আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খোমেনী ইহসানের বিশ্লেষণ: বাংলাদেশে ব্লগার-অনলাইন এক্টিভিস্টদের বিপ্লব করার সম্ভাবনা কতটুকু?

অ্যাকাউন্ট ব্লক করলা শরৎ ওকে ফেসবুকে পড়লাম খোমেনী ইহসানের বিশ্লেষণ। ব্লগারদের চিন্তার অবকাশ আছে বৈকি! >> বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আন্দোলন করা সুবাধে মধ্যবিত্ত উল্রুকদের খায়েশের কথা এখনো কানে আসে। তিউনেসিয়া ও মিশরের শহুরে মধ্যবিত্ত তরুণরা বিক্ষোভ করে গদি উল্টে দিয়েছে। এটাকে সামনে রেখে এ বছরের মাঝামাঝি কিছু তরুণ, যারা ফেসবুক ও বাংলা কমিউনিট ব্লগে তত্পর, আমাকে জানাল বাংলাদেশেও তারা এমন কিছু করার চিন্তা করছে। আমাকেও প্রস্তাব দিল তাদের সাথে থাকতে।

প্রথমেই তাদের কাছে জানতে চাইলাম, আর্মি কিভাবে বিপ্লবটা করতে চাচ্ছে তা জানাও। প্ল্যানে ভুল থাকলে বিপ্লব হবে না। উল্টো জেলের ভাত খেতে হবে। আমার কথায় তারা আসমান থেকে পড়লো। তারা দাবি করলো আর্মির সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই।

উল্টো প্রশ্ন করল আর্মির সাথে যোগাযোগ করতে হবে কেন? এমন প্রশ্ন করায় তাদের বললাম যে সব দেশে গদি উল্টে যাচ্ছে সেখানে আর্মি সরকার উল্টাতে চায়। তাদের অপারেশনের অংশ হিসেবেই ইউজ হয়েছে শহুরে মধ্যবিত্ত তরুণরা। যেহেতু মধ্যবিত্ত শ্রেণী চরিত্রের জায়গা থেকে দালাল স্বভাবের; সেহেতু ইন্ধন, উস্কানি ও লোভের বশবর্তী হয়ে তারা যে কোন ছায়া সামরিক অপারেশনে যোগ দিতে পারে। এ কথায় বাংলার বিপ্লবী তরুণেরা আমার উপর ভীষণ ক্ষেপে গেল। এক প্রকার গালি-গালাজ করলো যে আমি একটা আর্মির দালাল।

ডিজিএফআইয়ের চর। তাদের মহতী উদ্যোগকে আর্মির দালালিতে পরিণত করার চক্রান্ত করছি। তারা আমাকে চেপে ধরলো যে, ২০০৭ সালে যে ছাত্র আন্দোলন করেছিলাম তা আর্মির সাজানো আন্দোলন ছিল কি না এব্যাপারে আমাকে স্পষ্ট কথা বলতে হবে। তাদের বললাম আমাদের আন্দোলন শতভাগ আর্মির দালালি মুক্ত ও পরিকল্পিত বিপ্লব প্রচেষ্টার অংশ ছিল। কিন্তু অনভিজ্ঞতা, সাহস ও ক্ষমতাবাসনার অভাবে আমাদের আন্দোলন দখল হয়ে গিয়েছিল।

বেহাত হয়েছিল। আন্দোলনকে শেষের দিকে আর্মি নিজের সুবিধামত ইউজ করতে পেরেছিল। এটা আন্দোলনের দুর্বলতা মাত্র। কোন ভাবেই আর্মির সাথে আঁতাতের অংশ ছিল না। ছেলেগুলোকে ইডিয়ট মনে হওয়ায় রাগারাগি না করে বুঝিয়ে বলার সিদ্ধান্ত নিলাম।

