আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিমির আত্মহনন ঃ কী আগুনে পুড়ছে সিমির পরিবার!

সীমা বানু সিমির আত্মহনন মামলার আসামিরা তাঁর পুরো পরিবারকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারটি বলছে, আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হলেও পুলিশ তাদের কোনো সহায়তা করছে না। সিমি আত্মহনন মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা সবাই এখন জামিনে মুক্ত। সিমির বাবা মো. আলী এমদাদ গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ২০০১ সালে বখাটেদের অত্যাচারে সিমি আত্মহত্যা করেন। এর পর থেকে তাঁদের বাড়িতে পুলিশি প্রহরা ছিল।

পুলিশি প্রহরা থাকা অবস্থায়ও আসামিপক্ষের লোকজন তাঁদের বাড়িতে ইটপাটকেল ছুড়েছে। কিন্তু গত মাসে পুলিশি প্রহরা উঠে যাওয়ার পর তাঁদের বাড়িতে তিন দফা আগুন দেওয়া হয়েছে। গত শুক্রবার বাড়ির প্রধান বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন ধরিয়ে দেয় দুষ্কৃতকারীরা। বয়োবৃদ্ধ এমদাদ জানান, বখাটেদের ছোড়া ইটপাটকেল যাতে ঘরের ভেতরে না ঢোকে, সে জন্য জানালাসহ ফাঁকা জায়গাগুলোয় বস্তা টানিয়ে রেখেছেন। গতকাল সকাল সাড়ে সাতটায় এমন একটি বস্তায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁদের অগোচরে।

মতিঝিল অঞ্চলের উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশকে ওই বাড়ির প্রতি সার্বক্ষণিক নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া আছে। প্রহরা উঠে যায়নি। সিমির বাবা প্রায়ই অভিযোগ নিয়ে আসেন এবং আমরা সব রকম সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করি। ’ তবে গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদক যখন সিমিদের বাসায় যান, তখন সেখানে কোনো পুলিশি প্রহরা ছিল না। এ তথ্য জানালে উপকমিশনার বলেন, ‘পাহারা ঠিক উঠিয়ে নেওয়া হয়নি।

আমরা সব সময় নজরদারিতে রেখেছি বাড়িটা। ’ শুক্রবার বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনা সিমির বাবা উপকমিশনার আনোয়ার হোসেনকে জানান। ওই দিন বিকেলে পুলিশের লোক পরিচয়ে দুজন ব্যক্তি তাঁদের বাড়িতে যান। তাঁরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু নিজেদের নাম প্রকাশ করেননি।

সিমিদের ২৪৮/৬ ভূঁইয়াপাড়া, খিলগাঁওয়ের বাসার এক ভাড়াটে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাঁরা জুন মাসে এই বাড়িতে উঠেছেন। তাঁরাও ভীষণ আতঙ্কের মধ্যে আছেন। গত বুধবার কে বা কারা বাড়ির বৈদ্যুতিক সংযোগের কাটআউট খুলে নেয়, শুক্রবার বৈদ্যুতিক লাইনে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়, রোজ বাড়িতে ইটপাটকেল পড়ছে। সিমির পরিবার জানায়, ২০০১ সাল থেকে এ পর্যন্ত তারা ৬০টির মতো সাধারণ ডায়েরি করেছে থানায়। কিন্তু সম্প্রতি পুলিশ তাদের অভিযোগ তেমন আমলে নিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।

সর্বশেষ আগুন লাগানোর পর থানায় গেলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সিরাজুল ইসলাম শেখ উল্টো এর জন্য তাদের দোষারোপ করেছেন। বলেছেন, মনোযোগ পেতে তারাই নিজেদের ঘরে আগুন লাগাচ্ছে, ইটপাটকেল জড়ো করছে। সিমির বাবা বলেন, বর্তমান ওসি এভাবে তাঁদের অপমান করছেন। সিমির বোন সালেহা বানু অভিযোগ করেন, গত ১১ সেপ্টেম্বর বাড়িতে ঢিল ছোড়া হলে তাঁর বাবা থানায় ফোন করেন। থানা থেকে তাঁকে বলা হয় টহল পুলিশকে জানাতে।

সিমির ভাই শওকত আলী টহল পুলিশকে তা জানাতে গেলে পুলিশ তাঁকেই আটকে রাখে। সিমির পরিবারের অভিযোগ, আগুন ধরিয়ে দেওয়ার বিষয়টি পুলিশকে জানানো হলে খিলগাঁও থানার পুলিশ তাদের উপহাস করেছে। বলেছে, ‘আপনারা নিজেরা আগে আগুন নেভান। পরে ট্রাক ভরে পুলিশ আসবে। ’ সিমির মা জরিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তোমরা যদি কখনো শোনো যে সিমিদের বাড়ির সবাই আগুনে পুড়ে মারা গেছে, কারণ তাঁদের বাড়ির বৈদ্যুতিক লাইনে সমস্যা ছিল, বিশ্বাস কইরো না।

ওরা আমাদের মাইরা ফেলবে। ’ জানতে চাইলে খিলগাঁও থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম শেখ প্রথম আলোকে বলেন, সিমিদের বাড়ি থেকে পুলিশি প্রহরা উঠে যায়নি। সব সময় নজর রাখা হচ্ছে। সিমির ভাইকে আটকে রাখার অভিযোগ মিথ্যা। পরিবারটি বিভিন্ন সময় তাদের বাড়িতে হামলার অভিযোগ তুলেছে।

কোনো অভিযোগের সুরাহা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পরিবারটি সুনির্দিষ্টভাবে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি। কারা এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে তা খুঁজে বের করার দায়িত্ব পুলিশের কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ প্রতিটি ঘটনার বিষয়েই খোঁজখবর রাখছে। নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের ছাত্রী সীমা বানু সিমি ২০০১ সালের ২৩ ডিসেম্বর আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার আগে লিখে যাওয়া চিরকুটের সূত্র ধরে খিলগাঁও এলাকার দোয়েল, খলিল, মোফাজ্জল, রিপন, খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক বাশার ও তাঁদের সহায়তাকারী এনায়েত চৌধুরীর বিরুদ্ধে পুলিশ ও সিমির বাবা আলী এমদাদ দুটি পৃথক মামলা করেন। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ মামলাটি পরিচালনা করছে।

পরিষদের পক্ষে আইনজীবী মাসুদা রেহানা বেগম বলেন, ২০০২ সালে নিম্ন আদালতের রায়ে পাঁচজনের এক বছর করে কারাদণ্ড হয়। এনায়েত চৌধুরী বেকসুর খালাস পান। হাইকোর্ট ওই রায় বহাল রাখেন। রায়ের বিরুদ্ধে সিমির বাবা আপিল করেন। ওই আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।

আত্মহত্যার আগে চিরকুটে সিমি লিখেছিলেন, ‘মহল্লার কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলের জন্য এবং তাদের সাথে একজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং এলাকার ছেলেদের মধ্যে দোয়েল, খলিল, মোফাজ্জল, রিপন এবং আরও কিছু ছেলে যাদের নির্যাতন মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছিল। একজন মেয়েকে রাস্তায় ফেলে রেপ করার চেয়েও নির্মম। তাই আমার পক্ষে অপমান সহ্য করে আর বেঁচে থাকা সম্ভব হলো না। সূত্র ঃ প্রথম আলো ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।