বিজ্ঞান হলো প্রকৃত সত্য উদঘাটনের চলমান প্রক্রিয়া, নিরেট সত্য নয়। বর্তমান যুগে ইসলামের বিরুদ্ধে যে সকল ফেতনার উদ্ভব হয়েছে তার মধ্যে নবুওয়াতের দাবী অতি মারাত্মক। এই নতুন নবুওয়াতের দাবী মুসলিম জাতির মধ্যে বিরাট গোমরাহীর সৃষ্টি করে চলেছে। সুতরাং এ সংক্রান্ত পরিষ্কার জ্ঞান থাকা আমাদের জরুরী। নিম্নে এ বিষয়ে আলোকপাত করা হলো-
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) যে শেষ নবী এবং তার পরে আর কোন নবী পৃথিবীতে আসবেন না তা পবিত্র কুরআন-হাদীস, সাহাবাগণের ইজমা ও যুক্তি দ্বারা প্রমাণিত।
সুতরাং নতুন নবী হওয়ার দাবী করা এবং উক্ত দাবীদারের অনুসরণ করা কুফরী এ কাজ করা তবে তারা কাফির হয়ে যাবে। এ সংক্রান্ত প্রমাণাদি পেশ করা হলঃ
কুরআনঃ পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের পঞ্চম রুকুতে উদ্ধৃত হয়েছে “মুহাম্মদ (সা) তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন, বরং তিনি আল্লাহর রাসূল এবং শেষ নবী এবং আল্লাহ সব জিনিষের ইলম রাখেন। ”
আলোচ্য আয়াতে রাসূল (সা) সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি খাতামুন নাবীয়্যীন বা শেষ নবী। আরবী অভিধানে ‘খাতাম’ শব্দ বেশ কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
খাতামাল আমালা অর্থ সে কাজ শেষ করে ফেলেছে।
খাতামাল এনায়া অর্থ পাত্রের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে এবং তাতে মোহর লাগিয়ে দিয়েছে যাতে বাইরে থেকে কিছু প্রবেশ না করতে পারে এবং ভিতর থেকেও কিছু বের হতে না পারে।
খাতামাল কিতাব অর্থ পত্র বন্ধ করে তার উপর মোহর লাগিয়ে দিয়েছে ফলে পত্রটি সংরক্ষিত হবে।
আভিধানিক অর্থের দিকে লক্ষ্য করে দেখা যায়, রাসূল (সা)-এর আগমনের মাধ্যমে নবী রাসূল আগমনের ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে।
হাদীসের প্রমাণঃ
১. রাসূল (সা) বলেনঃ বনী ইসরাঈলদের নেতৃত্ব করতেন আল্লাহর রাসূল নবীগণ, যখন কোন নবী ইন্তেকাল করতেন, তখন অন্য কোন নবী তাঁর স্থলাভিষিক্ত হতেন, কিন্তু আমার পরে কোন নবী হবে না, হবে শুধু খলিফা। (বুখারী, কিতাবুল মানাক্বি)
২. বুখারী শরীফের কিতাবুল মানাকিরের অন্তর্ভুক্ত বাবু খাতামিন নাবিয়ীন এ উদ্ধৃত হাদীস রাসূল (সা) বলেন, “আমি এবং আমার পূনবর্গ নবীদের দৃষ্টান্ত হলো এই যে, এক ব্যক্তি একটি দালান তৈরি করল এবং খুব সুন্দর ও সুলাভনীয় করে যেটি সজ্জিত করলো।
কিন্তু তার এক কোণে একটি ইটের স্থান শূন্য ছিল। দালানটি চতুর্দিকে মানুষ ঘুরে ঘুরে তার সৌন্দর্য দেখে বিস্ময় প্রকাশ করছিল এবং বলছিল, এ স্থানে একটি ইট রাখা হয়নি কেন? কাজেই আমি সেই ইট এবং আমিই শেষ নবী। ”।
অর্থাৎ আমার আসার পর নবুওয়্যাতের দালান পূর্ণতা লাভ করেছে। এখন এর মধ্যে এমন কোন শূন্যস্থান নেই যাকে পূর্ণ করার জন্য আবার কোন নবীর প্রয়োজন হবে।
৩. তিরমিযী শরীফে উদ্ধৃত হাদীসঃ রাসূল (সা) বলেন রিসালাত ও নবুওয়াতের ধারাবাহিকতা খতম করে দেয়া হয়েছে। আমার পর আর কোন নবী ও রাসূল আসবে না।
৪. আবু দাউদ শরীফের কিতাবুল ফিতান এ উদ্ধৃত হাদীসঃ হযরত সাওবান (রহ) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন আর কথা হচ্ছে এই যে, আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশ জন মিথ্যাবাদী হবে। তাদের প্রত্যেকেই নিজেকে নবী বলে দাবী করবে। অথচ আমার পর আর কোন নবী নেই।
সাহাবাগণের ইজমার প্রমাণঃ
কুরআন ও সুন্নাহের পর সাহাবায়ে কেরামের ইজমা বা মতৈক্য হলো তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজ নির্ভরযোগ্য বর্ণনা হতে জানা যায়। রাসূল (সাঃ)-এর ইনে-কালের অব্যাহিতর পরই যে সমস্ত লোক নবুওয়াতের দাবী করেছিল এবং যারা তাদের নবুওয়্যাত স্বীকার করে নেয়, তাদের সবার বিরুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম (রা.) সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ করেছিলেন।
এ সম্পর্কে মুসাইলামা কায়সারের ব্যাপারটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যে রাসূল (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পূর্বেই রাসূলের (সা) নবুওয়্যাতকে স্বীকার করা সত্বেও শুধুমাত্র তার নবুওয়্যাতে অংশীদার হওয়ার দাবী করে চিঠি লেখেঃ
“আল্লাহর রাসূল মুয়ালামার তরফ হতে আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদের নিকট।
আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক। আপনি জেনে রাখূন, আমাকে আপনার সাথে নবুওয়্যাতের কাজে শরীক করা হয়েছে। (তাবারী ২য় খন্ড ২৯৯ পৃঃ)
এভাবে মুহাম্মদ (সা) কে স্পষ্টভাবে নবী বলে স্বীকার করে নেয়ার পরও তাকে ইসলাম বহির্ভূত বলে ঘোষণা করা হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হয়েছে। সাহাবা (রা) গণ তাকে মুসলমান বলে স্বীকার করেননি এবং সাহাবা (রা)গণ তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। এ যুদ্ধের নেতৃত্বে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা)।
এ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, শেষ নবী মুহাম্মদ (সা) এ ব্যাপারে সাহাবাগণের ইজমা হয়ে গিয়েছে।
আলেম সমাজের ইজমাঃ
সাহাবাগণের পরবর্তীকালের আলেম সমাজ তথা হিজরী শতাব্দী হতে আজ পর্যন্ত মুসলিম জাহানের প্রত্যেক এলাকার আলেম সমাজ সর্বদা একমত যে, মুহাম্মদ (সা)-এর পরে কোন ব্যক্তি নবী হতে পারেনা। তারপর যে ব্যক্তি নবুওয্যাতের দাবী করবে এবং যে ব্যক্তি এই মিথ্যা দাবীকে মেনে নেবে সে কাফের এবং মিল্লাতে ইসলামের মধ্যে তার স্থান নেই।
শেষ কথা এই, মুহাম্মদ (সা)-এর পর আর কোন নবি আসবেনা এটাই স্বতঃসিদ্ধ ও প্রমাণিত।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।