হায় চিল, সোনালী ডানার চিল, এই ভিজে মেঘের দুপুরে তুমি আর কেঁদোনাকো উড়ে উড়ে ধানসিড়ি নদীটির পাশে ! jibanananda.। ১।
তৃতীয় বিশ্বে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ও ক্ষমতা বণ্টনে আমলাতন্ত্র অনেকক্ষেত্রে জনগনের চাইতেও শক্তিমান। এই আমলাতন্ত্রকে পজেটিভ বা নিগেটিভ সব ধরনের রোল প্লে করতেই আমরা দেখি। পার্সিয়ান আমলাতন্ত্রই প্রথম অসংখ্য দেশ দিয়ে গড়া ভারতকে একটি একক রাষ্ট্রে পরিণত করেছিল।
পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী সংযুক্তরাষ্ট্র ভারত ইউনিয়নের স্থায়িত্বের ভিত্তি তার অনড় আমলাতন্ত্র। রাষ্ট্রীয় গত প্রকৃতির অন্যতম হাতিয়ার যে আমলাতন্ত্র তা আমরা দেখি ৯০ সালে। বিশ্ব বেহায়া খ্যাত এরশাদকে গদিচ্যুত করেছিল এদেশের সাধারণ জনগণ নয় বরং আমলাতন্ত্র এবং ঢাকা শহরের রাজনীতি সচেতন শিক্ষিত মধ্যবিত্ত। বিশ্বাস না হলে রুট লেভেলে গিয়ে সার্ভে করে দেখেন, মানুষ কি বলে, বেহায়া সাহেবের আমলেই তারা তুলনামূলক ভালো ছিল বলে তাদের মন্তব্য করতে দেখবেন। একটি রাষ্ট্রীয় আদর্শে উদীপ্ত কেন্দ্রীয় শক্তিশালী আমলাতন্ত্রের নমুনা আপনি দেখছেন চায়নাতে।
কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কিভাবে পুঁজির বিকাশকে চরম গতিতে এগিয়ে নিয়ে বৈশ্বিক পুঁজির সাথে যুদ্ধে নামল তা আপনারা খেয়াল করেছেন। শক্তিশালী কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের কারনেই বৈশ্বিক মন্দা তাদের বলতে গেলে ছুঁতেই পারল না। আবার আমলাতন্ত্রের লক্ষাধিক সমস্যা, তাদের সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা, রাষ্ট্রীয় যাবতীয় সুযোগ হাতিয়ে নিয়ে উচ্চবিত্তের আসনে বসে জনগনের উপর ছড়ি চালানো এসব কিচ্ছাতো বলার অপেক্ষা রাখে না। রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপরে আমলাতন্ত্র ছড়ি চালাতে আগ্রহী হয় যখন তখন আমাদের ক্ষোভের সীমা থাকে না। আমরা তখন রাস্তায় নামি।
আমরা গনত্রন্ত্রকে লাঞ্ছিত হতে দিতে শিখি নাই। সোভিয়েত পতনের অন্যতম মূল কারন আমলাতন্ত্রের ভেতর দিয়ে গড়ে উঠা উচ্চাকাঙ্ক্ষী শ্রেণী যারা শ্রেণীহীন সমাজ সৃষ্টির প্রতিবন্ধক রূপে দাঁড়িয়েছিল নব্বয়ের দশকে।
২।
যাই হোক আমলাতন্ত্র কতটা গুরুত্ববহ তা সবচেয়ে ভাল অনুধাবন করেছিল জামায়েতে ইসলাম। তারেক রহমান সাহেব যখন আখের গোছাতে ব্যাস্ত নিজামিরা তখন প্রশাসন জামাতি ভাবাদর্শের ক্যাডার দিয়ে ভরে ফেলল।
সেই সুফল আজও তারা পাচ্ছে ! হুঠাহাট জাদুবলে আমলাতান্ত্রিক ব্যাবস্থা সংস্কার করে গুনগত পরিবর্তন আনা অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু সবাই মানবেন যে জাতীয়তাবাদী আদর্শে উদ্দীপ্ত আমলাতন্ত্র অত্যান্ত জরুরী বিষয়। এই ধরুন টিকফা’র মত রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিরুধী চুক্তি রাজনৈতিক কারনে বাস্তবায়ন হতে পারে কিন্তু আমলাতন্ত্র এর বিরুধী থাকলে আজ কি সরকার এই চুক্তি পাশ বা বাস্তবায়ন করতে পারত? আপনারা জানেন আমাদের আমলাতন্ত্রের টিকফা নিয়ে ভাবার অবকাশ নাই, তার চেয়ে জরুরী বিষয় প্রমোশন, বদলি প্রভৃতি।
