আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না........."

Its... my faith, my voic.........। আজ বাইরে আকাশ কাঁপিয়ে বৃষ্টি নেমেছে। আকাশ থেকে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটাগুলো টপটপ শব্দে পড়ছে, যেন এক কোমল মাধূর্যে ভরা অভূতপূর্ব কোন গানের সুর। চারদিক বারিধারার কোমল পরশে যেন জেগে উঠছে ধ্বংসস্তুপ থেকে। বরষার প্রথম ছোঁয়ার যেন প্রকৃতি বিচলিত।

বৃষ্টির ভেজা স্বাদ আর মৃদুমন্দ হিমশীতল বাতাস মনকে টেনে নিয়ে যায় যেন ঐ দূরে কোথাও, মনে করিয়ে দের হরিয়ে যাওয়া দিনের কথা, ফিরিয়ে নিয়ে আসে হারানোর বেদনা। আজ শ্রাবণ বৃষ্টি দেখছে। জানালার পাশে বসে সে তার দৃষ্টি বাইরে মেলে ধরে। অন্ধকারে ছেয়ে আছে চারদিক। আলো বলতে রাস্তার পাশের ল্যাম্পপোস্টের সাদা আলো রাস্তাটাকে যা একটু আলোকিত করে রেখেছে।

ল্যাম্পপোস্টের আলোয় অন্ধকারের বুক চিড়ে বৃষ্টির অনিয়মিত ফোঁটাগুলো চোখে পড়ছে। শ্রাবণের কখনোই বৃষ্টি ভাল লাগতো না। তবে কোন এক কারনে আজ বৃষ্টির এই অনবরত ধারা তাকে টানছে। সম্মহিতের মত সে তাকিয়ে আছে বাইরের দিকে, কিসের যেন এক অব্যক্ত ব্যাকুলতা তার নিকষ কালো চোখজোড়াকে টেনে ধরে রেখেছে বাইরে গভীর শূণ্যতার দিকে। শ্রাবণ বাইরে তাকিয়ে আছে, এমন সময় তার কাঁধে কে যেন হাত রাখল।

শ্রাবণ ঘুরে তাকালো, দেখলো তার বাবা দাড়িয়ে আছেন। শ্রাবণের বাবা চিন্তিত ভাবে প্রশ্ন করলেন,"কি রে মা? কি করছিস একা একা? তোর কি শরীর খারাপ?" "না বাবা", শ্রাবণ ছোট করে উত্তর দেয়। শ্রাবনের বাবা বলেন,"তাহলে নিশ্চই তোর মন খারাপ, না হলে তুই এভাবে জানালার পাশে বসে আছিস কেন?" "না বাবা, আমি ঠিক আছি। " "কাল তোর ক্লাস আছে না?" "হ্যা বাবা" "ঘুমিয়ে পড় তাহলে, রাত করিস না মা। " বলে শ্রাবণের বাবা প্রস্থান করেন।

"ঠিক আছে বাবা", বলে শ্রাবণ হালকা করে মাথা নাড়ে। বাইরে এবার ঝম ঝম শব্দে বৃষ্টি নেমেছে। খোলা জানালা দিয়ে বৃষ্টির ছিটাফোঁটা ভেতরে এসে শ্রাবণকে ভিজিয়ে দিচ্ছে, শ্রাবণের তাতে ভ্রুক্ষেপ নেই। বাইরের এই মাতাল হাওয়ার হিমশীতল পরশ তার স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলছে। শ্রাবণ স্মৃতির খাতা খুলে বসে, ডুব দেয় সময়ের স্রোতের অতীতে....... শ্রাবণ রাস্তার পাশ ঘেঁষে হাটছে, এমন সময় ডাক শুনে সে পেছনে ঘুরে তাকায়।

একটা ছেলে, পরিচিত মুখ, ঘন চুল, হাস্যজ্জল চোখ। ছেলেটা শ্রাবনের কাছে এসে বলে," তোমাকে একটা প্রশ্ন করি?" " করো, সমস্যা কি? প্রয়োজনে দুইটা প্রশ্নও করতে পারো। " বলে শ্রাবণ হেসে ফেলে। ছেলেটাকে বিব্রত দেখায়। তারপর সময় নিয়ে বলে,"তোমার কি বৃষ্টি পছন্দ?" শ্রাবণ আবার শব্দ করে হেসে ফেলে।

তারপর কঠিন গলায় বলে,"নাহ! একদম না! বৃষ্টি আমার একদমই পছন্দ না। বর্ষাকাল তো নয়ই, সারাদিন কি খালি পানি পানি আর পানি! কি বিশ্রি!" ছেলেটাকে কিছুটা অপ্রস্তুত দেখায়, হয়তো সে এমন উত্তর আশা করে নি। শ্রাবণ বলে,"তোমার কি বৃষ্টি পছন্দ?" ছেলেটা কিছু না বলে একটু হেসে মাথা নাড়ে। বাইরে বৃষ্টির সাথে সাথে দমকা বাতাস খেলা করতে শুরু করেছে। শ্রাবণের একটা গানের কলি মনে পড়ছে,"বৃষ্টি আমার চোখের পাতা ছুঁয়ো না........." কেন এই গানটা মনে আসছে তা সে জানে না।

