আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজার মাথার শিং এবং শেখ হাসিনার জাতিসঙ্ঘ সফর..........ঈদের বিনুদন রচনা

মানবিক দায় ও বোধহীন শিক্ষা মানুষকে প্রশিক্ষিত কুকুরে পরিণত করে....আইস্ট্যাইন। উর্দু বা হিন্দি ভাষার একটি লোককাহিনী। হঠাৎ করে দেখা গেল রাজা আর মাথার পাগড়ি খোলেন না। দিনেও না, রাতেও না, ঘুমাতে গেলেও না। একদিন রাজা হাজাম (নাপিত) বাব্বানকে তলব করলেন খাস কামরায়।

মাথার পাগড়ি খুললেন তিনি। স্তম্ভিত নাপিত দেখল রাজার মাথার দুই দিকে দু’টি শিং উঠেছে। রাজা বললেন, শিং দুটো কেটে ফেলো। আর আমার মাথায় যে শিং হয়েছে সে কথা কাউকে কখনো বলতে পারবে না। বললে তোমার গর্দান যাবে।

নাপিত রাজার শিং হওয়ার কথা কাউকে বলে না। অঘোরে গর্দান যাওয়ার ভয় তাকে আতঙ্কিত রাখে। কিন্তু এত বড় গোপন কথা পেটে গিজ গিজ করছে, আধা সিদ্ধ চাল খেলে যেমন হয়। অনেক ভেবেচিন্তে নাপিত একদিন গেল শহর থেকে অনেক দূরে, খোলা মাঠে। একটা গর্ত খুঁড়ল মাটিতে।

গর্তে মুখ রেখে বলল, ‘রাজাকা সর্‌ পর্‌ দো শিং হুয়াথা। ’ বলেই আবার মাটিচাপা দিয়ে গর্তটা বন্ধ করে দিলো। কয়েক দিনের মধ্যেই সে গর্ত থেকে একটা চারাগাছ উঠল। তর্‌তর্‌ করে বড় হতে লাগল গাছটি। লোকে দেখে আর প্রশংসা করে- ভারি সুন্দর সে গাছ।

একদিন এক বাদ্যযন্ত্র নির্মাতা কারিগর এসে গাছটা কেটে নিয়ে গেল। সে গাছের কাঠ থেকে কারিগর বানাল তিনটা বাদ্যযন্ত্র- একটা বেহালা, একটা দোতারা আর একজোড়া তবলা-বাঁয়া। এক ক্রেতা এসে বেহালাটা বাজিয়ে দেখতে চাইল। বেহালায় সুর বেজে উঠল, ‘রাজাকা সর্‌ পর্‌ দো শিং হুয়াথা। ’ দোতারা বাজানোর চেষ্টা করতেই সুর উঠলো, ‘কিস্‌নে কাহা? কিস্‌নে কাহা? কিস্‌নে কাহা?’ আর তবলা-বাঁয়ায় চাটি দিতেই শোনা গেল, ‘বাব্বান হাজাম নে কাহা, বাব্বান হাজাম নে কাহা।

’ সেসব বাদ্যযন্ত্র দিয়ে পরে কী করা হয়েছিল গল্পে বলা হয়নি। কিন্তু সারকথা হলো, সত্য কখনো চিরদিন গোপন থাকে না। যা সত্য তা একদিন না একদিন প্রকাশ পাবেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ১০ দিনের নিউ ইয়র্ক সফর শেষ করে দেশে ফিরলেন, মন্ত্রীরা বিমানবন্দরে তাকে লালগালিচা সংবর্ধনা দিলেন। প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করে এ সফরে তার ‘বিজয়ের’ কথা বললেন।

কাণ্ডকারখানা দেখে মনে হতে পারত, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যেন ‘লঙ্কা জয়’ করে ফিরেছেন। বড় দরের কোনো সাফল্য নিয়ে আসা প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল। তার সফরের তুলকালাম আয়োজনদৃষ্টে সেটা হওয়া অবশ্যই প্রয়োজনীয় ছিল। ভেবে দেখুন। নাইন-ইলেভেনের পর থেকে আমেরিকার নিরাপত্তা ব্যাবস্হা এমনিতেই অস্বাভাবিক কঠোর।