৩।
অর্থাৎ আমাদের আমলাতন্ত্রে চাই মেধাবী তরুণদের ইনক্লুশন।
এখন মেধাবী কারা? ব্যাপারটা আপেক্ষিক। মেধাবী মানে একাডেমিক ভাবে আগানো তরুণরা নয়, বরং চাই জাতীয়তাবোধ, রাষ্ট্রীয় ভাবাদর্শে উদ্দীপ্ত মানুষ। একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়ে এসব যাচাই হয় না। অর্থাৎ চাই নিয়োগ ব্যাবস্থায় আমুল পরিবর্তন যা রাতারাতি সম্ভব না। দেশের তথাকথিত প্রগতিশীল তরুন ও বুদ্ধিজীবীদের ধারনা একটি ছাগু পক্রিয়ার মধ্য দিয়ে কিছু গন্ডমুর্খ ক্যাডার সার্ভিসে ঢুকছে।
তা অনেকাংশে সত্য। প্রগতিশীলতার দাবিদার তরুনের প্রতি আমার প্রশ্ন আপনি ক্যাডার সার্ভিসে আসছেন না কেন? এই নষ্ট জায়গায় এসে সংগ্রাম করাটাও কি এক মহান যুদ্ধ না? আপনি বলবেন এই অসুস্থ প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মত ঘাস খাওয়া প্রতিযোগিতায় নেমে মুরগী হবার ইচ্ছা আপনার নাই। তাই না? বাহ, তাহলে আমি বলব আমাদের গোটা শিক্ষা ব্যাবস্থাই একটা মুরগী বানানোর কারখানা; তাইলে সেই ব্যাবস্থার মধ্যে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিতে যখন আপনার লজ্জা করে নাই তখন গভর্মেন্ট সার্ভিসে এত ন্যাকামো কেন ভাই?
এর পরের প্রশ্ন হল, আপনিত এই পুজি অর্থিনীতি ব্যাবস্থাতেই থেকেই দেশ উদ্ধার করতেছেন। তো আপনি কিভাবে আপনার রুটি রুজির আয়োজন করবেন বলে ভাবছেন? আমাদের দেশের প্রগতিশীলদেরত দেখা যায় বাপের টাকার শ্রাদ্ধ করে বিপ্লব করতে, নয় বউয়ের টাকায় বিড়ি কিনা খাইতে। শেষমেশ অবশ্য আপনারা কিছু করে খেতে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে ধরনা দেন বা এনজিও খুলে বসেন বলে শোনা যায়।
আপনারা আবার ক্রিয়েটিভ জায়গা খুঁজেন, ভর্তি হয়ে যান বিভিন্ন পত্রিকা অফিস, মিডিয়া সেন্টারে, হা হা হা যেসব পত্রিকা, মিডিয়াকে আবার ইসলামী ব্যাংকের বিজ্ঞাপনের জন্য হা করে থাকতে দেখা যায়। হে প্রগতিশীল ভদ্রলোক সাহেব, আমার কি মনে হয়েছে জানেন? আপনাদের এইদিকে আসা দরকার। আমি অনেককেই চিনি যারা প্রাইভেট ফার্মে’র গোলাম না হয়ে একটা সরকারী সেকেন্ডক্লাস চাকুরী দিয়ে রুটি রুজির প্রয়োজন মিটাতে বেশি গর্ববোধ করে। এই লোকগুলা কি একেবারে ফেলনা? তারা একেবারে মুরুগী না’রে ভাই, তাদের মাথায়ও কিছু আছে। তারাও তৃতীয় বিশ্ব বুঝে, ডব্লিওটিও বুঝে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক বুঝে, রক্ত শোষণ বুঝে, ফ্রেন্স বিপ্লব বুঝে, বলশেভিক বুঝে, ট্রিপস, ট্রিমস, টিকফা এইসব অল্প হইলেও বুঝে।
আজ আপনারা এইখানে আসতে চাইলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই মুভমেন্ট শিবির, হিজবুতিদের হাতে চইলা যাইত না।
