ইফতারির ঘণ্টাখানেক পর আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা ডিবি অফিস থেকে বিদায় নিল। আমি যথেষ্ট সাহস ও আত্দবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের বিদায় জানালাম। এরপর প্যান্ট-শার্ট খুলে লুঙ্গি এবং একটি সাদা রংয়ের হাফহাতা গেঞ্জি পরলাম। সাধারণ পোশাকে আমাকে আবার কাজের লোকের মতো দেখায়। লুঙ্গি, গেঞ্জি পরার পর ইচ্ছা করেই মাথার চুল এলোমেলো করে দিলাম যাতে নিজেকে আরও খারাপ দেখায়।
এতক্ষণ ধরে আমি যে আত্দবিশ্বাস ও সাহস ধারণ করেছিলাম তা মুহূর্তের মধ্যে উবে গেল কেবল একটি লাঠির রূপ দেখার পর।
কারণও ছিল- আমার চৌদ্দগুষ্টিতে কেউ কখনো থানায় যায়নি। কারও বিরুদ্ধে একটি জিডি এন্ট্রিও হয়নি। আমার চৌদ্দগুষ্টি পুলিশকে ভয় করে আসছে যমের মতো। সোফায় বসা অবস্থায় আমার শৈশবের দুটি ঘটনা মনে পড়ল। একটি আমার এক চাচাতো দাদির আর অন্যটি আমার।
আগে দাদিরটা বলে নিই। আমার বয়স তখন পাঁচ-ছয় বছর হবে আর কি। সময়টা স্বাধীনতার ঠিক পর পর। আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে দুজন পুলিশ যাচ্ছিল একটি চোর নিয়ে। চোরটির দুই হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা অবস্থায় ছিল।
দাদি তখন উঠান ঝাড়ু দিচ্ছিলেন। চোরটি সম্ভবত একটু ধীরে ধীরে হাঁটছিল। একজন পুলিশ সজোরে চোরের পাছায় আঘাত করল। দাদি মাথা উঁচু করে যখন দেখল দুজন পুলিশ এক চোরকে মারতে মারতে নিয়ে যাচ্ছে, আর যায় কই! সজোরে চিৎকার দিল, ও মাইনক্যা, ও লালু। এরপর সটান অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।
লালু ও মানিক নামে তার দুই ছেলে অদূরে সাংসারিক কাজ করছিল। মায়ের আর্তচিৎকার শুনে দৌড়ে এলো। তাদের বউরাসহ পরিবারের মেয়েরাও এলো। আমরা যারা গুড়াগাড়া ছিলাম তারও এলাম। দাদির মুখ দিয়ে ফেনা বের হচ্ছিল।
কাপড়চোপড়ও নষ্ট করে ফেলেছিল মলমূত্র ত্যাগ করে। প্রায় ঘণ্টাখানেক পর বহু চেষ্টায় তার জ্ঞান ফিরেছিল।
বার বলছি আমার নিজের কথা। সালটি মনে নেই। সম্ভবত আমি দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ি।
ফরিদপুর জেলার সদরপুর থানায় আমার বাড়ি। থানা সদরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। আমার গ্রামের নাম শ্যামপুর। স্থানীয় ভাষায় বলে শামপুর। শহর থেকে দু-তিন মাইল দূরে।
সদলবলে হেঁটেই স্কুলে যেতাম। সকালে যেতাম ভরা পেটে আর বিকালে ফিরতাম খালি পেটে। গ্রামের নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। কোনো স্কুলড্রেস ছিল না। ইংলিশ হাফপ্যান্ট আর হাফহাতা শার্ট পরে যেতাম।
কখনো পায়ে স্যান্ডেল থাকত, আবার কখনো খালি পায়ে। বিশেষত বর্ষাকালে খালি পায়েই যেতাম। কারণ পুরো পথটিই ছিল কাদায় পরিপূর্ণ। স্কুলে যাওয়া-আসার পথে সদরপুর থানা পড়ত। যাওয়ার সময় বাম দিকে আর ফেরার সময় ডান দিকে।
আমি সব সময় থানার উল্টো দিকের রাস্তার পাশ দিয়ে যেতাম এবং ভুলেও থানার দিকে তাকাতাম না। পুলিশ তো দূরের কথা পুলিশের ছেলেমেয়েকেও যমের মতো ভয় পেতাম। এভাবেই চলছিল বহুদিন। ঘটনার দিন স্কুল থেকে ফিরছিলাম। ভুল করে ওই দিন থানার সামনে দিয়ে পার হওয়ার সময় রাস্তার উল্টো দিকে না গিয়ে দু-তিন জন বাল্যবন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে থানার সীমানাপ্রাচীর যা ছিল কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে ঘেরা তার পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম আনমনে।
