আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার বাড়ি তোমার বাড়ি ফুলবাড়ি ... ১

কহ কানে কানে শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলও বারতা

সভ্যতার শুরুতে আগুন পথ দেখিয়েছিল মানুষ কে । বতমান সময়ে বিদ্যুৎ ছাড়া আধুনিক জীবন অকল্পনীয় । শহরাঞ্চলের মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা খানিকটা পেলেও দেশের প্রায় ৫৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। গ্যাসের সুবিধা পায় দেশের মাত্র ১৪ থেকে ১৫ ভাগ মানুষ। তারপরও লোডশেডিং আমাদের নিত্যসঙ্গী।

গ্যাসের সংকট কতটা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তা বোঝা যায় যখন সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয় বা নতুন শিল্প-কারখানায় গ্যাস সংযোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এক সময় বাংলাদেশকে বলা হত তলাবিহীন ঝুড়ি’। এখন শোনা যাচ্ছে, এদেশ মোটেই তলাবিহীনঝুড়ি’ নয়! ঝুড়ির মাটির তলায় তেল-গ্যাস-কয়লা ইত্যাদি খনিজ সম্পদের সমৃদ্ধ ভান্ডার। গ্যাস-কয়লা লুট করার জন্য সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আমাদের শাসকগোষ্ঠীও ওদের লুণ্ঠনে সহায়তা করছে।

দেশের গ্যাসক্ষেত্রগুলি একে একে বিদেশি কোম্পানিগুলির কাছে ইজারা দেওয়া হল। এখন ওদের কাছ থেকেই আমাদের নিজেদের গ্যাস আন্তর্জাতিক বাজারদরে বেশি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। লোকসান দিতে হচ্ছে বছরে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা । এমন কথাও বলা হল যে গ্যাস মাটির নীচে রেখে দিলে লাভ কি, তার চেয়ে বিদেশে রপ্তানি করাই ভালো। বাংলাদেশ থেকে হাজার মাইল পাইপ লাইন দিয়ে ভারতে গ্যাস রপ্তানির সমস্ত আয়োজন করা হল।

তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতৃত্বে দেশের মানুষ আন্দোলন করে সে চক্রান্ত প্রতিহত করেছে। এরপর আক্রমন নেমে এল সমুদ্রবক্ষের গ্যাসক্ষেত্রগুলোর ওপর। বঙ্গোপসাগরের মাটিরতলায় গ্যাসের বিপুল মজুদ আছে। সমুদ্রের তলা থেকে গ্যাস তোলার ক্ষমতা আমাদের নেই - একথা বলে সমুদ্রবক্ষের গ্যাসক্ষেত্রগুলো বিদেশি কোম্পানিগুলোর কাছে ইজারা দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হল। এর মধ্যে দিনাজপুর জেলার ফুলবাড়ী কয়লাখনি সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ একটি ব্রিটিশ কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত শুরু হয়।

আমাদের দেশের কয়লা অত্যন্ত উন্নত মানের এবং দামী। কিন্তু দেখা গেল, চুক্তি মোতাবেক ওই কয়লাখনি থেকে রয়ালিটি হিসাবে বাংলাদেশ পাবে মাত্র ৬ ভাগ। এশিয়া এনার্জি ওই কয়লাখনি থেকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করার ঘোষণা দেয়। উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনি করা হলে ওই অঞ্চলের মানুষ ভিটেমাটি হারাবে, কৃষি জমি ধ্বংস হবে, গোটা পরিবেশ বিনষ্ট হবে। ফলে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় সারাদেশের মানুষ, ফুলবাড়ীর জনগণ সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

ফুলবাড়ীর সংগ্রামী মানুষ বুকের রক্ত ঢেলে সেদিন সরকার ও এশিয়া এনার্জির অশুভ তৎপরতা রুখে দিয়েছিল। আজ গোটা দুনিয়া জুড়ে জ্বালানি নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তেমনি পরিবেশ দূষণ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বা জলবায়ু পরিবর্তনও মারাত্মক হুমকি হিসাবে উপস্থিত হয়েছে। শুধু ফুলবাড়ী কয়লাখনি নয়, দেশের প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ নিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত এবং পরিকল্পনা নেওয়ার আগে এসব বিষয় বিবেচনা করা উচিত। * জ্বালানিসংকট ওনিরাপত্তাএবংকয়লারব্যবহার এখন প্রায়ই বলা হয় যে, বাংলাদেশের বর্তমান জ্বালানি সংকট এককভাবে গ্যাস দ্বারা মেটানো সম্ভব নয়। আবার গ্যাসক্ষেত্রসমূহ বিদেশি কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার ফলে একদিকে তারা গ্যাস উত্তোলন না করে সংকট বৃদ্ধি করেছে, অন্যদিকে সরকারের কাছ থেকে বেশি অর্থ আদায় করছে।