জাতিসঙ্ঘের অধিবেশনের সময় নিউইয়র্কে সে কঠোরতা বহু গুণে বাড়িয়ে তোলা হয়, সে জন্যই অভ্যাগত রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানেরা দুয়েকজন দেহরক্ষী ছাড়া আর নিজস্ব কোনো নিরাপত্তা ব্যাবস্হা সাথে আনেন না। কিন্তু বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বোধ হয় নিজেকে লিবিয়ার অপমানিত ও বিতাড়িত প্রেসিডেন্ট কর্নেল গাদ্দাফির সমতুল্য মনে করেন। গাদ্দাফি একবার বিশাল এক নিরাপত্তা বাহিনী আর বর্ণাঢ্য তাঁবু নিয়ে জাতিসঙ্ঘে হাজির হলেন, দাবি করলেন, ম্যানহাটানে তাঁবু খাটিয়ে এবং নারী দেহরক্ষীসহ নিজস্ব নিরাপত্তা বাহিনী পরিবেষ্টিত হয়ে সেই তাঁবুতে থাকবেন তিনি। কূটনৈতিক নাতি-নাতনি শেখ হাসিনার সফরের আগেই জনৈক ব্রিগেডিয়ার জেনারেলের অধীনে ১০ জন নিরাপত্তা সৈনিক নিউইয়র্কে চলে গেল। প্রধানমন্ত্রীর সাথে গিয়েছিল সমান আকারের আরো একটা নিরাপত্তা দল।

পররাষ্ট্র দফতরের ১০ জন কর্মকর্তাও আগাম গিয়েছিলেন নিউ ইয়র্কে। শেখ হাসিনার সাথে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতর আর পররাষ্ট্র দফতরের ৩৫ জন কর্মকর্তা। পেশাদার কূটনীতিকদের ওপর বোধ হয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভরসা করতে পারেন না। সে জন্য বিদেশ সফরে যাওয়ার সময় অবশ্যই ছোটবোনকে সাথে নিয়ে যান। এবারে পরিবারের অন্যান্য সদস্যকেও সাথে নিয়ে গিয়েছিলেন- সম্ভবত কূটনৈতিক কাজে সহায়তা করার জন্য।

সব মিলিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ১৯ জন সদস্য ছিলেন জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশ ডেলিগেশনে। শুনেছি সৌদি আরবের বাদশাহ ছুটিতে যাওয়ার সময় আত্মীয়স্বজন সবাইকে সাথে নিয়ে যান। বাংলাদেশের কোনো পত্রিকায় পড়েছিলাম কে বা কারা যেন নিউইয়র্কে শেখ হাসিনাকে কী একটা পুরস্কার দিয়েছে। এতই অজানা-অচেনা সে পুরস্কার যে, নামটা কিছুতেই মনে আসছে না। ডিগ্রি আর পুরস্কার সম্বন্ধে কারো কারো দুর্বলতার কথা সবারই জানা আছে।

কলকাতার সাময়িকী ‘দেশ’ কী লিখেছে আসলে কিন' যেসব সাংবাদিক এবারে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে গিয়েছিলেন তারা দেখেছেন একটা করুণ দৃশ্য। থাক, আমি নিজে কিছু বলতে চাই না। কলকাতার আনন্দবাজার ঘরানার বহুল প্রচারিত সাময়িকী ‘দেশ’ কী লিখেছে তারই খানিকটা তুলে দিচ্ছি। সাময়িকীর বিশেষ প্রতিনিধি নিউইয়র্ক থেকে লিখেছেন, ‘ভারতের কাছ থেকে তিস্তার চুক্তি না পাওয়ার দুঃখ যখন কাঁচা ক্ষতের মতো, সে সময় আরো একটি বড় মাপের কূটনৈতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ল বাংলাদেশ। সে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভাঙা মন নিয়ে আন্দোলনে সরগরম স্বদেশে ফিরতে হচ্ছে।

