হিমালয় থেকে সুন্দরবন হঠাৎ বাংলাদেশ অপারেশন সার্চ লাইটঃ একটি পরিকল্পিত গণহত্যা
সামরিক বাহিনীর হাই কমান্ডের সাথে মিটিং-এ ইয়াহিয়া খান বললেন – "তিরিশ লক্ষ বাঙ্গালিকে হত্যা করো, তখন দেখবে তারা আমাদের পা চেটে খাবে। " [এশিয়া টাইমস]
১৯৭১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর উঁচু পর্যায়ের অফিসারদের মিটিং -এ বাংলার জনগণকে উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য সামরিক আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়া হলো । অপারেশনের নাম দেয়া হলো – ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ । বাঙ্গালিদের চরম শিক্ষা দিতে হবে, এরা বড় বাড় বেড়েছে । সিদ্ধান্ত হলো উপরে উপরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে পশ্চিম পাকিস্থানি নেতারা সমঝোতায় আসার চেষ্টা করবে ।
আর এদিকে গোপনে পশ্চিম পাকিস্থান থেকে অস্ত্র, সৈন্য আর গোলাবারুদ আনা হবে । প্রয়োজন মত সব চলে আসলে পশ্চিম পাকিস্থানি নেতারা আলোচনা ভন্ডুল করে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্থান চলে যাবে । তখন বাঙ্গালিদের উপর সামরিক অপারেশন চালিয়ে তাদের জন্মের মত শিক্ষা দেয়া হবে, যাতে এর পরের কয়েক প্রজন্ম আর চোখ তুলে তাকাতে না পারে । অপারেশনের মূল পরিকল্পনা করার জন্য দায়িত্ব দেয়া হলো মেজর জেনারেল খাদিম হুসাইন রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলিকে ।
১৮ মার্চ সকালে ঢাকা সেনানিবাসের কার্যালয়ে বসে জেনারেল রাজা এবং মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি অপারেশনের পরিকল্পনা তৈরি করেন ।
জেনারেল ফরমান নিজ হাতে হালকা নীল রঙের একটি অফিস প্যাডের ৫ পাতা জুড়ে লিড-পেন্সিল দিয়ে তাদের পরিকল্পনা লিখলেন --
সারা পূর্বপাকিস্তানে একযোগে অপারেশন শুরু করতে হবে । অপারেশন চালাতে হবে অত্যন্ত ধুর্ততার সাথে, দ্রুতগতিতে – যাতে বাঙ্গালিরা চমকে যায় । সামান্য প্রতিরোধও করতে না পারে । সারাদিনের ক্লান্তিতে মাঝ রাতে যাখন সবাই যখন গভীর ঘুমে থাকবে তখন আক্রমন করতে হবে । সর্বোচ্চ সংখ্যক রাজনৈতিক ও ছাত্র সংগঠনের নেতা, সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ব্যক্তিবর্গ এবং শিক্ষকদের গ্রেফতার করতে হবে ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে হবে । অপারেশনের শুরুতেই অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেড়ে নিয়ে সকল পূর্বপাকিস্তানী (বাঙালি) সৈন্যদলকে নিস্ক্রিয় করে দিতে হবে। বাধা দিলে হত্যা করতে হবে । ঢাকা শহরের সড়ক, রেল ও নৌ-পথের দখল নিয়ে সারা শহর বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে হবে । টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও টেলিগ্রাফ সহ সকল অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে।
বিশ্ব মিডিয়ায় যাতে আক্রমণের খবর পৌঁছাতে না পারে সেজন্য বিদেশি সাংবাদিকদের দেশ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা হবে ।