গত ২১ মার্চ ২০১০ দৈনিক যুগান্তর লিখেছে ‘বিদেশি তেল কোম্পানিগুলো গ্যাস উত্তোলনে সরকারি কোম্পানির তুলনায় ৪ গুণেরও বেশি অপারেটিং ব্যয় আদায় করছে। কাজেই বিদেশি মালিকানায় থাকলে তা দেশের সারথ কতটুকু রক্ষা করবে এ প্রশ্ন আজ সবার। গ্যাস ছাড়া অন্য যে জ্বালানির প্রতি সবার দৃষ্টি তা হচ্ছে কয়লা। এ কয়লা কীভাবে উত্তোলন করা হবে, মালিকানা কার হাতে থাকবে, দেশের প্রয়োজনে নাকি রপ্তানির উদ্দেশ্যে কয়লা উত্তোলন করা হবে, আমরা কি ভবিষ্যৎ সংকটের গহ্বরে পরবে কি না- এ প্রশ্ন আলোচিত হচ্ছে। * উন্মুক্ত পদ্ধতিতে উত্তোলনের চক্রান্ত এবং জনগণের প্রতিরোধ এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন পদ্ধতি নির্ধারণের আলোচনা না করেই এশিয়ান এনার্জি নামক একটি সম্পূর্ণ নতুন ও অনভিজ্ঞ কোম্পানি রহস্যজনকভাবে ফুলবাড়ী কয়লাখনির কতৃর্ত লাভ করে।

তারা উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রস্তুতি ও প্রচারণা শুরু করে। এর প্রতিবাদে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, বিরামপুর, পার্বতীপুর, নবাবগঞ্জ থানার জনগণ সম্মিলিতভাবে মানব ও পরিবেশ বিধ্বংসী উন্মুক্ত খনি বন্ধ করা এবং জনগণের সম্পদ লুণ্ঠনের চক্রান্ত প্রতিরোধে এগিয়ে আসে। ২০০৬ সালের ২৬ আগস্ট প্রায় ৮০ হাজার মানুষ এশিয়া এনার্জির অফিস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। তাদের দাবি ছিল উন্মুক্ত খনি প্রকল্প বাতিল করতে হবে এবং এশিয়া এনার্জিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। কর্মসূচি শেষে মানুষ যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন বিডিআর জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে।

গুলিতে সঙ্গে সঙ্গেই তিনজন কিশোর তরিকুল, আমিন ও সালেকিন মৃত্যুবরণ করে। আহত হয় দুই শতাধিক যার মধ্যে গুলিবিদ্ধ ছিলেন আরও দশজন। এদের মধ্যে বাবুল রায় চিরস্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হয়েছেন। এশিয়া এনার্জি প্রভাবিত সরকারি বাহিনীর গুলি করার উদ্দেশ্য ছিল গুলি করে, ভয় দেখিয়ে জনগণের আন্দোলন বন্ধ করা। ২৬ আগস্ট বিকেলের হত্যাকান্ডের পর বিডিআর, পুলিশ এবং সরকার দলীয় সন্ত্রাসীরা পুরো এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে।

অস্ত্রের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলে নারী ও শিশুরা। প্রতিরোধ অভ্যুত্থানের রূপ নেয়। পার্শ্ববর্তী ছয় থানার লক্ষ লক্ষ মানুষ ঐক্য ও সংহতির এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। লাগাতার কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। জনগণের প্রবল প্রতিরোধের মুখে সরকার মাথা নত করতে বাধ্য হয় এবং ৩০ আগস্ট আন্দোলনকারী জনগণের সাথে ৬ দফা চুক্তি করে।

