সাভার ট্র্যাজেডির কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে (ইপিবি) দিয়ে তিন দিনে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
তবে এই প্রতিবেদনে তেমন কিছুই উঠে আসেনি। বিশেষ করে ক্ষয়ক্ষতিজনিত কোনো তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশিত হয়নি। ফলে অসন্তুষ্ট খোদ বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ। এ কারণে মন্ত্রণালয় থেকে ক্ষয়ক্ষতির বিবরণসংবলিত আরেকটি প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে প্রাপ্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এতে যেসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হয়েছে।
প্রতিবেদনে সাভার ট্র্যাজেডির জন্য ভবনের মালিক, গার্মেন্টস মালিক ও ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়ী করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১ দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। তবে এসব সুপারিশের বেশির ভাগই ইতিমধ্যে বিভিন্ন মহল থেকে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরেজমিন পরিদর্শন, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় প্রশাসনের সাক্ষাৎকার এবং বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে ছয় পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ‘দুর্ঘটনার জন্য দায়ী’ অংশে বলা হয়, ত্রুটিপূর্ণ নকশা ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় রানা প্লাজা ধসে পড়ে এবং স্মরণকালের মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। এ জন্য ভবন এবং গার্মেন্টস মালিকপক্ষ দায়ী। তাদের অসচেতনতা ও অদূরদর্শিতা এবং মাইকিং করে ভুল তথ্য প্রকাশ এবং জোর করে শ্রমিকদের কাজে বাধ্য করায় এই হূদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে।
জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদনটিতে খুব বেশি নতুন কিছু নেই। আমরা চেয়েছিলাম কত টাকা ক্ষতি হলো, কত বিক্রয়াদেশ বাতিল হলো, এসব বিষয়ের বিস্তারিত বিবরণ।
কিন্তু সেসবের কিছুই এই প্রতিবেদনে উঠে আসেনি। এ কারণে তদন্ত কমিটিকে আরেকটি চিঠির মাধ্যমে ক্ষতির বিস্তারিত বিবরণ জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ’
এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে ইপিবিকে দিয়ে এমন একটি ঘটনার তদন্ত করানোর বিষয়টি নিয়েও মন্ত্রণালয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আবার প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, ইপিবিতে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের বিশেষজ্ঞ না থাকায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনটিতে কমিটি তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, শপিং মল হিসেবে রানা প্লাজা তৈরি করা হয়।
সাভার পৌরসভা ছয়তলার অনুমোদন নিয়ে ভবনটি নবম তলা পর্যন্ত তৈরি করা হয়। শপিং মল হিসেবে ভবনটির অনুমোদন নেওয়া হলেও এটি তাতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ভবনের তিনতলা থেকে আটতলায় গড়ে ওঠে পাঁচটি গার্মেন্টস কারখানা। ভবনটি তৈরির ক্ষেত্রে নির্মাণবিধি মানা হয়নি। তাই ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরাও এর দায়দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।
তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে যে ১১টি সুপারিশ করেছে। এগুলোর মধ্যে নির্মাণসংক্রান্ত চারটি সুপারিশ হলো যে কার্যক্রমের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে ভবনটি অনুমোদনপ্রাপ্ত, তার বাইরে অন্য কোনো উদ্দেশ্যে সেটি ব্যবহার করতে না দেওয়া, ভবন নির্মাণের সময় যথাযথ নির্মাণবিধি অনুসরণ ও নিশ্চিত করা, ভবনে কোনো ধরনের ফাটল বা পিলার ভাঙার উপক্রম হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা এবং জলাশয় কিংবা ডোবা এলাকায় আধুনিক প্রযুক্তি ও বিল্ডিং কোড মেনে ভবন নির্মাণ।
সুপারিশে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ ওই পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরিতে পুনর্বাসন, আহত শ্রমিকদের চাকরির ব্যবস্থা ও অক্ষম শ্রমিকদের পুনর্বাসন, ভবন ও গার্মেন্টস মালিকসহ ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা এবং পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএর মাধ্যমে শ্রমিকের কর্মকালীন নিরাপত্তা নিশ্চিত করা অন্যথায় পোশাক কারখানাগুলোকে সরকারি সেবা প্রদান বন্ধ রাখার কথাও বলা হয়েছে।
এ ছাড়া ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে বিদ্যমান পোশাক কারখানার কর্মপরিবেশ জরিপের জন্য গণপূর্ত, রাজউক, স্থানীয় প্রশাসন, পোশাকশিল্পের মালিক ও ইপিবির প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি উচ্চক্ষমতার কমিটি গঠন, টাস্কফোর্স অন লেবার ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড অকুপেশনাল সেফটি ইন আরএমজি-সংক্রান্ত কমিটির কার্যক্রম বাড়ানো এবং সাভারের ঘটনায় নিহত ও আহত শ্রমিকদের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতির দ্রুত বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ইপিবির মহাপরিচালক সালাউদ্দিন মাহমুদকে আহ্বায়ক ও উপপরিচালক জাকির হোসেনকে সদস্যসচিব করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন ইপিবির পরিচালক আবুল কালাম আজাদ ও উপপরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ। কমিটির পক্ষে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান শুভাশীষ বসু গত ৩০ এপ্রিল বাণিজ্যসচিবের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি দাখিল করেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।