আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মেঝেতে আছড়ে হত্যা করা হলো ৪ বছরের শিশু কন্যাকে

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় গতকাল রবিবার প্রেমে ব্যর্থ এক যুবকের পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে ৪ বছরের শিশুকন্যা সুবর্ণা মৃধা। মেঝেতে আছড়ে ও পানিতে চুবিয়ে শিশুটিকে নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক মানিক ও তার সহযোগী। মানিকের উন্মত্ততার শিকার হয় পরিবারটির অন্য সদস্যরাও। নিহত শিশু সুবর্ণার ছোট বোন মাত্র আড়াই বছর বয়সী শিশু স্বর্ণা রাণী মৃধাকেও কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে জখম করা হয়। বাধা দিতে গিয়ে শিশু দুটির মা রীনা রাণী মৃধাও গুরুতর আহত হয়।

মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উত্তর বাড্ডার পূর্বাচল এলাকার ১৭ নম্বর লেনের ৩৩ নম্বর বাসায় লোমহর্ষক এ ঘটনা ঘটে। নিহতের স্বজনরা জানান, সুবর্ণার আপন খালাতো ভাই মানিক ও তার এক বন্ধু বাসায় ঢুকে বর্বর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটায়। সুবর্ণার বাবা ভবদিশ মৃধা কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, মানিক তার আপন ভায়রার ছেলে। তার কাছেই কাঠমিস্ত্রির কাজ শিখতো।

একই বাসায় তাদের সঙ্গেই থাকতো। বাসায় থাকার সুবাদে মানিক তার বড় মেয়ে সুস্মিতাকে (১২) উত্ত্যক্ত করতো এবং বাজে প্রস্তাব দিত। বিষয়টি জানার পর প্রায় ৬ মাস আগে মানিককে বাসা থেকে বের করে দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে উত্ত্যক্তের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। স্কুলে যাওয়ার পথ আটকে জোর করে কথা বলার চেষ্টা করতো।

তিনি বলেন, বাসায় ফোন করা ছাড়াও মানিক তার অনুপস্থিতিতে মাঝে-মধ্যেই বাসায় যেতো। তিনি বলেন, রবিবার ১১টার দিকে বাসায় আসার পর তার স্ত্রী মানিককে কলা খেতে দেয়। এরপর বাসায় আসার কারণ জানতে চাইলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে। এক পর্যায়ে দরজা লাগিয়ে শিশু কন্যা সুবর্ণাকে ছিনিয়ে মেঝেতে আছড়ে ফেলে। এতে তার স্ত্রী রিনা বাধা দিলে তাকে কুড়াল দিয়ে কোপায়।

এ সময় তার কোলে থাকা স্বর্ণাকে কুড়ালের বাট দিয়ে আঘাত করে। রিনা রাণী মৃধা বলেন, আমি দিশেহারা হয়ে চিত্কার শুরু করি। এ সময় আশপাশের প্রতিবেশীরা এগিয়ে এলে মানিক ও তার বন্ধু পালিয়ে যায়। প্রতিবেশী লিপি বেগম বলেন, ভবদিশ ও রিনা দম্পতির চার মেয়ে। এর মধ্যে সবার বড় সুস্মিতা রাণী মৃধা (১২)।

বনানী বিদ্যা নিকেতনের ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সুস্মিতার ছোট বোন সুমা রাণী মৃধা (১০) একই স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী। ঘটনার সময় তারা দুজনেই স্কুলে ছিল। তাদের বাবা ছিল অফিসে। বাসায় ছিল সুবর্ণা, তার ছোট বোন স্বর্ণা ও মা রীনা রাণী মৃধা।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে হঠাত্ মা ও মেয়ের চিত্কার শুনে বাসায় যাই। এ সময় দুবোন সুবর্ণা ও স্বর্ণাকে অচেতন অবস্থায় জড়িয়ে ধরে রক্ত মাখা শরীর নিয়ে বিলাপ করছিলেন মা রিনা রাণী মৃধা। তারপর তিনজনকেই ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি। হাসপাতালের চিকিত্সক সুর্বণাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিত্সক ডা. নঈম বলেন, সুবর্ণাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে সুবর্ণার মাথা ও শরীরে শক্ত কিছুর আঘাত দেখা গেছে। সুবর্ণার কাকা নয়ন জানান, ঘাতক মানিকের বাড়ি মুন্সিগঞ্জ জেলার আলদি গ্রামে। তার বাবার নাম প্রদীপ। মায়ের নাম মিনতি। মানিকের বাবা-মায়ের অনুরোধেই ভবদিশ ও রিনা দম্পতি তাকে তাদের বাসায় আশ্রয় দিয়েছিল।

তিনি বলেন, ভবদিশ মৃধা রাজধানীর একটি সংবাদ সংস্থার অফিসে কাঠমিস্ত্রির চাকরি করতেন। তিনি উত্তর বাড্ডার পূর্বাচলে ২ কাঠা জমি কিনে সেই জমির উপর টিনসেডের বাড়ি করেন। তাদের বাড়ি ঝালকাঠি জেলার কাঠালিয়া থানার আওড়াবুনিয়া গ্রামে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে এটি ডাকাতি না পূর্বশত্রুতার জেরে ঘটেছে সেটা বলা যাচ্ছে না। তদন্তের পর আসল ঘটনা জানা যাবে।

এদিকে গতকাল রাতে মানিককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.