আজ আপনার সাধের ‘প্রজন্ম চত্তরে’র নাম ওরা ‘মেধা চত্তর’ দিছে বইলা গা জ্বলছে না? প্রথমবার যখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘শাহবাগ’ নামটাতেই পাকিস্তানী গন্ধ পাইল তখন আপনাদের কি মনে হইছিল? আমাদের শাহবাগকে বাংলা শব্দ হিসেবে একবারও মনে হয়ছে কি? আপনার মনে হয় নাই, চেয়ার-টেবিল-স্কুল-কলেজ-গাই-গাভী-নদী-তটনী সবই আত্তীকৃত বাংলা ভাষার শব্দ। যে দেশের সরকারি দলের নামই বিদেশী ভাষা থেকে আসছে সেই শব্দকে আমরা আত্তীকৃত করি নাই? যে দেশের সরকার প্রধান এত সামান্য ‘শাহবাগ’ শব্দ নিয়ে রাজনীতি করতে আগ্রহী তার কাছে ইনসাফ চাইতে আপনার আসলে কেমন লেগেছিল? যারা একটি স্বতস্ফুর্ত আন্দোলনকে হত্যা করল সেই অন্যায়ের প্রতিবাদ সাথে সাথেই করা উচিত ছিল না? ‘শাহবাগ’ চত্তর মানেই মানেই গন আন্দোলনের অপর নাম হতে পারত না? আমরা জানতাম যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ এখন থেকে হবে শাহবাগেই। কালও আমরা তাই দেখি। কোটার কথা বলছি না; একজন ৭৮ পেয়ে বঞ্চিত হবে আরেকজন ৫৫ পেলেই আমন্ত্রিত হবে একে আপনাদের অন্যায় মনে হয় না? যদি অন্যায় মনে হয়ে থাকে তবে ছাত্র সংগঠনগুলোর কোন দায়িত্বই কি ছিল না? ৫৫% যেখানে কোটায় নিয়োগ হচ্ছে এত বড় অন্যায়, এত বড় স্পয়েল সিস্টেম পৃথিবীর কোথাও যে নেই তার প্রতিবাদ করার কোন প্রয়োজনই আপনারা আনুধাবন করলেন না? অন্তত এইটুকু একবার হলেও তো বলতে পারতেন যে, ৩০ লক্ষ মানুষ, ২ লক্ষ বীরাঙ্গনা পরিবার কেন এই সুবিধা পাবেনা? তারা কি শহীদ না, তাদের রক্ত আর লাশের উপর দাড়ায়ে কি এই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম হয় নাই? তাদের জন্য কোটা নাই কেন? আর যাদের জন্য আছে তারা আসলে কারা যারা রাষ্ট্রের দেয়া এত বড় সুযোগ গ্রহণ করছে, তাদের কয়জন আপনার পাশে প্রজন্ম চত্তরে ছিল তাকি খেয়াল করেছিলেন? আসলে মুক্তিযুদ্ধাদের সংখ্যা কত? আজ কয়জনকে লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এই হিসাব রাখার প্রয়োজন অনুভব করেছেন কি? জনাব আরিফ জেবতিক তার লেখায় এমন হিসাব দিয়েছেঃ ‘এখন প্রশ্ন দাঁড়ায় বাংলাদেশে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত সংখ্যা কত? এস ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ তাঁর বই " “Bangladesh in Liberation War”য়ে জানিয়েছেন যে ১১ টি সেক্টর নিয়ে তৈরি মূল ফোর্সে সেই সংখ্যা ৮০ হাজার।
এর বাইরে মুজিব বাহিনী ১০ হাজার, কাদেরিয়া বাহিনীর ৫ হাজার এবং হেমায়েত বাহিনীর সদস্য ছিল দেড় হাজার। অন্যান্য ক্ষুদ্র বিভিন্ন দল মিলে আরো ১০ হাজার। এই হিসেবে মোট মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা শফিউল্লাহর হিসাবে ১ লক্ষ ৫ হাজার। মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি শুরু হয় ১৯৮৭ সালে সেখানে ৬৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে তালিকাভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালের বিএনপি সরকারের তালিকায় ছিল ৮৩ হাজার, ১৯৯৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১.৫৪ লাখ এবং ২০০২ সালের ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে গেজেট করে ১.৯৮ লাখ ( প্রায় ২ লাখ) লোককে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
’