মধ্যবিত্ত তরুণ বলা তো যায় না আমার নামে কী না কী প্রচার করে বেড়ায়। তাদের বললাম কিভাবে আন্দোলন করতে হয়, শহরাঞ্চলে গণ বিক্ষোভ দিয়ে ক্ষমতা দখল করতে হয় তা জানতে হলে আগে জানতে হবে ক্ষমতা সম্পর্ক কি? কিভাবে রাজনৈতিক দল সরকারের থাকে, রাষ্ট্রের কার কার সমর্থনের ভিত্তিতে সরকার টিকে থাকে ও ফাংশন করে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ধারনা রাখতে হবে। ক্ষমতা সম্পর্কের মধ্যে কোন অংশ যদি ক্ষমতার নতুন বিন্যাস করতে চায়, তার জন্য যদি কোন সিদ্ধান্ত নেয়, তা বাস্তবায়ন করতে কোন কর্মপদ্ধতি নেয় তাও বুঝতে হবে। যদি গণবিক্ষোভ করে ক্ষমতার নতুন বিন্যাস করতে চায় তাহলে তাতে শামিল হলে কী লাভ হবে তা বিবেচনা করে মধ্যবিত্তকে আন্দোলনে জড়াতে হবে। আর সিদ্ধান্ত নিতে গেলে জানতে হবে রাষ্ট্রের ক্ষমতা সম্পর্ক বুঝায় উপায় কি? বিনীতভাবে বললাম ক্ষমতা সম্পর্ক বুঝার আসল উপায় হলো রাষ্ট্রের ক্ষমতা আসলে কার কাছে থাকে।

তারা আমার মুখ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে বলল ক্ষমতা থাকে সরকারের হাতে। এখন যেহেতু সরকার আওয়ামী লীগের সেহেতু ক্ষমতা শেখ হাসিনার। আমি হাসলাম। বললাম এতটুকু বুঝো দেখেইতো আন্দাজের উপর গদি উল্টে ফেলাকে সহজ ভাবছো। ধরেই নিয়েছো, তোমরা বিক্ষোভ করবে আর বিরোধী দল সমর্থন দিয়ে উল্টে ফেলবে।

তাহলে তো সরকারের সমর্থকরা বসে থাকবে না। তারাও মাঠে নেমে পড়বে তোমাদের দমন করার জন্য। এর আগে অবশ্য পুলিশ লাঠি-টিয়ারগ্যাস-পানি কামান নিয়ে নামবে। পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের যৌথ আক্রমণ প্রতিরোধ করা গেলে আর্মি নামানো হবে। এতটুকু রিস্ক তো তোমরা ভেবে দেখে বিপ্লব করতে নেমেছো বলে মনে হচ্ছে না।

তারা আমাকে বললো, ব্যাপকভাবে বিক্ষোভ হলে পুলিশ ও সরকার সমর্থকরা হামলা করার সাহস করবে না। তিউনেসিয়া ও মিশরে চেষ্টা করেও পিছু হটেছে। তাদের কথা শুনে বললাম, মারহাবা! এত সহজ যোগ-বিয়োগ দিয়া অঙ্ক কষা গেলে ভালোই হতো। কিন্তু সরলাঙ্কে গরল যে বেশি! তাদের আকুতি ও ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখিয়ে নিজেকে নিরাগ করে বললাম, সরকার রাষ্ট্রের ক্ষমতা সম্পর্কে ড্রাইভিং সিটে থাকে মাত্র। আর পাবলিক থাকে যাত্রীর আসনে।

কন্ডাক্টর, হেলপার, টিকিট চেকারদের সহযোগিতা নিয়ে ডাইনে-বায়ে করে রাস্তায় গাড়ি চালায় ড্রাইভাররা। যাত্রীরা সাধারণত এদেরকেই গাড়ীর সব কিছু ভেবে খাকে। তাই গাড়ি চলাচলে অসুবিধা হলে, ভাড়া বেশি নিলে, সার্ভিস খারাপ দিলে যাত্রীরা এদের উপরই চড়াও হয়। কিন্তু তারা যেমন গাড়ির সব কিছু না তেমনি সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আমলারাই রাষ্ট্রের সব কিছু না। পেছনে কেউ একজন থাকে।

গাড়ির বেলায় তিনি হলেন মালিক, আর রাষ্ট্রের বেলায় তিনি শাসক শ্রেণী। তাদের বললাম, তোমরা বাসে চড়ে প্রায়ই ভাড়া নিয়ে ঝগড়া করো। ছাত্রদের ভাড়া অর্ধেক দাবি করো। বাসের লোকজন না মানতে চাইলে তাদের চড় থাপ্পড় দেও। বেশি ছাত্র থাকলে ড্রাইভাররে পর্যন্ত মারো।

