খুব করেই অতীতে ফিরে যেতে চাইছে রিয়াল মাদ্রিদ। আজ রাতের ‘অপারেশন ৩-০’-এ তাদের সবচেয়ে বড় প্রেরণা যে অতীতই। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মাঠে ‘স্বপ্নময়’ কামব্যাকের ইতিহাসটা যে একেবারেই নতুন কোনো ঘটনা নয়। ১৯৭৫ সালে ইউরোপ-সেরা প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় রাউন্ডের প্রথম লেগে ডার্বি কাউন্টির কাছে ৪-১ গোলে হারার পর বার্নাব্যুতে প্রতিপক্ষকে পুড়িয়ে মেরেছিল রিয়াল। ওই ম্যাচে ‘লস ব্ল্যাঙ্কোস’দের জয়টা ছিল ৫-১ গোলের।
আজ বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালের দ্বিতীয় পর্বেও ওই ধরনের কিছু করতে চায় রিয়াল। বরুসিয়ার বিপক্ষেও প্রথম লেগে যে তাদের হার ৪-১ গোলের। সুতরাং রিয়াল-শিবির এই বিশ্বাসটা রাখতে চায় যে, সবকিছু এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
কোচ হোসে মরিনহো যেন চুপসে গেছেন ডর্টমুন্ডের ম্যাচের পর থেকেই। আগের সেই হম্বিতম্বি আর নেই।
তৃতীয় কোনো ইউরোপ-সেরা করানোর এত কাছাকাছি এসে ফিরে যেতে হবে! ব্যাপারটি মানতে পারছেন না বলেই যেন একটু চুপ তিনি। তবে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ম্যাচটি নিয়ে তিনিও তেতে আছেন। তাতানোর চেষ্টা করছেন দলের ‘জওয়ান’দের, ‘এটা কোনো বিষয় হলো, একটা দলের বিপক্ষে ৩-০ গোলে জেতা যাবে না! তাঁর দল রিয়াল কি এতটাই খারাপ দল নাকি!’
হোসে মরিনহো জানেন, এই ম্যাচটার গুরুত্ব। ঘোষণাও করেছেন, গত ১০ বছরে রিয়াল মাদ্রিদ এ ধরনের অগ্নস্ফুিলিঙ্গের ম্যাচ খেলেনি। এক দশকের মধ্যে আজ রাতে বার্নাব্যুর ম্যাচটিই রিয়াল মাদ্রিদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ।
পুরো মাদ্রিদজুড়েই এখন অপারেশন ৩-০-এর কথা। যে করেই হোক রিয়াল মাদ্রিদকে আজ জিততেই হবে। গোল খাওয়া যাবে না। একটি গোল খেলেই প্রতিপক্ষের জালে জড়াতে হবে আরও দুটি গোল। অর্থাত্ সে ক্ষেত্রে রিয়াল মাদ্রিদকে জিততে হবে ৫-১ গোলে।
এর চেয়ে বরং ৩-০ ব্যবধানটিই অনেক সহজ। রিয়াল তো এর চেয়ে বেশি ব্যবধানে ইউরোপের কত বড় দলকেই হারিয়েছে। সব বাদ দিন, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড যদি রিয়ালের জালে চারবার বল জড়াতে পারে, তাহলে রিয়াল কেন তাদের জালে তিনবার বল ঠেলতে পারবে না।
বার্নাব্যুর আজকের ম্যাচ এমনই তাতিয়ে দিয়েছে সবাইকে। মাদ্রিদে রিয়ালের সবচেয়ে তিক্ত প্রতিপক্ষ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ-সমর্থকেরাও নাকি আজ রিয়াল-সমর্থক।
তারাও মনে-প্রাণে চান বরুসিয়াকে আজ বার্নাব্যুতে উড়িয়ে দিক রিয়াল। এখানে আর প্রতিপক্ষ ক্লাব নয় রিয়াল। লড়াইটা যেন ‘স্পেন বনাম জার্মানি’তে এসে ঠেকেছে। জাত্যাভিমানের লড়াই। জার্মানদের বিপক্ষে স্প্যানিয়ার্ডদের তো জিততেই হবে।
এখানে রিয়াল, অ্যাটলেটিকোর পার্থক্যের কোনো স্থানই নেই।
লা লিগায় অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়টা যেন ছুঁতেই পারেনি রিয়াল-সমর্থকদের। অন্য সময় অ্যাটলেটিকো হারানোর বিষয়টি রিয়ালের সমর্থকদের কাছে বার্সেলোনার বিপক্ষে জয়ের মতোই আনন্দের উপলক্ষ নিয়ে হাজির হয়। এবার যেন সব নিষ্প্রভ। বরুসিয়ার বিপক্ষে ওই উড়ে যাওয়া হারটাই সব নিভিয়ে দিয়েছে।