যাই হোক আপনাকে বুঝতে হবে বছরের পর বছর ধরে চলা এই অন্যায় আজ রুটি রুজির সন্ধানে ঘুর্নায়মান তরুণের মনে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান আর এই স্পয়েল সিস্টেমের উপর বিতৃষ্ণা তৈরি করেছে। এই অনাচারই তার মধ্যে জাতীর সুর্যসন্তানদের বংশধরদের প্রতি বিরূপ মনভাবের জন্ম দিয়েছে। কিন্তু তারা কখনোই মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্যান করার ধৃষ্টতা দেখাই নাই। যদি কেউ তা করে থাকে, এই অবস্থার সুযোগ নিয়ে থাকে তবে সে অবশ্যই সেদিনের নেমকহারাম বেঈমানদের উত্তরসূরি। আজ শাহাবাগ বিক্ষোবে তারাই অসম্মান করেছে আমাদের জাতীয় প্রতীক ও সুর্যসন্তানদের।
৪।
কিন্তু এ ধরনের আন্দোলনে বাংলার মানুষদের জন্মযুদ্ধ বিরুধী পক্ষের হাতে আন্দোলনের নেতৃত্ব চলে যাবে তা স্বাভাবিক। রাজনীতি সচেতন প্রজন্ম ক্যাডার সার্ভিস ও এই ধরনের সরকারী নিয়োগ বিধিকে নিচু চোখে দেখে বলেই এই হাল যেমনটা সাধারণ শিক্ষার্থী পুরা রাজনৈতিক ব্যাবস্থাকেই কুলুশিত ভেবে রাজনীতিকেই নিচু চোখে দেখে, এরা এদের ফেসবুক প্রোফাইলে সর্বনাশা কোটেশন দিয়ে রাখে ‘আই হেইট পলিটিক্স’। তাই আমাদের শ্রমিক আন্দোলন, তেল গ্যাস রক্ষা আন্দোলন ইত্যাদি সাধারণ শিক্ষার্থীকে ভাবিত করে না। এই দুই শ্রেণীর মাঝে এই আকাশ-পাতাল ব্যাবধান ঘুচাতেই হবে।
এটাও এক ধরনের যুদ্ধ।
৫।
তবে কোটা ব্যাবস্থা উঠিয়ে দিতে হবে এমন দাবী করা একেবারেই অযৌক্তিক। রাষ্ট্রের পেছানো অংশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া তাঁর অন্যতম দায়িত্ব। বিশেষ করে নারী কোটা, অন্যতম জরুরী একটা বিষয়।
যে নারীর ত্যাগ, শ্রম, ঘাম সমাজকে বেচে থাকার রসদ দেয় সে আত্বোৎসর্গোকারী নারীকে সামনে এগিয়ে দেয়া সামান্য দায়িত্ব পালন মাত্র। সংখ্যালঘু আদিবাসী ও ডিপ্রাইভ শ্রেণীকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। এটা আমাদের করুনা নয় বরং তাদের অধিকার। সবশেষে কোটার সবচেয়ে বড় অংশ যেখানে চলে যাচ্ছে তা মুক্তিযোদ্ধা কোটা; মুক্তিযোদ্ধার দ্বিতীয় প্রজন্মকে সুবিধা দেয়া অত্যন্ত যৌক্তিক হলেও তৃতীয় বা চতুর্থ প্রজন্মকে রাষ্ট্রীয় সুবিধা প্রদানের বিষয়টা রাষ্ট্রকে ভাবতে হবে। চতুর্থ প্রজন্মকে সুবিধা দিলে একটা সুবিশাল শ্রেণী কভার করতে হয়, তাঁর চেয়ে বড় কথা দ্বিতীয় প্রজন্ম এত বড় সুবিধা পাবার পরও ওই পরিবারের চতুর্থ প্রজন্মের সে সুবিধা না হলেও চলার কথা।
একটা চাকুরি শুধু একটি চাকুরি নয় তা একটি পরিবারকেই এক স্তর থেকে অন্য স্তরে নিয়ে আসে। বার বার নিশ্চিত সুবিধাপ্রাপ্তি তার স্বাবলম্বী হবার পথে একটা মানসিক বাধার শামিল। আর তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মকে যদি দেয়াও হয় তথাপি তাদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে হবে। আমরা দেখছি কোটার মাধ্যমে এত বড় অংশ সংরক্ষিত রাখা হলেও সীট খালী থেকে যাচ্ছে। এত বড় অংশ মুক্তিযুদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত রাখা যে অযৌক্তিক, এটা তারই প্রমান।
