সফল ব্লগার নয়, সত্যবাদী ব্লগার হওয়াই হোক আমাদের লক্ষ্য। ২৫ মার্চ, ২০১৩
সন্ধ্যা থেকেই বাসায়। সারাদিন মাথার ভেতর ঘুরপাক খাচ্ছিলো আরেকটি ২৫ মার্চের কথা, ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ। যতই ভাবছিলাম ততই শিউরে উঠছিলাম! রাত যত ঘনিয়ে আসছিলো ততই মনের চাপা অস্থিরতাটা বেড়ে চলছিলো! আমার অস্থিরতা দেখে বউতো অবাক! বার বার জিজ্ঞেস করে, ‘কি হইসে তোমার? কি হইসে?’ কোন জবাব দিই না আমি। একসময় মনস্থির করে ফেললাম...ফিরে যাবো ২৫ মার্চ, ১৯৭১ এ।
১০ মিনিট ধরে ঘরের লাইট, ফ্যান, কম্পিউটার, মোবাইল, দরজা, জানালা সব বন্ধ করে বসে থাকলাম স্ত্রী-কন্যা নিয়ে। প্রথমে ওরা বুঝতেই পারেনি কি করছি আমি! আমার কন্যার মাতা আমার কাধ ঝাঁকিয়ে বললো, ‘তুমি কি পাগল হয়ে গেসো নাকি?’ আমি ওর ঠোঁটে হাত রেখে বললাম.... ‘শসসসসসস! কথা বলো না!, আজ ২৫ মার্চ, ১৯৭১! ভেবে দেখ একাত্তরের এই দিনটির কথা। ঠিক এমনই একটি রাতে হাজার হাজার বাঙালী বুক ভরা আতঙ্ক নিয়ে অন্ধকারে মৃত্যুদূতের অপেক্ষা করেছে!’ বউ বললো, ‘আমি তো সেভাবে ভেবে দেখিনি কখনো! আমার ভয় ভয় করছে! তুমি একটু কাছে এসো!’ আমি আবার বললাম... ‘শসসসসসসস!’
মা-বাবার অদ্ভুত ফিসফিস কথপোকথন আর অন্ধকার দেখে আমার ১ বছর ৯ মাস বয়সী মেয়েটি ভয়ে চুপ মেরে রইলো! কিছুটা ভয়ে আর কিছুটা অবাক হয়ে চুপ মেরে গেচে চঞ্চল মেয়েটি! এরকম তো দেখেনি কখনো! আমিও দেখিনি। অস্থির লাগলো খুব- প্রচন্ড ঘামলাম, মনে হলো যেনো আমাকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়েছে! কল্পনা করলাম, বাইরে কারফিউ চলছে, পাকিস্তানি মিলিটারি আমার এলাকায় আক্রমন করেছে। ঘুমিয়ে থাকা নিরস্ত্র মানুষদের ওপর ট্যাঙ্ক, কামান, মেশিনগান নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।
প্রতিটা ঘরে ঘরে ঢুকে সবাইকে নৃশংসভাবে হত্যা করছে! আমার চোখের সামনে আমার মা বাবাকে মেরে ফেলতে লাগলো। আমার স্ত্রীর দিকেও ওরা হাত বাড়াতে ছাড়বে না! আছাড় দিয়ে মেরে ফেলবে হয়তো আমার ছোট্য রাজকন্যাটিকে! জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হবে হয়তো আমাকে! ঠা ঠা ঠা ঠা মেশিন গানের শব্দে কানে তালা লেগে গেলো! হায়েনাদের বুটের শব্দ এগিয়ে আসছে.....রাজাকারদের মিচকি হাসি আর তেলতেলে চেহারা চোখে ভাসছ....বুটের শব্দ এখন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি! এখনই হয়তো দরজা ভেঙে ঢুকবে ওরা! দরজায় বুটের লাথিও শুনতে পাচ্ছি!!
না......আর পারছি না! আমি আর সহ্য করতে পারবো না! মাত্র ১০ টি মিনিট, কিন্তু যেন মনে হলো অনন্ত কাল ধরে বসে আছি আমি এক অসহায় বাঙালী নিজের স্ত্রী-কন্যা নিয়ে! বসে আছি হায়েনাদের গ্রাস হবার অপেক্ষায়!
আর কল্পনা করতে পারলাম না। যেখানে লোপ পেলো আমার কল্পনাশক্তি, সেখান থেকেই শুরু হয়েছিলো সেই ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ভয়াল কাল রাত্রি...শুরু হয়েছিলো অপারেশন সার্চ লাইট!
গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি সেই বাঙালীকে যারা আজকের এই রাতে অসহায় ভাবে প্রাণ দিয়েছিলো। কোন অপরাধ ছিলো না তাদের, কোন অন্যায় করেনি তারা। শুধুমাত্র বাঙালী হওয়ার কারণে, একটি স্বাধীণ দেশ চাওয়ার কারণে, বাঁচার অধিকার চাওয়ার কারণে প্রাণ দিতে হয়েছিলো তাদের।
আমরা তোমাদের ভুলিনি, ভুলবো না কোন দিন......। ।
আপনারা হয়তো অনেকেই খেয়াল করেননি গুগল আজ তাদের হোমপেইজে আমাদের স্বাধীণতা দিবসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নতুন ডুডল দিয়েছে। ধন্যবাদ গুগলকে। সারাবিশ্ব আজ গুগলের মাধ্যমে জানবে আমাদের স্বাধীণতার ইতিহাস।
ঘুরে আসুন গুগল থেকে এখানে ক্লিক করে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।