রিয়াল মাদ্রিদের নিজস্ব টেলিভিশন চ্যানেলে নাকি এ মুহূর্তে সমর্থকদের চাঙা করতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ সব অনুষ্ঠান। বিজ্ঞাপনচিত্র। রিয়ালের খেলোয়াড়েরা কায়মনোবাক্যে আবেদন জানাচ্ছেন সমর্থকদের, ‘আপনারা পাশে থাকুন আমাদের। আপনাদের সমর্থন, অনুপ্রেরণাই আমাদের শক্তির উত্স। ’
হোসে মরিনহো নাকি খেলোয়াড়দের বকাঝকা করেছেন একটি বিষয় নিয়ে।
‘পোল্যান্ডের একটি ছেলে তোমাদের নাকের ডগা দিয়ে পাওয়ার ফুটবল খেলে চারটি গোল করে চলে গেল, তোমরা কি হাতে চুড়ি পরে বসে ছিলে?’ লেভানডফস্কির পাওয়ার ফুটবলের কাছে ওই দিন নাকি রিয়ালের খেলোয়াড়েরা ছিলেন বড় বেশি নরম, বড় বেশি ভদ্র। লেভানডফস্কিকে ফাউলে ফাউলে কেন জর্জরিত করা হলো না! তাহলে আজ কি বার্নাব্যু ওই ধরনের ফুটবলই দেখবে? অপারেশন ৩-০-কে কার্যকর করতে সম্ভব সব ধরনের কৌশলই হাতে নেবে রিয়াল। থাকুক না, ওই কৌশলে কিছু অপকৌশলের ছোঁয়া।
তবে আগুন-ম্যাচের আগে আজ রিয়ালের সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। ঊরুর পেশিতে চোট পাওয়ায় আজকের ম্যাচে তাঁর মাঠে নামা নিয়েই নাকি সংশয় ছিল।
রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষ থেকে তাঁর মাঠে নামার বিষয়টি নিশ্চিত হলেও রোনালদো নাকি এ মুহূর্তে ‘ব্যক্তিজীবন’ নিয়ে কিছুটা অস্থির।
এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে রোনালদোর ব্যক্তিজীবন হঠাত্ চলে এসেছে ব্রিটিশ গসিপ পত্রিকা ‘দ্য ডেইলি সান’-এর কল্যাণে। ব্রাজিলীয় এক সুন্দরীর সঙ্গে রোনালদোর উদ্দাম মেলামেশাকে উপজীব্য করে সান যে খবর ছাপিয়েছে, তা পড়ে রোনালদোর আসল বান্ধবী ইরিনা নাকি বেশ চটেছেন। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুয় হাই ভোল্টেজ ম্যাচের আগে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এ মুহূর্তে ভুগছেন মানসিক অশান্তিতে। ব্যাপারটি মাঠের ফুটবলে প্রভাব রাখবে বৈকি।
মানসিক অশান্তি থেকে রেহাই পেতেই ‘দ্য সান’-এর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা ঠুকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন রোনালদো। বলেছেন, ‘ডাহা মিথ্যা একটি কথা ছড়িয়ে কার কী লাভ হচ্ছে, জানি না। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে আমার প্রভূত ক্ষতি হয়ে গেছে। ’
রোনালদো প্রতিবাদপত্রে দাবি করেছেন, বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে সেমির প্রথম পর্বের ম্যাচের আগে কারও সঙ্গে উদ্দাম মেলামেশার প্রশ্নই ওঠে না। পুরোটাই সাজানো, বানোয়াট গল্প।
অপারেশন ৩-০-এর আগে রোনালদোর এই ‘কেলেঙ্কারি’ ছুঁয়ে যাচ্ছে না কাউকে। সবাই ব্যস্ত অপারেশন ৩-০কে সফল করতে। সর্বশক্তি নিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ এখন নিমগ্ন, যেভাবেই হোক বরুসিয়া ডর্টমুন্ড কেলেঙ্কারির সবটাই সুদে-মূলে ফিরিয়ে দিতে। ওয়েবসাইট।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।