তখন বেচারারা কানতে কানতে কয়, আপনারা ভাড়া অর্ধেক দেন। মালিক তো মানে না। পারলে মালিকগো কন, হ্যাগো মারেন। তখন কিন্তু তোমরা কিছু কওনা। মালিকগো কিছু কইতে যাও না।

হাতের কাছে যারে পাও তারে ধোলাই দেওয়া ছাড়া কিছু করো না। এর কারণ হলো তোমরা মধ্যবিত্তরা রাষ্ট্র বুঝো না, মালিকপক্ষ চেন না, শাসক শ্রেণী চেন না। এটা তোমাদের সমস্যা। এ সমস্যা না কাটালে তোমরা যারে মারা দরকার তারে না মেরে ঠিকই কন্ডাক্টর, হেলপার ও ড্রাইভার মাইরা বীরত্ব জাহির করে সুখ লাভ করবা। আর এটা হলো এমন ব্যাপার, পাগলের সুখ মনে মনে, রাত হলে পাগল তারা গুণে।

দেখলাম তারা কিছুটা বুঝতে পারছে। তখন আমি কথা বাড়ালাম। বললাম, যারা সরকার চালায়, সেই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও শাসক শ্রেণীর অংশ। কিন্তু শাসক শ্রেণীর অন্তর্গত হলো ব্যবসায়ী, আর্মি কাঠামো, আমলাতন্ত্র, রাজনৈতিক দল, সংবাদপত্র, বিচারপতি ও এনজিও লর্ডরা। তাদের মজুত বাহিনী হলো বুদ্ধিজীবী, শহুরে মধ্যবিত্ত, ছাত্র ও শ্রমিকরা।

মালিক পক্ষ যেমন ফায়দা হাছিলের জন্য বাস পরিচালনার নিয়ম ঠিক করেন তেমনি শাসক শ্রেণীও রাষ্ট্র কিভাবে চলবে না চলবে তা ঠিক করেন। এ জন্য তারা রাষ্ট্রের গঠনতন্ত্র ও আইন ঠিক করেন। এবং তারপর রাজনৈতিক দলগুলোকে ভোটের মাধ্যমে মনোনীত করেন সরকার পরিচালনার জন্য। আর রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা, বিচার আচার, নিরাপত্তা, প্রশাসন ঠিকঠাক মতো চলার জন্য চাকুরে নিয়োগ দেন। ঠিক কাজের জন্য ঠিক লোক পেতে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয়-সামরিক বিদ্যালয় স্থাপন করে শিক্ষার ব্যবস্থাও করা হয়।

এসব করতে গিয়ে শাসকশ্রেণী কৃষি ও শিল্প উত্পাদন রেগুলেট করে। শ্রমের কাঠামো তৈরি করে। সেবাখাত তৈরি করে তার উপর নিয়ন্ত্রণ জারি করে। মানবিয় সব কাজে শ্রমের প্রয়োজন পড়ে বলে শ্রমিকের যোগান নিশ্চিত করতে কাঠামোগত পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যেন সমাজে প্রয়োজনীয় শ্রমিক তৈরি হয়। এই শ্রমিকদের মজুরি ও জীবনযাত্রাও নির্ধারণ করে শাসক শ্রেণী।

সব মিলিয়ে রাষ্ট্রে মানুষে মানুষে যে সম্পর্ক তৈরি হয়, তা হলো উত্পাদন সম্পর্ক। শাসকশ্রেণীর নির্ধারণ করে দেয়া উত্পাদন সম্পর্ককে জারি রাখতেই সরকার তদারকের ভূমিকা পালন করে। আমি তাদের বললাম, সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় মনে করে প্রায়ই তৃপ্তির ঢেকুর তোলা হয়। কিন্তু সরকার শাসক শ্রেণীর স্বার্থের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে মনোনীত হয়। এ প্রতিযোগিতার উপরের দিকটা হলো ভোট।

