বিজ্ঞানভিত্তিক উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে দিনাজপুরের মনোরম, জীববৈচিত্র্যপূর্ণ এবং সবুজ গাছপালায় ঘেরা নয়নাভিরাম এক সুনিবিড় পরিবেশে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) যাত্রা শুরু করে।
হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি দিনাজপুর শহর হতে ১১ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। দেশের উত্তরাঞ্চলের বিদ্যাপীঠ হাবিপ্রবি হাঁটি হাঁটি পা পা করে গৌরবের ১৪টি বছর সফলতার সঙ্গে পেরিয়ে ১৫তম বর্ষে পদার্পণ করেছে। ১৪ বছর অতিক্রম করা বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৪৩টি বিভাগ ও সাতটি অনুষদে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ও ২৫০ জনের অধিক শিক্ষক আছেন। কৃষি ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের এগ্রো-ইকোলজিক্যাল গুরুত্বের কথা চিন্তা করে ১৯৭৯ সালে একটি
কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট স্থাপন করা হয়।
কালের পরিক্রমায় সময়ের চাহিদায় ১৯৮৮ সালে এই ইনস্টিটিউটকে কৃষি কলেজে উন্নীত করা হয়। ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উত্তরবঙ্গে প্রথম বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান
ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
লক্ষ্য ও কার্যক্রম : কালের পরিক্রমায় এ দেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার পথিকৃৎ পূর্ণাঙ্গ এ বিশ্ববিদ্যালয়টি আজ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশ সুনাম অর্জন করেছে। কৃষি প্রধান বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পরিকল্পিত চিন্তা ও বাস্তব ক্ষেত্রে তা প্রয়োগই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল লক্ষ্য।
কর্মদর্শন : পেশাগত শিক্ষা হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভিন্ন শাখায় উচ্চতর শিক্ষাদান।
কৃষি, তথ্য-প্রযুক্তি, কম্পিউটার সায়েন্সসহ বিজ্ঞানের আধুনিক বিষয়াবলীর ওপর শিক্ষা এবং গবেষণা ক্ষেত্রে এ বিশ্ববিদ্যালয়টিকে একটি উৎকর্ষতার
কেন্দ্রে পরিণত করা। বাংলাদেশে ভেতরে এবং বাইরে অবস্থিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, প্রতিষ্ঠান এবং বহু সংস্থার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়
ও বহুপক্ষীয় যৌথ সহযোগিতামূলক চুক্তি ও উন্নয়নের
উদ্যোগ গ্রহণ করা।
শিক্ষা কার্যক্রম : প্রতিষ্ঠাকালে বিএসসি ইন এগ্রিকালচার অনুষদে ছাত্রছাত্রী ভর্তির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ হলেও পর্যায়ক্রমে সাতটি অনুষদের মাধ্যমে ৪৩টি বিভাগের তত্ত্বাবধানে ১০টি বিষয়ের ওপর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি প্রদান, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। অনুষদগুলো হলো বিজনেস স্টাডিস অনুষদ, এগ্রিকালচার অনুষদ, কম্পিউটার সায়েন্স অনুষদ, ভেটেরিনারি অনুষদ, ফিশারিজ অনুষদ, পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট অনুষদ। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম সেমিস্টার পদ্ধতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি. ডিগ্রি প্রদান করে আসছে।
সহশিক্ষা কার্যক্রম : সহশিক্ষা কার্যক্রমের অন্যতম হলো বিজনেস স্টাডিস অনুষদের ছাত্রছাত্রী কর্তৃক পরিচালিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ও এর আশপাশের এলাকার অসহায় জনগোষ্ঠীর সাহায্যার্থে জনহিতকর একটি সংগঠন বিজনেস স্টাডিস ওয়েলফেয়ার ফান্ড বা (বিএসডবি্লউএফ)। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর মেধা ও কৃতিত্বের স্বীকৃতি হিসেবে পদক ও নিয়মিত বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা আছে। এ ছাড়াও আন্তঃহল প্রতিযোগিতা, বিভিন্ন টুর্নামেন্ট, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ডিবেটিং কম্পিটিশন, বার্ষিক হল ফিস্টের আয়োজন এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ অব্যাহত রয়েছে।
অসামান্য অর্জন : শিক্ষা আর গবেষণা কার্যক্রম এবং উন্নয়নের ধারা তরান্বিত করতে বর্তমান শিক্ষাবান্ধব সরকারের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন আন্তর্জাতিক মানের ড. এম এ ওয়াজেদ একাডেমিক ভবন নির্মাণ, নতুন হল প্রতিষ্ঠা, পুরনো হলগুলোর সম্প্রসারণ, ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ হাতে নেওয়াসহ নতুন ফ্যাকাল্টি চালু ও আসন বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চালু করেছিলেন। অনেক আনন্দের কথা, বাংলাদেশের প্রখ্যাত ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পরমাণু বিজ্ঞানী প্রয়াত ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার নামে পাঁচতলা বিশিষ্ট আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ড. এম এ ওয়াজেদ ভবনের দোতলা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ।
