-- অ --
জরিনা’বু এর আগেও একদিন বলেছিলো, সাইকেলের মেকার নাইজ্জা তাকে পথে একলা পেয়ে কুকথা বলছিলো। শুনে হাবু ভাই বলে, থাক ওদের সাথে লাগতে যেও না। এরা খারাপ মানুষ! আর একদিন তো হাবু ভাই সাথে থাকার পরেও হারামি নাইজ্জাটা জরিনা’বুর বেজায়গায় খোঁচা দিয়ে চলে গেল। হাবু ভাই দেখেও এমন ভাব করলো যেনো কিছুই দেখে নাই! এ কারণেই জরিনা’বু ঠিক করেছে এর একটা বিহীত হওয়া দরকার! সন্ধ্যার পরে বাড়ির পেছনের বাঁশ ঝাড়ের কাছে সে জন্যই হাবু ভাইকে আসতে বলেছে।
মনে মনে গোষা থাকলেও জরিনা’বু চোখে কাজল দিসে, ফিতা দিয়ে দুই বেণী করে চুল বাঁধছে! সন্ধ্যার আবছা অন্ধকারে পুরাপুরি দেখা না গেলেও বোঝা যাচ্ছিলো, জরিনা’বুরে খুব সুন্দর লাগছে।
হাবু ভাইয়ের হাত দু’টো জরিনা’বু তার হাতের মুঠোয় পুড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, সত্যি করে বলো তো, তুমি কি আমারে সত্যি সত্যি ভালোবাসো ?
হাবু ভাই যেনো কঁকিয়ে উঠলেন, এইটা কি বললা জরি? আমি যে তোমারে কতো ভালোবাসি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না!
ঃ সত্যি বলতাছো ? – আবেগে জরিনা’বুর চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো। হাবু ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে তাকে জড়িয়ে ধরলো ।
ঃ তাইলে সেই দিন যে নাইজ্জা হারামিটা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো, তুমি যে কিছু বললা না!
ঃ আরে! এদের কথা বাদ দাও। এরা হইলো বস্তির পোলাপাইন! অশিক্ষিত, মূর্খ । এরা হইলো সন্ত্রাসী।
এদের সাথে কি কোনো ভদ্র মানুষ লাগতে যায় ?
জরিনা’বু এক ঝটকায় হাবু ভাইয়ের বুক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলো। তার কোমল মুখটা ক্রমেই শক্ত হয়ে উঠলো ।
ঃ এইটা তুমি কি বললা! তোমার ভালোবাসার মানুষকে ইতর বদমাইসেরা যা তা বলবে, জায়গায় বেজায়গায় হাতাহাতি করবে আর তুমি ভদ্র মানুষ সাইজা বইসা থাকবা ? বলবা এদের সাথে ঝগড়া করা তোমারে মানায় না! তুমি কি একটা পুরুষ? তুমি আমারে ভালোবাসো কি না জানি না তবে, তোমার মতো একটা কাপুরুষকে আমি ভালোবাসি না। -- কথাটা বলেই জরিনা’বু হাবু ভাইয়ের গালে ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। তারপর কাঁদতে কাঁদতে না, শান্ত পায়ে ধীর গতিতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন ।
-- আ --
দেশকে ভালোবাসেন কিনা জানতে চাইলে মনে হয় না কেউ বলবে যে, সে ভালোবাসে না । বরং সে যে অন্যের চেয়ে বেশি ভালোবাসে সেটাই বোঝাতে চাইবে নানান ভাবে। এতে কোনো দোষ নেই। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন দেখি আমাদের চোখের সামনে দূর্বিত্তরা এভাবে দেশের নদী দখল করে নেয় আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি।
কি নিম্নবিত্ত কি উচ্চবিত্ত কেউই বাদ যায় না এই দখলদারিত্ত্ব থেকে।
দখল করতে করতে এক সময় আর খাল বিলের কোনো অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যায় না। কে বলবে এক সময় এখানে কুতুবখালী নামে এক খাল ছিলো!
শুধু স্থানীয়রাই না, জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠানও ঝিলের মাঝখানে ইমারত বানাতে দ্বিধা বোধ করে না। আর সেই ইমারতের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন আমাদের এক প্রধানমন্ত্রী আর উদ্বোধন করেন আরেক প্রধানমন্ত্রী। আমরা দেশপ্রেমিক মানুষেরা বুক ভর্তি ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি! নেত্রী বলে কথা! কিছু কি বলা যায় ?
