আজকের বাংলাদেশ এককালে ভারতীয় উপমহাদেশ বিশেষত বর্তমানকালের পশ্চিম বাংলার শিক্ষিত সুশীল সমাজের মানুষের কাছে Hunterland কিংবা পশ্চাত্ভূমি হিসেবে পরিচিত ছিল। এখানকার শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত বিশাল কৃষক সমাজের মানুষ চাষবাস করে পশ্চিমের এলিট ক্লাসের উদরপূর্তির যোগান দিত। তাদের উত্পাদিত কৃষিজপণ্যে ওখানকার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হতো। পাট ও ইক্ষু উত্পাদনে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পসমৃদ্ধ হতো। এলিট ক্লাসের সার্বিক উন্নয়ন, ভোগবিলাস ও সমৃদ্ধিতে এখানকার চাষাভুষা এমনকি ভুখানাঙ্গা মানুষেরা তাদের রক্ত-মাংস, ঘাম নিংড়ানো শ্রমের বিনিময়ে প্রকৃত অর্থেই ওদের এক বিশাল Livestok-এ পরিণত হয়েছিল।
আমাদের সেই সময়কার পূর্বসূরিরা আক্ষরিক অর্থেই বোধহীন, চেতনাবিহীন দরিদ্র এক কৃষক সমাজ ছিলেন। এদের জীবন ও সমাজ নিয়ে ছিল না কোনোরূপ স্বপ্ন কিংবা আকাঙ্ক্ষা। মোটামুটি এভাবেই দিন ও রাতের একটা বিশাল তফাত্ নিয়ে তখনকার দুই বাংলার মানুষের জীবনপ্রবাহ ভালোই কেটে যাচ্ছিল। স্থবির’ক্লীব এই মানবগোষ্ঠীর মধ্যে তদানীন্তন ব্রিটিশ রাজন্যবর্গের শাসনকার্যের সুবিধার্থে সর্বপ্রথম ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের ন্যায় এক ঐতিহাসিক যুগান্তকারী ঘোষণা ও পরবর্তী সময়ে তা বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তে তাদের বহুকালের সুপ্ত চেতনার বীজ অঙ্কুরিত হওয়ার এক সম্ভাবনার অর্গল সূচিত হলো। ঘোর অমানিশার তমশাচ্ছন্ন এদের জীবন ও সমাজ ব্যবস্থা বিকশিত হওয়ার রক্তিম কিরণচ্ছটা পূর্ববঙ্গের প্রান্তরে বিকিরিত হওয়ার এক অলৌকিক ও অপ্রত্যাশিত সম্ভাবনা দেখা দিল।
কিন্তু লাইভস্টকদের প্রভূত উন্নতির নয়া দিগন্ত সূচিত হওয়ায় এতে বাদসাধলেন এদের উল্টোমেরুর বাসিন্দা কুলীন সুশীল ও সভ্য সমাজের মানুষেরা। রাজন্যবর্গের সঙ্গে চির মিত্রতার রাখীবন্ধনী এবার কেমন যেন শ্লথ হতে লাগল। নিজেদের স্বার্থের সামান্যতম আঘাত নয়, বরং এই লাইভস্টকদের সম্ভাবনাময় জীবন ব্যবস্থার কথা ভেবে এরা আতঙ্কিত হয়ে উঠলেন, শিউরে উঠলেন, ক্ষুব্ধ হলেন। সব মন-প্রাণ দিয়ে বঙ্গভঙ্গ হ্রদ আন্দোলন নামে আরেকটি মহতী(?) আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটালেন। সত্যি বলতে কী, এই উপমহাদেশে বিশেষত তত্কালীন বাংলা অঞ্চলে সেই সময়টাই সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের প্রারম্ভিককাল।
এটি রদকল্পে বোমা মারা হলো, কত সভা-সমাবেশ হলো, রচিত হলো কত স্বদেশী গান। সেই তীব্র প্রতিবাদের মুখে ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রদ হলো বটে, তাতে কী? মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন, এ এক মারাত্মক পরিবর্তন। সূচিত সেই পরিবর্তনের পথ ধরেই বহু বাধার বিন্দাচল অতিক্রম করে এই লাইভস্টক জাতীয় মানুষগুলোর আবাসভূমিতেই ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো এক কালের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ পথ ধরেই শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের কণ্ঠে বাংলার আকাশ-বাতাস কাঁপিয়ে ধ্বনিত হলো ‘We do not want to be rulled by you, depried by you, ... we are a nation.’ দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে অঙ্কুরিত সে বীজ আজ স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ নামক এক বিশাল মহীরুহ। একেই বলে ‘রাখে আল্লা মারে কে’?
