য পেয়েছেন, তার আগে আরও অনেকে সে চেষ্টাটি করে সফল হতে পারেননি। জেনেটিক সায়েন্সে যে কোন নতুন বীজ উৎপাদনে ১০ বছর বা এরও বেশি সময় লাগে। এই গবেষনার পিছনে বিপুল অর্থনৈতিক আর অবকাঠামোগত বিষয়াদিও জড়িত। কিন্তু ড নিজামের উদ্ভাবন অস্ট্রেলিয়া বা উন্নত যেকোন দেশের যে কোন জেনেটিক আবিষ্কারের ক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে নতুন একটি রেকর্ড! এমন আবিষ্কারের গড়পড়তা ১০ বছরের সময়সীমাকে তিনি নামিয়ে এনেছেন ৭ বছরে। অস্ট্রেলিয়ার সায়েন্টেফিক রিচার্স কর্তৃপক্ষ নতুন এই আবিষ্কারটি ঘোষণার পর সারা দুনিয়া থেকে জেনেটিক বিজ্ঞানিরা তাকে অভিনন্দন পাঠাচ্ছেন।
অনেক দেশ থেকে তার দাওয়াত আসছে। অনেকে দেখতে আসছেন তার ল্যাবরেটরি।
উল্লেখ্য বিভিন্ন স্পন্সর কোম্পানির অর্থায়নে অস্ট্রেলিয়ার নানা গবেষণার কাজ চলে। ড নিজামের আবিষ্কার নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্পন্সর প্রতিষ্ঠান এরমাঝে তার উদ্ভাবিত গমবীজের জাত নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার গমচাষীদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে বিশেষ সাফল্য পাওয়াতে গোটা গমচাষ সেক্টরে তা খুলে দিয়েছে নতুন এক দিগন্ত! নতুন এই গমবীজের ফলন ও এর ফসলের প্রোটিনগত সমৃদ্ধি অনেক বেশি হওয়াতে সারা অস্ট্রলিয়ার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে ড নিজামের আবিষ্কার। এর প্রতিক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানটির কাছে ড. নিজাম যেন হয়ে উঠেছেন সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁস! তার পক্ষে নতুন নতুন স্পন্সরের প্রস্তাব আসছে।
ছোটখাটো গড়নের লাজুক স্বভাবের ড নিজামের অবশ্য এসব নিয়ে আলাদা কোনো উচ্ছ্বাস নেই, আছে আক্ষেপ! তাঁর জীবনের গল্পটিও যেন অনেকটা ‘গেয়ো যোগী ভিখ পায় না’র মতো। অর্থাৎ দেশে তিনি কিছু করার চেষ্টা করেও পারেননি। মনের দূঃখে চলে এসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার স্বেচ্ছা নির্বাসনে! তিনি আক্ষেপ করে বলেন, আমিতো কিছু করতে চেয়েছি বাংলাদেশে। মানুষের জীবনের অনেক আশা পূর্ণ হয়না। এ আমার সে রকম একটি অপূর্ণ আশা।
জন্মভূমি বাংলাদেশ নিয়ে নিজাম উদ্দিন আহমদের একান্ত কিছু কষ্টও আছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটে পেশা জীবন শুরু করা ড নিজাম অস্ট্রেলিয়া সরকারের একটি বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশুনা-গবেষনার জন্য সেদেশে যান। সেখানে পড়াশুনা শেষে দেশে ফেরতও এসেছিলেন। ইচ্ছা ছিল যা কিছু করার নিজের দেশেই করবেন। কিন্তু অপরাজনীতির কারনেই বুঝি তিনি টিকতে পারেননি দেশে।
বিএনপির সরকার তখন দেশের ক্ষমতায়। ড নিজাম দেশে ফেরত গেলেও সরকার তার কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউটের চাকরি ফেরত দিতে গড়িমসি করে। ফাইল যায় মন্ত্রণালয়ে, আবার ফিরে আসে নিস্ফলা হয়ে! আশৈশব বঙ্গবন্ধুর অনুরাগী ড নিজাম। এর কারণেই কী বিএনপি সরকার চায়নি তিনি দেশে ফেরত আসুন, অথবা দেশে থাকুন? আজও এর উত্তর জানা নেই তার।
তাই, আবার অস্ট্রেলিয়া ফিরলে তাকে লুফে নেয় সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়।
এখন তিনি যে গবেষনায় সাফল্য পেয়েছেন, একই প্রজেক্টে গবেষণায় তার আগে বিভিন্ন দেশের গবেষক-বিজ্ঞানিরা কাজ করে সাফল্য পাননি। সেখানে টার্গেটকৃত সময়েরও আগে তিন বছর বাঁচিয়ে তার বিরল আবিষ্কারে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশেষ খুশি। শুধু খুশি হতে পারছেন না ডঃ নিজাম উদ্দিন নিজে!
