চার দিন ধরে বিক্ষোভ, অবরোধ ও ভাংচুরের পর সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বৈঠকের পর বাংলাদেশ কারিগরি ছাত্র পরিষদের আহ্বায়ক জাকির হোসেন সাগর এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, “আমরা ১৫ দিন সময় দিয়েছি। এর মধ্যে তারা আমাদের সব দাবি পূরণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন। এজন্য আমরা ১৫ দিনের জন্য আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করছি। ”
সাগর বলেন, কারিগরি শিক্ষার্থীদের বৃত্তির পরিমাণ বাড়ানো, ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের চাকরির ক্ষেত্রে পদোন্নতি এবং ‘ইঞ্জিনিয়ার’ শব্দের সংজ্ঞা নতুন করে নির্ধারণ করার বিষয়ে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছে বৈঠকে।
প্রকৌশলীর সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করে ২০০৮ সালের একটি গেজেট সংশোধন এবং ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি ও প্রশিক্ষণ ভাতা বাড়ানোর দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই দেশব্যাপী আন্দোলন চালিয়ে আসছেন পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।
রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, পটুয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সোমবারও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা ইনস্টিটিউটের পরীক্ষা বর্জন করে সড়ক আটকে পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে জড়ায় এবং ব্যাপক গাড়ি ভাংচুর করে।
সাগর বলেন, “সব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেব, কেউ আর রাজপথে থাকব না। ”
গত কয়েক দিনের আন্দোলনে গ্রেপ্তার শিক্ষার্থীদের মুক্তি দেয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের সাড়ে তিনশ শির্ক্ষর্থী গ্রেপ্তার হয়েছে। তিন দিনের মধ্যে আমরা পরীক্ষা দেব।
তাদের নিয়েই আমরা পরীক্ষা দিতে চাই। ”
গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব খোন্দকার শওকত হোসেন এবং শিক্ষাসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ছাড়াও কারিগরি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা সচিবালয়ে এ বৈঠকে অংশ নেন।
এর আগে দুপুরে আরেক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সুপারভাইজার নয়, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট থেকে যারা ডিপ্লোমা করবেন, তাদের প্রকৌশলী হিসাবেই বিবেচনা করা হবে।
ওই সভা শেষে শিক্ষাসচিব বলেন, “যারা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করবেন তারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী হিসাবেই বিবেচিত হবেন; সুপারভাইজর হিসাবে নয়।
গণপূর্ত সচিব বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সময় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসাবে বিবেচনা করা হবে।
এ বিষয়ে ২০০৮ সালের গেজেট সংশোধনের জন্য ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত পেলেই গেজেট সংশোধন করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে অস্পষ্টতা থেকে ভুল বোঝাবুঝি কারণেই পলিকেটনিক শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন করেছে বলেও দাবি করেন গণপূর্ত সচিব।
আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসার অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষাসচিব বলন, রোববার যেসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন করেছে তাদের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আগের গেজেটে সুপারভাইজর শব্দটি ‘ব্যাপক’ অর্থে ব্যবহার করা হয়েছিল জানিয়ে গণপূর্ত সচিব বলেন, চাকরিতে প্রবেশের সময় ওই পদ সৃষ্টি করা হয়নি।
ভুল বোঝাবুঝি থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।
“ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ও স্নাতক প্রকৌশলীদের মর্যাদা যাতে অক্ষুণ্ন থাকে সে বিষয়ে আমরা সজাগ। ”
অবশ্য আগের গেজেট সংশোধন করা কিছুটা সময়সাপেক্ষ মন্তব্য করে শিক্ষাসচিব বলেন, ২-৪ দিনের মধ্যে বসে আলোচনা করে সন্তোষজনক সমাধান করা হবে। তাতে অস্পষ্টতা দূর হবে।
ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের (আইডিইবি) সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান বলেন, ২০০৮ সালের গেজেটে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রকৌশলী হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়নি।
ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের জন্য রাজউক দুইশ সুপারভাইজরের পদ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।
গেজেট সংশোধনের প্রক্রিয়া দৃশ্যমান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, গেজেট সংশোধনের সিদ্ধান্ত হলেও দীর্ঘদিন দিন ধরে গেজেট প্রকাশিত না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।
“আমাদের বেতন-বৈষম্যসহ অন্যান্য দাবির বিষয়ে পর্ায়ক্রমে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। ”
প্রকৌশলীর সংজ্ঞায় ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়েও পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আদেশটি সংশোধনের আশ্বাস দিলেও ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়’ তা হয়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
অন্যদের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আতোয়ার রহমান, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শাহজাহান মিঞা, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. আবুল কাশেম, স্থাপত্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান স্থপতি কাজী গোলাম নাসির, রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আব্দুল মান্নান, আইডিইবির সভাপতি এ কে এম এ হামিদ ও সহ-সভাপতি এ কে এম আব্দুল মোতালেব, গুহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব হাবিবুর রহমান সকালের বৈঠকে অংশ নেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।