অলসদের দিয়ে কী আর হয়। আলসেমি ছাড়া! যে কোন ব্যবসায়িক উদ্যোগের জন্য পুঁজি দরকার। সেটি শুরু করার জন্য যেমন তেমনি চালিয়ে নেওয়া বা পরিসর বাড়ানোর জন্যও প্রয়োজন।
আমাদের মতো দেশে শেয়ারবাজার থেকে টাকা তোলার সংস্কৃতি এখনো তৈরি হয়নি। বিশ্বের সবদেশেই আইপিওতে যাওয়ার জন্য কোটি টাকার কোম্পানি হতে হয় না, কোম্পানি হওয়ার পর কোটি টাকার কোম্পানি হওয়া যায়।
আবার এদেশে ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী এখনো সেভাবে প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। কাজে ব্যাংকই ভরসা। কিন্তু ব্যাংক কী চায় আর কারিগরি উদ্যোক্তাদের হাতে কী আছে সেটি সেভাবে সমন্বিত হয়নি বলে আমার মনে হয়।
তরুন ও উজ্জীবিত প্রজন্মের নানান উদ্যোগের সঙ্গে আমার এক ধরণের ভালবাসার সম্পর্ক আছে। আমি তাদেরকে নানানভাবে সহায়তা করতে চাই, কিন্তু পারি না।
বছর দুয়েগ আগে আমি আমার কর্মক্ষেত্রের ফোকাস সরিয়ে এই সেক্টরে কাজ করার চেষ্টা করছি। উদ্দেশ্য নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা। ব্যবসা এবং সামাজিক উদ্যোগ দুটিই আমার লক্ষ্য। কিন্তু নানানরকম প্রতিকূলতা সেখানে আছে। একটি বড় বাধা সম্ভবত পূজির যোগান।
তবে, এ পর্যন্ত যতো সফলতার গল্প আমি জানি সেখানে শুরুর পুজি যোগাড়ে তেমন সমস্যা দেখতে পায়নি। সমস্যা হয়েছে সম্প্রসারণে।
এই সেক্টরে আমার দুই বছরের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে আমি কিছু বিষয় বুজতে পারছি। একটি হচ্ছে জাতীয়, ঐতিহ্য এবং সামাজিক ভাবে আমরা ব্যবসা বিরোধী! আমরা নিজ ব্যবসা করতে চাই না, বোনের বা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার সময় ব্যবসায়ী হলে একটু আতঙ্ক বোধ করি।
আর হলো ব্যবসা, পূজি, বিনিয়োগকারী এসব সম্পর্কে আমাদের নানান ধরণের ভুল ধারণা আছে।
আমাদের দেশে বিনিয়োগকারী মানে হল সে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ররাতারাতি ধনী হওয়ার চেষ্টা করছে। পৃথিবীর সবদেশেই শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীদের ৯৯% ভাগের কিন্তু এটাই কাজ নয়! তারা অন্য কিছু করে। বিশেষ করে তরুন বিনিয়োগকারীরা। আমাদের দেশে শেয়ার বাজারে অদ্ভুত কিছু তরুন দেখা যায় যারা সারাক্ষণ মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকে!!!
আর একদলকে দেখছি এরা লোক কাজল ব্যাংকে টাকা রাখে বা ইউনিপে'র মাধ্যমে ধনী হতে চায়। পৃথিবীতে ফটকাবাজি করে খুব বেশি লোক ধনী হতে পারেনি।
এখানেও পারার কোন সুযোগ নেই।
এই দুই বিনিয়োগকারীছাড়া বাকীদের আমরা মনে করি মালিক শ্রেণী। ফলে কেহ যদি নিজের ব্যবসা বড় করতে চায়, তাহলে সে কারো কাজ থেকে টাকা নেওয়ার পরিবর্তে ব্যাংকে যায়। কোম্পানির শেয়ার দিতে চায় না। অথচ সেটাতে অনেক বেশি লাভ।
একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। একজনের একটি কোম্পানির বিনিয়োগ হলো একলক্ষ টাকা। তার কিছু বিকাশ হয়েছে। বাজারে কিছু নামধামও হয়েছে। এখন আরো ৯ লক্ষ টাকা হলে সে কোম্পানি আরো বড় করতে পারে।
এখন সে ব্যাংক থেকে ১৮% হারে লোন নিতে পারে (দেবে কিনা কে জানে)। অথবা সে একজন পার্টনার নিতে পারে যে কী না ৯ লক্ষ টাকা দেবে। বিনিময়ে সে কোম্পানির ৪৫% এর মালিক হবে। (এই বেচাকেনায় কোম্পানির ভ্যালুয়েশন দাড়াচ্ছে ২০ লক্ষ টাকা)।
এখন একটা ১ লক্ষ টাকার কোম্পানির ১০০ ভাগের মালিকানা ভাল না ২০ লক্ষ টাকার কোম্পানির ৫৫% মালিকানা ভাল সেটা বোঝার ব্যাপারে আমাদের নানান সমস্যা আছে।
কারণ, আমাদের স্কুলগুলোতে এই বিষয়গুলো কখনো পড়ানো হয় না।
আমাদের হদ্দ বোকা শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা ভেবেছে যারা ব্যবসাবিদ্যা পড়ে তারা ব্যবসায়ি হবে আর বিজ্ঞান যারা পড়ে তারা সে লাইনে যাবে না। ফলে, এরকম কিছু জিনিষ তারা ব্যবসা প্রশাসনে পড়ালেও সায়েন্স ফ্যাকাল্টিতে সেটা নৈব নৈব চ!