আর ভোট পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনসভা, পোস্টার, মিছিলের মাধ্যমে স্থুল কথাবার্তা বলে থাকে। কিন্তু শাসক শ্রেণীর কাছে মনোনীত হওয়ার জন্য তাকে ইশতেহার দিয়ে দেখাতে হয় সে কোন গণ্তব্যে যাওয়ার জন্য কী কী কাজ করতে অঙ্গীকার করছে। যার ইশতেহার শাসক শ্রেণী মনোনয়ন করে তার সে দলকে ভোট দিতে মিডিয়া, বুদ্ধিজীবী ও ছাত্ররা বেশি প্রচারণা চালায়। ক্ষমতায় বসার পরে সরকার যদি ঠিকঠাক মতো কাজ করতে না পারে, ব্যর্থতার পরিচয় দেয়; তখন শাসক শ্রেণী ওই সরকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেয়। সরকারের ব্যর্থতা গুরুতর হলে তাকে মেয়াদ পূরণের আগে গদি থেকে ফেলে দেয়।

ব্যর্থতা গুরুতর না হলে মেয়াদ শেষে পরের টার্মে ক্ষমতায় আসতে না দিয়ে নির্বাচনে ফেল করিয়ে দেয়। তাদের আরো বললাম শাসক শ্রেণী এটা করতে পারে এ জন্য যে শাসকশ্রেণীর মধ্যে নানা গোত্র-উপগোত্র থাকে। মত-পথের ভিন্নতা ও উত্পাদন সম্পর্কের কমবেশি জায়গা পাওয়ার বিবেচনায় এসব গোত্র-উপগোত্র গড়ে উঠে। দীর্ঘ আলাপ শেষে আমি তাদের বললাম, তোমরা এখন তিউনেসিয়া ও মিশর স্টাইলে যে গদি উল্টানোর কাম করতে চাচ্ছো তাতে বুঝা যায়, তোমরা ধরেই নিয়েছো বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা গুরুতর। তাকে আর এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় রাখা যায় না।

এমনটা যে কেউ মনে করতে পারে। এবং গদি উল্টানোর চেষ্টাও করতে পারে। কিন্তু এমন কাজের সিদ্ধান্ত আসতে হেবে শাসকশ্রেণীর মধ্যকার ব্যবসায়ী, সরকার বিরোধী রাজনীতিক, আর্মি ও আমলা-এই চার পক্ষের কাছ থেকে। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে এ সিদ্ধান্ত আসতে হবে এমনটা জরুরি না। চারপক্ষের ক্ষুদ্র অংশও যদি সিদ্ধান্ত নেয় তাহলেও কাজটা করা সম্ভব।

যদি না তারা মজুত বাহিনী হিসেবে শহুরে মধ্যবিত্ত, ছাত্র ও শ্রমিকদের বেশিরভাগকে কাজে লাগাতে পারে। বিক্ষোভ করতে গেলে পুলিশ যদিও বাধা দেয়, মজুত বাহিনীর জোরের কারণে তা বানচাল করা সম্ভব। এরপর যদি সরকার সেনাবাহিনী নামানোর চেষ্টা করে তাহলে তার সাথে লড়াই করে জেতা যাবে ব্যাপারটা এমন না। বরং তখন বিপ্লবের পরিবর্তে গৃহযুদ্ধের অবস্থা তৈরি হবে। কারণ তখন আর্মির মুভমেন্টের কারণে সরকার পক্ষের মজুতবাহিনীও মাঠে নেমে যাবে।

এক্ষেত্রে প্রধান বিবেচ্য বিষয় হলো আর্মির মধ্যে যারা সমর্থন দেবে তাদের এমন সামর্থের প্রমাণ দিতে হবে যে, তারা বিক্ষোভ দমনে আর্মি মোতায়েনকে ঠেকাতে পারে। তাদের সাথে প্রায় তিন ঘন্টা আলাপ হয়েছিল কারওয়ান বাজারে। শেষের দিকে এতটুকু বলে তাদের বিদায় করেছি যে, আমার কথা থেকে নিশ্চয় তোমরা বুঝতে পেরেছ যে, গদি উল্টাতে গণবিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেয়ার লোক তোমরা নও। কখনো শাসক শ্রেণী সিদ্ধান্ত নিলে, তোমরা ইচেছ মতো শামিল হও। কিন্তু হটকারি কাজ করে নিজেদের ক্ষতি করো না।

