প্রতিটি সর্যাস্তে বুক বাঁধি একটি অন্যদিনের সূর্যোদেয়র প্রত্যাশায়.......
আজ ল্যাব-এ যাইনি। প্রায়ই এরকম ফাঁকি দেই। গতকাল ল্যাব থেকে আসার সময় আমার প্রফেসর এসে বল্লেন তিনি আগামীকাল (মানে আজ মঙ্গলবার) টোকিও যাবেন একটা কনফারেন্স-এ যোগদান করতে। তখনই মনে মনে আজকে ল্যাব ফাঁকি দেয়ার ব্যাপারটা মোটামুটি ফাইনাল করে ফেলি। সেই স্কুল থেকে শুরু করে এভাবে ফাঁকি দিতে দিতে কি ভাবে যে এতদূর আসতে পারলাম সেটা একটা ভাবনার বিষয়।
স্বুল-কলেজে ফাঁকি দিতাম সেটা না হয় মেনে নেয়া যায়, কারণ তখন অনেক কিছুই বুঝতাম না। তারপর ইউনি তে ও ফাঁকি দিয়েছি নানা অজুহাতে কিংবা বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। এখন তো বড় হয়েছি। কিন্তু এখনো ফাঁকি দেই কোন অজুহাতে, জানি না। তবে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে ওঠে সাইকেলে প্যাডেল মেরে (আমার গাড়ি নেই, কারণ আমি গাড়ী ড্রাইভ করতে পারি না।
যদিও গাড়িটা এখানে এতটাই সহজ লভ্য যে ফকির, সরি এখানে তো আবার ফকির নেই, যে কেউ যখন ইচ্ছে নিতে পারে। তাছাড়া গাড়ী ছাড়া এখানকার প্রাত্যহিক জীবনটা সত্যিই খুব কঠিন) পাহাড়ের ঢাল বেয়ে বেয়ে ইউনি তে যাওয়া কি যে কষ্টের। ফুটপাথ ধরে আমি যখন সাইকেল চালাই, তখন পাশ দিয়ে সাই সাই করে চলে যাওয়া গাড়ির দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলি। মনে মনে বলি, কেন যে দেশ থেকে আসার সময় ড্রাইভিংটা শিখে আসিনি।
আমি যে ল্যাবটাতে কাজ করি, সেখানে সব মিলিয়ে (জাপানী + বিদেশী) বিশ জনের মত স্টুডেন্ট।
মোট তিনটি সেকশান। দুটি সেকশান জাপানী স্টুডেন্ট গুলোর জন্য। আমাদেরটা অন্যদের থেকে আলাদা এবং একটু ছোট। আমার সাথে একজন ইন্ডিয়ান ভদ্রলোক আছেন (ডঃ বমেশ), পোষ্ট ডক্টরেট করছেন। বিদেশী বলতে আমরা দু'জনই।
ভদ্রলোক ক্রিকেটের ভীষণ ফ্যান। প্রায়াই ওনার সাথে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। ওনার কাছে ক্রিকেট বলতেই সচীন, গাংগুলী আর দ্রাবির। ইন্ডিয়া ছাড়া যেন ক্রিকেট শব্দটা অসম্পূর্ণ ওনার কাছে। এটাইতো স্বাভাবিক।
একজন ইন্ডিয়ানের মুখে তার দেশের প্রশংসা শুনব, এটাইতো কাম্য। কিন্তু আমি আমার দেশ নিয়ে ভাল কোন কমেন্টস করতে পারতাম না। যে দেশ সবার সাথেই শুধু হাওে, তাকে নিয়ে কি আর এমন বলা যায়। ওর দৃষ্টিতে বাংলাদেশকে আরো পরে বিশ্ব ক্রিকেটে আমন্ত্রণ করা উচিৎ ছিল। বিশ্ব কাপ শুরু হওয়ার পর থেকে ওনার উৎসাহ দেখার মত।
ল্যাব-এ গিয়েই ইন্ডিয়াকে নিয়ে ছোটমোট একটা লেক্চার দিয়ে তারপর থামবেন। কম্পিউটার খুলে পত্রিকা পড়া, গান শুনা আর আগের দিনের ক্রিকেট ম্যাচ দেখা ওনার নিত্যদিনের কাজ। আমি শুনে যাই সুবোধ বালকের মত। কিন্তু গতকালের চিত্রটা ছিল সম্পূর্ণ অন্যরকম। একদম চুপচাপ।
মনটা যে খুবই খারাপ বোঝা যাচ্ছিল। আমার সাথে ক্রিকেট নিয়ে আজ আর কোন মন্তব্য করলেন না। আমিও আগবাড়িয়ে কিছু বলতে গেলাম না। কাঁটা ঘা-য়ে শুধু শুধু নুনের ছিঁটা দেয়ার কি দরকার।