কিন্তু, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো ব্যবসা প্রশাসন থেকে কালে ভদ্রে ব্যবসায়ী বের হ। সেখানকার বেশিরভাগ লোকের টার্গেট হলো কর্পোরেট কেরানিগিরি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এরকম ব্লগে লেখালেখি করে কোন লাভ আছে কী না।
আমি জানি উত্তর হচ্ছে না। তাহলে এই থেকে উত্তরণের পথ হলো নানানভাবে কাজে নেমে যাওয়া। নতুন উদ্যোক্তাদের পাশে দাড়ানোর জন্য অন্যরকম উদ্যোগ দরকার। আমার কিছু লেখালেখি সে কারণে।
আমরা একটি ফেসবুক গ্রুপ করেছি ।
যার উদ্দেশ্য এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা।
গেল গণিত অলিম্পিয়াডে আমাদের শ্লোগান ছিল চাকরি খুজবো না, চাকরি দেবো। (গ্রুপের নামটাও তাই)।
এই গ্রুপ থেকে আমরা আরো কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি। সেরকম একটি চেষ্টা হল বিভিন্ন ব্যাংককে তরুন উদ্যোক্তাদের জামানত বিহীন লোন দিতে রাজী করানো।
সেটা করতে হলে ব্যাংকিং ব্যবস্থাটা আমাদের বুঝতে হবে।
নাইয়ার ছাড়া আমাদের মতো অলসদের দলে আর কোন ব্যাংকার নাই। বেচারি আবার ভয়ানক ব্যস্ত। তারপরও তার কথামত আমি কয়েকটি ব্যাং, এসএমই ফাউন্ডেশন এসব জায়গায় হাটাহাটি করছি। কিছু অভিজ্ঞতাও হচ্ছে।
আরো অনেক হাটতে হবে। তবে, হাটা আর কাজ দুটোই হোক এ ভেবে ভাবলাম একটা কর্মশালা করা যাক। যেখানে যারা লোনটা নিতে চায় আর যারা দেবে বলে আমরা ভাবছি তাদের সবারই একটা আড্ডামত হবে।
সে চিন্তা থেকে জাবেদ মোর্শেদকে বললাম আমরা একটা কর্মশালা করতে পারি কী না। কাজে আগামী মঙ্গলবার ফ্রেপডএ একটা কর্মশালা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
এ কর্মশালা সে ব্রিজ বানানোর লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ। আমরা আশা করছি ব্যাংক কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে এ কর্মশালায় কারিগরি উদ্যোক্তারা অংশ নেবেন। এর মাধ্যমে আমরা একটি পথ খুজে নিতে পারবো।
কর্মশালার বিষয়বস্তু : কারিগরি উদ্যোগের জন্য অর্থ সংগ্রহ। কাজে যারা দেবেন এবং যারা নেবেন উভয় পক্ষের আগ্রহীদের আমরা এক জায়গায় জড়ো করতে পারবো।
আমাদের এ যাত্রা অনেক দীর্ঘ।
তবে, আমরা পথে নেমে পড়েছি। পথ আমরা খুঁজে নেবোই!
সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।
২৩/১০ এর আপডেট : কর্মশালায় দেশের ভেঞ্চার উদ্যোগ এবং এমটিবিএল ব্যাংক এবং বিজনেজ ইনোভেশন এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের কর্মকর্তাদের উপস্থিতি নিশ্চিত হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।