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৬৬তম অধিবেশনে যোগদানের জন্য দেড় সপ্তাহ ধরে নিউ ইয়র্কে বসে তিনি মার্কিন প্রশাসনের সাথে ভেস্তে যাওয়া আস'া মেরামতির লক্ষ্যেই মূলত সচেষ্ট ছিলেন। কিন' প্রেসিডেন্ট ওবামার সাথে স্রেফ ‘হাই, হ্যালো’ ছাড়া আর কিছুই হয়নি। মার্কিনিরা তাকে এড়িয়ে চলেছেন। এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাকে একধরনের বয়কটও করেছেন। ’ ‘দেশ’ সাময়িকীর বিশেষ প্রতিনিধি আরো লিখেছেন, “একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত ও যাচাইকৃত তথ্যানুযায়ী, নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা হওয়ার আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী-উপদেষ্টারা হন্যে হয়ে চেষ্টা করছিলেন যেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ওবামার বা পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সাথে নিদেনপক্ষে একটা ফটোসেশন বা ৫ মিনিটের বৈঠক করা যায়।

কিন' কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। কোনো না কোনোভাবে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার পরিবার ও কয়েকজন সফরসঙ্গীর জন্য সবচেয়ে দামি হোটেল ‘ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়া’য় থাকার ব্যবসা করা হয়। সেখানে বরাবরের মতো উঠেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কিন' বিধিবাম- একই ভবনের বাসিন্দাদের সেখানে চোখাচোখি পর্যন্ত হয়নি। জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্হায়ী প্রতিনিধির কার্যালয় থেকে সাংবাদিকদের বলা হচ্ছিল যে, সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত বৈঠকের এক মঞ্চে হিলারি ক্লিনটন ও শেখ হাসিনা বসবেন।

শেখ হাসিনা প্রস্তুত হয়ে গিয়েছিলেন হিলারি ক্লিনটনের সাথে আলাদাভাবে কথা বলতে। কিন্তু দেখা গেল, হিলারি সেখানে যাওয়ার কর্মসূচি শেষ মুহূর্তে বাতিল করে দেন। ” ফাঁকা খাজাঞ্চিখানা : ঋণ করে ঘি খাওয়া অর্থাৎ পেশাদার কূটনীতিকদের তো বটেই, প্রধানমন্ত্রীর নাতি-নাতনিদের কূটনীতিও কোনো কাজে লাগেনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা তাকে পাত্তা দেননি। হিলারি ক্লিনটন ড. ইউনূসের প্রতি শেখ হাসিনার অন্যায় আচরণ আর বাংলাদেশে মানবাধিকারের চরম অবমাননার প্রতিবাদে এপ্রিল মাসে বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছিলেন, এবারে নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে তিনি সযত্নে এড়িয়ে গেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ঝালাই করার সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলো। অথচ নিউইয়র্কের সবচেয়ে ব্যয়বহুল হোটেলে একরাশ অপ্রয়োজনীয় আমলা ও নিরাপত্তা বহর আর পরিবার-পরিজনদের বিল, এমনকি জন্মদিনের পার্টির বিলও নাকি গুনতে হয়েছে দরিদ্র ও অর্থনৈতিক সঙ্কটে জর্জরিত বাংলাদেশকে। এই অর্থনৈতিক সঙ্কট কত গুরুতর তার কিছুটা বিবেচনা এ রকম : বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শোচনীয়ভাবে কমেছে। বিদেশী বাণিজ্যের দায় পরিশোধ এবং বাজেটের ঘাটতি মেটানোর জন্য বিশ্বব্যাংক আর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কাছে ঋণ চাইতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত প্রধানমন্ত্রীর উপসি'তিতেই নিউ ইয়র্কে গিয়েছিলেন। বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে রাজি হবে কি না নিশ্চিত নয়।

বাংলাদেশে পর্বত-প্রমাণ দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংক ভয়ানক উদ্বিগ্ন। এ কারণে পদ্মা সেতুর অর্থ জোগান দিতে বিশ্বব্যাংক অস্বীকার করছে, মহাখালী ফ্লাইওভার নির্মাণের কন্ট্রাক্টও নিষিদ্ধ করে দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। এদিকে সরকারের দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ হচ্ছে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সর্বসাধারণের গচ্ছিত অর্থ ঋণ নিয়ে। শোনা যাচ্ছে ব্যাংকগুলোর এখন মজুদ টাকার অভাব, আর ঋণ দিতে তারা সক্ষম নয়। সরকার সেজন্য নতুন নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে ঋণ করার বিকল্প সূত্র সৃষ্টি করছে।