কী বুঝলো না বুঝলো তারা চলে গেল। এরপর বাংলা কমিউনিটি ব্লগে বা ফেসবুকে তাদের আর বিপ্লব বিপ্লব বলে লাফাতে দেখিনি। দুঃখের ব্যাপার হলো ইদানিং একটা লাফালাফি চোখে পড়ছে। ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’ ব্যানার নাম নিয়ে কিছু কিছু লোককে দেখছি গালগপ্পো করে রাস্তাঘাট ভিজিয়ে ফেলতে। তাদের একজন আসিফ মহিউদ্দিন নামক এক উদ্ভট ছেলেকে গোয়েন্দা পুলিশ ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করার ঘটনায় ভেজা রাস্তায় যেন বাণের পানি উপচে পড়ছে।

কল্পনার নৌকা পাল তুলে ছেড়ে দিলেই যেন বাসনার বন্দরে তর তর করে পৌছে যাবে। দেখছি ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের মধ্যে নোবেল প্রাইজ-টাইজ দখল করার চিন্তা-ভাবনাও শুরু হয়ে গেছে। আর বছরের প্রথমার্ধে কথা বলা সেই তরুণদের কেউ কেউ পুরনো খায়েশ নতুন করে দেখতে শুরু করেছে। কিন্তু এদের তত্পরতার কোন তাত্পর্য নেই। এই গ্রুপ সরকারের ব্যর্থতা ও অযোগ্যতায় খসে পড়া পলেস্তরা মেরামতের মিস্ত্রিগিরি করতে মাঠে নেমেছে।

বর্তমান সরকারের যা অবস্থান তাদেরও তাই। এমনকি সরকার যাদের শত্রু মনে করে তারাও তাদের শত্রু হিসেবে ঘোষণা করেছে। ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’ ব্যানারের বেসিক ইনফরমেশনে গেলে বর্ননা পাওয়া যায় তারা বলছে, ‘বাংলাদেশের প্রথম অনলাইন কম্যুনিটি যা কাজ করবে শুধু মাত্র দেশানুভুতিকে সামনে রেখে শুধু মাত্র দেশের জন্য। এটা কোন রাজনৈতিক সংগঠনের অঙ্গ-সংগঠন নয়। বিভিন্ন সময়ে জাতীয় স্বার্থে এগিয়ে আসা ব্লগার ও অনলাইন একটিভিস্টদের একটি প্লাটফর্ম।

আমরা ব্লগারস এবং অনলাইন কমিউনিটি, দলমত নির্বিশেষে যেকোন বাঙলাদেশের মানুষ জাতীয় স্বার্থে আমাদের আন্দোলনে যুক্ত হতে পারেন (শুধুমাত্র ধর্মভিত্তিক দলের সমর্থক বাদে)। আপনার অংশগ্রহণ আমাদের কাম্য, আমাদের পাশে দাড়িয়ে জাতীয় স্বার্থে সোচ্চার হোন। আসুন,কাজ করি দেশের জন্য। স্বার্থকে পাশে রেখে। এই দেশটা আপনার আমার সবার।

দেশটার ভালো তো আমাদেরই করতে হবে। ’ ধর্মভিত্তিক দলের সমর্থকরা সরকারের শত্রু আবার তাদেরও শত্রু। সরকার যেমন তাদের মাঠে নামার অনুমতি দেয় না, তেমনি তারাও দেয় না। তাতে কি বুঝা গেল? রাজনৈতিকভাবে ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’ সরকারেরই মজুত বাহিনী! মজার ব্যাপার হলো তারা নিজেদের ব্যাপারে বর্ননা দিতে গিয়ে শ্রেণী নিরপেক্ষ থেকে নিজেদের কাজ নির্ধারণ করে নিয়েছে ‘শুধু মাত্র দেশানুভুতিকে সামনে রেখে শুধু মাত্র দেশের জন্য’। শ্রেণী নিরপেক্ষভাবে এ কথা বলার মাধ্যমে তারা কি কবুল করে নিলো যে, শাসক শ্রেণীর কাছে যা দেশানুভূতি ও দেশের জন্য কাজ করা তাদের কাছেও তা একই ব্যাপার? কারণ তাদের সাথে থাকার আকুতির মধ্যে রয়েছে, ‘জাতীয় স্বার্থ’ ‘দেশটা আপনার আমার সবার’ ‘দেশটার ভালো তো আমাদেরই করতে হবে’।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে এসব কথা শাসক শ্রেণী বারবার বলে নিজ শ্রেণীর স্বার্থ হাসিল করে এসেছে। আর নিজেদের মধ্যে লুটপাট-শোষণ-নিপীড়ন করা ধনদৌলতের অহিংস বিনিময় নিশ্চিত করতে বারবার শ্রেণীভুক্ত সব পক্ষকে বারবার মনে করিয়ে এসেছে ‘দেশটা আমাদের শ্রেণীর সবার’ ‘দেশটার ভালো তো আমাদের সবার করতে হবে’। যেহেতু শাসক শ্রেণীর সরকার পক্ষের মজুত বাহিনীর ভূমিকা পালন করছে ‘জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট’, সেহেতু দাবি করছি তারা কোন বিপ্লব করার সামর্থ রাখে না। কারণ সরকার তাদেরকে বলে দেয়নি যে তোমরা আমাদের গদি উল্টে দেও। তাদের মূলতঃ মাঠে নামিয়েছে সরকার বিরোধী আন্দোলনের বদলে প্রক্সি আন্দোলন গড়ে তুলতে।