২৫ মার্চ, ১৯৭১ । বাঙ্গালির ইতিহাসে ভয়ংকর কালো রাত । সেদিন রাত ১১টায় কারফিউ জারি করা হয় । রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ব্যারাক থেকে সেনাবাহিনী বেরিয়ে এসে পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলার ঘুমন্ত, নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়ে ।
শুরু করে নজিরবিহীন হত্যাজজ্ঞ । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইপিআর সদর দফতর এবং রাজারবাগ পুলিশ লাইনকে ধ্বংসস্তুপে পরিনত করা হয় । সেখানে পরে থাকে লাশ আর লাশ । গ্রেফতার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে । গোলা আর গুলির বিস্ফোরন ঘটিয়ে সারা দেশে নরক নামিয়ে আনা হয় ।
শুরু হয় স্বাধীন বাংলার জন্য রক্তাক্ত সংগ্রাম ।
ব্ল্যাক আউটঃ ভয়াল কালো রাতকে স্মরণ
বাংলার ইতিহাসে এই দুঃখজনক ভয়াল কালো রাতকে স্মরণ করার জন্য প্রথমবারের মত ব্ল্যাক আউটের পরিকল্পনা করা হয়েছে । রাতের বেলা আলো অনেক দূর থেকে দেখা যায় । শত্রুরা যাতে আলো লক্ষ্য করে গুলি করতে না পারে বা বিমান থেকে বোমা ফেলতে না পারে সেজন্য যুদ্ধের সময় জীবন বাঁচাতে আশেপাশের আলো নিভিয়ে রাখা হয় । এটাকেই সাধারণত ‘ব্ল্যাক-আউট’ বলা হয় ।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু হওয়া ভয়াবহতা আর বাঙ্গালিদের অসহায়ত্বকে স্মরণ করার জন্য এই প্রথম বারের মত ব্ল্যাক-আউট করা হবে । আজ রাত ১১.৫৫ থেকে ১২.০০ টা পর্যন্ত সকল প্রকার লাইট, ল্যাপটপ বন্ধ রাখুন । চেস্টা করুন অতি প্রয়োজন ছাড়া এই পাঁচ মিনিট লাইট না জ্বালাতে । অনুভব করার চেস্টা করুন ৭১ সালের এই দিনে এই সময়ে বাঙ্গালিরা কি অসহায়ের মত গুলির টার্গেট থেকে বাঁচতে লাইট নিভিয়ে লুকিয়ে ছিলো ...
এই পাঁচ মিনিট ফেসবুক ইউজ করা থেকে বিরত থাকুন ... কোন পোস্ট দিবেন না, লাইক-কমেন্ট করবেন না । বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্লগ, নিউজ পোর্টাল এবং ওয়েবসাইটের কর্তৃপক্ষরা এই আয়োজনের সাথে সংহতি রেখে তাদের নিজ নিজ ওয়েব সাইট এই পাঁচ মিনিটের জন্য কালো করে দিবেন ।
অনলাইন রেডিও রেডিও হৈচৈ-Radio HoiChoi জানিয়েছে একইসময় ৫ মিনিটের জন্য তাদের সকল কর্মকান্ড স্থগিত রাখবে ।
এই ভয়াল এবং নিশংস আক্রমণকে স্মরণ করে আজ ‘২৫ তারিখ’ এবং কাল ‘২৬ তারিখ’ – এই দুই দিনের জন্য আপনার ফেসবুক আইডির প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো কালো করে দিন ...
[নেটে black photo লিখে সার্চ দিলে কিছু কালো ছবি আসবে । সেখান থেকে কোন একটি ছবি ডাউনলোড করে আপনার ফেসবুক আইডির প্রোফাইল পিকচার এবং কাভার ফটো হিসেবে আপলোড করুন] ।
ইভেন্ট লিংকঃ Click This Link
আমরা লোডশেডিং-এর দেশে বাস করি । পাঁচ মিনিট আলো নিভিয়ে বসে থাকা আমাদের জন্য কিছুই না ।
আশা করি সবাই সম্মিলিত ভাবে এই আয়োজনে অংশ নিবেন ।
কেন এই আয়োজনঃ
[যারা এই আয়োজনের বিরুদ্ধে চিক্কুর দিচ্ছে তাদের জন্য]
বিভিন্ন ঐতিহাসিক দিবসগুলো নানা আয়োজনের মাধ্যমে স্বরণ করা না হলে একসময় সে দিবস এবং দিবসটিকে ঘিরে থাকা চেতনা জনমানুষ হতে একসময় হারিয়ে যায় । ব্ল্যাক আউটের এই আয়োজনের মাধ্যমে ২৫ মার্চ রাতে বা মুক্তিযুদ্ধে শহিদ হওয়া মানুষদের কোন উপকার হবে না । কিন্তু উপকার হবে বাঙালি জাতির, উপকার হবে আমাদের – আমরা যারা বেঁচে আছি । এই আয়োজনের মাধ্যমে আমাদের চেতনা সমৃদ্ধ হবে ।