থক।
ক্রিকেট নিয়ে আর কোন মন্তব্য নয়। গতকাল ক্রিকেট নিয়ে যে পোষ্টটা লিখেছিলাম, তাতে পাঠকদের মন্তব্যের বহর দেখে মনে হয়েছে, বাঙ্গালী বা বাংলাদেশীরা রাজনীতি ছাড়া কিছুই বুঝেন না। যে শিশুটি মাত্র কথা বলতে শিখেছে তাকেও যদি রাজনীতি বিষয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়, দেখা যাবে সেও ছোট খাট একটা বক্তৃতা দিয়ে ফেলেছে এ বিষয়ের উপর। রাজনীতি আমার একদম অপছন্দ। তেমনি যারা রাজনীতি নিয়ে (অ)সারগর্ভ বক্তব্য দিয়ে নিজের পারঙ্গতা প্রকাশ করতে কোন সুযোগই হাতছাড়া করতে চান না, তাদেরও সমান অপছন্দ।
রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণের সাথে রাজনীতির সমীকরণ একদম মিলে না। উদ্ভিদের অভ্যন্তরে ঘটে চলা অজশ্র রাসায়নিক বিক্রিয়ার সমীকরণ মিলাতেই যেখানে মাথার নিউরণগুলো লোড সামলাতে পারে না সেখানে রাজনীতির মত অখাদ্য আমার মোটেও যায় না। ব্লগের পাঠকদের মন্তব্য পড়ে মনে হয়, যে যত বেশী ইন্ডিয়া আর পাকিস্তান কে গালি দিতে পারবে, যত খারাপ ভাষায় গালি দিতে পারবে, যতবার রাজাকার-আলবদর মুখে উচ্চারণ করতে পারবে, তাকে তত বেশী দেশ প্রেমিক বলা যাবে। ছোট মুখে একটা কথা বলি। কথাটা শুনে আবার আমাকে গালি দেয়া শুরু করে দিবেন না যেন।
তাতে আর যাই হউক, আপনাদের দেশ প্রেম বাড়বে বা কমবে না। কথাটা হল, পাকিস্তান কিংবা ইন্ডিয়াকে বাদ দিয়ে এবার নিজেদের গালি দেন। যত খারাপ ভাষায় পারেন দেন। তাহলে যদি আমাদের দেশ প্রেম কিছুটা বারে। কারণ, একমাত্র আমরাই আমাদের সমস্ত কর্মফলের জন্য দায়ী।
ইন্ডিয়া কিংবা পাকিস্তান নয়। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বানিয়ে আঁচলের তলায় টানি আবার সেই ক্ষমতার জন্যই তাদের গালি দেই। এক পক্ষ্য অন্য পক্ষ্যকে স্বাধীনতা বিরুধী বলে গলা ফাটাই। স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বলে দেশের মানুষগুলোকে আমরা দিন কে দিন বিভক্তির দিকে ঠেলে দিচ্ছি। সেই বিভক্তি আমাদের চলমান রাজনীতিকে কোথায় নিয়ে গেছে একবার চোখ খুলে দেখেন।
বিভক্তি নয়, একতা-ই পারে বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলাদেশ আর শহীদ জিয়ার সমৃদ্ধ দেশ গড়ার স্বপ্ন পুরণ করতে। 35 বছর ধরেই তো এক পক্ষ্য পাকিস্তান কে আর অন্য পক্ষ্য ইন্ডিয়াকে গালাগালি করেছি। পেরেছেন কোন চুল খসাতে তাদের? কিংবা একটা রাজাকারের সংখ্যা কমাতে। কেউ যদি এর আপডেট পরিসংখ্যানটা দিতে পারেন, জানাবেন।
সে যা-ই হউক।
আজকে আমার সকাল হয়েছে দুপুর দেড়টায়। নাস্তা আর দুপুরের খাবারটা এক সাথেই সারলাম। সকালে ঘন্টাখানেক স্নো পড়েছে। পেঁজা তুলার স্নো। আমার বিশাল জানালার গ্লাসের উপর ঝুলানো ভারী পদর্াটা আজও সড়ানো।
মিষ্টি রোদ এসে পড়ছে আমার ছোট্র রুমটাতে। লেপের তলায় বসে বসেই লেখাটা শেষ করলাম। আাগামীকাল সারা জাপানে হলিডে। আরো একটা লম্বা ঘুমের অপেক্ষায়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।