আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোমবার ধরিত্রী হবে ৭০০ কোটি মানুষের!

সোমবার দিনের কোনো একটি ভাগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছাচ্ছে। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সে কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ কেন ৩১ অক্টোবরকে পছন্দ করলো এমন একটি মাইলফলক রচনার দিন হিসেবে চিহ্নিত করতে, সে নিয়ে বিতর্ক উঠেছে। ধরিত্রীকে ৭০০ কোটি সন্তানের মাতা হিসেবে দেখার জন্য জাতিসংঘের এই হিসেবের সঙ্গে অন্য হিসেবগুলোর গরমিল রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি বিষয়ক ব্যুরোর (ইউএস সেনসাস ব্যুরো) হিসেবে ২০১২ সালের মার্চের আগে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটি ছোঁয়ার কথা নয়।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে ওই বছরের ১২ মার্চ পৃথিবীর জনসংখ্যা ওই মাইলফলক পেরুবে। বিশ্বকে ৭০০ কোটি মানুষের আবাসস্থলে পৌঁছে দেওয়ার হিসেবে যে তত্ত্বটি ব্যবহার করা হচ্ছে সেটি জটিল কিছু নয়। প্রতিটি দেশ থেকে তাদের সবশেষ আদমশুমারির তথ্য নিতে হবে। সেগুলো যোগ করে যে ফল আসবে তা থেকে শুমারির পরের সময়টুকুতে কতজন মারা যেতে পারে বলে ধারনা করা হচ্ছে তা বাদ দিতে হবে। আর যোগ করতে হবে কতজন এ সময়ে জন্ম নিয়েছে তার সংখ্যা।

এর সাথে সাথে অভিবাসনের বিষয়টি ভুললে চলবে না। কতজন মানুষ দেশগুলো থেকে অভিবাসনে গেছে তার একটি ধারনাভিত্তিক সংখ্যা যোগ করে নিতে হবে। তবেই দাঁড়িয়ে যাবে বিশ্বের সবশেষ জনসংখ্যা। কিন্তু তত্ত্বে যতটা সহজ, বাস্তবে প্রয়োগ ক্ষেত্রে তা ততটাই কঠিন ও জটিল। ধরা যাক কোনো একটি দেশের পরিসংখ্যান কার্যক্রমের ভিতটি অতটা জোরালো নয়।

অথবা কখনো কখনো যে তথ্য উপাত্ত নিয়ে হাজির হয় তা অসম্পূর্ণ। তখন এই হিসেব মোটেই কাজ করেনা। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক না। এবারের আদমশুমারিতে যে হিসেব সরকার দেখিয়েছে তা অনেকেই গ্রহণ করেনি। ২০১১ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা শেষে গত ১৬ জুলাই সরকার ঘোষণা দেয় দেশের জনসংখ্যা ১৪ কোটি ২৩ লাখ ১৯ হাজার।

এরপর ২৬ অক্টোবর জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের রিপোর্টে বলা হলো এ জনসংখ্যা ১৫ কোটি ১০ লাখ ১৪ হাজার। জাতিসংঘের সঙ্গে এমন হিসেবের গরমিল বিশ্বের দেশে দেশে রয়েছে। কোথাও কোথাও জাতিসংঘ যেসব ফ্যাক্টর দিয়ে জনসংখ্যার হিসেব কষে তা প্রযোজ্য হয় না। যেমন চীনে এক শিশু নীতি হওয়ার কারণে সেখানে লাখ লাখ বাবা-মা তাদের মেয়ে সন্তানের জন্মের বিষয়টি সরকারের হিসেবে নথিভুক্ত করেনা। আর এটি হয় ছেলে সন্তানের প্রতি তাদের আগ্রহের কারণে।

