আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপারেশন বেলবাটি

আমার শৈশবের স্মৃতি বিজরিত পটুয়াখালী সরকারি জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৯৬ সালে স্কুলের সবুজ আঙিনায় পা ফেললাম। ৩য় শ্রেনীতে ভর্তি হলাম। নতুন বছর, নতুন স্কুল, নতুন সহপাঠী। অনেকেই ছিল আমার পূর্বের স্কুল পি.টি.আই. এর সহপাঠী।

হাফ প্যান্ট পরাদের দল থেকে প্রোমোশন পেয়ে ফুল প্যান্ট পরাদের দলে যোগ দিলাম। মনিং শিফটএ ভর্তি হওয়ার সুবাদে শীতকালের সকালে এসেম্বিলিতে যোগ দেয়ার কষ্টের কথা এখনো মনে পরে। আরও মনে পরে যায় টিফিন পিরিয়ডে বোম্ব বার্স্টিং বিশেষ করে কষটেপ মোড়ানো বলের কথা। আর হরতাল ও বৃষ্টির কথা তো বলতেই হয় না। এগুলো ছিল আমাদের স্কুল জীবনের চরম আশির্বাদের বিষয়।

প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার অনেক মধুর স্মৃতি রয়েছে। একদা স্কুলের খেলার মাঠের পাশের কোয়ার্টারে ইউনুস স্যার এর কাছেআমরা পড়তে যেতাম। আমার এক বন্ধুর সাইকেলের বেলবাটি চুরি হয়ে গেল। নাম উল্লেখ করছি না। ও এসে আমাকে একদিন বলল দোস্ত আমার বেলবাটি চুরি হয়ে গেছে আমিও আরেকজনের বেলবাটি চুরি করব।

কি আর করা আমার বন্ধুর ইচ্ছাকে বারন করতে না পারলেও বলেছিলাম সাবধানে করতে। পাশেই আরেক শিক্ষকের কাছে প্রাভেট পড়তো অনেক ছাত্র। সেখানে রাখা একটি সাইকেলের বেলবাটি খোলার মিশনে নামল আমার বন্ধুটি। কিন্তু আমার কপাল পোড়া বন্ধুটির এই বেলবাটি মিশনের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অনেক দুর থেকে দারুনভাবে উপভোগ করছিলেন আমাদের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সাত্তার স্যার। মিশনের শেষ পর্যায় এসে আমার বন্ধুটি লাল হাতে ধৃত হল সাত্তার স্যার কর্তৃক।

পরিনামে সাইকেলটিকে বাজেয়াপ্ত করা হল। আমার বন্ধুকে সাইকেলের বেলবাটি জন্য পুরো সাইকেলটাই হারাতে হল। বেলবাটি চুরির দায়ে প্রধান শিক্ষক স্যার এর রুমে স্হাপিত বিশেষ আদালতে হাজির করা হল। প্রধান শিক্ষক মহোদয় বিচারকার্য পরিচালনা করলেন। সিদ্ধান্ত নিলেন অপরাধীকে অভিভাবক এর কাছে হস্তান্তার করবেন।

কিন্তু এই রায় আমার বন্ধুটি মানল না। সে এই শাস্তি ব্যাতীত যে কোন শাস্তি ব্যাতীত মাথা পেতে নিতে প্রস্তুত। পরে আমার বন্ধুর চোখের জল নাকের জল এর কাছে স্যার পরাজিত হয়ে স্যার নতুন রায় ঘোষনা করলেন যে তাকে ২৫ টি বেত্রাঘাত খেতে হবে ও ৫টি নতুন বেলবাটি কিনে দিতে হবে যাতে করে পরবতর্তীতে কার বেলবাটি হারিয়ে গেলে তাদেরকে এ গুলো ক্ষতিপুরন হিসেবে দিতে পারেন। হাস্যজ্বল ভঙ্গীতে বিনা বাক্য ব্যয়ে এ রায় মেনে নিল। রায় কার্যকর হওয়ার পর মুক্ত হয়ে ফিরে এল আমাদের বন্ধুটি এবং এ বিষয়টি বাসা পর্যন্ত না গড়ানোর জন্য স্যার এর প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল।

এরকম অসংখ্য স্মৃতি এখনও আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যায় সময়ের আবর্তে হারিয়ে যাওয়া সেই শৈশবে। সেই শৈশবের স্মৃতি বিজরিত প্রিয় জুবিলী স্কুল ১২৫ বছর সৌরভ ছরিয়ে আজও গৌরবের সাথে টিকে আছে। ইতিহাস ঐতিহ্য ও কালের সাক্ষী হয়ে জুবিলী স্কুল তার দ্যুতি ছরিয়ে যাবে চিরকাল। ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।