আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আসেন নিজের অহং কোরবানি দেই

অতি দক্ষ মিথ্যুক না হলে সত্যবাদিতা উৎকৃষ্ট পন্থা ছাদের উপর থেকে তাকালে যে দিকে যতদুর রাস্তা দেখছি, সব রাস্তা রক্তে লাল, পাঞ্জাবীর ঝুলে রক্ত মাখা ছুড়ি মুছে অন্য এক বাসায় যাচ্ছে কসাই, শখের কসাই হওয়া মানুষেরা ছুড়ি শানিয়ে চামড়া ছিলতে ব্যস্ত, নিরন্ন গরীবের দল গ্যারেজের সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে, কেটে,মেপে, ভাগ শেষ হলে তারাও ছিঁটেফোঁটা পাবে, এই একদিনের উৎসবে ঢাকায় কত টাকার শ্রাদ্ধ হলো? মান-সম্মান, প্রতাপ এবং নিজের অহংকার তৃপ্ত করতে কতজন কত টাকা দামের গরু কিনলো? গতকাল এক বন্ধুরবাসায় গিয়েছিলাম,ফ্ল্যাট বাড়ীর গ্যারেজ গাড়ী সরিয়ে হয়েছে গোয়াল, সেখানে ৮টা গরু রাখা, বেশ চমৎকার স্বাস্থ্যবান গরু, সেখানে প্রায় ৮ লাখ টাকার গরু রাখা আছে, অন্য এক বাসার গ্যারেজে ৮ লাখ, এমন তিনটি বাসায় ২৫ লক্ষ টাকার গরু দেখে ফিরে আসলাম ১৫ মিনিটে। বাজারে গরুর দাম চড়া, সবাইকেই গরু কোরবানি দিতে হবে। ফ্ল্যাটবাড়ীবহুল ধানমন্ডীর গ্যারেজ আর রাস্তায় এবার যদি গড়ে বাসাপ্রতি ১০ লক্ষ টাকার গরু হিসেব করি, শুধুমাত্র ধানমন্ডীতেই ২০০ কোটি টাকার গরু কুরবানি হচ্ছে আজ। ঢাকা শহরের আনাচে কানাচে গড়ে ওঠা ফ্ল্যাটবাড়ীগুলোকে হিসেবে আনলে হয়তো দেখা যাবে ঢাকা শহরে আজ প্রায় ২০০০ কোটি টাকারও বেশী গরুই কুরবানি হয়েছে, সারা দেশ হিসেবে আনলে দেখা যাবে শুধুমাত্র পরস্পরের সাথে প্রতিযোগিতালিপ্ত মানুষেরা আজ ৫০০০ থেকে ৭০০০ কোটি টাকার গরু জবেহ করে ফেলবে। কুরবানী ফরজ, সুন্নত না কি ওয়াজিব এ সংক্রান্ত আলোচনায় যাবো না, কেন না কা'বা চত্ত্বরে পশুবলীর উৎসব ইসলামের আবির্ভাবের আগেই ছিলো, বিভিন্ন প্রত্যাশায় কা'বার মুর্তিগুলোর সামনে মক্কার জনগণ পশু বলী দিতো, ধর্মবিবেচনায় মুহাম্মদ কিংবা কোরইশ গোত্রকে ইহুদি বলা হয় নি, ইহুদিদের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও কোরাইশ গোত্রকে যেহেতু ইহুদি কিংবা খ্রীষ্টান বলা হয় নি, ইবনে হিশামের বংশতালিকা অগ্রাহ্য করে বলা যায় কা'বার দরজার চাবি কোরাইশ গোত্রের হাতে আসবার আগে থেকেই কোরাইশ গোত্র আদতে খ্রীষ্টান কিংবা ইহুদি ছিলো না।

