গভীর কিছু শেখার আছে ....
গত শুক্রবার ২৪ সেপ্টেম্বর প্রায় সকল দৈনিক পত্রিকার একটি নিউজ দেখে অনেকেই চমকে উঠেছেন। বিভিন্ন পত্রিকায় নিউজের হেডলাইনের ভিন্নতা থাকলেও মোটামুটি এই রকমই একটি কমন হেডলাইন হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে- ‘জাবিতে শিক্ষক পেটালেন আরেক শিক্ষককে। ’ নিউজটা দেখে আসলেই আঁতকে ওঠার মত। তবে যতটা না বেশি নিউজ পড়ে তার ভয়বহতা সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া গেছে, তার নেপথ্য খুঁজে দেখলে কিন্তু অন্য রকম কিছু কথাই পাওয়া যায়। আর এই বিভাগ থেকেই গ্র্যাজুয়েশন করায় ঘটনার পাত্র-পাত্রীদের বোধ করি ভালো ভাবেই আমার চেনা থাকায় এ বিষয়ে কিছু কথা বলাই বেশি প্রাসঙ্গিক মনে করছি।
প্রথমেই দেখে নেয়া যাক প্রথম আলো কি লিখেছে। তারা লিখেছে-
‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপকের হাতে প্রভাষক লাঞ্ছিত’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক প্রভাষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন একই বিভাগের অপর এক অধ্যাপক। বৃহস্পতিবার বিভাগের সাপ্তাহিক সভায় এ ঘটনা ঘটেছে।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আইনুন নাহারের সভাপতিত্বে দুপুরে বিভাগের সভাকক্ষে শিক্ষকদের সাপ্তাহিক সভা শুরু হয়। সভায় স্নাতকোত্তর শ্রেণীর ক্লাস বণ্টনসংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার সময় জুনিয়র শিক্ষকদের ক্লাস না দেওয়ার প্রস্তাব দেন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজালাল।
তিনি বলেন, সদ্য নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকেরা একই বিশ্ববিদ্যালয়ের হওয়ায় এবং স্নাতকোত্তর শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যাচগত দূরত্ব খুব বেশি না থাকায় পরীক্ষাপত্র মূল্যায়নে প্রভাবিত হতে পারেন। এ সময় বিভাগের প্রভাষক ইব্রাহিম খালেদ বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানান। এতে অধ্যাপক শাহজালাল উত্তেজিত হয়ে একপর্যায়ে ইব্রাহিম খালেদকে চড় মারেন।
অধ্যাপক মোহাম্মদ শাহজালাল জানান, লাঞ্ছিত করার বিষয়টিকে যেভাবে দেখা হচ্ছে, আসলে সে রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন বিভাগের প্রভাষক ইব্রাহিম খালেদ।
বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আইনুন নাহার জানান, এ ব্যাপারে আলোচনা করে করণীয় বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। প্রসঙ্গত, ইব্রাহিম খালেদ নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৩২তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। বর্তমানে এ বিভাগের ৩৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে অধ্যয়নরত।
এবার আসা যাক মূল প্রসঙ্গে। আলোচিত শিক্ষক ড. শাহজালাল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নৃবিজ্ঞান বিভাগের সেই সকল গুটিকয়েক শিক্ষকদেরই অন্যতম যিনি ছাত্রদের ‘পড়াতে’ জানেন।