দুই.
আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ আজ এক ভয়ঙ্কর ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
এদেশের মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি হলো কৃষি এবং কৃষি নির্ভর শিল্পকারখানা বিনির্মাণের মাধ্যমে একটি সমৃদ্ধ রাষ্ট্রশক্তি গঠনে আমাদের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশকে সবচেয়ে বড় নিয়ামক শক্তি হিসেবে আবহমানকাল যাবত্ এদেশের মানুষ জেনে আসছে। আমাদের প্রতিবেশী আধিপত্যবাদ আর সম্প্রসারণবাদে বিশ্বাসী বিশাল মহাভারত আজ আমাদের আবহমানকালের পরিবেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এনে পৌঁছিয়েছে। উজান থেকে বয়ে আসা প্রায় প্রতিটি নদীর উত্সমুখে ভারতের বাঁধ নির্মাণের ফলে চিরায়ত বাংলার এ রূপ আজ এক ধ্বংসাত্মক পরিবর্তনের সম্মুখীন। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জনপদগুলো বিশেষত বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, বগুড়া, পাবনা ইত্যাদি জেলার এক বিপুলসংখ্যক জনসমষ্টি আজ নিদারুণ দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত। এর মূল কারণ ভারতের নদী আগ্রাসন।
ভারত থেকে উত্সারিত প্রায় প্রতিটি নদীর বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে সৃষ্ট বাঁধের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ প্রথম দিকে অস্বাভাবিক দ্রুততার সঙ্গে নদনদীর পানি কমে যাওয়া এবং এর পরবর্তী পর্যায়ে অব্যাহত নদীভাঙনের দরুন তারা তাদের ভিটেমাটি জমিজিরাত হারায়। কর্মহীন উদ্বাস্তু হয়ে পড়ে কয়েক লাখ মানুষ। পানির স্তর দ্রুত নেমে যেতে থাকলে পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। সুপেয় পানির অভাব সৃষ্টি হয়। নদী-নালা, খাল-বিল শুকিয়ে যাওয়াতে ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’ এ প্রবাদ সে অঞ্চলের মানুষের কাছে এক কল্পবিলাসে পরিণত হয়।
নদীনির্ভর ব্যবসা ও যাতায়াত ব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। তিস্তা, করতোয়া কিংবা দিনাজপুরের মহানন্দা নদী আজ এক জীর্ণ-শীর্ণ শুষ্ক খাল। এমনিভাবে সিলেটের জকিগঞ্জের উজানে টিপাইমুখ নামক স্থানে টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উত্তর-পূর্বাংশকে ধ্বংস করার মতো পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করেছে ভারত। সীমান্তে বাংলাদেশীদের ভারতীয় বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে হত্যা করছে অবিরত। এ দৃষ্টান্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন ছাড়া ব্যতীত পৃথিবীর অন্য কোথাও বিরল।
সীমান্ত জুড়ে অসংখ্য ফেনসিডিল কারখানা স্থাপন করে এদেশের যুব সমাজকে এক বোধহীন নেশাগ্রস্ত অকর্মা জাতিতে পরিণত করার ধ্বংসাত্মক ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত।
তিন.
মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা : বিগত কয়েক বছর যাবত্ ভারত বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বহুমাত্রিক ট্রানজিট চায়। আমরা একে বলি করিডোর। কারণ কোনো দেশ তার নিজ দেশ থেকে অন্য দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে আবার নিজ দেশেই প্রবেশ করাকে বলে করিডোর, আর নিজ দেশ অন্য দেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে প্রবেশ করাকে বলে ট্রানজিট। ভারত মূলত বাংলাদেশের যশোর জেলার বেনাপোল দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে আখাউড়া দিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সপ্তকন্যা নামে খ্যাত অন্যতম ত্রিপুরা রাজ্যে এবং অন্যদিকে সিলেটের তামাবিল দিয়ে ভারতের অসম ও মেঘালয় রাজ্যে প্রবেশ করতে চায়।
একইভাবে তারা উত্তরের দিনাজপুরের বাংলাবান্ধা ও হিলি বন্দর ব্যবহার করে ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও প্রবেশ করতে চায়। এ লক্ষ্যে তারা সড়কপথ, রেলপথ ও নৌ-ট্রানজিট চায়। ভারতের এই দাবি আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য মারাত্মক ধরনের হুমকিস্বরূপ। অর্থনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থ নয়, বরং জাতীয় অস্তিত্ব বিনাশকারী এক আত্মঘাতী প্রকল্প। গত ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের সফরে ট্রানজিট নামক দৈত্যটি জাতির ঘাড় থেকে অপসারিত হয়েছে বলে আপাতত মনে হলেও বাস্তবতা কিন্তু এমনটি নির্দেশ করে না।
এই ট্রানজিট নিয়ে আমাদের সরকার পক্ষের একদিকে প্রকাশ পাচ্ছে উদগ্র ব্যাকুলতা; আর অন্যদিকে দেশের ষোল কোটি মানুষ তাদের জাতীয় স্বার্থ ও অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে সিসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় এক শক্ত প্রতিরোধ ব্যূহ সৃষ্টির তাগিদ অনুভব করছে অবিরত।
ভারতের সঙ্গে রয়েছে আমাদের এক বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি। আমাদের যেটুকু ব্যবসা তা ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন এবং তুলনামূলকভাবে পশ্চাত্পদ এই সাত রাজ্যের সঙ্গেই হয়ে থাকে। ট্রানজিট হলে আমরা এই ব্যবসায়িক সুযোগটুকুও পুরোপুরি হারাব। আবার অন্যদিকে এর প্রতিটি রাজ্যেই চলছে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র গেরিলাযুদ্ধ।
এদের দমন করতে ভারত আমাদের ভূখণ্ড দিয়ে অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ আনা-নেয়া করবে। ফলে এই গেরিলাযোদ্ধাদের সব ক্ষোভ ও আক্রোশ এসে পড়বে ট্রানজিট প্রদানকারী দেশের ওপর। আমাদের তখন এদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, উলফা, নাগা, মণিপুরী কি মিজোদের ন্যায় বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলা যোদ্ধাদের প্রতিহত করার জন্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতীয় যুদ্ধাস্ত্র বহনকারী ট্রাক-লরি ধ্বংসের জন্য এদের মাইন বা বোমা আমাদের ভূখণ্ডে বিস্ফোরিত হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ভূলুণ্ঠিত হয় কি না?
এই সাত রাজ্যের অন্যতম চীন-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন অরুণাচল রাজ্য। একে নিয়ে ১৯৬২ সালে চীন-ভারত তুমুল যুদ্ধ হয় এবং এরপর থেকে আজ অবধি সেই যুদ্ধাবস্থা বিরাজিত।
অরুণাচলে সৈন্য মোতায়েন করতে দিল্লি বা কলকাতা থেকে হাজারাধিক মাইল ঘুরপথে বিপদসঙ্কুল গিরিপথ অতিক্রম করা ভারতের জন্য যেমন সময় সাপেক্ষ তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ। আর বাংলাদেশের বুক চিরে মাত্র কয়েকশ’ মাইল পাড়ি দিয়ে ভারত তাদের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। এক্ষেত্রে আমাদের ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত বন্ধু চীনের সঙ্গে স্থায়ী শত্রুতা সৃষ্টি হতে পারে। চীনের সঙ্গে শত্রুতা সৃষ্টি হওয়া মানে পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অর্থাত্ মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, লাওস, থাইল্যান্ডসহ এই বিশাল অঞ্চলের সঙ্গে সার্বিক আঞ্চলিক কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক তথা দীর্ঘদিনে গড়ে ওঠা আমাদের সম্পর্ক ও পূর্বমুখী বাণিজ্য প্রসারের সম্ভাবনা পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্য, মধ্যএশিয়া এমনকি দূরপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে আজ থেকে ৬/৭ বছর আগেও যে সম্পর্ক ছিল আজ আর তা অব্যাহত নেই।
এমন অবস্থায় আমরা কেবল ভারত ছাড়া পুরো এশিয়া মহাদেশ থেকে বন্ধুহীন একটি বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রে পরিণত হবো।
চার.
