আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবুজে ছাওয়া নাটোর রাজবাড়ী

বৃক্ষ তোমার নাম কি, ফলেই পরিচয়..... নানা প্রজাতির প্রাচীন বৃক্ষরাজিতে ছাওয়া প্রাসাদ চত্বর। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল একঝাঁক টিয়া। সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছাঁচে গড়া ভবনগুলো। সত্যি, প্রাসাদ চত্বরে ঢুকলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না... 'আমারে দু'দণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন। ' বাস্তবে বনলতা নামে কোনো নারীর অস্তিত্ব নাটোরে থাকুক আর না-ই থাকুক, এখানে কেউ বেড়াতে এলে এমনটা ভাবাই স্বাভাবিক যে, এ শহর বনলতা সেনের।

চায়ের স্টল থেকে প্রাইভেট ক্লিনিক কিংবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান_ ছোট্ট এ শহরে মোড় ঘুরতে গেলেই বনলতা সেনের নামে কিছু না কিছু আপনার চোখে পড়বেই। তবে একটু অনুসন্ধানী হয়ে খোঁজ নিতে গেলেই ভুল ভাঙবে। দেখা মিলবে অন্য এক বিদুষী নারীর। তিনি রানী ভবানী। তার রাজত্বকালে নাটোর জমিদারি অর্ধেক বঙ্গ শাসন করত বলে তাকে বলা হতো অর্ধবঙ্গেশ্বরী।

জানা যায়, পলাশী যুদ্ধে সিরাজুদ্দৌলার পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য সৈন্যও পাঠিয়েছিন রানী; কিন্তু সৈন্যরা পেঁৗছার আগেই সিরাজের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায়। নাটোর রাজবংশের সেই গৌরবময় দিন আজ দূর অস্তাচলে। অনেক আগেই নিভে গেছে মঙ্গলপ্রদীপ, বাজে না আর আনন্দঘণ্টা। কে কোথায় চলে গেছে, তারও খোঁজ মেলে না। শুধু স্মৃতি হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে ১২০ একর এলাকাজুড়ে সুরম্য রানী ভবানীর প্রাসাদ বা নাটোর রাজবাড়ী।

রাজবাড়ী এলাকায় ঢুকতেই মনটা প্রসন্ন হয়ে গেল। নানা প্রজাতির প্রাচীন বৃক্ষরাজিতে ছাওয়া প্রাসাদ চত্বর। মাথার ওপর দিয়ে উড়ে গেল একঝাঁক টিয়া। সবুজ গাছের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ব্রিটিশ স্থাপত্যের ছাঁচে গড়া ভবনগুলো। সত্যি, প্রাসাদ চত্বরে ঢুকলে মুগ্ধ না হয়ে উপায় থাকে না।

পুরো রাজবাড়ীটি প্রধানত দু'ভাগে বিভক্ত_ বড়তরফ ও ছোটতরফ। দুই তরফের দুটি কারুকার্যময় প্রাসাদ ছাড়াও হানি কুইন ভবন, বৈঠকখানা, মালখানাসহ রয়েছে বিভিন্ন আকারের সাতটি ভবন। চুন-সুরকিতে করা কারুকার্যে অনেকটাই নিত্যদিনের রোদ-বৃষ্টি-ঝড় আর মানুষের অত্যাচারে ক্ষয়ে বা ধসে গেলেও বুঝতে এতটুকু অসুবিধা হয় না যে, কতটা যত্ন নিয়ে স্থাপত্যশিল্পীরা সম্পাদন করেছিলেন কাজগুলো। শিবমন্দির, কালীমন্দিরসহ রয়েছে সাতটি মন্দির। এগুলোতে এখনও পূজা-অর্চনা হয়।

আর এসবকিছু বহির্শত্রু থেকে রক্ষা করতে বা নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রাসাদের চারদিকে খনন করা হয়েছিল প্রশস্ত খাল। সপ্তদশ শতাব্দীতে নির্মিত সুরম্য এ ভবনটি আজও সবার দৃষ্টি কাড়ে। জানা যায়, রাজা রামজীবন ১৭০৬-১৭১০ সালের কোনো একসময় পুঠিয়ার রাজার কাছ থেকে প্রায় ১৮০ বিঘার একটি বিল দান হিসেবে গ্রহণ করে সেখানে এই রাজপ্রাসাদ গড়ে তোলেন। রাজা রামজীবনের একমাত্র ছেলে কলিকা প্রসাদ মারা গেলে তার দত্তক ছেলে রামকান্তের সঙ্গে ১৭৩০ সালে রানী ভবানীর বিয়ে হয়। ১৭৪৮ সালে রামকান্তের মৃত্যুর পর রানী নিজেই ক্ষমতা গ্রহণ করেন এবং পুরো অর্ধশতক তিনি রাজত্ব করেন।