এ চুক্তির প্রথম দফাটি ছিল :- এশিয়া এনার্জির সাথে সকল চুক্িত বাতিল করে এশিয়া এনার্জিকে ফুলবাড়ীসহ ৪ থানা ও বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার করতে হবে। ফুলবাড়ীসহ ৪ থানা ও বাংলাদেশের কোনো জায়গায় উন্মুক্ত মুখ খনন পদ্ধতিতে কয়লাখনি হবে না। অন্য কোনো পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করতে হলে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে করতে হবে। এই চুক্তির ফলে জনগণের ক্ষোভ প্রশমিত হয়। কিন্তু ষড়যন্ত্র বন্ধ হয়নি * ফুলবাড়ীর কয়লা, এশিয়া এনার্জির প্রচারণা এবং আমাদের বাস্তবতা ... ২০০৫ সালের শুরু থেকে ফুলবাড়ীতে এশিয়া এনার্জি যেভাবে কাজ করেছে, যেভাবে প্রচারণায় নেমেছিল তাতে মনে হওয়া সবাভাবিক ছিল যে এই প্রতিষ্ঠান কয়লাখনি ইজারা পেয়ে গেছে।

ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প নিয়ে এশিয়া এনার্জির বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় প্রচারিত বহুরঙা প্রকাশনায় জনগণের উদ্দেশ্যে অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। এশিয়া এনার্জি যে প্রকাশনা বের করেছিল তার নাম ফুলবাড়ী কয়লা প্রকল্প এতে তারা মিথ্যা তথ্য, আশ্বাস আর প্রলোভনের কথা লিখেছিল যার কিছুটা উল্লেখ করা হল। উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি প্রসঙ্গে তারা বলেছে “আনুমানিক ৩০ বছর ধরে খনির খনন প্রক্রিয়াটি কয়লাক্ষেত্রে লম্বালম্বি (উত্তর দক্ষিণ) অগ্রসর হবে” (পৃ:-৬)। এর যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠার জন্য বলেছে, “যদিও বাংলাদেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিটি নতুন কিন্তু পৃথিবীর অন্যান্য দেশে যেখানে একই রকম ভূতাত্ত্বিক ও হাইড্রোলজিক্যাল অবস্থা বিদ্যমান, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া এবং জার্মানিতে এই পদ্ধতিটি সফলভাবে পরীক্ষিত এবং এটি অধিক ফলদায়ক ও নিরাপদ” (পৃ:-৫)। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা তথ্য ও দুরভিসন্ধিমূলক প্রচার।

কারণ অস্ট্রেলিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানিসহ যেসব দেশে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতি নেয়া হয়েছে তার সবগুলোই পাহাড়ি এলাকায় বা মরুভূমিতে। তাদের মালিকানা দেশীয় সংস্থার হাতে। তাদের জাতীয়ভিত্তিক জনসংখ্যার ঘনত্ববাংলাদেশের চাইতে অনেক কম। যেমন, প্রতি বর্গকিলোমিটারে জনসংখ্যার ঘনত্ব অস্ট্রেলিয়ায় ৩, ইন্দোনেশিয়ায় ১২১, জার্মানিতে ২২৯, ভারতে ৩৬১, আর বাংলাদেশে ১১২৬ জন। ওইসব কারণে মাটির উপরের সম্পদ নষ্টও হয়েছে কম।

বাংলাদেশের কয়লাখনিগুলো সমতল ভূমিতে। প্রধানত কৃষি এলাকায়। উপজেলা শহর হওয়ায় দোকান-পাট, ব্যবসা-বাণিজ্য রয়েছে এসব এলাকায়। পৃথিবীর কোনো দেশেই এত ঘনবসতিপূর্ণ ও উর্বর আবাদি জায়গায় উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে মাইনিং করার উদাহরণ নেই। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার মতো অতি কম ঘনবসতিপূর্ণ দেশেও আবাদি জায়গায় উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন করার বিরুদ্ধে সে দেশের মানুষ খুবই সোচ্চার।

অস্ট্রেলিয়ার সুরাট বেসিন, গ্যালিলি বেসিন, ওয়াশপুল কোল প্রজেক্ট, রেডহিল কোল প্রজেক্ট, বার্টন প্রজেক্ট, এপ্লেনস ফিল্ড প্রজেক্ট, ওয়াল্লানবাহ প্রজেক্ট - এগুলো সবই পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত, জনবসতি থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে। একই কথা প্রযোজ্য জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, এমনকি ভারতের ক্ষেত্রেও। ইন্দোনেশিয়া একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। ১৭,৫০৮টি দ্বীপ নিয়ে দেশটি গঠিত। কাজেই কৃষি জমি নষ্ট হওয়া বা জনসংখ্যার স্থানান্তর বা পুনর্বাসন কোনো সমস্যা নয়।