হঠাৎ করে আমার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে গেল। থানার ভেতর থেকে আর্তচিৎকার শোনা যাচ্ছিল। বন্ধুরা সবাই দাঁড়াল। আমিও ওদের সঙ্গে দাঁড়ালাম। থানার বড় বাবু একজন চোরকে বেদম প্রহার করছিলেন।
চোরটি মারের চোটে হেগে দিয়েছিল আর সিপাইরা চোরের ঘাড় ধরে নিকটবর্তী খালে নিয়ে যাচ্ছিল তাকে চুবিয়ে হাগা পরিষ্কার করার জন্য। এ দৃশ্য দেখে আমার হাত-পা ঠক ঠক করে কাঁপতে শুরু করল। আমি বসে পড়লাম। ওই সময় আমার আবার সারা বছরই পেটের পীড়া লেগে থাকত। কখনো কোষ্ঠকাঠিন্য আবার কখনো পাতলা পায়খানা।
সবচেয়ে বিপজ্জনক ছিল আমার নির্বোধ অভিব্যক্তি। অর্থাৎ আমি বুঝতাম না কখন কর্মটি হবে। ফলে রাত-বিরাতে প্রায়ই কাপড়চোপড় নষ্ট হতো। আমার স্নেহময়ী মা এবং দাদির অপত্য যত্নে আমার তেমন কোনো অসুবিধা হতো না। ঘটনার দিন আমার লুজ মোশন অর্থাৎ পাতলা পায়খানার প্রাদুর্ভাব ছিল।
আমি বসার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে কিঞ্চিৎ পরিমাণ বের হয়ে গেল। আর ওটা যে বের হয়ে গেছে তাও আমি টের পেলাম না। বন্ধুরা যখন আমাকে টেনে তুলল এবং বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করল তখন সবাই বলতে শুরু করল এই গুয়ের গন্ধ আসছে কোত্থেকে? আমিও গন্ধ পেলাম কিন্তু তখনো বুঝতে পারলাম না কর্মটি আমি করেছি। এর মধ্যে এক মুখপোড়া বন্ধু বলল, এই তুই তো দেখছি গুয়া গালাইয়া দিছস!
ডিবি অফিসের এডিসি সাহেবের রুমে সোফায় বসে বসে আমি লাঠি দেখে কাঁপছিলাম আর শৈশবস্মৃতি মনে করে যারপরনাই সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কারণও ছিল।
ডিবি অফিস এবং রিমান্ডের নামে সেখানে যা হয় তা নিয়ে সত্য-মিথ্যা নানা কল্পকাহিনী বাজারে প্রচলিত ছিল। আমার ভয়ের কারণ ছিল অন্য। আমার স্থির বিশ্বাস জন্মাল_ সরকারের সর্বোচ্চ মহলের নির্দেশেই আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যে সামান্য ঘটনা ঘটেছে তাতে করে একজন এমপি তো দূরের কথা, কোনো সাধারণ রিকশাওয়ালাও গ্রেফতার হয় না। গত প্রায় চার-পাঁচ দিন ডিবির লোকেরা আমাকে সার্বক্ষণিক অনুসরণ করেছে।
কোর্টে জামিন বাতিল হওয়ার ১ মিনিটের মধ্যে আমাকে গ্রেফতার করেছে। অথচ পুরান ঢাকার কোর্টকাচারি এলাকা থেকে বসুন্ধরা এলাকায় গ্রেফতার আদেশ হাতে হাতে আনলেও কম করে ৫-৬ ঘণ্টা লাগার কথা। অথচ আমাকে যখন গ্রেফতার করল তখন তাদের হাতে গ্রেফতার করার কোনো কাগজই ছিল না। সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্যের ভাগ্যে এমন বিরল অভিজ্ঞতা স্বাধীন বাংলাদেশ তো দূরের কথা পাকিস্তান আমলেও ঘটেনি। কাজেই ঘটনার ভয়াবহতায় আমি গ্রেফতারের সময় গুয়া গালাইয়া দিইনি এ জন্য মনে মনে আমার শরীরের বিশেষ জায়গাকে একাধিকবার ধন্যবাদ দিলাম।
আমি যখন একাকী বসে নানা রকম চিন্তা করছিলাম তখন ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১০টা বেজে গেছে। তারাবি নামাজ পড়তে চাইলাম। দরজার সামনে কর্তব্যরত সিপাহি একটি জায়নামাজ দিল এবং পশ্চিম দিক দেখিয়ে দিল। অজু বা বাথরুম সারার জন্য এডিসি সাহেবের বাথরুম ব্যবহারের অনুমতি দিল। আমি বাথরুমে গেলাম।