শ্রাবণের আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে,"আমি বৃষ্টি ভালবাসি, আমি বৃষ্টি ভালবাসি, আমি বৃষ্টি ভালবাসি..........." এ কথা শোনার জন্য যে কেউ নেই এখন। শ্রাবণ আবার স্মৃতির অতল সাগরে ডুব দেয়। রাত প্রায় একটা বাজে, মোবাইলের বাজনায় তার ঘুম ভেঙে যায়। শ্রবণ মোবাইলটা কানের পাশে ধরে ঘুম জড়ানো গলায় বলে,"হ্যালো?" অপর দিক থেকে ছেলেটার গলা শোনা যায়,"ঘুমিয়ে পড়েছ?" শ্রাবণ বলে,"নাহ, এইতো চোখ লেগে এসছিলো আর কি! কি ব্যাপার? তুমি এত রাতে?" ছেলেটা বলে,"বাইরে দেখ কি সুন্দর বৃষ্টি হচ্ছে! হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরে দেখ, সব দুঃখ ধুয়ে যাবে। " শ্রাবণ জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়, তাই তো বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে।

শ্রাবণ ফোনে বলে," এই কথা বলার জন্য তুমি এত রাতে কল দিয়েছো?" ছেলেটার কিছু বলে না। "যত সব পাগলামী, তুমি থাকো তোমার পঁচা বৃষ্টি নিয়ে, আমি ঘুম দিলাম" বলে শ্রাবণ লাইনটা কেটে দেয়, তারপর সে বৃষ্টি দেখতে বসে। শ্রাবণ বাস্তবে ফিরে আসে। শ্রাবণের অনেক সময় কেটেছে ছেলেটার সাথে। সুখের স্মৃতি, দুঃখের সৃতি, কত স্মৃতি।

অতীতের স্মৃতিগুলো তার এলোমেলো হয়ে যেতে থাকে। বাইরে বৃষ্টিটা ধরে এসেছে। শ্রাবণ উঠে দাড়িয়ে জানালার গ্রিল দুই হাতে আকড়ে ধরে। না বলা কথা গুলো মনে ভীড় করছে। অভিমানে মনটা ভারী হয়ে পড়ছে।

এমন সময় মোবাইলটা বেজে উঠে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে মোবাইলটা নেয়, রিসিভ করে কানে দিতেই অপর দিক শ্রাবণের বান্ধবী তান্নির গলা শোনা যার," শ্রাবণ শোন, কালকে ক্লাস ক্যানসেল বুঝলি? আসলে এমন একটা ঘটনার পর কি ক্লাস হয় বল? কাল আমরা সবাই শোক পালন করব, সকাল সকাল আসিস কিন্তু। " শ্রাবণ ক্ষিণ স্বরে বলে,"ঠিক আছে" বলতে গিয়ে তার গলাটা ধরে আসে। তান্নি বলে,"তোর কি মন খারাপ রে শ্রাবণ?" শ্রাবণ ধরা গলায় বলে,"নাহ" তান্নি বলে,"মন খারাপ করিস না রে। মানুষর জীবনটাই এমন, কে কখন চলে যাবে ................" বাইরের বৃষ্টিটা ধরে আসা বৃষ্টির তোড়টা আবার বাড়তে শুরু করেছে।

হু হু শব্দে বয়ে চলা বাতাস বৃষ্টির সাথে মিলে গিয়েছে। শ্রাবণ আবার ভাবনায় তলিয়ে যায়। অনেক কথা বলার ছিল তার, অনেক কথা........ কথা গুলো কি তবে না বলাই রয়ে গেল? বৃষ্টির অঝড় ধারাটা শ্রাবণের কাছে কেন যেন কান্নার মত ঠেকে। শ্রাবণ হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানির পরশ নেয়। আশা করে বৃষ্টি তার দুঃখ ধুয়ে নিয়ে যাক।

জানালার গ্রিলে শ্রাবণ মুখ রাখে। তার মুখে বৃষ্টির ফোটা এসে পরতে থাকে। শ্রাবণের অশ্রুধারা আর বর্ষার জল এক হয়ে মিশে যায়। অশ্রুমালা আর অঝোর ধারা, দুটো এক হয়ে ঝরতে থাকে। আজ বাইরে বৃষ্টি নেমেছে অঝোর ধারায়।

তারও কি কোন না বলা কথা রয়ে গেছে?  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.