উন্মুক্ত খনির ক্ষেত্রে কয়লা-স্তরের গভীরতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জার্মানির মাটির গঠন, পানির স্তর, বৃষ্টি, বন্যার ধরন কোনোটাই বাংলাদেশের মতো নয়। তারওপর কয়লাখনিগুলো অগভীর এবং পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। অস্ট্রেলিয়া উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে প্রধানতম দেশ। জনবসতিহীন বিশাল এলাকা থাকার পরও উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন করতে কয়লা স্তরের গভীরতা ভূগর্ভে সর্বোচ্চ ১২০ মিটার পর্যন্ত বিবেচনা করা হয়।

ওয়াশপুর কোল প্রজেক্টের কয়লা স্তর ৬০ মিটার, বার্টন প্রজেক্ট ১০০ মিটার, এল্লেনসফিল্ড প্রজেক্ট ১২০ মিটার এবং ওয়াল্লানবাহ প্রজেক্ট ৯০ মিটার গভীরতা বিশিষ্ট। রেড হিল কোল প্রজেক্টে ১০০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এবং এর নীচের দিকে অর্থাৎ ১৫০-৩০০ মিটার পর্যন্ত গভীরতায় ভূগর্ভস্থ খনন পদ্ধতিতে কয়লা আহরণ করা হচ্ছে। কাপ্পাবেল্লা খনিও ১৫০ মিটার পর্যন্ত উন্মুক্ত পদ্ধতি এবং এরপরে নীচের দিকে ভূগর্ভস্থ খনন করা হয়েছে। ভারতের রাজস্থান প্রদেশের চাঁদমারী খনির সর্বোচ্চ গভীরতা ১৪৮ মিটার। বিহার রাজ্যের লাজকুরা কয়লাখনিতে যেখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা হচ্ছে সেখানে কয়লা মাত্র ২২ মিটার গভীরে।

ভারতের অন্যতম বৃহৎ কয়লাখনি হলো বিহার রাজ্যের যারিয়া কয়লাখনি, যা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৪০ কিলোমিটার, প্রস্থে ১২ কিলোমিটার। ৫০টি কয়লাস্তর সমৃদ্ধ এই কয়লাখনির ৭০ মিটার গভীরতা পর্যন্ত উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এবং এরপর থেকে নীচের দিকে ভূগর্ভস্থ মাইনিং খনন পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট যে, ফুলবাড়ী বেসিনে যেখানে কয়লা স্তর ভূগর্ভের ১৫০ থেকে ৩৫০ মিটার গভীরতার মধ্যে অবস্থিত এবং যা বিশাল পানিবাহী শিলাস্তর দিয়ে আবৃত, সেখানে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খনন করলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় অনিবার্য। এখানে উল্লেখ্য যে, অস্ট্রেলিয়া-ভিত্তিক ব্রোকেন হিল প্রোপ্রাইটরি (বিএইচপি) নামক কোম্পানি ফুলবাড়ীতে খনি খননের আগ্রহ দেখিয়েছিল। তাদের টার্গেট ছিল, ফুলবাড়ী কয়লা বেসিনে যদি ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০০ মিটার গভীরতায় কয়লার সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে এটাকে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে খননের জন্য বিবেচনা করবে।

এর আগে এ কোম্পানিটি পাপুয়া নিউগিনির একটি প্রজেক্টে উন্মুক্তখনন পদ্ধতির ফলে ভয়াবহ পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটায় এবং ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়। ওই তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে বিএইচপি কোম্পানি ফুলবাড়ীতে ড্রিলিং শেষে ভূগর্ভের ১৫০ থেকে ৩৫০ মিটার গভীরতায় কয়লা পাওয়ার পর তারা হতাশ হয় এবং ফুলবাড়ীতে তাদের কাজ সমাপ্ত করে। এরপর ফুলবাড়ী বেসিনের লিজ নেয় এশিয়া এনার্জি। বিশ্বের কোথাও এশিয়া এনার্জির ন্যূনতম কোনো মাইনিং অভিজ্ঞতা নেই !!! (চলবে) তথ্যসূত্র ঃ ১. তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রকাশনা ও প্রচারপত্র। ২. সাপ্তাহিক একতা , ভ্যানগারড সহ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.