ইফতারের পর কত গ্লাস পানি খেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু কিছুতেই প্রস াব আসছিল না। সব আটকে গেল কি না বুঝতে পারছিলাম না। কোনোমতে অজু করে নামাজে দাঁড়ালাম। সব সময় আমি ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়ি।
কিন্তু সেদিন পড়লাম ৮ রাকাত, তাও আবার বসে বসে। কারণ পা যেভাবে কাঁপছিল তাতে দাঁড়ানোর সাহস হলো না। নামাজের মধ্যে আল্লাহর প্রতি মনোনিবেশ করার চেষ্টা করলাম, কিন্তু শয়তান বার বার লাঠির মাথায় অ্যালুমিনিয়ামের মসৃণ অংশটুকু নিয়ে নতুন চিন্তার উদ্রেক করল। আচ্ছা ওই লাঠির অংশটুকু কি শরীরের কোথাও ঢুকানো হয়? ভয়ে শরীর কাঁটা দিল আর বিশেষ জায়গা চিন চিন করে উঠল।
সুসময়ে মানুষ অনেক বড় বড় কথা বলে কিংবা হম্বিতম্বি করে।
কিন্তু বিপদে পড়লে সেই মানুষটিই যে অদ্ভুত সব কাণ্ড করে অথবা অযাচিত এলোমেলো চিন্তা করে; তা আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। কোনোমতে নামাজ শেষ করে আমি আরও কয়েক গ্লাস পানি পান করলাম। আমার গলা আর বুক যেন মরুভূমি হয়ে গিয়েছিল। যতই পানি ঢালি শুষ্কতা কমে না। এরই মধ্যে নতুন আরও একটি বিশ্রী ঘটনা মনে পড়ল।
আমার এক বন্ধু এমপি ওয়ান-ইলেভেনের সময় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিল। ও আমাকে তার নির্যাতনের নানান কাহিনী বলছিল। এর মধ্যে একটি ঘটনা ছিল সবচেয়ে মর্মান্তিক। বন্ধুটিকে টর্চার সেলে নিয়ে সম্পূর্ণ উলঙ্গ করে একটি চেয়ারে বসান হলো। এরপর হাতল ও পায়ার সঙ্গে তার হাত ও পা শক্ত করে বাঁধা হলো।
এরপর তার কানে এবং লজ্জাস্থানে ইলেকট্রিক তার পেঁচানো হলো। এরপর যখন ইলেকট্রিক শক দেওয়ার সুইচটিতে চাপ দেওয়া হলো তখন চেয়ারসমেত বন্ধুটি ১০ হাত পেছনে সিটকে পড়ে ওয়ালের সঙ্গে আঘাত পেয়ে সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলল। এ কথা মনে হতেই আমার মধ্যপ্রদেশে শিরশির কাঁপন শুরু হলো। আমি বাম হাত দিয়ে ওখানকার অবস্থা আন্দাজ করার চেষ্টা করলাম।
রাত তখন আনুমানিক ১১টা।
রুমের কর্তা এডিসি সাহেব ঢুকলেন এবং মুচকি হাসি দিয়ে তার নিজের চেয়ারে গিয়ে বসলেন। হাসি হাসি মুখে তিনি তার ল্যাপটপটি স্টার্ট দিলেন এবং গভীর মনোযোগ দিয়ে কী যেন পড়া শুরু করলেন। আমার স্নায়ুর চাপ একটু বৃদ্ধি পেল। বিশেষত এডিসি সাহেবের হাসি দেখার পর। আমার শৈশবের একটি ভয়াবহ স্মৃতি মনে পড়ল।
স্মৃতি মানে একটি গল্প। আমার দাদা প্রায়ই বলতেন আমাদের ভয় দেখানোর জন্য, যাতে আমরা বেশি বেশি নামাজ-কালাম পড়ি এবং ভালো ভালো কাজ করি। তিনি বলতেন, অপরাধী ব্যক্তির জান কবজের সময় আজরাইল নাকি আসমানে দৃশ্যমান হয়। এরপর মৃত্যুপথযাত্রীর উদ্দেশে ৩২ পাটি দাঁত বের করে বিকট হাসি দেয়। ভয়ঙ্কর সেই দৃশ্য দেখার পর মৃত্যুপথযাত্রীর অন্তরাত্দা শুকিয়ে যায়।
তার ভেতর এমন পিপাসার উদ্রেক হয় যেন পৃথিবীর তাবৎ সাগর-মহাসাগরের পানিও সেই পিপাসা নিবারণ করতে পারে না।
আমার নিজের ওপর ভীষণ রাগ হলো। নিজের ওপর মানে নিজের স্মরণশক্তির ওপর। আমার স্মরণশক্তি এমনিতেই একটু বেশি। এর কারণও আছে।
