"অ্যাবসার্ড" ছোটবেলায় একটা গল্প শুনসিলাম, বাঙ্গালীর দোযখ। ।
দোযখে সব জাতি কে ভিন্ন ভিন্ন কক্ষে রাখা হইসে। জাপানি রা একটা কক্ষে, জার্মান এক কক্ষে, এই ভাবে বাঙ্গালিরা একটা কক্ষে।
সব কক্ষের সামনে এক জন করে ফেরেশতা দারোয়ান হিসেবে নিযুক্ত আসে, শুধু বাঙ্গালীর কক্ষে কোন দারোয়ান নাই।
কারন, এক বাঙ্গালী দোযখ থেকে বের হতে গেলে আরেক বাঙ্গালী তাকে বাধা দেয়। কাজেই কোন দারয়ানের দরকার নাই।
কেন এই গল্পটা উল্লেখ করলাম, এবার আসছি সে কথায়।
ইন্টার মিডিয়েট পাস করে যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম, তখন আবেদন পত্র পুরন করার আগে কখনও নুন্যতম যোগ্যতা বলে যে একটা বিষয় আছে টা মনে ই থাকতো না। যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইচ্ছা ভর্তি পরীক্ষা দিসি।
কোথাও নুন্ন্যতম যোগ্যতার জন্য আটকাই নাই। তারমানে একথা বলা যায় যে স্কুল এবং কলেজ জীবন সফলতার সাথে পার করেছি।
এখন মেডিকেল জীবন পার করলাম। এতদিনে আসল পরীক্ষায় এসে পড়লাম।
যখন মেডিকেল এ চান্স পাইসিলাম তখন বুক ফুলে দশ হাত হয়ে গেসিল।
আমার এক দোস্ত বলত," কেউ নাম জিগাইলে এহন কইতে ইচ্ছা করে মহাম্মদ মেডিকেল স্টুডেন্ট"। হা হা হা ...... এখন এই কথা মনে হইলে বিব্রত লাগে। আমাদের সমাজে যখন কেউ শুনে মেডিকেল স্টুডেন্ট তখন এক বার হলেও তার দিকে মানুষ তাকাবে, কিন্তু যদি শুনে এমবিবিএস ডাক্তার, হে হে এমন ভাবে তাকাবে যেন চোর দেখসে, অথবা ডাকাত।
এখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হতে হলে তো জীবন যৌবন সব দিয়ে মাঠে নামতে হবে। বি সি এস না হইলে তো কথাই নাই।
না খাইয়া থাক। মাগনা ট্রেনিং কইরা ও কুল পাইবা না। যাইহোক, এই সব বলা আমার উদ্দেশ্য না। এগুলা চর্বিত চরবন। আমার বলার উদ্দেশ্য হইল, এই দোযখ থেকে বের হইতে গিয়া কি অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম সেটা বলা।
ভাবলাম এই দুষ্টচক্র থেকে বের হব। বিদেসের কোন ভার্সিটি তে পড়ালেখা করব। হে হে উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশ গমন :p :p
এখন আসো আসল ঘটনায়। নানা ধরনের কাগজ লাগে, migration certificate, academic transcript , lor, sop, ielts, GPA.
তাতো লাগবই, বাংলাদেশ পাইস??? ভালো কথা। কাগজ পত্র যোগার করতে গেলাম, আমলা তান্ত্রিক জটিলতা।
মানলাম। আমরা এগুলাতে অভ্যস্ত।
এখন বিদেশি ভার্সিটির ওয়েব সাইটে চোখ বুলাই...... হায়রে খোদা, নুন্যতম যোগ্যতা তো অতিক্রম করতে পারি না। । :S :S
এখন উপায়????? আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষকেরা এমন মার্ক দিসে, কৃতিত্তের সাথে ডাক্তার হইয়া ও বিদেশি ভার্সিটি গুলার মিনিমাম জিপিএ আমাদের হয় না।
আমি আমার একার কথা বলছি না। আমার হয়ত প্রয়োজনীয় জিপিএ হয়ে যাবে, কিন্তু অনেকের ই হবে না। ।
আমি ভাবসি শুধু মেডিকেল এ বুঝি এই সমস্যা। কিন্তু না , খোঁজ নিয়ে দেখলাম ভার্সিটি গুলাতেও একই অসুবিধা।
শিক্ষক রা ছাত্রদের কে ভালো জিপিএ দিচ্ছেন না। বুয়েট এ এমএস করতে মিনিমাম যে জিপিএ লাগে, তা আমাদের অন্যান্য ভার্সিটির শিক্ষক রা দিচ্ছেন না। একটা ছাত্র যদি নিজ দেশে ই এমএস করার নুন্যতম যোগ্যতা অরজন করতে না পারে, সে আর বিদেসে চান্স পাবে কেমনে??? সাধারন এক বিএসসি ডিগ্রী নিয়ে সে তো গ্লানিময় জীবন ই যাপন করবে। আপনারা কি বলবেন যে মেধা নাই বলে ভালো জিপিএ পায় না?? তাহলে একটা ডিপার্টমেন্ট এর একটা ছাত্র ও কি মেধাবী না??? একটা ছাত্র ও কি নুন্যতম জিপিএ পাবে না যা দিয়ে সে (বিদেসের কথা বাদ দিলাম) দেশে এমএস যোগ্যতা অর্জন করবে??
আমি কখনই বলি না যে, যার যোগ্যতা নাই তাকে জিপিএ বেশী দেয়া হোক। আমি বলতে চাই সম্মানিত শিক্ষক বৃন্দ, আপনারা আমাদের অভিবাবক, গুরুজন।
আপনারা জানেন আমরা কোথায় গিয়ে আটকে যাব বা যেতে পারি। আমাদের কে কেন নাম মাত্র নাম্বার দিয়ে পাস করান?? কেন আমাদের কে না ঘরকা না ঘাট কা অবস্থায় ফেলে রাখেন?? বাকিটা আপনাদের বিবেচনার জন্য ছেড়ে দিলাম। ।
আরও মজার ব্যাপার আছে। recommendation letter লাগে বিদেশী ভার্সিটি তে আবেদন করতে হলে।
যে স্যার এই চিঠি দিবে, ওই ভার্সিটি ওই স্যার এর কাছে তার স্টুডেন্ট সম্পর্কে জানতে চাইবে। কিন্তু আমাদের যে ছাত্র শিক্ষক সম্পর্ক...... হায়রে খোদা। । যার কাস থেকে recommendation letter আনব, ওই স্যার পরে আমাকে চিনবে কিনা সন্দেহ।
যাইহোক, সমস্যা হয়ত আমাদের ই ( মানে ছাত্রদের)।
তারপর ও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক দের বলি, আপনাদের সমালোচনা করার যোগ্যতা আমার নেই। শিক্ষক দের সমালোচনা করার শিক্ষা কখনও পাইনি। তবে, একটা আবেদন করব, আপনারা আমাদেরকে পাশ করান, একটা নুন্যতম যোগ্যতা দিয়ে, যাতে করে আমরা এই দুষ্টচক্র থকে বের হতে পারি। অনেক সম্ভাবনার দুয়ার যাতে আমাদের সামনে উন্মুক্ত থাকে। জীবনের এই পর্যায়ে এসে যাতে "না ঘরকা না ঘাট কা" অবস্থায় না পরি।
আমরা যাতে আপনাদের কে বাঙ্গালীর দোজখের দারোয়ান বলে গালি না দেই। । ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।