প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা প্রফেসর ডা মোদাচ্ছের আলী কিছুদিন আগে সিডনি ঘুরে গেছেন। এক দাওয়াতে তার সঙ্গে দেখা হলে প্রধানমন্ত্রী তথা বাংলাদেশ সরকারকে আবিষ্কারটি সম্পর্কে সবিস্তার জানাতে সমুদয় কাগজপত্র তাকে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিম সিডনি এসে তার ল্যাবরেটরি দেখতে গিয়েছিলেন।
ডা মোদাচ্ছের বা নাছিম কী তা প্রধানমন্ত্রী বা কৃষি মনত্রীকে জানানোর চেষ্টা করেছেন? কেউ জানে না। বাংলাদেশ সরকার বা দেশের কাছেতো কিছু চাইছেন না ড নিজাম। বাংলাদেশি কেউ বিদেশে যাই কিছু করুক তারতো নাড়ি বাংলাদেশে। সবাই চায় যার যার সাফল্যের খবর সবার আগে নিজের জন্মভূমির মানুষকে জানাতে । বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া এই বিজ্ঞানির আক্ষেপ, তার আবিষ্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত জন্মভূমি থেকেই শুধু কারও কোন আগ্রহ দেখা গেল না! বাংলাদেশ কী জানল না তার এক সন্তানের বিরল বিশেষ এক উদ্ভাবন বৃত্তান্ত?
ড নিজাম মনে করেন বাংলাদেশে বিশ্বমানের অনেক গবেষক-বিজ্ঞানি আছেন।
অভাব পৃষ্ঠপোষকতার আর রাজনৈতিক সদ্বিচ্ছার!
- - ই - -
দূর্নীতি, সন্ত্রাস,পরিবারপ্রীতি, দলীয়করণ আর তোষামোদিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত এক দেশের এক সরকার প্রধান এক দিন খেয়াল করলেন দেশে আর আগের মতো লোকজনের সমাগম দেখা যাচ্ছে না। ঘটনাটা কি! তিনি খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন। বিভিন্ন সংস্থার লোকজনকে লাগিয়ে দিলেন এর কারণ উদ্ঘাটন করতে। কিন্তু কারো কাছেই সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া গেলো না। তাই, নিজেই এক সকালে খোঁজ নিতে বেরিয়ে গেলেন, দেশের মানুষ গেলো কোথায়? দেখলেন, বিভিন্ন দেশের এম্বাসীর সামনে ছেলে-বুড়ো, নারী-পুরুষের বিশাল লাইন।
সবাই ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে আছে। উন্নত দেশগুলো তো বটেই এমন কি আফ্রিকার গহীন অরণ্যের দেশগুলোর এম্বাসীতেও হাজার হাজার মানুষের লাইন। তিনি গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে হেঁটে লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালেন। তাকে দেখে সামনের লোকটি লাইন থেকে সড়ে গেলো। তার সামনের জনও।
একে একে সবাই লাইন থেকে সড়ে গিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটা দিলো। সেই সরকার প্রধান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, আপনারা চলে যাচ্ছেন কেনো? ভিসা নিবেন না?
একযোগে সবাই জবাব দিলো, জ্বী না জনাব। আপনি নিজেই যখন ভিসার জন্য দাঁড়িয়েছেন, তখন আর আমাদের দেশ ছেড়ে যাবার দরকার নেই।
বিঃ দ্রঃ বাংলাদেশি ডঃ নিজামকে শুভেচ্ছা জানাতে চাইলে অথবা তার আবিষ্কার নিয়ে আরো কিছু জানতে চাইলে মেইল করতে পারেন ঠিকানায়।
‘হাবু ভাই’ সিরিজের অন্য পোষ্টগুলোঃ
হাবু ভাই ও আমরা
হাবু ভাইয়ের মোবাইল
হাবু ভাইয়ের ভালোবাসা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।