আমি একজন মেকানিক্যাল ইন্জ্ঞিনিয়ার আইসক্রিম একেবারে পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যি ভার। ছোট থেকে বড় সব বয়সের মানুষের মধ্যেই আইসক্রিমের চাহিদা বেশি। কোনোদিন আইসক্রিম খায়নি এমন মানুষ খোঁজার চেষ্টা করা আর আকাশে তারা গুনতে যাওয়া প্রায় একই কথা। মজাদার ও লোভনীয় খাবারটি তৈরি নিয়ে যে কত গালগল্প প্রচলিত তার ইয়ত্তা নেই। সে অনেক অনেক আগের কথা।
৩৭ থেকে ৬৮ খ্রিস্টাব্দের দিকে গল্পের শুরু। রোমের সম্রাট নিরোর সময়ের কথা। এক সন্ধ্যায় তিনি তার দাস-দাসীকে সঙ্গে নিয়ে বেহালা বাজাচ্ছিলেন। সময়টি ছিল গরমকাল। হঠাৎ তার ঠাণ্ডা খেতে ইচ্ছা হলো।
তাই শুনে দাস-দাসীরা ছুটে গেল পাহাড়ের চূড়ায়। সেখান থেকে বরফ সংগ্রহ করে তার সঙ্গে মধু আর ফলের রস মিশিয়ে সম্রাটকে খেতে দিল। সম্রাট মিষ্টি বরফ পেয়ে খুব খুশি হলেন এবং দাস-দাসীদের পুরস্কৃত করলেন। এরপর গরমকাল এলেই সম্রাট নিরোর জন্য এই মিষ্টি বরফ বানানো হতো। এটাই পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম আইসক্রিম খাওয়ার ঘটনা।
দীর্ঘদিন আর আইসক্রিমের খবর পাওয়া যায়নি।
এমনি করে দীর্ঘ ১৩০০ বছর কেটে গেল। ১২৬০ সালে কুবলাই খান জানতে পারলেন, তার রাজ্যে আইসক্রিম নামের উপাদেয় খাদ্যটি তৈরি হচ্ছে। তখন তিনি এ খাদ্যের দিকে বেশ মনোযোগ দিলেন। এ খাবারটি সম্রাটের খুবই পছন্দ হলো।
তাই তিনি ঘোষণা করলেন, এ খবর যেন পড়শী রাজারা জানতে না পারে। কেননা তিনি চাননি এরকম একটি মজাদার খাবারের কথা অন্য কেউ জানুক। কিন্তু কুবলাই খান না চাইলে কি হবে, এই মজার খাবারের কথাটি একদমই চাপা থাকল না। ঠিক সে সময় জাহাজে চড়ে ভারত প্রদক্ষিণ করছিলেন বিখ্যাত পর্যটক মার্কোপোলো। পথিমধ্যে, দূরপ্রাচ্যে গিয়ে মার্কোপোলো খেলেন সুমিষ্ট বরফ।
তিনিও এই বরফ খেয়ে যারপরনাই মুগ্ধ। ঠাণ্ডা সুমিষ্ট বরফখণ্ড তার এতই ভালো লাগল যে, তিনি এর তৈরি প্রণালী জানার ব্যাপারে ভীষণ আগ্রহী হয়ে ওঠেন। শেষপর্যন্ত সফলও হন তিনি। ফেরার পথে তাই এই মজার বরফ তৈরির উপকরণ ও প্রস্তুতপ্রণালী সঙ্গে নিতে ভুললেন না। দেশে ফিরে গিয়ে মার্কোপোলো খাবারটি তৈরি করলেন এবং সবার কাছে প্রশংসিত হলেন।
ক্রমেই খাবারটি জনপ্রিয় হয়ে উঠল। আর এভাবেই ১৫০০ সালের মধ্যে সমগ্রবিশ্বে এ মজাদার খাদ্যটির কথা ছড়িয়ে পড়ল। সে সময়ের ভালো খাবার রাজাদের দরবারে পেঁৗছে যেত। সত্যি বলতে গেলে বলতে হবে সব ভালো খাবারই মূলত তৈরি হতো রাজাকে খুশি করা এবং সন্তুষ্ট করার জন্য। কেননা তখনকার দিনে রাজারাই ছিলেন সবকিছুর পৃষ্ঠপোষক।
নতুন খাবার তৈরির জন্য তাদের পাচকরা দিন-রাত পরিশ্রম করে বিভিন্ন পরীক্ষা চালাতেন। আইসক্রিম নিয়েও রাজার পাচকরা কম পরীক্ষা চালাননি। এভাবেই একসময় বরফের সঙ্গে ক্রিম মিশিয়ে এক ধরনের উপকরণ তৈরি করা হয়।
নতুন এই উপকরণের নাম দেয়া হলো 'ক্রিম আইস'। তবে বরফের সঙ্গে শুধু ক্রিমই থাকত, তা নয়।
বরং খাবারটিকে সুস্বাদু করে তোলার জন্য বিভিন্ন উপাদান মেশানো হতো। এর মধ্যে মধু, ফুলের রস, মাখন প্রভৃতি। এভাবেই ক্রিম আইস দিয়ে বরফের খাবার তৈরি হতে থাকল। ধীরে ধীরে 'ক্রিম আইস' নামটি হয়ে গেল আইসক্রিম। আর সে সময় থেকে সবাই খুব করে আইসক্রিম খেতে শুরু করল।
আইসক্রিম ছড়িয়ে পড়ল বিশ্বের প্রতিটি দেশে এভাবেই। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।