সবুজের বুকে লাল, সেতো উড়বেই চিরকাল স্বাধীনতার ৪০ বছর পুর্তি হচ্ছে। অথচ আমাদের চলচিত্রে নির্মমভাবে উপেক্ষিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চিত্রনাট্ট। এ নিয়ে খেদ থেকেই লিখেছিলাম একটি লেখা
আমাদের চলচিত্রে উপেক্ষিত মুক্তিযুদ্ধ
পাঠকদের কাছ থেকে সাড়া পাইনি তেমন। সে আমার লেখনির দৈন্যতাই হবে হয়তো।
মুক্তিযুদ্ধকে রুপালি পর্দায় দেখার নেশায় প্রায় প্রতিটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিই দেখা হয়েছে।
এবার যখন খোদ বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু গেরিলা বানালেন, তখন প্রথম সুযোগেই দেখে ফেললাম।
ছবির টাইটেলেই প্রথম আলোর নাম দেখে মনে কুডাক দিয়েছিল। হাজার হোক, প্র আলো কিংবা মতি মিয়ার কাছ থেকে দেশাত্মবোধক কিছু আশা করা তো মহা পাপ। সেই কালে গোলাম আযম - নিজামিরা ছিল। আর একালেই সেই শুন্যস্থানে যাদের নাম নেয়া যায় তাদের মধ্যে মতি অবশ্যই শীর্ষস্থানীয়।
তবু আশায় বুক বেধে থাকলাম। কিন্তু একি? ২৫শে মার্চের ভয়াল কালো সেই রাত্রে, যেখানে ইতিহাস বলে রাজারবাগ পুলিশ লাইন আর তৎকালিন ইপি আর রাই প্রথমে সশস্র মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেছিল, সেখানে বাচ্চু কি দেখালেন? তিনি দেখালেন গুটি কয়েক লোক বঙ্গবন্ধু দেশে মুক্তিযুদ্ধ ঘোষনা করেছেন বলে আধুনিক কালের অস্ত্র নিয়ে পাকিস্থানিদের প্রতিরোধ করা শুরু করেছে।
এই কি বাচ্চুর ইতিহাস বোধ? বয়সের ভারে তিনি কি ভীমরতিতে আক্রান্ত? নাকি আওয়ামি লিগ করলেই মিথ্যা বলা জায়েজ? নাকি তিনি সারা জাতিকেই হিন্দি আর ফেন্সিডিলে আচ্ছন্ন বলে মনে করেছেন?
ছবির অর্ধেক ধরে দেখানো হলো জীবন যাত্রা (ঢাকায়) স্বাভাবিক। লকজন দিব্য আসছে যাচ্ছে, রিক্সা গাড়ি বাস ঠিকই চলছে। নায়িকা দিব্যি ব্যাংকে যাচ্ছে আসছে কাজ করছে।
আবার মুক্তিযোদ্ধাদের লজিকাল সাপোর্টও দিচ্ছে। ২১ শতকের ঢাকার মতই ইভটিজিং ও চলছে।
ধরে নিচ্ছি বাচ্চু ঢাকা থেকে সেই সময় দূরে ছিলেন। তাই বলে এখনও কিন্ত অন্তত লাখ খানেক মানুষ আছেন, যারা সেই কালো রাত আর মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময়ের প্রত্যক্ষদর্শি। তাদের কাছ থেকে কি সে সময়ের বাস্তব অবস্থাটা তিনি জেনে নিতে পারতেন না?
আরো আসুন শহিদ আলতাফ মাহমুদের ঘরের চালচিত্রে।
খাবারের টেবিলে বসে নিঃসংকোচে গিন্নি তার সন্তানদের আরেকটা মাছ দেই বলে আদিখ্যেতা দেখাচ্ছে। নাইয়িকা সেখানে আসলে তাকে খেয়ে যাবারও অনুরোধ করা হচ্ছে। মনে হচ্ছিল যেন ঢাকার সব কিছু স্বাভাবিক। যেমনটি তখন পাকিস্থানিরা সর্বান্তকরনে প্রচার করায় লিপ্ত ছিল। আলতাফ মাহমুদ বেশ আয়েশ করেই গান গাচ্ছেন, খাচ্ছে ঘুমাচ্ছে, গান লিখছেন।
যেখানে প্রতিটা বাঙ্গালির জীবন শংকার মধ্যে ছিল, যেখানে যে কোন মুহুর্তে আজরাইরুপি হায়েনা পাকিস্থানি সেনাদের আগমনের উৎকণ্ঠায় উদ্বিগ্ন থাকতো মানুষ (ব্যাতিক্রম শুধু পাকিদের দোসর) সেখানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এক মহান সৈনিক আলতাফ মাহমুদকে ওভাবে উপস্থাপন করে বাচ্চু তাকে অপমানই করলেন।
শুধু মুক্তিযুদ্ধকে অপমান নয়, বাচ্চু বরং তার চলচিত্র সহযোগিদের চমৎকার মেধারও অপচয় ঘটালেন। বিশেষ করে চলচিত্রগ্রহন ো আবহ সঙ্গিত এক কথায় অপুর্ব।
শেরে বাংলা একবার বলেছিলেন যে, ওরা (কলিকাতার বুদ্ধিজীবি আর আনন্দবাজার ওয়ালারা) যদি আমার প্রশংসা করে তাহলে বুঝবে আমি তোমাদের স্বার্থের বিপক্ষ্যে কাজ করছি।
বিকৃত ইতিহাস সম্বিলিত গেরিলা চলচিত্র নিয়ে দাদাদের আনন্দ উচ্ছাস দেখে সে কথাটাই মনে পড়ে গেলো।
নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু সরাসরি আওয়ামি লিগ না করলেও লিগের পক্ষ্যে একজন রাজনৈতিক কর্মি যা করে তার চেয়ে কম কিছু করেন না। অবশ্য সংস্কৃতি চর্চার আড়ালে থেকেই করেন।
২০০৭ সাথে সিলেকশনের নির্বাচনে ব্রুট মেজরিটি নিয়ে ক্ষমতায় আসা আওয়ামি লিগ এবার ইতিহাস পালটে দেবার মতলবে বিভিন্ন আক কসছে। আর সেই আকের অংশ হিসাবেই মতি / বাচ্চুকে দিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করার নিমিত্তে বানিয়েছে গেরিলা।
বঙ্গবন্ধু আমাদের স্বাধীনতার মহান স্থপতি।
কোন সন্দেহ নেই। তাই বলে তিনি যেটা করেননি, কোনদিন দাবিও করেননি, আজ তার কন্যা আর তস্য চামুন্ডারা সে কথাই প্রচার করতে চাইছে।
তবে মতি বাচ্চু গং যদি মনে করে থাকে যে সারা বাংলাদেশের মানুষ হিন্দি আর ফেন্সিডিলের নেশায় আচ্ছন্ন তাহলে ভুল করবে। আর এ কারণেই ছবিটি অনেকে অনেক উৎসাহ নিয়ে দেখতে গেলেও আশাভঙ্গ হয়ে বিতৃষ্ণা নিয়ে ফেরত এসেছে। এক কথায় সুপার ফ্লপ।
আমাদের দুর্ভাগ্য যে শ্রেফ রাজনৈতিক আদর্শকে প্রচার করার নেশায় আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহকারি একজন বীর মুক্তিযদ্ধা মিথ্যাবাদির ভুমিকায় অবতীর্ন হয়ে দেশ ও জাতির সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।