অনেক আগে থেকেই আমি স্মরণশক্তি বাড়ানোর জন্য নানা তদবির করে আসছি নিয়মিত। প্রায়ই পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি অর্থাৎ 'রাবি্ব জিদনি ইলমা' পড়তে থাকি। একজন বলল, নিয়মিত দাঁত, জিহ্বা ও গলা পরিষ্কার এবং জীবাণুমুক্ত রাখার জন্য, এতে নাকি স্মরণশক্তি বৃদ্ধি পায়। বহুদিন ধরে আমি নিষ্ঠার সঙ্গে রাতে ও সকালে ওই কর্মগুলো করি। একজন বলল, ধ্যান করার জন্য।
তাও করি। অন্যজন বলল মাঝেমধ্যে মাথা নিচু স্থানে রেখে পা দুটি উঁচু করে রাখার জন্য। এ কাজে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল ভালো হয় এবং স্মৃতিশক্তি ও চিন্তাশক্তি বাড়ে। সব কাজই করে আসছি। কিন্তু আজ আমি স্মরণশক্তির বিপদ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি।
হাজারো স্মৃতি আমাকে নানা রকম নস্টালজিয়ায় ভোগাতে শুরু করল। অফিসার জানতে চাইলেন, আমার কিছু লাগবে কি না। আমি বললাম পানি! ঠাণ্ডা পানি। তিনি তার আর্দালিকে ডেকে পানির অর্ডার দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। যাওয়ার সময় আবার এক দফা মুচকি হাসি দিয়ে গেলেন।
এবার তার দাঁত দেখা গেল। বেশ সুন্দর দাঁত। ঝকঝকে পরিষ্কার। কিন্তু উপরের এবং নিচের পাটিতে সামনের দিকে একটি করে দাঁত একটু বাঁকা- একটি উপরে উঠে আছে আর অন্যটি একটু ভেতরে ঢোকানো রয়েছে। এসব সামান্য বাঁকা দাঁতের পুরুষদের মেয়েরা ভীষণ পছন্দ করে, কারণ এরা নাকি দৃঢ়চেতা।
অন্যদিকে বাঁকা দাঁতের পুরুষদের দৃঢ়চেতার লক্ষণ জানার পর আমার ঠকঠকানি আরও বেড়ে গেল। রাত প্রায় সাড়ে ১১টার দিকে একজন সিপাহি এসে খবর দিল পাশের রুমে স্যাররা আপনাকে একটু সালাম দিয়েছেন। সম্ভবত আমি তখন কোরআন শরিফ পড়ছিলাম। অনেক আগে থেকে আমার নিয়মিত কোরআন শরিফ পড়ার অভ্যাস। বিশেষত কোনো সমস্যায় পড়লে কিংবা মন বিষণ্ন হয়ে পড়লে আমি সব কাজ বাদ দিয়ে কোরআন তিলাওয়াত শুরু করি।
পবিত্র কোরআনেই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে এটা (কোরআন) হলো তিলাওয়াতকারীর মনোরোগের ওষুধ। অর্থাৎ কোরআন পড়লে মন ভালো হয়ে যাবে। আমার জীবনে এটা একটি পরীক্ষিত সত্য। তাই ডিবি অফিসে ঢোকার পর বাসায় যেসব প্রয়োজনীয় জিনিসের জন্য অনুরোধ পাঠিয়েছিলাম তার মধ্যে কোরআনও ছিল। আমি তিলাওয়াত বন্ধ করে আগত সিপাহির সঙ্গে পাশের রুমে যাওয়ার জন্য বের হলাম কোনো কিছু না ভেবেই।
আমার পরনে ছিল সাদা রংয়ের একটি লুঙ্গি এবং সাদামাটা একটি সাদা হাফহাতা গেঞ্জি। আমি আসলে মনে মনে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু এত রাতে বিশেষত রোজার মাসে আমাকে যে কেউ ডাকতে পারে তা ভাবনার মধ্যেই ছিল না। সিপাহিটি যখন বলল তখন আমি নিবিষ্ট ছিলাম কোরআন তিলাওয়াতে। অন্য কিছু ভাবার অবকাশ ছিল না।
কিন্তু রুম থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমার মনে ভয় ঢুকে গেল। হয়তো শয়তানের কারণে নয়তো নফসে আম্মারার কারণে। এত রাতে ডাকা মানে জিজ্ঞাসাবাদ বা অলিখিত রিমান্ড। আমার পরিহিত পোশাকের দিকে নজর গেল। কেবল লুঙ্গি আর গেঞ্জি- একটি জাইঙ্গাও ছিল না।
