আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রেন কখনও থেমে থাকে না ,ট্রেন ভ্রমণ বিষয়ক আমার কিছু স্মৃতি কথা ও নানা বিড়ম্বনা কাহিনী

"জানালার ওপাশের অন্ধকার থেকে আমার সঙ্গীরা আমায় ডাকে..একদিন যাদের সঙ্গ পেয়ে আজ নিসঙ্গ্তায় ডুবেছি"-(শঙ্খনীল কারাগার)হুমায়ূন আহমেদ কু ঝিক ঝিক ঝিক ......... এই শব্দ টা শুনলেই আমাদের মনে পড়ে সেই ছোটো বেলায় পড়া শামসুর রাহমানের সেই ট্রেন কবিতাটা ,ক্লাস ওয়ান বা টু তে পড়তে হত সেটা ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছে রাত দুপুরে অই। ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছে ট্রেনের বাড়ি কই ? একটু জিরোয়, ফের ছুটে যায় মাঠ পেরুলেই বন। পুলের ওপর বাজনা বাজে ঝন ঝনাঝন ঝন। ................ ট্রেন ভ্রমণ এর আগ্রহ আমার শুরু হয় সেই কবিতাটি পড়েই । তবে সে ট্রেনে চড়ার আকাঙ্খা যে আমার এতো তাড়াতাড়ি পুরণ হবে তা কে জানতো ।

ক্লাস ওয়ানের পড়া সব বাসায় ই শেষ করে ফেলেছিলাম তাই স্কুল গিয়ে আর সাময়িক পরীক্ষা দেবার প্রয়োজন পড়েনি, তবে পরীক্ষার খাতায় যুদ্ধ করার চেয়ে বাসায় সারাদিন এটা গুণ গুণ করে পড়া হত এর প্রধান কারণ টাই ছিল এই ভ্রমণ এর স্বপ্ন। তাই বলে প্রথম ট্রেন ভ্রমণ এর সুযোগ যে সেই বছর ই চলে আসবে এটা ভাবিনি । আর আসলেও এটা এমন ভাবে স্মৃতিতে গাথার মত ব্যাপার হবে তা ই বা কে জানতো সেই ক্লাস ওয়ান এর বার্ষিক পরীক্ষার প্রথম রোজা ঈদ বাড়িতে যাবার সময় ই আমার হয়ে গেল প্রথম অভিজ্ঞতা । জীবন এর প্রথম পরীক্ষা দেবার পর টি এন্ড টি একচেঞ্জ অফিস এ গিয়ে নানুর বাসার সবার সাথে ফোনালাপে পরীক্ষার প্রথম স্থান অধিকার করবোই করব এমন একটা ভাব নিয়ে বললাম যে নানু এবার ঈদ করতে তোমাদের এখানেই আসছি পরশু দিন , নাতির এহেন আবদারে আমার নানু উচ্ছসিত । বললেন “ চলে আসো তাড়াতাড়ি নানু ভাই ।

আমাদের রওয়ানা দেবার দিন ঘনিয়ে এলো ,যেহেতু ট্রেন সিলেট স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৭ টায় তাই আব্বু আগেই একটা বেবি ট্যাক্সি কে বলে রেখেছিল। এটা ভোর ৪ টায় বাসার সামনে থেকে ছাড়বে , বলা বাহুল্য ১৯৯৬ সালের দিককার সময় ঈদ গুলো হত পুরো ডিসেম্বর জানুয়ারী থেকে শুরু করে মার্চে গিয়ে কোরবানির ঈদ হয়ে শেষ হত সে বছর গুলোর ঈদ মৌসুম এরকম ই আমার মনে পড়ে । যাই হোক ব্যাগ আম্মু আগেই গুছিয়ে রেখেছিল । তাই দেরি না করে আমরা তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম এই শীতের রাতেই বলা যায় ভোর রাত। তবে রাস্তায় বের হয়েই প্রমাদ গুনতে হল ।

