কাহিনীর শুরুতে একটু ভূমিকা করে নিই...
চিয়াং মাই। ১২৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত থাইল্যান্ডের প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় শহর। এখানে একে বলা হয় রোজ অব দ্যা নর্থ। ব্যাংকক থেকে ৭০০ কি.মি. দুরে অবস্থিত। সুন্দর জলপ্রপাত, গুহা, গিরিসঙ্কট,পাহাড় শোভিত চিয়াংমাই ১৫ শতক পর্যন্ত থাইল্যান্ডের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক এবং ব্যবসা-বানিজ্যের কেন্দ্র ছিল ।
বিভিন্ন উৎসব, প্রাচীন মন্দির,শ্বেতপ্রাসাদ, মনোরম প্রকৃতি,রাত-বাজার,আপেল, পীচ এবং স্ট্রবেরীর সমারোহ,মদ-বিয়ার এবং চারপাশে সুন্দরীদের ভীড় দেখে মনে একে গল্পের পাতা থেকে উঠে আসা স্বপ্নশহর "শাংগ্রী লা" মনে হবে। এখানকার স্থাপত্যকর্মে মোন, বার্মিজ, শ্রীলঙ্কান এবং লান না থাই স্থাপত্যরীতির সংমিশ্রণ চোখে পড়ে। রীতিমত ট্যুরিস্টদের স্বর্গ যেন দি সিটি অব চিয়াংমাই....
ছবি-১
ছবি-২
ছবি-৩
ছবি-৪
ছবি-৫
এবার ফানভেঞ্চারের সুপার সিক্স ৬ অভিযাত্রীর পরিচয় দিই...
আমরা বাংলাদেশের নয় জন (৮ ভাই ও চম্পা হিসেবে অন্য বাঙালীদের কাছে পরিচিত) ছেলে-মেয়ে এখানকার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা প্রফেশনাল কোর্সে করছি। এই নয় জনের মধ্যে দুজন বউয়ের খপ্পরে পড়ে এবং অন্য আরেকজন থাই মুভি আর থাই নারীদের প্রেমে মেতে যাওয়ায় আমরা হারাধনের বাকি ছয় পুত্রকন্যা,আমরা যাত্রা শুরু করলাম টু দ্যা নর্থ অব থাইল্যান্ড। থাইল্যান্ডের আনাচে-কানাচে আর আশপাশের ২/১ টা দেশ ভ্রমণের লংটার্ম গোলের অংশ হিসেবে আমরা ৬ জন গিয়েছিলাম চিয়াংমাই,চিয়াংরাই ও তার আশপাশের কিছু যায়গা।
১.মুরাদ: অর্ধচন্দ্রের (গলাধাক্কা নয়) ছবি তুলে দেশেবিদেশের শিল্পানুরাগীদের(ফেসবুকে) বিপুল প্রশংসা কুড়িয়েছেন। তার আরেক পরিচয় তিনি ভাষাবিজ্ঞানী। নতুন যুগের এই মহান ভাষাবিদের কথা শুনলে নিশ্চিতভাবে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ হার্টফেইল করতেন। মজার মানুষ কিন্তু হিন্দি,থাইভাষীদের সাথে কথা বলতে গিয়ে থিংলিশ,হিংলিশের,হিংলার চমৎকার খিচুরী পাকিয়ে ফেলেন।
"মুরাদ তুম ক্যায়সে ইতনা মার্কস পায়া বাতাও না.."যখন ভুটানীজ ক্লাসমেট জিজ্ঞেস করল তার উত্তর ছিল
"ওয়েত ....ওয়েত (Wait)...বাতাচ্ছি..."
আবার থাই ওয়েটারকে বরফের জন্য বলেন "ওয়েতার ক্যান ইউ গিভ মি সাম পিস অফ ব্রফ?"
এহসানঃ দারুণ স্বতঃস্ফূর্ত আর সকল কাজের কাজি।
বিদেশী মেয়েদের পটানো তার কাছে ডাল ভাত। তার পারফর্মেন্সে অনেকেই ঈর্ষান্বিত।
হাসানঃ খুবই সেনসিটিভ ছেলে, কোনকিছুতেই তার উৎসাহের কমতি নেই। স্কুইড,স্যুপে দেয়া ঘাস,লতা-পাতা এমনকি পর্ক থাকতে পারে এমন কোন খাবারে পিছুপা হয়না। রিস্ক নিয়ে গ্রাস জ্যুস খেয়ে বলে, জোস্! পরে তার প্ররোচনায় আমদেরও সেই অখাদ্য খেয়ে শুকনা মুখে অনেকসময় আমরাও বলতে বাধ্য হই, জোস্!!