ভয় হলো- যদি পশ্চাৎদেশে বেত পড়ে তবে লুঙ্গি ছিঁড়ে যাবে, কারণ ওটা ছিল বেশ পুরনো। কী কাণ্ড! এত কিছুর পরও সৈয়দ বংশের পোলার মতো আমি ইজ্জত হারানোর চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লাম। চিন্তাক্লিষ্ট মনে কথিত রুমে ঢুকলাম। ওটা ছিল পুলিশের ডিসি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার রুম।
রুমে ঢুকেই দেখি চার-পাঁচ জন কর্মকর্তা বসে আছেন।
সবাই নবীন কর্মকর্তা। কথাবার্তায় বুঝলাম তারা কেউই সহকারী কমিশনার পদমর্যাদার নিচে নন। বড় কর্তা অর্থাৎ ডিসি সাহেব হাসিমুখে বললেন- আসেন ভাই, বসেন। আমার আগমনে কেউ উঠে দাঁড়ালেন না। তারা আমাকে সরকারদলীয় একজন সংসদ সদস্যের পরিবর্তে সম্ভবত আসামি হিসেবেই মূল্যায়ন করেছিলে।
আর তারা এও বুঝেছিল যে সরকারের উঁচু মহলের বিষ নজর রয়েছে আমার ওপর। আমার মনের যে সহজাত এবং আজন্ম ভীরুতা রয়েছে সে জন্য আমি সব কিছুতেই উল্টাপাল্টা চিন্তা করছিলাম। ডিসি সাহেবের সামনের চেয়ারে আমাকে বসতে বলা হলো। আমি বসতে গিয়ে ইচ্ছা করেই চেয়ারটা একটু পেছনে ঠেলে বসলাম। যাতে তার চড়-থাপ্পড়ের প্রাথমিক আওতার বাইরে থাকতে পারি।
অফিসার জিজ্ঞাসা করলেন কী খাবেন। আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। বললাম পানি। দু-তিন গ্লাস ঠাণ্ডা পানি। পানি খাবার পর রুমটির চারদিকে ভালোভাবে তাকালাম।
নাহ, কোনো লাঠি দেখতে পেলাম না। কর্মকর্তাদের অভিব্যক্তিতেও মনে হলো না তারা আমার সঙ্গে প্রথাবিরুদ্ধ অশালীন কিছু করবেন। আমি কথা না বলে চুপ করে অপেক্ষা করতে থাকলাম পরবর্তী ঘটনার জন্য।
ডিসি সাহেব তার অফিসারদের সঙ্গে দৈনন্দিন কিছু গুরুত্বপূর্ণ রুটিন আলোচনা সেরে নিলেন ঝটপট এবং এরপর আমার দিকে নজর দিলেন। প্রথমেই বললেন, আমি আপনার একজন গুণমুগ্ধ পাঠক এবং টকশোর নিয়মিত দর্শক।
আমার ধারাবাহিক উপন্যাস মোগল হেরেমের দুনিয়া কাঁপানো প্রেমের প্রসঙ্গ ওঠালেন। দেখলাম রুমের সব কর্মকর্তাই বাংলাদেশ প্রতিদিনে প্রকাশিত লেখাটি নিয়মিত পড়েন এবং বলতে গেলে সব ঘটনা এবং চরিত্র তাদের মুখস্থ। আমি বিশ্বাস ফিরে পেলাম। তারা আরও জানালেন, তাদের বস জয়েন্ট কমিশনার মুনির নিচ তলায় বসেন এবং আমার ব্যাপারে তাদের সঙ্গে অনেক আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন তিনি নাকি আমার সহপাঠী কয়েকজন বন্ধুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আমার ছাত্রজীবনের অনেক সফলতার কথা এরই মধ্যে তাদের কাছে বলেছেন।
সম্ভবত লজ্জায় তিনি উপরে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেননি। এরই মধ্যে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরের ডিসি হেড কোয়ার্টার আমার বন্ধু আনোয়ার ফোন করল এবং আমার সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বলল। ফলে আমার সব জড়তা এবং ভয় দূর হয়ে গেল।
]আমি বুঝতে পারলাম, ডিসি সাহেব এবং উপস্থিত কর্মকর্তারা আমার লেখার নিয়মিত পাঠক এবং টকশোর ভক্ত। ফলে আমাকে নিয়ে তাদের সবারই ছিল প্রবল আগ্রহ।
অনেকেরই ইচ্ছা ছিল আমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে কথাবার্তা বলার। কিন্তু সে সুযোগ তারা পাননি। আজ এই বিরূপ পরিস্থিতি তাদের সেই সুযোগ করে দিয়েছে। তারা আমাকে জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানান বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা শুরু করলেন। আমার ক্লান্তি দূর হয়ে গিয়েছিল।