কিন্তু আন্দোলন তো কিতাবের পয়ার ধরে চলে না, মাঝেমধ্যে বিচ্যুতি ঘটে যায়। যখন ঘটে, তখন ‘মুচলেকা’ দিয়ে নিজেকে সরকারি মজুত বাহিনীর মেজর জেনারেল প্রমাণ করতে হয়। এর পরে আসি তাদের কথায় এ লেখার শুরুতে যাদের সাথে আলাপের দীর্ঘ বিবরণ দিয়েছি। তারা এবং তাদের মতো সরকার বিরোধী বিএনপি-জামায়াতের অনুসারীদের জন্যও কোন সুখবর নেই। তারাও সরাসরি কোন বিপ্লব করতে পারবে না।

কারণ বিপ্লব হওয়ার জন্য শাসক শ্রেণীর মধ্যকার ব্যবসায়ী, সরকার বিরোধী রাজনীতিক, আর্মি ও আমলা-এই চার পক্ষের কাছ থেকে কোন অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ সরকার বিরোধী রাজনীতিকরা মনে করে সরকার স্বাভাবিক বা অস্বাভাকি যে কোন উপায়ে বিদায় নিক না কেন পরে ক্ষমতার দখলদারি তাদেরই পেতে হবে। আর্মির যে পক্ষ সরকারের প্রতি বৈরি তারাও মনে করে সরকার বিরোধী রাজনীতিকরা ক্ষমতায় আসলে তাদের চোখে যা যা সমস্যা সে সবের সমাধান হবে। ব্যবসায়ী ও আমলারা সরকারপন্থীদের সাথে আঁতাত করেছে। তাদের মধ্যে যারা চরম বৈরি আচরণের শিকার হয়েছে তারা সরকার বদলের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান ফেরত পাওয়ার আশা রাখে।

এমতাবস্থায় জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের দিয়ে কোন বিপ্লব হওয়ার চান্স থাকে না। মূলতঃ দেখা যাবে, জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা আগের মতোই সরকারের পক্ষে নানা প্রচারণায় লিপ্ত হবে। আর জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী ব্লগাররা বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে প্রচারণা চালাবে। জাতীয় স্বার্থে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টদের মধ্যে একটু বামপন্থী ফ্লেভার থাকায় কেউ কেউ বিভ্রান্ত হলেও সন্দেহ নাই যে, বিএনপির সাথে মিলে ইসলামী দলগুলো তত্পর হওয়ায় তাদের ঠেকানোর জরুরত তুলে ধরে তারা সরকারকে সমর্থন করবে। এখন কেউ যদি বলে যে না তারপরেও দেশে একটা বিপ্লব হবে, তাহলে আমি বলবো দেশে কোন বিপ্লব হবে না সামরিক ক্যু হতে পারে, আর তা করার জন্যই ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য তৈরির চিন্তা করছে।

কিন্তু নিশ্চিতভাবে এতটুকু বলতে পারি যারা এ দেশে ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্ট নৈরাজ্য তৈরি করার মতো মুরোদ তাদের নেই। বিশেষ করে এই সময়ে। লিঙ্ক: বাংলাদেশে ব্লগার-অনলাইন এক্টিভিস্টদের বিপ্লব করার সম্ভাবনা কতটুকু? ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.