গল্প প্রশস্ত নয়, এমন রাস্তার পাশে বাড়ি। বাড়িতে দু’টি ঘর। একটি পশ্চিমে আর একটি দক্ষিনে। দু’টি ঘরই বেশ পুরনো। দেখলেই বুঝা যায় ঘর দু’টি একশ বা তার বেশি বছরের পুরনো হতে পারে।
ঘর দু’টি ইট দিয়ে তৈরি। শেওলা পড়া বাড়ির দিকে তাকালে মনে হবে ঘর দু’টি পথিকের দিকে চেয়ে বলছে- আমার যত্নের অভাব। কে আছ? আমার যৌবন ফিরিয়ে দাও? আমি আবার হাসতে চাই। পথিকের মনে আনন্দ দিতে চাই। কিন্তু কেউ কথা শুনছে না।
পথিকের মনে প্রশ্ন জাগে- একটি বাড়ির কি করে এমন দশা হল? ঘরের নমুনা দেখলে বুঝা যায় কোন ধনাঢ্য ব্যক্তির বাড়ির ঘরের মত। বেশ বড় আঙ্গিনা ছিল। বাড়ির দনি দিকে অনেক ফাঁকা জায়গা। অথচ কোন গাছ নেই। যেখানে ফাঁকা জায়গা শেষ হয়েছে সেখান থেকে বিরাট বড় বড় গাছ।
একেকটা গাছের বয়স তিনশ থেকে পাঁচশ বছর হতে পারে। অধিকাংশ গাছে পোকা ধরেছে। গাছের ডাল মরে যাচ্ছে। গাছের মধ্যে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাছগুলোর নিচে আরও ছোট বড় গাছ আছে।
যে সব গাছ কখনও আমরা রোপন করি না। এমন অনেক গাছে বিরাট জঙ্গলের সৃষ্টি হয়েছে। দুপুরে অনেক পাখির কিচির মিচির শোনা যাচ্ছে। পথিকের মনে আনন্দের সৃষ্টি হল। এমন স্থান কখনও দেখিনি।
এমন একটা স্থান দেখা মানে স্বপ্ন দেখা কিংবা রূপ কথার রাজ্যে প্রবেশ করা।
দু’টি ঘরের পাশে যে আরও ঘর ছিল তার নমুনা প্রকাশ পায়। উচু করা দেয়ালের চিহ্ন সাক্ষী হয়ে আছে ধনাঢ্য কোন ব্যক্তির বাড়ির পরিচয় দিতে। যে দেখবে সেই বুঝতে পারবে আশেপাশে অন্তত আরও চার থেকে পাঁচটা ঘর ছিল। বাইরের পরিবেশও সে রকম বাড়ির পরিচয় বহন করে।
দণি ঘরের পাশে এখনও বেড়ার ভিতর ফুলের গাছ দেখা যায়। পাতা বাহারের গাছগুলো খুবই চমৎকার। তাছাড়া বিভিন্ন ফুল ও কলি দেখা যায়। প্রকৃতি প্রেমি যে কোন ব্যক্তি এক বার যদি গাছগুলো দেখে সে বার বার দেখতে চাইবে। বাড়ির দক্ষিনের ফাঁকা জায়গায় তাকালে দেখা যায়- পশ্চিম ঘরের আরও পশ্চিম দিক থেকে বেশ দক্ষিনে একটি পুকুর আছে।
সেখানে ঘাট বাঁধানো বুঝা যাচ্ছে। এই বার পথিক ভাবছে- লোকটা বেশ সৌখিন ছিল। আহা! কি কারনে বাড়িটার এমন দশা হল। যে কোনভাবে বাড়ির কর্তার কাছে কথা বলা দরকার। কিন্তু কোন লোক দেখা যাচ্ছে না।
স্থানটা নিরব ও স্তব্ধ।
পথিক চিন্তিত মন নিয়ে কখনও সামনে হাটে আবার কখনও ঘুরে পূর্বের স্থানে চলে আসে। এমনি করে বিরক্ত হয়ে পুকুরের দিকে হাটতে শুরু করে। পুকুর থেকে তিন গজ দূরে থাকতেই বাড়ির দণি ঘর হতে একজন পুরুষের কন্ঠ শুনতে পায়। আপনি কে? কোথায় যাচ্ছেন?
-আমি পথিক।
পুকুর দেখতে চাই আর এই বাড়ি সম্পর্কে জানতে চাই।
-পুকুরে যাওয়া নিষেধ।
-তুমি কে? একটু এদিকে আসবে?
-বলুন। কি বলতে চান?
-এই বাড়ির কর্তা সাহেবের সাথে কথা বলতে পারব?