প্রবল উৎসাহ নিয়ে আমি তাদের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছিলাম আর তারাও গোগ্রাসে গিলছিলেন কথাগুলো। ডিসি সাহেব তার আর্দালির মাধ্যমে বিশেষ ধরনের মজাদার কফি বানানোর ফরমায়েশ দিলেন। সঙ্গে তার পছন্দমতো কিছু ফলফলারি। সেগুলো যখন পরিবেশিত হলো তখন মনে মনে আমি ডিসি সাহেবের রুচির তারিফ না করে পারলাম না। এর মধ্যে একবার তার টয়লেটটি ব্যবহারের অনুমতি চাইলাম।
টয়েলেটে গিয়ে তার রুচির উৎকৃষ্ট মান সম্পর্কে আরেক দফা নিশ্চিত হলাম। রুমের পেছনে চমৎকার একটি বেডরুমও ছিল। মনে মনে আশা করলাম, আহা আজকের রাতটি যদি এখানে ঘুমাতে পারতাম। কিন্তু আমি এও জানতাম, তা সম্ভব হবে না। ভদ্রলোক যদি সৌজন্যতা দেখিয়ে আমাকে তার রুমে থাকতেও দিতেন তবে তার চাকরির সমস্যা হতো।
আমার প্রিয় পাঠক ও দর্শকদের তো আমি বিপদে ফেলতে পারি না। আলাপ বেশ জমে উঠেছিল। সবাই আমার দুর্ভাগ্যের বিষয় নিয়ে আফসোস করছিলেন। আমি তাদের ইতিহাসপ্রসিদ্ধ কয়েকটি নিয়তি বা তকদিরের কাহিনী বললাম। এগুলো আমি অন্য একটি অধ্যায়ে হয়তো পাঠকদের বলব।
এর মধ্যে আরেক দফা কফি ও ফলফলারি দিয়ে আপ্যায়িত হলাম। তরুণ অফিসারদের আপনি থেকে তুমি বলে সম্বোধনের পর্যায়ে চলে এলাম। তারাও আমার এই ব্যবহার সানন্দে গ্রহণ করলেন। আমি যে রুমে ছিলাম তার মালিক এডিসি সাহেবও আড্ডায় যোগ দিয়েছিলেন। এডিসিকে দেখলাম আমার আরও ভক্ত।
তিনি আমার ফেসবুকের সব স্ট্যাটাস এবং আমার সম্পাদিত ডি-নিউজের নিয়মিত পাঠক। এবার আমি তার হাসির মর্ম বুঝতে পারলাম। রাত প্রায় ১টা বেজে গিয়েছিল। অফিসারদের ভাবসাব দেখে মনে হলো তারা রাত জাগরণে অভ্যস্ত এবং সারা রাত আমার সঙ্গে গল্প চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। রুমের বাইরে দায়িত্বরত কয়েকজন আর্দালি সিপাহি এবং জুনিয়র কর্মকর্তা রুমের মধ্যকার আড্ডার উষ্ণতা টের পাচ্ছিল।
তারাও ভারী আশ্চর্য হলো। মনে হলো ডিবি অফিসে গভীর রাতে এমন ঘটনা তারা জীবনে দেখেনি। আমি বললাম আজ ছুটি নিতে হচ্ছে। কয়েক দিনের মানসিক চাপ এবং নির্ঘুম রাত যাপনের ক্লান্তিতে আমি আসলেই ছিলাম শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত। কিন্তু কর্মকর্তারা নাছোড়বান্দা।
তাদের দাবি আরও কিছুক্ষণ থাকেন। এই সুযোগ কি আমরা কোনো দিন পাব- এডিসি সাহেব রসিকতা করে বললেন। তাহলে স্যারকে কয়েক দিনের জন্য রিমান্ডে আনি। আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। কর্মকর্তারা আমাকে এও জানালেন, প্রথা অনুযায়ী ভিআইপিদের পড়ন্ত বেলায় আটক করা হলে সাধারণত ডিবি অফিসে রাত যাপনের ব্যবস্থা করানো হয়।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমি এডিসি সাহেবের রুমে ফিরলাম। সঙ্গে একজন ইন্সপেক্টরকে নিয়ে এডিসি সাহেবও এলেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম ঘুমাব কীভাবে। তারা বললেন, সবাই সোফায় ঘুমায়। আমি আসলে সোফায় কখনো ঘুমাইনি এবং মনে হলো ছোট্ট সোফাটিতে ঘুমানো সম্ভব নয়।
