জীবন সেই ট্রেনটার মত। যা সকল স্টেশনে থামতে পারে। কিন্তু কোথাও তার নিশ্চিত আশ্রয় নেই। তার কাজ চলতে থাকা। এক দৃশ্যের পর অসংলগ্ন আরেকটি দৃশ্যের নিয়ত চক্রই হল জীবন।
গতরাতে অবাক হয়ে ভাবছিলাম, রাতদুপুরে আজকাল কুকুর ডাকেনা তেমন। পাহারাদারের বাঁশির শব্দও পাওয়া যায়না এ ক’দিন । হলটা কি? কম্বলের তলায় শুয়ে হঠাৎ প্রচন্ড শীতে কুঁকড়ে উঠে আসল ব্যপারটা টের পেলাম। শীত তো শুধু আমার একার জন্য না। কুকুরেরও শীত আছে।
পাহারাদারের জন্যেও শীত। রাত-বিরাতে যারা চুরি করতে বের হয়, শীত তাদের জন্যেও!
আমি খুব সৌভাগ্যবানদের একজন। রাত্রি নামলেই আমি ঘুমানোর জন্য বিছানা পাই, মাথার উপরে পাকা ছাদ। শীত উপলক্ষে আমার গায়ে চড়ে উষ্ণ কম্বল। শীত রাত্রিগুলোর এই ঘুম খুব আরামদায়ক হওয়ার কথা।
বিছানায় যাই রাত দুটোয়। আমার দুচোখজুড়ে ঘুম নামে ফজরের আযানের পর। ক্লাস নেই এখন। তাই সকাল সকাল জেগে ওঠার দুঃশ্চিন্তাও নেই। আজও আমি বিছানা ছেড়েছি জোহরের আযানের সাথে।
এসব ব্যপার থেকে অনুমান করা দোষের না যে আমি মানুষ হিসেবে খুবই অলস আর মন্দ প্রকৃতির!
ইদানিং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও খুব একটা ভাবছি এমন না। আমি আমার মত চলছি। দেশ চলছে তার মত। দেশের দৈনিক পত্রিকাগুলো এখনও ঠিক নিশ্চিত হতে পারছেনা যে নবগঠিত সরকার স্থায়ী হবে কিনা। সরকারের বিরুদ্ধে এখনও অনেক জাতীয় দৈনিকের ক্ষুরধার কলম চলছে।
সরকার স্থায়ী হবে এমন কোন নিশানা পাওয়ামাত্র ওই ক্ষুরধার কলমগুলোই ঠিক রেশমের মোলায়েম স্পর্শের মত হয়ে যাবে। সরকারের প্রশংসা বানীতে তারা তাদের নিউজপ্রিণ্টের পাতা ভরাতে কুণ্ঠিত হবেনা!
আমি একজন বিনোদনলোভী দর্শক। যাকে বলে ‘’আম আদমী’’। ‘’খাস’’ আমি কখনই ছিলাম না। হতেও চাইনা।
গণতন্ত্র আদৌ কি এদেশে কখনও ছিল? আমাদের প্রজন্ম অন্তত প্রকৃত গণতন্ত্র দেখেনি। আর এদেশের মানুষের সত্যিকার ধারণাও আসলে নেই, কিসে তাদের মঙ্গল! আমার নিজের ধারণা আছে কিনা ভেবে দেখতে হবে।
কদিন আগে অবশ্য শুনলাম, সরকার দলীয় এক তুখোড় (!!) রাজনীতিবিদ বলেছেন- তিনি নাকি খুব সেক্সি। সেক্সি শব্দটার বাংলা কি? আবেদনময়? আবেদনময়তা দিয়ে এই মূর্খমানব দেশের কি ছিঁড়তে চাচ্ছে কে জানে!