আমাদের নিজেদের যখন সুযোগ আসে তখন আমরাও কম যাই না। ফুট ওভার ব্রীজ ফাঁকা রেখে রাস্তা দিয়েই পথ পার হই।
কোনো দূর্ঘটনা ঘটলে তার দায় চাপাই অন্যের ঘাড়ে। গাড়ি-ঘোড়া ভেঙে-চুরে, জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে নিজের দায়িত্বহীনতাকে আড়াল করি।
বাড়ি বানানোর সময় কিছু জায়গা ছেড়ে দিবো কী উলটো রাস্তার জায়গাও দখল করে নেই। ভেঙে ফেলি পয়ঃ নিষ্কাসন ব্যবস্থা। আমাদেরই হাগু-মুতুর পানি ডিঙিয়ে স্কুলে যায় আমাদেরই ছেলে মেয়েরা।
আর বৃষ্টি এলে! নিজেরাই ডুবে যাই ময়লা পানিতে আর গুষ্ঠি উদ্ধার করি সরকারের ।
আমাদের চোখের সামনে কিছু অসৎ মানুষ এভাবে ছড়ায় বিষ।
আমরা দেখি, শুধুই দেখি। টুটি চেপে ধরতে পারি না এদের।
নদীর এমাথা ওমাথা আটকে দিয়ে দুই দিনের পোনাটাকেও ধরে ফেলতে চাই ।
যেনো, আজকেই শেষ দিন। আমাদের জীবনে আর ‘আগামী’ বলে কিছু নেই।
লোভের আগুনে পুড়ে ছারখার হয় আমাদের আগামী, আর আমরা দেখি। অপরিনামদর্শী আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখি আমাদের স্বার্থপরতা।
এক পাল দস্যু চেপে ধরে আমদের ফুসফুস!
খাবলে দেয় হৃৎপিন্ড!
নির্বোধের মতো এভাবে মরি, তবু বাঁচার জন্য মরতে পারি না।
দেশকে শুধু ভালোই বাসি না, পাঁচ বছরের জন্য সেই ভালোবাসার ইজারাও দেই আরেক ‘দেশপ্রেমিকের’ কাছে। আর সেই ‘দেশপ্রেমের’ ইজারাদারেরা এভাবেই পরিশোধ করে ভালোবাসার মুল্য। এক দল ঢালাই করে যেতে না যেতেই আর এক দল লেগে যায় কাটাকাটি করতে! এভাবেই কেটেকুটে লুটপাট করে সারাটা দেশ।
আমরা দেখি আর শান্ত সুবোধ বালকের মতো বাঁশ ধরে বাঁশ দিয়ে হেঁটে যাই। ‘বাঁশ’ ছাড়া আমাদের আর কিইবা পাওয়ার আছে ?
‘বাঁশ’তো আমাদের দেয়া হবেই।
কিন্তু এই বাঁশ কে দিবে তাই নিয়ে নিজেদের মধ্যেই চলে দাও-বাঁশের খেলা!
‘বাঁশ’ দেবার সুযোগ হারিয়ে কারো প্রতিহিংসায় জ্বলে আমার দেশ। বুক ভরা ‘দেশপ্রেম’ নিয়ে আমরা শুধু দেখি !
আচ্ছা, আমরা কী আসলেই কিছু দেখি? আমরা কী দেখতে পাই, মাত্র কয়েক গজের ব্যবধানে আওয়ামী লীগের সেতু আর বিএনপির সেতু কিভাবে আমাদের মাঝে যোজন যোজনের ব্যবধান করে দিচ্ছে! আমরা কি এটা দেখতে পাই ?
আমরা কী দেখতে পাই, আমাদের দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে আমাদের আগামী! ওদের কাছে জবাব দেবার মতো কোনো জবাব কি আমাদের কাছে আছে? নাকি দলবাজীর বিষ বাষ্পে আমাদের দেখার ক্ষমতাও লোপ পেয়েছে ?
,
,
- - ই --
এরপরেও যদি কাউকে প্রশ্ন করা হয়, আপনি কি দেশকে ভালোবাসেন? খুব জোর গলায় জবাব আসবে, অবশ্যই! আমি আমার দেশকে ভালোবাসি না মানে! কি বলতে চান আপনি ?
আমাদের আসলে ভাগ্য ভালো যে, দেশের কোনো দৃশ্যমান হাত নেই । থাকলে আমাদের গালের যে কি অবস্থা হতো !!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।