মাহবুব ভাইঃ মোহনীয় হাসিতে নারী হৃদয় হরন করা যার কাছে ছেলে খেলা।
ক্লাসের মেয়েদের কাছে চরমভাবে কাঙ্খিত সুপুরুষ। চিয়াংমাইতে গিয়ে ৬ টাকার যুগান্তকারী এক জুস আবিষ্কার করেছেন পরে ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট খুজে না পেয়ে তার স্ব-উদ্ভাবিত জিরাভাত ফ্লপ করায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
সুপর্ণাঃ দলের একমাত্র নারী সদস্য। অবিশ্বাস্য কেয়ারিং দিয়ে আমাদের ৯ জনকে এক পরিবারের ছায়াতলে আটকে রাখার অর্ধেক কৃতিত্বই তাকে দেয়া যায়। ভীষণ গুণবতি আর বুদ্ধিমতি এক মেয়ে (হে হে... আমার একবেলা রান্নার ঝামেলা কমিয়ে ফেললাম ) ।
তবে তিনি মাঝে মাঝে কোন এক বিশেষ "দাদা"কে মিস করে ভীষণ নস্টালজিক হয়ে যান। মাঝে মাঝে তার ছায়া খুজে ফেরেন ড্যাশিং আর হ্যান্ডসাম এক ভুটানীজ ক্লাসমেট এর মধ্যে।
আর আমি। (লেখক হবার সুবিধা নিয়ে আমার কথা চেপে গেলাম)
যাত্রা হলো শুরু....
ডন মুয়াং স্টেশনে র্যাপিড এক্সপ্রেস ট্রেন এ শুরু হল আমাদের দীর্ঘ ১৪ ঘন্টার যাত্রা। যাত্রাপথে সাধারণত আমার চিরকালই ফাটা কপাল।
আমার পাশের সিটে সুন্দরীর আগমন ঘটা যেন কাঁঠালের আমসত্ব। কখনও বিদিক স্বাস্থ্যের কেউ ট্রেনে উঠেই ঘুমিয়ে পড়েন বা কাঁধে হেলে পড়েন আবার কখনও ষাটোর্ধ প্রফেসর টাইপ আংকেল-আন্টি সুযোগ পেয়েই বই পড়ে অর্জিত জ্ঞান বিনামূল্যে ঢালতে শুরু করেন আমার উপর। আর আমি মাননীয় স্পিকার হয়ে বসে থাকি। যাইহোক, ট্রেনে অল ইউরোপিয়ান বগিতে সুন্দরীদের মেলায় বসে গেলাম আমরা। এহসান দু'একটার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলল।
আমাদের কার্ড খেলা, আড্ডা হইচই আর বাকি পথ ঘুমিয়ে কখন যে ১৪ ঘন্টা পেরিয়ে গেল টেরই পেলাম না। খুব ভোরে পৌছে গেলাম ছিমছাম সুন্দর স্টেশন, চিয়াংমাই।
দু'একটা হোটেল ঘুরাঘুরি শেষে লাই থাই নামক একটা চমৎকার বাগানবাড়ি সদৃশ গেস্ট হাউসে উঠলাম।
এই শহরে থাইরা মোটামুটি ইংলিশ জানে যদিও মজার ব্যাপার হলো বেশিরভাগ থাই দুটো Word ই জানে বলে আমার ধারণা...তা হলো "Have আর Can"।
উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা খোলাসা করা যাক....
দোকানে গিয়ে যদি বলেন "ডু ইউ হ্যাভ পটোটো?"
নিশ্চিতভাবেই উত্তর আসবে Have অথবা No Have.
আর কোন কিছুর দাম জিজ্ঞেস করলেই সেলসগার্ল সোজা ক্যালকুলেটর আনতে ছোটে।
সেখানে দাম দেখানোর পর যদি বলা হয়,No Can You give a little Discount?
উত্তর আসবে No Can,No Can.
লাই থাই হোটেলে উঠতে না উঠতেই "লাই" এর সমাহার নিয়ে বসলেন মাহবুব ভাই। সুপর্নাকে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বললেন "এখানে মাত্র দুটো রুম পাওয়া গেছে। আমরা ঠিক করেছি ৩ জন করে এক রুমে থাকব। এখন কোন দুজনকে আপনার রুমে রাখবেন এটা আপনি ঠিক করেন। " মাহবুব ভাইয়ের চমৎকার অভিনয়ে হতভম্ব হয়ে সুপর্ণা বিব্রতকর হাসি দিয়ে এই উদ্ধট প্রস্তাব মেনে নেয়ার প্রস্ততি নিচ্ছিল সে সময় আমি হাটে হাড়িটা ভেঙে দিলাম।
আর সুপর্নাও ভাঙা হাড়ি নিয়ে খুশিমনে নিজের রুমে চলে গেল দ্রুত কারন একটু পরেই আমাদের চিয়াংমাই অভিযান শুরু হবার কথা। রুমে গিয়ে সাজগোজের বাক্স নিয়ে বসে গেল সে....
(পরের পর্বে সমাপ্য)।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।