আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাবু ভাই ও আমরা

- অ – হাবু ভাই এবারও পাশ করতে পারে নি । তবে খুশির খবর হচ্ছে, ‘পৃথিবীর আকার কেমন?’ এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর সে দিতে পেরেছে । এতেই তাকে কেমন খুশি খুশি লাগছে । স্যারও খোশ মেজাজে আছেন মনে হলো । হাবু ভাইকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা হাবিব, পৃথিবীর আকার যে বৃত্তের মতো তা তুমি বুঝলে কেমন করে ? একটা কিছু করে ফেলেছি, চেহারায় এমন একটা ভাব এনে হাবু ভাই বললেন, ক্লাসে একদিন লিখেছিলাম পৃথিবীর আকার ত্রিভূজের মতো ।

সেটা কাটা গিয়েছিলো । ক্লাস পরীক্ষায় লিখেছিলাম চতুর্ভূজের মতো, সেবারও কাটা গেলো । তাই এবার সাময়িক পরীক্ষায় আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম, পৃথিবী যখন ত্রিভূজের মতোও না চতুর্ভূজের মতোও না তখন বৃত্তের মতোই হবে ! - আ – ৯০এর গন আন্দোলনের পর আমরা প্রথমে ভোট দিয়ে সরকারে পাঠালাম বিএনপিকে । বিএনপি জনমানুষের প্রত্যাশা পূরন করতে না পারায় ভোট দিলাম আওয়ামী লীগকে । হতাশ করলো আওয়ামী লীগও ।

এই হতাশায় বিএনপির নেতৃত্বের ৪ দলীয় জোটকে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা দিয়ে সরকারে বসিয়ে দিলাম । এই সরকারের প্রতি যত বেশি প্রত্যাশা ছিলো তোটুকুই হতাশ করলো এরা । ফলে গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহা জোটকে সব কিছু উজার করে ভোট দিয়ে সরকারে বসালাম । এরই মধ্যে সরকারের অর্ধেক মেয়াদ পেরিয়ে গেছে । তারা কতোটুকু জনপ্রত্যাশা পূরণ করতে পেরেছে তা বলাই বাহুল্য ।

এই দুটি দলের নেতৃত্বধীন ৪টি সরকারের সময়ে আমরা ঘুরে ফিরে একই দৃশ্য দেখতে পেলাম । আমরা দেখলাম, যারা সরকার গঠন করে তারা ... • বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানের নাম বদল করে নিজ দলের নেতার নাম বসিয়ে দেয় । এতে দেশেরে মানুষের কোনো লাভ না হলেও তাদের দেয়া টেক্সের কোটি কোটি টাকা সরকারী দলের নেতা কর্মীরা লুটেপুটে নিয়ে যায় । • সরকারী দলের মন্ত্রী এমপিরা দূর্নীতির মাধ্যমে জনগনের শত শত কোটি টাকা আত্মসাত করে নিজে , নিজের আত্মীয় স্বজন এবং দলীয় নেতারা আরো ধনি হয় আর দেশের সাধারন মানুষেরা হয় গরিব থেকে আরো গরিব । • তারা সন্ত্রাস করে এবং খুন, হত্যা রাহাজানিতে মদদ দেয় ।

বিরোধী দলীয় নেতাদের মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানী করে । তারা বিরোধী দলে থাকাকালীন সরকারী দলের দেয়া মিথ্যা ও হয়রানীমূলক মামলা প্রত্যাহারের নামে নিজ দলীয় নেতা কর্মী নামীয় প্রকৃত সন্ত্রাসীদের সন্ত্রাসমূলক মামলাও প্রত্যাহার করে নেয় । • সরকারী দলের ছাত্র সংগঠন চর দখলের মতো শিক্ষাঙ্গনের হল দখল করে এবং পড়াশোনা বাদ দিয়ে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজিতে মেতে ওঠে । এই নিয়ে পারস্পরিক হানাহানিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকে । ফলে সাধারন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন ব্যহত হয় ।

এতে দেশের যে ক্ষতি হয় তা অর্থ দিয়ে পরিমাপ করা সম্ভব নয় । আর যারা বিরোধী দলে থাকে তারা ... • নির্বাচনে বিভিন্ন ধরনের কারচুপির অভিযোগ করে ও নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগ দাবী করে । • সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও সংসদে যায় না । তবে সংসদ থেকে বেতন-ভাতা, বিনা টেক্সের গাড়ি, সরকারী খরচে বউ বাচ্চাসহ বিদেশে চিকিৎসা ও আনন্দ ভ্রমন সবই করে । ৯০ দিন অনুপস্থিতির কারণে সংসদের সদস্যপদ বাতিলের উপক্রম হলে বিভিন্ন উছিলায় এক-আধ দিনের জন্য সংসদে গিয়ে সংসদ সদস্যের পদ টিকিয়ে রাখে ।

• কারনে অকারনে হরতাল-অবরোধ-ধর্মঘট করে । যানবাহন ও বিভিন্ন অফিস আদালত ভাংচুর করে দেশের সম্পদ নষ্ট করে । সমুদ্র বন্দর-নৌ বন্দর-বাস টার্মিনাল বন্ধ করে রাখে ফলে দেশের আমদানী রফতানী কাজে ব্যঘাত ঘটে এবং দেশের ক্ষতি হয় হাজার হাজার কোটি টাকা । হরতালের কারনে গার্মেন্টস সহ অন্যন্ন শিল্প কারখানা বন্ধ থাকায় লক্ষ লক্ষ গার্মেন্টস কর্মী ও দিন মজুরেরা তাদের মজুরি হারায় । এ সবের সাথে সাম্প্রতিক সময়ে আরো একটি উপদ্রব যোগ হয়েছে ।

সরকারী অথবা বিরোধী দলীয় নেত্রী কোনো সফরে বিদেশে গেলে সেই দেশে অবস্থিত বিপরিত দলীয় নেতা কর্মীরা তার প্রতি অসৌজন্যমূলক আচরন করে । এতে বিদেশীদের চোখে আমরা দিনকে দিন আরো ছোট হয়ে যাচ্ছি । আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পারস্পরিক রেষারেষি এমন এক পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, একে অন্যকে ঘায়েল করার জন্য দেশ ও দেশের মানুষের সার্থ বিসর্জন দিতেও কুন্ঠা বোধ করে না । এই দুই দলের যে সকল নেতা দলীয় এই সংকির্নতা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন, হয় তারা দলে কোনঠাসা হয়ে পরেছেন নয়তো দল থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন । - ই – হাবু ভাই তো তাও দুইবার ঠকা খেয়ে ভুল ভাবে হলেও তৃতীয়বারে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছিলেন ।

আমরা কি সেটাও পারবো না ?  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।