আমরা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারব কিভাবে বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে । আমরা নতুন করে উপলব্ধি করতে পারব আমাদের পূর্বের প্রজন্ম কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের জন্য এই স্বাধীন দেশ রেখে গেছেন । আমরা স্বাধীন দেশ আর পরাধীন দেশে বসবাসের পার্থক্য বুঝতে পারবো । আমরা তখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে আরও বেশী সচেতন হবো । আমরা স্বাধীনতার মূল্য নতুন করে বুঝতে পারবো ।
তখন দেশকে আরও বেশী ভালোবাসব । দেশের জন্য এবং যারা দেশ স্বাধীন করতে রক্ত আর জীবন দিয়েছেন তাদের পরিবার-স্বজনদের জন্য ইতিবাচক কিছু করতে উদ্বুদ্ধ হবো ।
আর নতুন প্রজন্মের মাঝে যারা দেশের ইতিহাস জানে না তারা এই আয়োজনের ফলে ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে । একজন কিশোর বা কিশোরী যখন দেখবে ফেসবুকে সবার প্রোফাইল ছবি কালো; যখন সে দেখবে সবাই ২৫ মার্চ রাত ১২ টা বাজার আগের ৫ মিনিট লাইট বন্ধ রাখছে তখন সে তার কারণ জানতে ইতিহাস জানতে আগ্রহী হবে । আর ইতিহাস জানার মাধ্যমে, দেশের ঐ সূর্যসন্তান্দের ত্যাগের কথা জানার মাধ্যমে তার মনে দেশপ্রেম জাগবে, দেশের জন্য কাজ করার মানুষিকতা জাগবে, দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার ইচ্ছা জন্মাবে, ঐ সূর্যসন্তানদের পরিবার স্বজনদের জন্য কিছু করার আজ্ঞ্রহ জন্মাবে ।
আমি একটু আগই লিখেছিয়াল, যারা শহিদ হয়েছেন এই আয়োজনে তাদের কোন উপকার হবে না । আসলে এটা ভুল । তাদেরও উপকার হবে । এই আয়োজনের মাধ্যমে যখন মানুষের মাঝে সচেতনার জন্ম হবে, যখন ঐ সব দেশপ্রেমিক শহিদদের জন্য মানুষের মনে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা জন্মাবে তখন মানুষেরা ঐ সব শহিদদের জন্য আল্লাহ্র কাছে প্রার্থনা করবে । তাদের দেশপ্রেমের জন্য, তাদের ভালো কাজের জন্য মানুষেরা আল্লাহ্র কাছে তাদের জন্য পরকালে মুক্তি আর উত্তম পুরষ্কার চাইবে ।
আর, এই আয়োজন ৭১ এর বর্বরতার শান্তিপূর্ণ এবং সৃষ্টিশীল [অনেক বিদ্যুত সঞ্চয় হব] প্রতিবাদ ।
সাথে সাথে, এই আয়োজন যারা বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের পতাকাকে ভালোবাসে, ঐসব দেশপ্রেমিক-স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির নীরব শো-ডাউন ।
আর ... এই আয়োজনের মাধ্যেমে আমাদের নতুন প্রজন্ম আমাদের শত্রু-মিত্রকে নতুন করে চিনতে পারবে । আমরা দেখব যে বর্বর পাকিস্থানি আর্মি আমাদের নিকটজনকে নিশংসভাবে হত্যা করেছে, আমাদের সাথে পশুর মত আচরন করেছে, সেই বর্বর পাকিস্থানিদের সাথেই আমাদেরর দেশের কেউ কেউ বন্ধুত্ব করেছিলো, তাদের সহায়তা করেছিলো । সুতরাং বুঝবো কে শত্রু আর কে বন্ধু ।
তাই ......... এই আয়োজনের গুরুত্ব অনেক । যারা আয়োজনের গুরুত্ব ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও বুঝতে পারছেন না তারা মেধায় খাটো । আর যারা বুঝেও না বোঝার ভান করছেন তারা বিশুদ্ধ ছাগু ! ম্যা ম্যা ম্যা !!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।