-আপনি আমার সাথে আসুন। ডেকে দিচ্ছি।
বাড়ির কর্তা সাহেব আসল। আপনি কি বাড়ির কর্তা সাহেব? পথিক বলল।
-হ্যা। বলুন?
পথিক কর্তা সাহেবের কথায় ল্য করল- খুবই কড়া স্বভাবের। তাই বিনয়ের সাথে বলল- আপনার বাড়িটা দেখে মনে হচ্ছে খুবই সম্ভ্রন্ত পরিবারের।
কিন্তু আশ্চর্য হলাম ঘর দু’টি দেখে। আমার কৌতুহল হল- আপনাদের সম্পর্কে জানতে। দেখি কোন উপকার করতে পারি কি না।
-বাবার কাছে শুনেছি পৈত্রিক সূত্রে দাদার দাদা অনেক জমি জমার মালিক ছিলেন। দাদার বাবা যখন কলেরা রোগে মারা যান দাদা তখন ছোট।
শুধু বাগান বাদ দিলে আর যা কিছু আছে সবই দাদার বাবা রেখে গেছেন। কিন্তু দাদা এসব ধরে রাখতে পারেনি। তিনি মানুষকে বিলিয়ে দিতে দিতে এক সময় নিজেই আর্থিক সংকটে পড়েন। ছেলে মেয়ে বড় হতে থাকলে আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। এক মাত্র বাবা ছাড়া সব সন্তান দাদাকে রেখে চলে যায়।
দাদা দুই ছেলে ও এক মেয়েকে দেখার জন্য অনেক আগ্রহ ছিল। তিনি ডাকতেন হবি-দিনু-মিনু তোরা কই গেলি। আমাকে এক বার দেখে যা। তোদেরকে অনেক ভালবাসি। তোদের উপর আমার কোন রাগ নেই।
বাবা হয়ে ছেলে মেয়ের প্রতি কষ্ট রাখলে ছেলে-মেয়ের অমঙ্গল হয়। তোদের অমঙ্গল চাই না। এক বার এসে বুকটা ভরিয়ে দিয়ে যা। দেখে যা। তাতে অন্তত আমি ভাবব তোরা বেচে আছিস।
উনার শরীর পুরো সুস্থ থাকতে তিন জনের এক জনও এল না। উনি যখন প্যারালাইসিস হয়ে বিছানায় তখন এক এক করে তিন জনই আসছে। তাদেরকে দেখে খুবই আনন্দিত হয়েছিলেন। উনার সমস্ত শরীর সুখের আভাস দিচ্ছিল।
-তারপর।
-তারপর সবার কাহিনী জানা হল- কে কি অবস্থায় ছিল।
-কি অবস্থায় ছিল তারা।
-তিন জন এক সাথে বের হয়। পাচারকারীর খপ্পরে পরে বন্দী থাকে। এক এক করে তিন জনকেই পাচার করা হয়।
যার কাছে পাচার করা হয়, তাকে বলে- আপনার দাম আমরা কাজের বিনিময়ে দিব। আমাদেরকে মুক্ত করে দিন। তখন এক এক করে মুক্তি দিতে শুরু করে। আর একে একে তিন জনই বাবার কাছে আসে।
-এখনও আপনার বাড়ির এমন অবস্থার কারন জানতে পারছি না।
-দাদার বাবা যে সব ঘর তৈরি করেছিলেন সে সব ঘর ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে এখন এই দু’টি ঘর আছে। এসব ঘর মেরামত করতে যে টাকা ব্যয় করা হবে তা দিয়ে প্রায় নতুন ঘর করা যাবে।
-নতুন অট্টালিকা করবেন কখন?
-দুই ছেলে বিদেশে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করছে। ছয় মাস পর যখন তারা দেশে আসবে তখন নতুন বিল্ডিং এর কাজ শুরু করব।
-আপনার বাড়ি দেখে আমার পছন্দ হয়েছে।
আপনি না করতে পারবেন না। এই নিন ব্যাগ। এতে চার ল্য টাকা আছে। এক বছর পর টাকা ফেরৎ নিব। নিশ্চিত মনে কাজ শুরু করে দিন।
দুই ছেলে বিদেশ থেকে আসল। বিরাট বড় বিল্ডিং এর কাজ শেষ হল। পথিকের কথা এক বছর পর আসবে। কিন্তু পাচ বছর হল এখনও আসছে না। চার ল্য টাকা ফেরৎ দিতে চায়।
কিন্তু পথিকের নাম পরিচয় কেউ জানে না।
এখন কর্তা সাহেবের মনে প্রশ্ন- পথিক কেন টাকা নিতে আসছে না? সে কি সন্ত্রাসী, ডাকাত বা ঋন খেলাপী? সে কি সাধু ব্যক্তি? তার টাকা নিয়ে আমরা কি পাপ করছি?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।