এখানে ‘পড়াতে’ কথাটির ওপর বেশি জোর দিয়েছি এই কারণেই যে, শুধু জাবি নৃবিজ্ঞান বিভাগেই নয়, বরং পুরো বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েরই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন যারা মুখস্ত বিদ্যার জোরে হয়তো ভালো রেজাল্ট করে শিক্ষক হয়েছেন। কিন্তু শ্রেণীকক্ষে তারা শুধু ছাত্রদের বিরক্তিরই নামান্তর! আবার এদের মধ্যে কেউ কেউ যেমন-তেমন একটা রেজাল্ট করে কেবল লবিং+তেলবাজির জোরে শিক্ষক হয়েছেন! ফলে এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতা-কলমে শিক্ষক হলেও ছাত্রদের কাছ থেকে এরা ‘পড়াতে’ জানা শিক্ষক হিসেবে কখনোই ‘স্বীকৃতি’ পান না। হয়তো এই স্বীকৃতিরই কোন ‘স্বীকৃতি’ নেই, কিন্তু ছাত্রদের কাছে এই স্বীকৃতির মূল্য অনেক। কারণ তারা অনেকেই কোন নির্দিষ্ট শিক্ষকের ক্লাস করবেন কি করবেন না তা নির্ভর করে সেই শিক্ষক কি ধরণের স্বীকৃতধারী সেটির ওপর। যদিও ইব্রাহিম খালেদের ক্লাস করার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য কোনটাই আমার হয়নি।
তাই বলতে পারছি না তিনি কোন ধরণের স্বীকৃতির দাবিদার হবেন।
জাবি নৃবিজ্ঞানের প্রাক্তন ও বর্তমান প্রতিটি ছাত্রই যারা দুটি ডক্টরেট ডিগ্রিধারী ড. শাহজালাল স্যারের ক্লাস করেছেন, তারা জানেন তিনি আসলেই একজন ‘পড়াতে’ জানা শিক্ষক। এটি ইব্রাহিম খালেদও স্বীকার করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। অন্যদিকে সবেমাত্র শিক্ষক হিসেবে একই বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ইব্রাহিম খালেদের একাডেমিক রেজাল্টের দিকে যদি তাকাই তবে দেখতে পাবো যে, অনার্সে ১ম শ্রেণীতে ৮ম স্থান ও মাস্টার্সে ১ম শ্রেণীতে ৭ম স্থান পেয়ে তিনি বিভাগের শিক্ষক হয়েছেন। তার সঙ্গে একই ব্যাচের অনার্স ও মাস্টার্সের দুটিতেই প্রথম শ্রেণীতে ১ম স্থান অধিকারী শিক্ষক হয়েছেন।
এক্ষেত্রে প্রশ্ন জাগাটা কি স্বাভাবিক নয়, ১ম স্থান অধিকারীর পর যদি ৭ম/৮ম স্থান অধিকারী শিক্ষক হন, তাহলে মাঝের ২য় থেকে ৬ষ্ঠ স্থান লাভকারীরা কি কারণে শিক্ষক হতে পারলেন না? তাদের কিসের কি কমতি ছিল?
এবার আসা যাক আরেকটি বিষয়ে। ইব্রাহিম খালেদ মাত্র দুটি বছর আগেও ড. শাহজালালের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি হয়তো নিজেকে ভেবেছেন ড. শাহজালালের কলিগ। তাই-ই হয়তো কলিগ সুলভ আচরণের নিমিত্তে তিনি তার সঙ্গে তর্কে জড়িয়েছেন। অথচ শিক্ষক সারা জীবন শিক্ষক-ই যে থাকেন, সেটি বোধহয় তিনি ভুলে গিয়েছিলেন।
আর একটি হিডেন বিষয় হলো, বিভাগের শিক্ষদের মাঝে আন্তঃপলিটিকস্! সিনিয়ার শিক্ষকরা নিজেদের গ্রুপ ভারী করার জন্য জুনিয়র শিক্ষকদের ইউজ করেন। জুনিয়র শিক্ষকরাও সিনিয়ারদের মন জুগিয়ে চলতে তাদের কথা মত চলতে বাধ্য হন। ফলে এক গ্রুপের শিক্ষক অন্য গ্রুপের সিনিয়র শিক্ষককে জুনিয়র শিক্ষক দিয়ে অপমান করতে ইন্ধন দেন। ছাত্রদেরকেও অনেক সময় একই ভাবে ইউজ করার রেকর্ড আছে। মনে পড়ে, ৩য় বর্ষে থাকাকালীন সময়ে একবার বিভাগেরই এক সিনিয়ার ম্যাডাম অন্য গ্রুপের এক জুনিয়র ম্যাডামের বিরুদ্ধে আমার কয়েক ফ্রেন্ডকে বলেছিলেন যে, ‘অমুক ম্যাডামের ক্লাসে তোরা বলতে পারিস না, আপনি কিছুই পড়াতে পারেন না।
’ (দুই ম্যাডামেরই যেহেতু ক্লাস করেছি, তাই তাদের দুজনের নামই উহ্য রাখলাম) তা যাক, এই ঘটনা বলার কারণ হলো, আমার ধারণা হয়তো সে ধরণের কোন কাহিনীর পরিণতিতেও ইব্রাহিম খালেদ ও ড. শাহাজালালের ঘটনাটি ঘটেছে কিনা সেটিও ভাববার বিষয়।
২৭ সেপ্টেম্বর
রাত ১-৩৮ মিনিট
মোহাম্মদপুর, ঢাকা।
১ম পর্ব
২য় পর্ব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।