'জানিস তুই যে ঘরটায় থাকিস তার পাশের বাগানে একটা ডেদবডি আছে!'
রবিনের মুখে কথাটা শুনে ভয়ে গা ঠাণ্ডা হয়ে গেল। রবিন এলাকার সবচেয়ে ভদ্র ছেলে। ওর কথা অবিশ্বাস করব কেন? ও কেন খামোকা আমার সাথে তামাশা করবে? আমি তাই ওকে শুধালাম, 'তুই কিভাবে জানিস?'
রবিন মুখ বেঁকিয়ে, হেসে বলল, 'আরে যাহ! তুই তো বেজায় ভীতু। আমি একটু ফান করলাম তাতেই ভয়ে মুখ লাল করে ফেলেছিস!'
আমি রবিনের দিকে চেয়ে রইলাম। কি ব্যাপার? একবছর হল এ পাড়ায় এসেছি।
এতদিন 'তুমি' করে বলত, আজ হঠাৎ 'তুই'?
সেদিন মাঝ রাত্তিরে ঘুম ভেঙ্গে গেল। সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা লাগছে। উঠে কম্বলটা এনে গায়ে চড়ালাম। তখনো বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। শুয়ে শুয়ে রবিনের বলা কথাগুলো চিন্তা করতে লাগলাম।
হঠাৎ কেন জানি ভয় লাগতে লাগল। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল একটা ধারা বয়ে গেল।
পরদিন সকাল। বাড়িওয়ালা চাচার সাথে দেখা হল। আমার কাছে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন।
খানিকক্ষণ ইতস্তত করে ওনাকে বলেই ফেললাম, 'চাচা আমার ঘরটায় কি কোন সমস্যা আছে?'
'কই না তো! তোমার কি ওখানে থাকতে কোন অসুবিধা হচ্ছে?'
'না, আসলে তা না। তবে ঘরটা সম্পর্কে পাড়ায় কানাঘুষা শুনি। '
'কার কাছে শোন?'
'আসলে ব্যাপার তেমন সিরিয়াস না। রবিন সেদিন বলছিল পাশের বাগানে নাকি একটা ডেডবডি আছে। হয়ত স্রেফ ফান করেই কথা বলেছে।
'
চাচার মুখ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। বললেন, 'ওর সাথে বেশি মিশো না। '
সন্ধ্যায় চায়ের দোকানে রবিনের সাথে দেখা। হাসিমুখে আমায় বলল, 'ভুতের সহিত সহবাস কেমন চলিছে বাছা?'
আমি সতর্ক হয়ে উঠলাম। 'ভুত?'
রবিন বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থেকে শুরু করল বেদম হাসি।
অবশেষে হাসিয়ে থামিয়ে বলল, 'তোর সাথে কি একটু মজাও করা যায় না?' এই বলে সে আবার হাসতে শুরু করল। দেখলাম রবিনের সাথে দোকানদারও হাসিতে যোগ দিয়েছে।
হঠাৎ করে বৃষ্টি নামল। আমি কিছু না বলে দ্রুত পায়ে ওখান থেকে চলে এলাম। পেছনে রবিন ডাকছে, 'মুনির, এই মুনির...'
ভাবলাম রবিনের সাথে আর সম্পর্ক রাখব না।
কিন্তু পাড়ায় যখন ফুটবল ম্যাচের প্ল্যানিং শুরু হল, দলবেঁধে আমরা সবাই গেলাম রবিনদের বাসায়, রবিনকে ডাকতে। রবিন পাড়ার সেরা ফুটবলার।
ওর বাসায় গেলে আন্টি জানালেন, 'রবিন তো বাসায় নেই। কি জানি ছেলেটার আজকাল কি হয়েছে। রাত্তিরে দেরি করে ফিরছে, আবার কোন কোনদিন ফিরছেও না!'
আমরাও জানালাম, 'ওকে তো আজকাল মাঠেও দেখি না।
'
আন্টি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 'কি যে হল ওর! মাসতিনেক আগেও কত প্রাণচঞ্চল ছিল, হাজারো বিষয় আগ্রহ ছিল। আর এখন নিজেকে পুরো গুটিয়ে নিয়েছে। আমার বোনের মেয়েটাও এদিকে মাসখানেক হল নিখোঁজ! সবমিলিয়ে খুবই অশান্তিতে আছি। '
আন্টি এমনিতেই বেশি কথা বলেন নাকি সাম্প্রতিক মানসিক চাপের ফলে জানি না, পারিবারিক সমস্যার কথা খুলে বললেন আমাদের। জানলাম, রবিনের খালাত বোন উঠতি বয়সী মেয়ে, আমাদের চেয়ে বছর তিনেক কম বয়েস।
তার নাকি একটা ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল। বোধহয় তার সাথেই পালিয়েছে।
খেলার মাঠে ফিরে এলাম আমরা। সবার আলোচনার বিষয়বস্তু রবিন আর রবিনের খালাত বোন। কয়েকজন তো নিশ্চিত যে রবিনের সাথেই তার খালাত বোনের সম্পর্ক ছিল।
এ নিয়ে সকলে নোংরা আর রসাল কথা বলতে থাকল। আমি বুঝলাম, রবিনকে ঘিরে বড় একটা স্ক্যান্ডাল রটতে চলেছে পাড়ায়!
তবে তার আগেই ঘটল বিস্ফোরণ।
পরদিন ভোরে পাওয়া গেল রবিনের লাশ। চায়ের দোকানটার পেছনের ডোবায়।
দোকানদার পলাতক।
পুলিস এই হত্যা মামলার কোন সুরাহা করতে পারল না।
হয়ত রবিনের বোনও এখনো নিখোঁজ...
মাসছয়েক পরের কথা।
পুলিস এসে আমার বাড়িওয়ালাকে গ্রেপ্তার করল। আমার ঘরের পাশের বাগান খুঁড়ে একটা লাশ উদ্ধার হল। ময়নাতদন্ত করে জানা গেল, ওটা রবিনের খালাত বোনেরই।
বাড়িওয়ালা অবশ্য জামিনে ছাড়া পেয়ে গেলেন। তিনি একরাতে রবিন আর ওই দোকানদারকে দেখে ফেলেন বাগানে একটা লাশ কবর দিতে। তবে নিজেই ফেঁসে যেতে পারেন, এই ভয়ে কথাটা তিনি কাউকে জানাননি।
সেই দোকানদার এখনো পলাতক। তাই এখনো উদ্ঘাটন হয়নি কোন রহস্যের।
রবিনের খালাত বোনের সাথে কার ছিল সম্পর্ক? রবিন আর দোকানদার কেন মেয়েটাকে নিয়ে এসে খুন করল? রবিনই বা কেন খুন হল? তারা আমাকেই বা কেন পরবর্তীতে ইয়ার্কির ছলে ভয় দেখাল? তাহলে কি তারা ছিল সাইকপ্যাথ কিলার? ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।