দেশে এখন বিরোধীদল দুটো। সরকারি আর বেসরকারি বিরোধীদল।
বেসরকারি বিরোধীদলটি এতদিনে বুঝতে পেরেছে, হরতাল-অবরোধের টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মাজতে মাজতে জনগণ এখন টায়ার্ড। এবার তারা কি বাসায় বাসায় গিয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করবে? কোনদিন পেপারের ফ্রন্ট পেজে নিউজ দেখবো- ‘’চা খাওয়ার সময় পেট্রোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে রিটায়ার্ড আর্মি দম্পতির মৃত্যু!“
হরতাল অবরোধের মহাযজ্ঞে আরেকটা ব্যাপার সম্পর্কে আমি পরিষ্কার জ্ঞান অর্জন করেছি। রাস্তাঘাটে আজুড়ে লোকজনের সংখ্যাই বেশি। ওসব দিনে অফিস-আদালত কিন্তু খোলাই ছিল। তাই কাজের মানুষেরা ঠিকই নিয়মিত বাইরে বেরিয়েছে।
বাস চলেছে। রিকশা, সিএনজি চলেছে। তবু নগরবাসি সেসব দিনে ফাঁকা রাস্তা পেয়েছে। ট্র্যাফিক জামহীন ঢাকা নগরীর এমন দৃশ্য খুব কম দেখেছে সাম্প্রতিক ইতিহাস!
কিন্তু অবরোধ বা হরতাল উঠে যেতেই রাস্তাভর্তি সেই পুরোনো জ্যাম। কারণ আজুড়ে লোকজন আবার রাস্তায় নেমে গিয়েছে তখন! এসব লোকেরা নগরের এমাথা ওমাথা অকারণ ঘুরাঘুরি করে প্রাইভেট কারে চড়ে।
টয়লেট যদি বাসার বাইরে গিয়ে করতে হত, এরা মনে হয় টয়লেট করতেও তাদের ব্যক্তিগত চার চাকার সাহায্য নিত। অবশ্য এমন অনেককে আমি জানি, নিজস্ব গাড়িটা তারা খরিদ করেছেন অনেক কষ্টের অর্থে, এমনকি ব্যাংক থেকে লোন নিয়েও। তাই বলে আমাদের ভুলে গেলে কিভাবে চলবে, নগরির অমানসিক যানজটের সর্বপ্রধান কারণ হল আমাদের এসব শখের চার চাকাগুলি!
কথার সমস্যা হল এটা এক স্রোতস্বিনী নদীর মত। এক ধারা থেকে আরেক ধারায় চলে যায় খুব সহজে। আজকাল রাত নামলে ঘুমের গাড়িতে উঠতে আমার খুব কষ্ট হয়ে যায়।
কারণ আমি মনে হয় ঘুমট্রেনের টিকেটটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছিলাম কোন এক কালে। ট্রেন! ট্রেন নিয়ে কতশত অ্যাডভেঞ্চারের কথা ভাবতাম শৈশব আর কৈশোরে!
এইতো ২০০৭ এর কথা। এস,এস,সি পরীক্ষার আগে ভাবলাম, পরীক্ষা শেষে হঠাৎ একদিন গলায় চিনাবাদাম ভর্তি একটা ঝুড়ি নিয়ে সুন্দরবন প্রভাতী ট্রেনে ঊঠে যাব! খুলনা থেকে বাদাম বেচতে বেচতে নামব গিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে! তারপর?
এখন ভাবছি আমার চলমান গল্পটার কথা। ভুবন বিখ্যাত এক লেখক তার জীবনের শেষ বয়স পার করছেন। একরাতে তিনি অদ্ভুত একটা গল্প পেয়ে গেলেন।
লেখকের মনে হল এই হঠাৎ পাওয়া গল্পটাই হবে তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম কাজ। গল্প লিখতে লিখতে লেখক এও বুঝতে পারছেন, তিনি আসলে মারা যাচ্ছেন। মৃত্যু এগিয়ে আসতে শুরু করেছে তারদিকে। মৃত্যু চলে আসার আগে কি তিনি পারবেন গল্পটা শেষ করে যেতে?
পুনশ্চঃ
এখন খুব আরামের ঘুম হতে পারে আমার। কোন কারণে এলাকার কুকুরগুলো একযোগে কাঁদতে শুরু করেছে।
আউউ..উউউ..আউউউ.. মাঝে মাঝে পাহারাওয়ালাও ফুঁ দিচ্ছে তার বাঁশীতে! ওদের কথা ভাবছি বলেই কি ফিরে এল? জগৎ বড় রহস্যময় বলেই বেঁচে থাকাটা এত আনন্দের। নারীর প্রেমও সবচেয়ে মোহনীয় নেশা। কারণ নারীও এক অপার রহস্য
-----------------------
লেখাটি পুর্বে প্রকাশিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।