পরে স্কুল গুলোতে মেয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা গণনা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। দেখা যায় ছয় বছরে যতগুলো মেয়ে শিশু জন্মের কথা জানানো হয়েছে তার চেয়ে স্কুলগামী মেয়ে শিশুর সংখ্যা বেশি। এবারের জনসংখ্যা গণনায় জাতিসংঘ এ ধরনের জটিল বিষয়গুলো সমন্বয় করার চেষ্টা করেছে। খুঁটিনাটি বিষয়গুলোর প্রতিও যত্নশীল থেকে সহজ পদ্ধতিতেই কাজটি সম্পন্ন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরো প্রক্রিয়াটিকে একটি শিক্ষিত অনুমান বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।

ইউএস সেনসাস ব্যুরোও অনেকটা একই পদ্ধতিতে তার জনসংখ্যা গণনা করে। দুই প্রতিষ্ঠানের হিসেবে ধরিত্রীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটিতে পৌঁছাতে ২০১১ সালের ৩১ অক্টোবর ও ২০১২ সালের ১২ মার্চের যে হিসেব দেওয়া হচ্ছে তা অনেকটাই সময়ের হিসেবের হেরফেরের কারণে বলে মনে করছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যুরো কার্যালয়। জাতিসংঘ প্রতি দুই বছর অন্তর বিশ্বের জনসংখ্যার হিসেব কষে। পক্ষান্তরে ইউএস সেনসাস ব্যুরো সাধারণত বছরে দুই দফা হিসেব নিয়ে নেয় যা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে করা হয়। এ কারণেই জাতিসংঘের সঙ্গে এর হিসেবটা মেলে না।

তবে এখানে একটি বিষয়ে মিল হচ্ছে উভয় প্রতিষ্ঠানই বলছে তারা ৭০০ কোটি মানুষের পৃথিবীর যে ঘোষণা দিচ্ছে তা প্রতিকী। এ পর্যন্ত বিশ্বে এমন কোনো পদ্ধতিই চালু হয়নি যা দিয়ে প্রতিটি জন্ম ও মৃত্যুর হিসেব রাখা সম্ভব। সেক্ষেত্রে দুটি প্রতিষ্ঠানই একটি কাজ করতে পারতো তা হচ্ছে- কোনো একটি সুনির্দিষ্ট দিনের ঘোষণা না দিয়ে একটি সময় কালের কথা বলা যেতো যে এই সময়ের মধ্যে জনসংখ্যায় ৭০০ কোটির মাইল ফলক পার করবে পৃথিবী। কিন্তু সে কাজটি না করেই গোলোযোগ বাধিয়েছে দুটি প্রতিষ্ঠান। তবে নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করে দুটি প্রতিষ্ঠানই এবার বিশ্ববাসীর দৃষ্টি কাড়তে পেরেছে।

বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার ইস্যু হয়েছে, নয়তো তা কখনোই হতো না। তবে এক্ষেত্রে তারিখের কোন ধারনাটি গ্রহণযোগ্য তা বড় ধর্তব্যের নয়। এও বড় ইস্যু নয় যে জনসংখ্যা ৭ শ’ ৫ কোটি নাকি ৬ শ’ ৯৫ কোটি। সবচেয়ে বড় বার্তাটি হচ্ছে বিশাল জনসংখ্যার ভার চেপে বসছে ধরিত্রী মাতার ওপর। আর এ অবস্থায় আমাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে।

এই জনসংখ্যা বিশ্বের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। বিশ্বের ১৮০ কোটি মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। যাদের দৈনিক জীবনযাত্রার ব্যয় মাত্র ১.১৫ ডলার বা ৯৪.৭৫ টাকা। যে বিশ্বের কোটি কোটি যুবা শিক্ষাবঞ্চিত ও কাজের সুযোগ পায়না। যেখানে ৯০ কোটি মানুষ প্রতিদিন ক্ষুধা-মন্দায় ভোগে।

ঠিক কোন তারিখে বিশ্ব ৭০০ কোটি মানুষের আবাসভ’মি হবে তার চেয়ে বেশি করে আমাদের এই বিষয়গুলো নিয়েই ভাবতে হবে। বাংলাদেশ সময় ২১৩৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১ Click This Link ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।