কেউ কেউ সন্দেহ করেন, আওয়ামী লীগের লোকজনের অসাধু উপায়ে অর্জিত টাকার পাহাড়কে ধোলাই করাও সরকারের একটা উদ্দেশ্য। সরকারের আরো কিছু গোপন ছলনাও ফাঁস হয়ে গেছে গত সপ্তাহে। মিডিয়ায় হঠাৎ করে ফাঁস হয়ে গেল যে, ২৭ সেপ্টেম্বর রাতে ঢেউটিন বলে বর্ণিত ২৮টি প্যাকেট আশুগঞ্জ নদীবন্দরে আসে। জাহাজ থেকে সেসব মাল খালাস করার জন্য ভারতের একটা ক্রেইনও এসেছিল। সেসব মাল চেকিং করা কিংবা শুল্ক নির্ধারণ করার জন্য আশুগঞ্জ কিংবা আখাউড়ায় বাংলাদেশ কাস্টমস বিভাগের কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না।

মালগুলো চারখানি ট্রাকযোগে আখাউড়া হয়ে আগরতলায় চলে যায়। বলা হয়েছিল, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ত্রিপুরা রাজ্যে মালগুলো গেছে ‘পরীক্ষামূলক’ভাবে। কিন' হাবেভাবে মনে হচ্ছে, সে ‘পরীক্ষা’ স'ায়ী হতে চলেছে। এ কলাম লেখার সময় পর্যন্ত মোট চারখানি ভারতীয় জাহাজ আশুগঞ্জ বন্দরে ভিড়ে আছে। আরো দু’খানি নাকি পথে আছে।

বলা হয়েছে যে, চলতি বছরে ২৫ হাজার টন ‘ঢেউটিন’ আশুগঞ্জ আর আখাউড়া হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতে যাবে। এসব পণ্য চেক করার কিংবা তার ওপর শুল্ক এবং ট্রানজিট ফি আদায় করার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না শেখ হাসিনার সরকার। ভর্তুকি দিয়ে ট্রানজিট সুবিধা শুল্ক এবং ফি ছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা আছে এখানে। এই যে হাজার হাজার টন মাল যাচ্ছে আগরতলা হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে, সেগুলো প্রকৃতই কি ঢেউটিন? চালানগুলোতে উলফা প্রভৃতি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য, কিংবা চীনের সাথে অমীমাংসিত ও উত্তেজনাপূর্ণ সীমান্তে শক্তি বাড়ানোর জন্য যে অস্ত্র যাচ্ছে না, সেটা আমরা কী করে বুঝব? ভুয়া ম্যানিফেস্টো দেখিয়ে অবৈধ ও মারাত্মক বস' চালান দেয়ার দৃষ্টান্ত বিশ্বব্যাপী। মালগুলো সত্যি সত্যি ঢেউটিন হলেও এ সম্ভাবনা দেখা দেয় যে, চীনের সাথে সম্ভাব্য যুদ্ধের প্রস'তির জন্য যেখানে সামরিক শক্তি বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে ব্যারাক নির্মাণের জন্যও হয়তো এসব টিন পাঠানো হতে পারে।

চীন অবশ্যই সেটাকে ভালো চোখে দেখবে না। হাসিনার সরকার কি একসাথে ওয়াশিংটন আর বেইজিংয়ের সাথে অসদ্ভাব সৃষ্টি করতে চায়? সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ভারতের কাছ থেকে যেকোনো রকম শুল্ক কিংবা ফি নেয়া হচ্ছে না শুধু সেটাই নয়, কার্যত উল্টে এসব মাল পার করার জন্য ভারতকে ভর্তুকি দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ড. ভট্টাচার্য বলেছেন, বাংলাদেশের নৌযানগুলো ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি তেল পায়, পরিবেশদূষণের জন্য তাদের ওপর কোনো কর ধার্য করা হয় না এবং সাধারণত জাহাজঘাট ব্যবহার ইত্যাদির জন্য তাদের কোনো চার্জ দিতে হয় না। দেখা যাচ্ছে, আশুগঞ্জে মাল নিয়ে আসা ভারতীয় জাহাজগুলোকেও সেসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক সুবিধার কোনো সুফল আমরা পাচ্ছি না, বরং বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষ উল্টে ভারতকে ভর্তুকি দিচ্ছে।