একটি ভ্রান্ত ধারণার অপনোদন : ড. মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরের পর থেকে একটি কথার ঝঙ্কার আমাদের সরকার পক্ষ থেকে অবিরত কোরাস কণ্ঠে জনগণের কানে পৌঁছানোর প্রয়াস চলছে যে, তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদন হয়নি বলেই ট্রানজিট চুক্তিতেও তারা সম্মত হননি। স্বাধীন-সার্বভৌম একটি জাতি ও রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বকারীদের এমনতর ধারণা এবং মুখনিসৃত এ বাণী নির্লজ্জ আত্মপ্রবঞ্চনা বৈ অন্য কিছুই নয়। উজান থেকে বয়ে আসা অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যার প্রাপ্তি ভাটির দেশের মানুষের এক বিশ্বজনীন ও সার্বজনীন মানবীয় অধিকার। এমনিভাবে তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়টি একটি আন্তর্জাতিক বিষয় আর ট্রানজিট আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
পানি-বাতাস, আলো, রোদ কি বৃষ্টি এগুলোর যিনি স্রষ্টা, তিনিই তার সৃষ্টি বৈচিত্র্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এগুলো সৃষ্টি করেছেন। এ অধিকার থেকে কেউ কাউকে বঞ্চিত করা আস্তিক্যবাদীদের জন্য প্রকারান্তরে স্রষ্টার অস্তিত্বকে অস্বীকার কিংবা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণার শামিল। আর এ জন্য রচিত হয়েছে অনেক আন্তর্জাতিক আইনকানুন। কোনো প্রতিপত্তিশালী যেন জরাজীর্ণকে পানিবঞ্চিত করে শুকিয়ে মারতে না পারে এ জন্য এটি বিশ্বজোড়া একটি মীমাংসিত বিষয়। আন্তর্জাতিকভাবে মীমাংসিত এই বিষয়টির প্রতি আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রটি(?) বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আমাদের বুকে অস্তিত্ব বিনাশকারী এক বিষাক্ত মরা পেরেক ঠুকে দিয়েছে।
পাঁচ.
আমাদের কথা : নদী যদি বাঁচে বাংলাদেশ বাঁচবে, নদী মরে গেলে বাংলাদেশও মরে যাবে। ভারতের নদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সরব হওয়ার মূল কারণটি এখানেই নিহিত। এটি কস্মিনকালেও ভারতবিরোধিতা নয়। বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে নদ-নদী, খাল-বিল, রোদ ও বৃষ্টি, বৃষ্টি ও বন্যা, বন্যার পানিতে ভেসে আসা পলিমাটি ও পলল গঠিত সমতল ভূমি। বাংলাদেশ মানেই হচ্ছে ঐতিহ্যগতভাবে মত্স্য সম্পদ ও হাওর-বিলে পাখ-পাখালিতে ভর্তি এক সমৃদ্ধ জনপদ।
বাংলাদেশ হলো ফুলে ফলে ছাওয়া এক দেশ। এদেশের বিস্তীর্ণ প্রান্তর সবুজ শ্যামলিমাময়। এদেশ বৃক্ষলতা কি তৃণরাজির সমাহারে পুষ্ট। এই হচ্ছে প্রকৃত বাংলাদেশ। এ অবস্থার যদি বিনাশ করা হয়, এদেশের বুক চিরে যদি ভারতের ট্রানজিট নামীয় করিডোর রচিত হয় তখন আর আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ বাংলাদেশ থাকবে না।
এমনকি যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক কি আফগানিস্তান নয়, যুদ্ধবিধ্বস্ত কঙ্গো, সিয়েরালিওন, কি লাইবেরিয়া নয়, দুর্ভিক্ষপীড়িত ইথিওপিয়া কি ইরিত্রিয়া নয় কিংবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অ্যাটম বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত আজ অবধি অভিশাপ বয়ে চলা মৃত্যুপুরী হিরোশিমা কি নাগাসাকিও নয়, বরং এটিই হবে পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত জনপদ। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।