নাটোর রাজবাড়ী নির্মাণবিষয়ে জনশ্রুতি আছে, রাজত্ব লাভের পর রাজা রামজীবন এবং তার ভাই রঘুনন্দন রাজধানী স্থাপনের জন্য উপযুক্ত জায়গা খুঁজছিলেন। চলনবিল অধ্যুষিত এ এলাকায় নৌকায় করে ঘুরতে ঘুরতে ভাতঝাড়ার বিলের মধ্য দিয়ে যখন যাচ্ছিলেন, তখন দেখতে পান_ দুটো বেজি সাঁতার কেটে বিল পার হচ্ছে আর একটা ব্যাঙ ছোট একটা সাপকে গিলে খাচ্ছে। এই দেখে পণ্ডিতরা স্থানটিকে রাজধানী স্থাপনের জন্য শুভলক্ষণ যুক্ত বলে রায় দেন। কিন্তু সমস্যা বাধে স্থানটি ছিল পুঠিয়া রাজার অধীনে। পরে কখনও পুঠিয়া আক্রমণ করবে না শর্তে পুঠিয়ার রাজা দর্পনারায়ণ রাজা রামজীবনকে 'ব্রহ্মোত্তর' দান করেন।

সেই ভাতঝাড়ার বিলই অল্পদিনের মধ্যে নগরে পরিণত হয়। প্রথমে নট্যপুর বা নটপুর থেকে এ জায়গার নাম হয় নাটোর। বর্তমানে নাটোর জেলা শহরের বঙ্গজ্জল এলাকায় নির্মিত এ রাজবাড়ীর তিনটি ভবন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আওতায় থাকলেও ১৯৮৬ সাল থেকে এটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় উদ্যান (যুব পার্ক) হিসেবে রয়েছে। নাটোরবাসীর প্রতিদিনের বিনোদন কেন্দ্র এটি। রাজবাড়ী চত্বরেই করা হয়েছে পিকনিক স্পট, বৈশাখী মঞ্চ ও ঈদগাহ।

ফলে আনন্দ করতে আসা মানুষের দ্বারা প্রতিদিনই কিছু না কিছু ক্ষতির শিকার হচ্ছে আমাদের গৌরবময় ইতিহাসের স্বাক্ষর হয়ে আজও টিকে থাকা নাটোর রাজবাড়ী। তাই শেষ বিকেলে মনটা খারাপই হয়ে গেল। নাটোরের কাঁচাগোল্লা নাটোর যাবেন আর সেখানকার বিখ্যাত কাঁচাগোল্লার স্বাদ নেবেন না, তা কী হয়। সুতরাং কাঁচাগোল্লার স্বাদ নিতে চলে গেলাম নিচাবাজার। অনেক মিষ্টির দোকান, তারই একটাতে ঢুকে পড়লাম এর স্বাদ নিতে।

ছানা চিনির ঘন শিরায় ডুবিয়ে বিশেষভাবে পাক দেওয়ার পর ছেঁকে নেওয়া এক ধরনের মিষ্টি হলো বিখ্যাত কাঁচাগোল্লা। খাওয়ার সময় এলাচের গন্ধ পাওয়া গেল। এবার মনটা সত্যিই ভরে গেল। কীভাবে যাবেন ঢাকার গাবতলী থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, ন্যাশনাল পরিবহন প্রভৃতি বাসে যাওয়া যায় নাটোর। এছাড়া রাজশাহীগামী যে কোনো বাসেই নাটোর আসা সম্ভব।

ভাড়া ২৫০-৪০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেন একতা এক্সপ্রেস, লালমনি এক্সপ্রেস, দ্রুতযান এক্সপ্রেসে নাটোর আসা যায়। ভাড়া প্রথম শ্রেণী বার্থ ৩৮০ টাকা, প্রথম শ্রেণী চেয়ার ২৬৫ টাকা, শোভন চেয়ার ১৭৫, শোভন ১৩০ টাকা। এছাড়া খুলনা থেকে রূপসা ও সীমান্ত এক্সপ্রেসে নাটোর আসা যায়। ভাড়া শোভন চেয়ার ১৪৫, শোভন ১২০ টাকা।

কোথায় থাকবেন নাটোর শহরে থাকার জন্য সাধারণমানের কিছু হোটেল আছে। শহরের চকরামপুরে হোটেল ভিআইপি, মাদ্রাসা রোডে হোটেল উত্তরা, মাদ্রাসা মোড়ে হোটেল মিল্লাত, কানাইখালীতে হোটেল আরপি, হোটেল রুখসানা। লেখা সিরাজুল ইসলাম আবেদ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.