এখানেই শেষ নয়। ক্রমেই বেশি ভারতীয় জাহাজ আসছে বলে বাংলাদেশের নৌযানগুলোর চলাচলেও অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। গত সপ্তাহের বুধবার রাতে তথাকথিত ঢেউটিনবাহী ভারতীয় জাহাজ এমভি গালফ-৪ জাহাজটি ধাক্কা দিয়ে বাংলাদেশের কার্গো জাহাজ সাদার্ন স্টার ২-কে ডুবিয়ে দিয়েছে। ‘খাল কেটে কুমির আনার’ এমন সঠিক দৃষ্টান্ত বিরল। এ অবিচার প্রতিরোধ অবশ্য কর্তব্য ভারতের কাছে বাংলাদেশের অনেক অনাদায়ী পাওনা।

যেসব ছিটমহল বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের কথা সেগুলো ৪০ বছর ধরে ভারত দখল করে আছে। সেসব ছিটমহলের অধিবাসীরা কিছু দিন করে লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ভারত আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ন্যায্য হিস্যা বাংলাদেশকে দিতে অস্বীকার করে আসছে। তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঢাকা সফররত দিল্লির প্রধানমন্ত্রী আর কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কূটনৈতিক মানাভিমান থেকে ভারতের বদ মতলব স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সীমান্তে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ভারত আমাদের ঘেরাও করে রেখেছে।

সে বেড়ার কাছাকাছি গেলেও বাংলাদেশের নাগরিকদের গুলি করে, পাথর ছুড়ে খুন করা হচ্ছে। বিএসএফ বাহিনীর এই ‘মৃগয়া’ অজস্র প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বন্ধ হচ্ছে না। প্রায় এক লাখ ভারতীয় অবৈধভাবে বাংলাদেশে চাকরি করছে। বেসরকারি টেলি-চ্যানেল আর গার্মেন্টস শিল্পের পরিচালকদের মধ্যে তল্লাশি করলেই প্রকৃত সত্য বেরিয়ে আসবে। কিন' বাংলাদেশীদের পর্যটন ভিসা দিতেও ভারতের কড়াকড়ি অস্বাভাবিক।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্যঘাটতি আকাশ-পাতাল। ‘সীমান্ত হাট’ বসিয়ে সে ব্যবধান আরো দুস্তর করা হচ্ছে। এসব হাটে বেচে ভারতীয়রা আর কেনে বাংলাদেশীরা। বাংলাদেশের যুবসমাজের সর্বনাশ করার জন্য সীমান্তের লাগোয়া অজস্র ফেনসিডিল তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এই যেখানে অবস্হা, সেখানে শেখ হাসিনার সরকার কোনো রকম শুল্ক ও ফি ছাড়াই বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে, বাংলাদেশের অবকাঠামো বিনষ্ট করে এবং ভর্তুকি দিয়ে ভারতকে হাজার হাজার টন মাল চালানের সুযোগ করে দিচ্ছে- এ অবস'া বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

গত মাসে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরের পরে সরকার বলেছিল, তিস্তা চুক্তি হয়নি বলে ভারতকে ট্রানজিট দেয়ার চুক্তি করতে বাংলাদেশ অস্বীকার করেছে। সেটা যে কত বড় মিথ্যা এবং দেশের মানুষকে প্রতারণা করার চাল ছিল, তা এখন ধরা পড়ে গেছে। চুক্তি যদি না হয়ে থাকে, তাহলে বলতেই হবে যে আশুগঞ্জ-আখাউড়া পথে হাজার হাজার টন ভারতীয় মাল যাচ্ছে অবৈধভাবে। সরকার যদি নিষ্ক্রিয়ও থাকে, তাহলে এই অবৈধ চোরাচালান বন্ধ করার অধিকার বাংলাদেশের নাগরিকদের আছে। যারা এসব অবৈধ ভারতীয় মালের হ্যান্ডলিং অ্যাজেন্টের কাজ করছেন, যেসব ট্রাক সেসব মাল বহন করছে, তাদের বয়কট দেশের নাগরিকেরা করতেই পারে, এমনকি সড়ক অবরোধ করে সেসব মাল চেক করাও জনসাধারণের নাগরিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত।

(লন্ডন, ০৫.১০.১১) সিরাজুর রহমান কলামিস্ট, বিবিসি বাংলা বিভাগের সাবেক প্রধান। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।