আর এর সবই ছিল প্রফেসর ড. এম. আফজাল হোসেনের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনার অংশ। প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি দেশি-বিদেশি বইসহ, গবেষণালব্ধ জার্নাল, থিসিস, রিপোর্ট সংবলিত সমৃদ্ধ কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন বলেন, 'নবীন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এখানে যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে অভীষ্ঠ লক্ষ্যে নিয়ে যেতে হলে এর কর্মপরিধি বাড়াতে হবে এবং শিক্ষা ও গবেষণাসহ প্রশাসনিক কমকাণ্ডকে আরও গতিশীল করতে হবে। লেখাপড়ার আধুনিক বিষয় হিসেবে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োমেডিকেল সায়েন্স খোলার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া দরকার।
প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন আরও বলেন, সবার সহযোগিতায় অদূর ভবিষ্যতে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি কৃষিসহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পেঁৗছাবে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি স্থাপনা আছে সেটি হলো একটি আবহাওয়া কেন্দ্র। যার সাহায্যে এই এলাকার আশপাশের আবহাওয়া নির্ণয় করা যায়। এখান থেকে একটি নিয়মিত ষান্মাসিক গবেষণা জার্নাল (ঔড়ঁৎহধষ ড়ভ ঝপরবহপব ধহফ ঞবপযহড়ষড়মু, ওঝঝঘ ঘড়. ১৯৯৪-০৩৮৬) প্রকাশ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন থাকাকালীন এখানে কিছু ইতিহাসও সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো না বললেই নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ বছর পূর্তিতে বিগত ১১ সেপ্টেম্বর-২০০৯ তারিখে প্রথমবারের মতো বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করা হয়। যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা প্রফেসর ড. এম. আলাউদ্দিন আহমেদ। সবচেয়ে যুগান্তকারী একটি পাওয়া ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন। এটি অনুষ্ঠিত হয় ৯ ডিসেম্বর, ২০১০। যেখানে মাননীয় চ্যান্সেলরের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, এমপি এবং সমাবর্তন বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাশউদ্দিন।
প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেন আয়োজন করেছিলেন ২২টি আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তথা যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, জাপানসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সম্পাদিত করেতে পেরেছিলেন। যার ফলে এখানকার ছাত্রছাত্রীরা সেসব দেশে পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছে।
ভৌত অবকাঠামো : অবকাঠামোর মধ্যে রয়েছে বৃহৎ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, কেন্দ্রীয় শহীদমিনার, পাঁচটি একাডেমিক ভবন, একটি প্রশাসনিক ভবন, চারটি ছাত্র হোস্টেল, দুটি ছাত্রী হোস্টেল, আধুনিক সুবিধা সংবলিত ১০০ আসনের একটি সেমিনার কক্ষ, ৬০০ ও ২৫০ আসন বিশিষ্ট আরও দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অডিটোরিয়াম। আছে একটি ভিআইপি গেস্টহাউস, হাবিপ্রবি স্কুল, ডাক্তার ও অ্যাম্বুলেন্সসহ ১২ শয্যার একটি মেডিকেল সেন্টার, আছে জিমন্যাসিয়াম, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আছে ক্লাব হাউস, আছে বৃহৎ খেলার মাঠ, আছে ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ এবং ছাত্রছাত্রীর জন্য বিশ্ববিদ্যা লয়ের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ ও সদ্য বিদায়ী উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আফজাল হোসেনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা, উন্নয়ন, গবেষণা কার্যক্রমসহ নানা অর্জন সম্ভব হয়েছে।
দেশের সবার কাছে বিশ্ববিদ্যালয়টি দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎকর্ষ সাধন করে আগামীর ঐতিহ্যবাহী দিনগুলোতে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাবে_এই প্রত্যাশা সবার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।