মুক্তিযোদ্ধা কোটা সর্বোচ্চ ৮%-১০% এর বেশি না হওয়া উচিৎ। এতে কোটাধারিদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা গড়ে উঠবে। তাছাড়া এই মার্কেট ইকোনমির যুগে বিনা প্রতিযোগিতায় ফললাভ দুঃখজনক। সর্বোপরি সব মিলিয়ে কোটা ২৫% শতাংশের বেশী না হওয়াই ভাল। তাই চাই কোটা ব্যাবস্থার গুণগত সংস্কার।
৬।
সবিশেষে, রাজনীতি সচেতন তরুণদের প্রতি সম্মানের সাথে বলতে চাই, অন্যায়ের প্রতিবাদ করাই শিক্ষিত মানুষের ধর্ম হওয়া উচিৎ। শিক্ষা একটি পক্রিয়া যা মানুষের চিন্তা ও আচারনের গুণগত এবং রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ভাবে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন ঘটায়। আপনি যেভাবে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্মযুদ্ধ বিরুধী নেমকহারামের লঘু শাস্তি জনিত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন সেইরূপে প্রতিবাদ করতে হবে সকল অন্যায়ের। বিমাতা সুলভ আচারন সংকীর্ন মানসিকতার পরিচায়ক।
শিক্ষার্থীর শ্রম ঘামের মুল্য রাষ্ট্র দিবেনা এ অন্যায়ের প্রতিবাদ আবশ্যক। কোন সিস্টেম বাতিলের দাবী যখন আপনি তুলবেন তাঁর আগে যেন বিকল্প ব্যাবস্থার চিন্তা আপনার মাথায় আসে। যেমন আমেরিকাতে শুধুমাত্র টেস্ট তৈরি করার জন্যই অসংখ্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। পার্থীর আচারন, চিন্তা, দক্ষতা সকল কিছু পরিমাপ ও মূল্যায়নের জন্য বিভিন্ন টেস্ট ডেভেলাপ হয়েছে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের অসংখ্য এক্সপার্টদের কাজই শুধু টেস্ট তৈরি করা।
অনেকেই পাবলিক পরীক্ষার নিম্নমানের প্রশ্ন দেখে জাস্ট হাসেন, উপহাস করেন এবং মজা লুটেন। ভারী বুলি ছোড়া ছাড়া আপনার অবদান বেশ সীমিত। অযথা হাওয়ার উপর ভেসে প্রগতিশীলতা দেখাবেন না। আপনি একজন মুরুগী শিক্ষার্থীর মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলার আগে নিজের কথা ভাবুন। নিজের মেধা, সৃজনশীলতাকে কোন ‘উৎপাদনশীল’ খাতে আপনি ব্যয় করছেন একবার সেটার হিসাব কষুন।
আপনি যখন শ্রমিকের শ্রম বিক্রি, তাঁর শ্রম শোষণ নিয়ে কথা বলবেন তখন ভাবুন আপনি সত্যিই তাঁর প্রতিনিধিত্ব বা মুখপাত্র হবার যোগ্যতা রাখছেন নাকি আপনি আসলে একজন চূড়ান্ত পেটিবুর্জোয়া; যে মুখে বড় বড় কথা বলে সুযোগ পেলেই বউ বাচ্চা নিয়ে সেটেল হয়ে সুখের ঘরকন্না করতে লজ্জাবোধ করেন না।
৭।
এই লেখাটি আমার ব্যাক্তিগত চিন্তার ফসল মাত্র। কাউকে আঘাত করার ইচ্ছা, ক্ষমতা এবং যোগ্যতা আমার নাই বিশ্বাস। অনলাইনে বসে বিভিন্ন মানুষজনের ঢালাও দায়িত্বহীন মন্তব্য ব্যাথিত করল বলেই মেলাদিন বাদে আজ লিখতে বসলাম।
আগাগোড়া না জেনে ও না অনুধাবন করে মন্তব্য করা বাঙালীর স্বভাবজাত বদভ্যাস। সবিশেষে যেসব মহান মানুষেরা এইসব চাকরগিরি করে রুটি রুজি সংস্থানের চিন্তাকে লাথি মেরে নিজেকে উৎপাদনমুখী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন, পুজিব্যাবস্থার গায়ে থুতু দিয়ে সাহস করে লাঙ্গল ধরেছেন, যৌথ খামারের নকশা করছেন তাঁদের প্রতি থাকল আমার বিনীত শ্রদ্ধা।
ধন্যবাদ।
সোয়াদ আহমেদ।
১১ জুলাই, মিরপুর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।