আমার হাত-পা কাঁপছিল। তবে এবার ভয় বা সংশয় নয়, দুর্বলতার কারণে। আমি অনুরোধ করলাম একটি তোশক ও মশারির ব্যবস্থা করার জন্য, যাতে করে মেঝেতে ঘুমাতে পারি। বেশ কিছুক্ষণ চেষ্টার পর তারা সেগুলোর ব্যবস্থা করলেন এবং রাত তখন প্রায় পৌনে ২টা বেজে গেছে। এডিসি সাহেবের হাবভাব দেখে মনে হলো তিনি আমার সঙ্গে আরও কিছুক্ষণ গল্প করতে চান।
আমি তাকে অনুরোধ করলাম আমাকে ঘুমানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য। তিনি হাসিমুখে বিদায় নিলেন।
আমি রুমের লাইট বন্ধ করে মেঝেতে ঘুমাতে গেলাম। গত ৩০ বছরে কখনো মেঝেতে ঘুমাইনি। ফলে এপাশ-ওপাশ করতে থাকলাম।
ঘুম আর এলো না। কোনো দুশ্চিন্তা বা অনাহত ভাবাবেগ ছিল না। আমি মহান আল্লাহরওয়াস্তে পরিস্থিতি মেনে নিয়েছিলাম, মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ জিকির করছিলাম। আর এভাবেই সেহরির সময় চলে এলো। রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে সেহরির জন্য ডাকা হলো।
আসলে ডাকার দরকার ছিল না; কারণ আমি জেগেই ছিলাম। বাসা থেকে হটপটে সেহরির খাবার পাঠানো হয়েছিল। আমি সেগুলো খাওয়ার চেষ্টা করলাম। উপাদেয় খাবার এবং বেশ গরম গরম ছিল কিন্তু কেন জানি খুবই বিস্বাদ লাগল। খেতে পারলাম না।
উল্টো বমি আসার ভাব হলো। এর পরও রোজার নিয়ত করলাম। আজান হওয়ার পর ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে গেলাম। এবারও ঘুম এলো না। কারণ আমি জানতাম না, কখন আমাকে জাগতে হবে।
মনে মনে নিজের নির্বুদ্ধিতাকে আবারও ধিক্কার জানালাম। আমার উচিত ছিল রাতে একটি ঘুমের ট্যাবলেট চেয়ে নেওয়া এবং সকালে কতক্ষণ ঘুমাতে পারব তার সময়সীমা জেনে নেওয়া। কিন্তু অতিরিক্ত শঙ্কা এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত ফুর্তির কারণে আমি তা ভুলে গিয়েছিলাম। নির্ঘুম অবস্থায় সকাল ৭টা অবধি গড়াগড়ি করলাম। এরপর বাথরুমে গিয়ে সেভ ও গোসল সেরে সোফার ওপর বসে থাকলাম।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এডিসি সাহেব এলেন। আমার শরীরের অবস্থা তখন বেশ করুণ। দুর্বলতার কারণে দাঁড়াতে পারছিলাম না।
এডিসি সাহেবকে আমার শরীরের অবস্থা জানালাম। তিনি বেশ চিন্তিত হয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে খবর দিলেন।
ডাক্তার আসতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগল। এর মধ্যে কোর্ট থেকে কয়েকবার ফোন এলো আসামি পাঠানোর জন্য। আমার ভয় হলো এই শরীর নিয়ে আমি যদি কোর্টে যাই এবং ভিড় ঠেলে আমাকে এজলাসে উঠতে হয় তাহলে যে কোনো সময় জ্ঞান হারাতে পারি। আর কোর্ট প্রাঙ্গণে যদি আসলেই সেরূপ কিছু ঘটে তখন ডিবি কর্মকর্তাদের বদনামির আর শেষ থাকবে না। সবাই বলবে একজন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যকে ডিবি অফিসে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
আমি আমার শঙ্কার কথা এডিসি সাহেবকে বললাম। তিনিও বিষয়টি বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন এবং ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফোনে কথা বললেন। এরই মধ্যে ডাক্তার এলেন। আমার ব্লাডপ্রেসার মাপার পর তিনি কয়েকবার পালস্ দেখলেন এবং আমার বক্তব্যের সত্যতা পেলেন। এরই মধ্যে কোর্ট থেকে আবারও ফোন এলো।
