আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যে কারণে কামারুজ্জামানের ফাঁসি

তবে প্রসিকিউশন দুটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে পারেনি বলে এ মামলার রায়ে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।  
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের এ মামলার রায় ঘোষণা করে।
প্রথমে রায়ের সংক্ষিপ্তসার পড়ে শোনান বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও মো. শাহিনুর ইসলাম। পরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জনাকীর্ণ আদালতে সাজা ঘোষণা করেন।
রায়ে বলা হয়, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মোহাম্মদ কামারুজ্জামান বৃহত্তর ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীকে সংগঠিত করেন বলে যে তথ্যপ্রমাণ প্রসিকিউশন উপস্থাপন করেছে- আসামির আইনজীবীরা তা খণ্ডাতে পারেননি।


প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কামারুজ্জামান জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছাত্রসংঘের ময়মনসিংহ জেলার সভাপতি ছিলেন। ২২ এপ্রিল তিনি জামালপুরের আশেক-মাহমুদ কলেজের ইসলামী ছাত্রসংঘের বাছাই করা নেতাকর্মীদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গড়ে তোলেন। এই বাহিনী বৃহত্তর ময়মনসিংহে মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধ ঘটায়।
এর পক্ষে প্রসিকিউটররা দৈনিক সংগ্রামের সেই সময়ের একটি প্রতিবেদনও উপস্থাপন করেন, যে পত্রিকাটি জামায়াতে ইসলামের মুখপত্র হিসাবে পরিচিত।   
রায়ের একটি অংশে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি মজিবুর রহমান মিয়া বলেন, “আসামির আইনজীবীরা প্রসিকিউশনের এ বক্তব্য খণ্ডাতে পারেননি।


যুদ্ধাপরাধের সাত অভিযোগে গত বছর ৪ জুন কামারুজ্জামানের বিচার শুরু হয়। এর আগে ২০১০ সালের ২ অগাস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
হত্যা ও গণহত্যার দায়ে ফাঁসি
প্রসিকিউশনের তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৫ জুলাই ভোরে কামারুজ্জামানের পরিকল্পনা ও পরামর্শে রাজাকার, আলবদরসহ পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুর গ্রাম ঘিরে ফেলে। এরপর তারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ১২০ জন পুরুষকে ধরে এনে হত্যা করে। ধর্ষণের শিকার হন গ্রামের মহিলারা।


আর চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৩ অগাস্ট মাগরিবের নামাজের সময় গোলাম মোস্তফা তালুকদারকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। কামারুজ্জামানের নির্দেশে তাকে সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে বসানো আলবদর ক্যাম্পে রাখা হয়।
মোস্তফার চাচা তোফায়েল ইসলাম এরপর কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করে তার ভাতিজাকে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু ওই রাতে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা গোলাম মোস্তফা ও আবুল কাশেম নামের আরেক ব্যক্তিকে মৃগি নদীর ওপর শেরি ব্রিজে নিয়ে গিয়ে গুলি করে।
গুলিতে গোলাম মোস্তফা নিহত হলেও হাতের আঙ্গুলে গুলি লাগায় নদীতে ঝাঁপ দিয়ে প্রাণে বেঁচে যান আবুল কাশেম।


ট্রাইব্যুনালের রায়ে বলা হয়, “আসামি যেভাবে এসব অপরাধ ঘটিয়েছে, তাতে সর্বোচ্চ শাস্তি না দিলে সুবিচার হবে না। ”
এ দুটি ঘটনায় হত্যা  ও গণহত্যার অভিযোগ ‘সন্দোহতীতভাবে’ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করার আদেশ দেন বিচারক।
দুই ঘটনায় যাবজ্জীবন
প্রসিকিউশনের প্রথম অভিযোগে বলা হয়, কামারুজ্জামানের নেতৃত্বে একাত্তর সালের ২৯ জুন শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী থানার কালীনগর গ্রামে ফজলুল হকের ছেলে বদিউজ্জামানকে রামনগর গ্রামের আহম্মদ মেম্বারের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।
এরপর তাকে নির্যাতন করে আহম্মদনগরের রাস্তার ওপরে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে লাশ টেনে নিয়ে কাছাকাছি কাঠের পুলের নিচে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়।


আর সপ্তম অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৭ রোজার দিন দুপুরে টেপা মিয়ার বাড়ি ঘেরাও করে আলবদর বাহিনী। এরপর কামারুজ্জামানের নির্দেশে টেপা মিয়ার ছেলেসহ ৫ জনকে হত্যা করা হয়।
এ দুটি ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হওয়ায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে কামারুজ্জামানকে।
শিক্ষক নির্যাতন: ১০ বছরের সাজা
একাত্তরের মে মাসের মাঝামাঝি এক দুপুরে শেরপুর কলেজের তৎকালীন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ আব্দুল হান্নানকে খালি গায়ে মাথা ন্যাড়া করে, গায়ে ও মুখে চুনকালি মাখিয়ে গলায় জুতার মালা পরিয়ে উলঙ্গ অবস্থায় চাবুক দিয়ে পেটাতে পেটাতে শেরপুর শহর ঘোরায় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগীরা।
অমানবিক এ নির্যাতনের ঘটনাকে ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ উল্লেখ করে কামারুজ্জামানকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।

  
‘প্রমাণ হয়নি’ যে দুটি অভিযোগ
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে পঞ্চম অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরে রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে এক সন্ধ্যায় শেরপুরের চকবাজারের বাসা থেকে মো. লিয়াকত আলী ও আরো ১১ জনকে আটক করে ঝিনাইগাতী আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনীর সদস্যরা। এরপর তিনজন ছাড়া বাকি সবাইকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
গুলি করার সময় আসামি কামারুজ্জামান ও তার সহযোগী কামরান সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ করে প্রসিকিউশন।
আর ষষ্ঠ অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের নভেম্বর মাসে দিদারসহ কয়েকজনকে ময়মনসিংহ শহরের জেলা পরিষদ ডাকবাংলোয় ধরে নিয়ে যায় আলবদর বাহিনী। পাকিস্তানের পক্ষে বক্তব্য দিতে বাধ্য করতে সেখানে নির্যাতন চলে তাদের ওপর।


রায়ে বলা হয়, এ দুটি অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন।
দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় যাবজ্জীবন বা ১০ বছরের কারাদণ্ডের রায় আর কার্যকর হবে না বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়।  

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.