প্রতিবছর ৭ লাখ লোক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার মারা যায়। আমেরিকানদের মৃত্যুর তৃতীয় কারন স্ট্রোক। আমাদের দেশেও এ সংখ্যা কিন্তু কম নয়। স্ট্রোকে আক্রান্তদের দুই-তৃতীয়াংশই মারা যান বা চিরতরে পঙ্গু হয়ে যান। মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে গেলে ও অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে মস্তিষ্কের কোষগুলো মারা যেতে শুরু করে।
একে বলে স্ট্রোক বলা হয়। স্ট্রোক দুই প্রকার। ইসকেমিক স্ট্রোকে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল কমে যায়। সাধারনত রক্তনালীর ভেতর জমাট বাধা রক্তপিন্ড এ সমস্যা করে থাকে। মোট স্ট্রোকের শতকরা ৮০ ভাগই এ ধরনের স্ট্রোক।
মস্তিষ্কের রক্তনালী ছিঁড়ে গেলে রক্তক্ষরণ হয়। এটি হেমোরেজিক স্ট্রোক। স্ট্রোক সচেতনতা বাড়াতে প্রতি বছর ২৯ অক্টোবর ‘বিশ্ব স্ট্রোক দিবস’ পালন করা হয়। প্রতি বছরের মত এবারও পালিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য - ‘প্রতি ছয় জনে একজন স্ট্রোকের ঝুঁকিতে।
স্ট্রোক আপনারও হতে পারে। স্ট্রোককে জানুন। আজ একটি জীবন রক্ষা করুন। ’
স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হল - হঠা? করে শরীরের হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়ায় কারণে তা নাড়াতে না পারা, মুখ বেঁকে যাওয়া, হাসলে মুখ অন্য পাশে চলে যায়, কথা জড়ায়ে যাওয়া। এছাড়া শরীরের একপাশ অবশ হওয়া, হঠা? চোখে না দেখা, গিলতে সমস্যা হওয়া, হাটতে না পারা, হঠা? প্রচন্ড মাথা ব্যথা শুরু হওয়া।
এছাড়াও হতে পারে বমি বমি ভাব বা বমি, ঘুম ঘুম ভাব, চোখে একটি জিনিস দুটি দেখা।
অনেক সময় দেখা যায় কারোও কারোও হঠা? করে কথা বন্ধ হয়ে যায়, চোখে দেখতে পারে না, শরীরের কোন অংশ অবস হয়ে যায়। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে তা আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়। এটাকে সবাই অগ্রাহ্য করেন। একে বলে ট্রানজিয়ান্ট ইসকেমিক ্অ্যাটাক সংক্ষেপে টিআইএ।
এটাও কিন্তু এক ধরনের স্ট্রোক তবে মিনি স্ট্রোক। বড় ধরনের স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ এটি। এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে অবজ্ঞা না করে স্ট্রোক প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
ঝুকিপূর্ণ যারা ঃ বয়স্ক ও পুরুষ ব্যক্তি, বংশে স্ট্রোক আক্রান্ত কেউ থাকলে, আগে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হলে তাদের আবার স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যাদের উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ যেমন, হার্ট ফেইলুর, এনডোকার্ডাইটিস, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, ডায়াবেটিস, রক্তে কোলস্টেরল বেশি হলে, ধুমপান, মদ্যপান, রক্তরোগ-পলিসাইথেমিয়া ও জন্মনিয়ন্ত্রন পিল সেবন করলে স্ট্রোকের ঝুকি অনেকাংশে বাড়ে।
প্রতিরোধ আপনার হাতে : স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তির বিভিন্ন ধরনের জটিলতা দেখা দেয়। এছাড়া একবার স্ট্রোক বা টিআইএ হলে এক সপ্তাহের মধ্যে আবার স্ট্রোকে আক্রান্তের হার ৫-১০ ভাগ। এক বছরের মধ্যে আরোও ১৫ ভাগ ও পরের বছর থেকে যে কোনো সময় ৫ ভাগ আবার স্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু দুচিন্তার কিছু নেই। একটু সচেতন হলে স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারবেন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান স্ট্রোক সোসাইটি স্ট্রোক প্রতিরোধে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে।