মক্কার স্থানীয় সংস্কৃতিতে কোরবানী, মানত পুরণের জন্য পশু বলী দেওয়ার রেওয়াজ চালু ছিলো, হজ্জ্বও ইসলামপূর্ব একটি রেওয়াজ, কিন্তু শৈশবের সংস্কৃতিকে অস্বীকার না করে মুহাম্মদ হজ্জ্ব কিংবা কোরবানিকে ইসলাম ধর্মের অঙ্গে পরিণত করেছেন, সেসব ইসলামের প্রাথমিক যুগে যে ইসলামের অঙ্গ ছিলো না এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বক্তব্য ঐতিহাসিকদের তরফ থেকেও পাওয়া যাবে। হজ্জ্বের দুইমাস যুদ্ধবিহীন মক্কানগরে আবরের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেই ব্যবসার জন্য মানুষজন আসতো, তারা হজ্জ্বের উদ্দেশ্য আসতো না কি শুধুমাত্র ব্যবসায়ীক প্রয়োজনে আসতো বিষয়টা নিয়ে দ্বিমত থাকলেও প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বাইয়্যাতের ঘটনাসূচি পাঠ করলে বুঝা যায় সে সময় মুহাম্মদ কুরবানি দেন নি। সম্ভবত মদীনায় হিজরত করে শাসনক্ষমতা গ্রহন করার পর যখন প্রথম বার মুহাম্মদ হজ্জ্বের মওশুমে প্রত্যাবর্তন করেন তখন সঙ্গীদের প্রয়োজন বিবেচনা করে হজ্জ্বের সমাপ্তিতে তিনি পশু কোরবানি দিয়েছেন, এবং পরবর্তীতে প্রতিবারই তিনি এ রীতি অনুসরণ করেছেন। পরবর্তীতে যখন জুল হাজ্জ্ব মাসের হজ্জ্বের নির্দেশনা দেওয়া হলো, তখন ঈদুল আজহা উদযাপন শুরু হয়, এই পবিত্র উৎসবে নিজের ভেতরের পশুত্বকে কোরবানি দেওয়ার প্রতিকী উদযাপনটি বর্তমানে পশুত্বপ্রকাশের অন্যতম উপকরণ হয়ে উঠেছে। উদযাপন, পরিবারের সকলকে নিয়ে একদিন উৎসব পালনের বাইরে এখন অপ্রয়োজনীয় খরচেরববিলাসিতা এবং প্রতিযোগিতায় পর্যবসিত হয়েছে কোরবানি।

অতিরিক্ত ভক্তি, অন্ধ আনুগত্য কিংবা প্রণত মানসিকতায় কোরবানীর পশুর বৈশিষ্ঠ্যও নির্ধারিত হয়েছে। সেরা বস্তুটিই তোমার মালিকের নামে উৎসর্গ করতে হবে, যেহেতু ইব্রাহিম তার প্রাণপ্রিয়পূত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েছিলো, সুতরাং প্রাণধিক প্রিয় বস্তুকেই কুরবানি দিতে হবে। এই রীতিটি বর্তমানে যেভাবে প্রযুক্ত হচ্ছে তাতে কুরবানীর স্পিরিট কি অক্ষুন্ন আছে? বাজার থেকে কয়েকলক্ষ টাকার সেরা গরু কিনে আনছে যে মানুষটি সে কি ঐ গরুটাকে তার প্রাণধিক প্রিয় মনে করে? ঘটনাটি অন্য দিক থেকে ভাবলে মূলত কুরবানি দিচ্ছে গরীব মানুষেরা, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে নয়, অর্থনৈতিক দুরাবস্থায় তারা তাদের প্রিয় গবাদি পশুকে যে মুহূর্তে হাটে তুলছে সে মুহূর্তে তারা অন্তত কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে গরু কেনা ব্যক্তির চেয়ে বেশী কুরবানি দিচ্ছে, নিজের প্রিয় পশুকে কুরবানির উদ্দেশ্যে হাটে হাঁটিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিটা মুহূর্তেই সে নিজেই কুরবানি দিচ্ছে নিজেকে। প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের পশু জবেহ হবে আজকের দিনে, যদি দেশীয় উদ্যোগে দেশীয় সংস্থা পদ্মা সেতু তৈরি করে তাহলে এই পরিমাণ টাকায় দেশে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব, এমনটাই বিশেষজ্ঞদের অভিমত । যারা আজ এমন বিলাসিতা ও অহং এর প্রদর্শনীতে প্রতিযোগিতা করছেন তারা তাদের এই প্রদর্শনী মানসিকতা স্থগিত রেখে যদি সমুদয় অর্থই সরকারের পদ্মা সেতু ফান্ডে জমা দিতেন তাহলে এই শীতের মরশুমেই পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা সম্ভব হতো, বিশ্বব্যংক, এবং অন্যান্য দেশের কাছ থেকে কোনো ঋণ না নিয়েই এ সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো।

আমার এক বন্ধু বলেছিলো দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা তাতে বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষেরই উচিত ঈদ বর্জন করা, তার পরিবারও এ বছর ২ লক্ষ টাকার পশু কুরবানি দিবে, অন্য সবার অবস্থাও কম বেশী একই রকম, তারা ধরেই নিয়েই কোরবানি করাটা ফরজ, সুতরাং কোরবানী দিতেই হবে, তাদের উদ্দেশ্যেই বলি , কোনো উপায় না পাইলে বাল ফেলাইলেও কোরবানি হয়, Narrated Abdullah ibn Amr ibn al-'As: The Prophet (peace_be_upon_him) said: I have been commanded to celebrate festival ('Id) on the day of sacrifice, which Allah, Most High, has appointed for this community. A man said: If I do not find except a she-goat or a she-camel borrowed for milk or other benefits, should I sacrifice it? He said: No, but you should clip your hair , and nails, trim your moustaches, and shave your pubes. This is all your sacrifice in the eyes of Allah, Most High. সুনা'ন আবু দাউদ, ২৭৮৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.