এডিসি সাহেব বেশ বিরক্ত হয়েই বললেন, আসামি অসুস্থ। একটু দেরি হবে। এরই মধ্যে আরও কয়েকজন সিনিয়র কর্মকর্তা এলেন। শাহবাগ থানার সাব ইন্সপেক্টর যিনি কি না আমার মামলার আইও, তিনিও এলেন। এ অবস্থায় আমি প্রস্তাব দিলাম, আমাকে একটি এসি করা মাইক্রোবাসে করে কোর্টে নেওয়া হোক।
আমি জামিন চাইব না। কাজেই আমাকে কোর্টে উঠানোর দরকার নেই। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে কোর্টে ওঠা এবং উকিলদের হৈহুল্লোড় এবং বাদীপক্ষের উকিলের মিথ্যা ভাষণ বা মামলার আইওর মিথ্যা প্রতিবেদন শুনলে আমার জ্ঞান হারানো ছাড়া উপায় থাকবে না। আমি জ্ঞান হারালে কর্তৃপক্ষের কী হবে না হবে তার চেয়েও আমাকে যে লোকজন দুর্বল ও কাপুরুষ ভাববে এই দুশ্চিন্তায় আমি অস্থির হয়ে পড়লাম। যদিও আমি কখনো সবল বা সুপুরুষ ছিলাম না, তথাপি লোকসম্মুখে কেই বা চায় তার দুর্বলতা প্রকাশ হয়ে পড়ুক?
উপস্থিত ডিবির কর্মকর্তারা আমার প্রস্তাব গ্রহণ করলেন।
সেমতে ঢাকা সিএমএম কোর্টে তাদের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করলেন। সিদ্ধান্ত হলো ডিবি অফিস থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে আমাকে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর কোর্টহাজতে ঢোকানো হবে। আমি গাড়িতেই বসা থাকব। কোর্টের সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারগারে পেঁৗছে দেওয়া হবে সেই মাইক্রোবাসে করেই।
আমি নিজে এবং ডিবি কর্মকর্তারা শতভাগ নিশ্চিত ছিলাম যে আমার জামিন হবে না। কাজেই ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারই যে আমার ঠিকানা হতে যাচ্ছে, এ ব্যাপারে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। আমি নিজে কিংবা আমার চৌদ্দগুষ্টির কেউ কখনো কারাগারে তো দূরের কথা থানাহাজতেও ঢোকেনি। কাজেই কারাগার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণাই ছিল না। উৎসাহ কিংবা কৌতূহলবশত আমি কারাগার সম্পর্কে ডিবির কর্মকর্তাদের দু-একটা টুকটাক প্রশ্ন করলাম।
তারা জানালেন, কারাগার সম্পর্কে তাদের ধারণাও আমার মতো। ভেতরে কী হয়, কিংবা কীভাবে ঢুকতে হয়; সে সম্পর্কে তারা কিছুই বলতে পারলেন না। দায়িত্বরত একজন সিপাহি এবং আমার মামলার আইও এসে খবর দিল, মাইক্রোবাস রেডি। বাসা থেকে পাঠানো কাপড়চোপড়সমেত একটি ব্যাগ, বালিশ ও একটি কাঁথা গুছিয়ে নিয়ে মাইক্রোবাসে ওঠার জন্য আমি ডিবি অফিসের দোতলা থেকে নামতে উদ্যত হলাম। এডিসি সাহেব এগিয়ে এসে কিছু ওষুধ হাতে ধরিয়ে দিলেন।
ডাক্তার সাহেব সকালে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে ওষুধগুলো সেবনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। আমি পরম কৃতজ্ঞতাসহকারে তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ওষুধগুলো নিলাম এবং নিচে নেমে এলাম। আমি গাড়িতে চড়লাম। একজন ইন্সপেক্টরের নেতৃত্বে সাত-আট জন সশস্ত্র ডিবি কর্মকর্তা আমার সঙ্গী হলেন। এডিসি সাহেব হ্যান্ডশেক করে বিদায় জানালেন।
আমাদের গাড়ি সিএমএম কোর্টের উদ্দেশে রওনা হলো।
(বাংলাদেশ প্রতিদিন- এ প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না। )
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।