১. নিজের ঝুঁকি জানুন ও নিয়ন্ত্রণ করুন : উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ কোলস্টেরল স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুন বাড়ায়। এ ঝুঁকিগুলো জানুন এবং নিয়ন্ত্রন করুন। রক্তচাপ স্বাভাবিকের মধ্যে রাখুন। এজন্য অতিরিক্ত লবন পরিহার করুন, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করুন ও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন।
ডায়াবেটিস ও রক্তে কোলস্টেরল বেশি হলে রক্তনালীতে চর্বি জমে যায়। ফলে রক্তনালী সরু হয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে। হার্ট অ্যাটাক, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন, হার্ট বড় হয়ে গেলে, ভাল্বের সমস্যা ইত্যাদি কারনে রক্তজমাট বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। এ রোগগুলোর চিকিৎসা করান।
২. কাজকর্ম ও ব্যায়াম করুন : নিজেকে অলস হতে দিবেন না।
ব্যায়াম করুন। গবেষনায় দেখা গেছে যারা প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে ৫ ব্যায়াম করে তাদের রক্তচাপ, রক্তে কোলস্টেরলের মাত্রা কমে ও ওজন নিয়ন্ত্রনে রেখে স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। হাটা ভাল ব্যায়াম। হাটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময় মেনে হাটুন।
সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ থেকে ৫ মাইল হাটুন। এছাড়াও সাতার কাটা, সাইকেল চালানো, নাচা, টেনিস, গলফ খেলতে পারেন। ব্যায়ামের সময় বুকে ব্যথা, মাথা ঝিম ঝিম ও শ্বাসকষ্ট হলে ব্যায়াম বন্ধ করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৩. ওজন কমান ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান : প্রচুর শাকসবজী ও ফলমুল খান। প্রতিদিনের খাবারে পাচ ভাগের একভাগ ফলমুল ও শাকসবজী খান।
স্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ খাবার যেমন গরু বা খাসি বা পাতিহাঁসের মাংস, শুকুরের মাংস, চিজ, বিভিন্ন ধরনের কেক, আইসক্রিম, ইয়োগাট, কনডেন্সড মিল্ক ও কোলস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার ডিমের কুসুম, চুপড়ি আলু, বিভিন্ন প্রানী মস্তিষ্ক ও যকৃত, চর্বিযুক্ত খাবার ও বাটার, ঘি, চীজ, ক্রীম,, কেক, বিস্কুট পরিহার করুন। লবন রক্তচাপ বাড়ায়। সব মিলিয়ে ১ চামচের বেশি লবন খাবেন না। আঁশযুক্ত খাবার বেশি বেশি করে খান। কমিয়ে ফেলুন শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
খাবার খান শারীরিক পরিশ্রমের সাথে মিল রেখে। সবুজ শাকসবজী, সয়াবিন ও অন্যান্য ভোজ্য তেল, মাছের তেল ও যকৃত বাদাম খান।
৪. ধুমপান পরিহার করুন ঃ গবেষনায় দেখা গেছে, ধুমপান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়। যে কোন বয়সেই ধুমপান ত্যাগ করা হোক না কেন তা স্ট্রোকের ঝুকি কমায়। গবেষনায় আরোও দেখা গেছে যে কোন সময় ধুমপান ছাড়লে তা স্ট্রোকের ঝুঁকি অর্ধেক কমায়।
৫. মাদককে না বলুন ঃ মদপান করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। মদপানে বিরত হোন।
৬. দ্রুত ব্যবস্তা নিন : স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। দ্রুত চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলে স্ট্রোকের জটিলতা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।