কারণ একে তো শীত কাল তার উপর তখনকার টপ্যিকাল সিলেটের ভারী কুয়াশা । এখন আর তেমন কুয়াশা পড়ে না । বেবীট্যাক্সি গাড়ির ড্রাইভার স্পীড ২০/৩০ এর বেশি তুলতে পারছিলেন না । তার প্রধান কারণ রাস্তা টা ছিল অনেক আকাবাকা ২ টা বিপদজবনক ব্রীজ ও ছিল । আব্বুর আরো বড় ভুল টা করেছিলেন হাতঘড়ি টা বাসায় ভুল করে ফেলে এসেছিলেন তাই ড়্রাইভার কে সময় দেখে তাগাদা দিতেও পারছেন না বেচারা র ও দোষ নেই সে তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে ।

আর এদিক দিয়ে এতো কুয়াশা যে রাত ৪ টা আর সকাল ৭ টার মাঝে কোন পার্থক্য খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না । যাই হোক অবশেষে সিলেটে পৌছলাম কোন ঝামেলা ছাড়াই । কিন্তু তখন ও মনে হয় আসল চমক টাই বাকি রয়ে গিয়েছিলআমাদের জন্য সেটা হল আমরা স্টেশন এ পৌছানোর পর শুনি ট্রেন ছেড়ে চলে গিয়েছে ,এবং সেটা অনটাইমেই ছিল। এরপর যা হল রীতিমত বলা যায় ট্রেন এর সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়ানো । আব্বু তখন ই টেক্সি ড্রাইভার কে বিদায় করলেন ভাড়া দিয়ে ।

এবং একটা মাইক্রো ভাড়া নিলেন । কারণ ট্রেন এরপরের স্টেশন ফেঞ্চুগঞ্জ এ থামবে সেখানে গিয়ে ট্রেনে উঠলেই হয়ে যাবে । কিন্তু না ,ফেঞ্চুগঞ্জ এ গিয়ে শুনি ট্রেন ছেড়ে চলে গিয়েছে । পুরো ব্যাপার টা আমার মনে হলে এখন ও মনে হয় কোন মুভির ট্রেইলার এর কিছু অংশ দেখানো হচ্ছে যেখানে ভিলেন কে ধরার জন্য নায়ক ছুটে চলে এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশনে । এরপর আর কি করা সেই স্থল পথ দিয়েই মাইক্রো নিয়ে যেতে হল আমাদের অবশেষে শ্রীমঙ্গল স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরতে পেরেছিলাম ।

তাও অল্পের জন্য। এখন ও মনে আছে আমাকে জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকানো হয়েছিল । তারপর পুরো ট্রেন ঘুরে যখন আমরা আমাদের সিট পেলাম ততক্ষণে ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ চলে এসেছে। আমার নানু তার নাতি কে পেল ক্লান্ত বিধ্বস্ত ভাবে । এখন মাঝে মাঝে (আসলে প্রায় ই বলা উচিত)যখন ট্রেন লেট হয় আর আমরা স্টেশনে অপেক্ষা করি তখন ভাবি যে কারো কি এরকম হয়েছিল যে সেই লেট ট্রেন লেট না অনটাইমে পৌছেও ।

তারপর আবার ট্রেনের পিছনে ভাড়ার দ্বিগুণ টাকা খরচ করে ট্রেন এ আবার চড়ে বসা। জীবন টা সত্যিই অদ্ভুত ,সেই সাথে স্মৃতি গুলো ও । প্রতিদিন ট্রেন আসে আবার চলে যায় , ট্রেন এর চলার সময়ের সাথে সময়ের স্রোত একাধারে চলতে থাকে । সময়ের স্রোত কে না থামানো গেলেও ট্রেনের লেট হলে কিন্তু ট্রেনের সময় হয়তঠিক ই থেমে থাকে । মাঝে মাঝে কল্পলোকের রাজ্যে চলে যাই ,ভাবি যে ইশ ! ট্রেন লেট এর মত সময় কেও যদ এরকম লেট করানো যেত , কিন্তু এই ভাবনা কখন ও বাস্তবে রূপ নিবে না , শুধুই কল্পনার রাজ্যে হয়তো কিছু আকিবুকি হবে আর আমরা তাকে পুজি করে কিছু লিখতে পারবো ।

-১৫.১১.২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.