আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে সরকারকে হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার পরামর্শ



আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের পক্ষ হয়ে সরকারকে পরাজিত করার ছক এঁটেছে হেফাজতে ইসলাম। এজন্য নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের চেয়েও বড় ধরনের ভূমিকা পালন করবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় লিয়াজোঁ কমিটি করে পর্যায়ক্রমে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সমপ্রসারিত করবে। এ কারণে রাজনৈতিক স্বার্থে হেফাজতের সঙ্গে সরকারের সমঝোতা জরুরি। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের বৈঠক বা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে এ সমঝোতা করা যেতে পারে।

বিশেষ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক স্বার্থে এ ব্যাপারে সমঝোতায় উপনীত হওয়া জরুরি বলে প্রতীয়মান হয়। ঈদের পরপরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জমা পড়া দেশের শীর্ষ এক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। প্রতিবেদনে হেফাজতে ইসলামের আগাম কর্মসূচিসহ তা ঠেকানোর নানা সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। গোয়েন্দা রিপোর্টে হেফাজতের কর্মসূচি সম্পর্কে বলা হয়েছে, ইসলামী মাহফিল, ওয়াজ ও দোয়া মাহফিল এবং অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কৌশলে তারা আগামী নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রচারণা করার পদক্ষেপ নিতে পারে।

এ ছাড়া রাজনৈতিক দল হিসেবে তারা নিবন্ধিত না হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে না থেকেও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে ১৮ দলীয় জোটের প্রার্থীদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে। আগামীতে তারা বড় ধরনের রাজনৈতিক দল এবং নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে নিবন্ধন নেয়ার পরিকল্পনা করছে। এ জন্য সাংগঠনিক ও নির্বাচনী কাজের জন্য বেশি করে জাকাত, ফিতরা, কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ এবং অন্যান্য উৎস থেকে বেশি করে তহবিল সংগ্রহ করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে মন্তব্য বা সুপারিশ কলামে বলা হয়েছে, সামপ্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলকে বিশ্লেষণ করে হেফাজতের ভূমিকায় সরকারদলীয় প্রার্থীদের পরাজয়ের বিষয়টি গভীরভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন। দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারের অতি কৌশলে হেফাজতকে নিষ্ক্রিয় বা নিয়ন্ত্রণে আনার পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।

হেফাজতে ইসলাম যাতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় হতে না পারে এ জন্য কওমি মাদরাসাভিত্তিক গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো যেতে পারে। হেফাজতের আমীরের ভিডিও ফুটেজ সম্পর্কে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতের আমীরের সামপ্রতিক নারীবিদ্বেষী বক্তব্যের ভিডিও চিত্র প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার বা প্রচারণা চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বিশেষ করে নারীসমাজকে হেফাজতের বিরুদ্ধে সোচ্চার করার পদক্ষেপ নেয়া যায়। প্রতিবেদনে হেফাজতের ঈদ-পরবর্তী সম্ভাব্য কর্মসূচি সম্পর্কে বলা হয়েছে, গত ২৪শে জুন হাটহাজারী কওমি মাদরাসায় সংগঠনের আমীরের নেতৃত্বে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রমজানে তারা থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করে থানা ও জেলা অনুযায়ী ইফতার পার্টি, মিলাদ মাহফিলের মাধ্যমে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনাসহ গণসংযোগ করেছে। তারা সরকারকে নাস্তিকদের সঙ্গে তুলনা করে জনমত কমিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পরাজিত করার জন্য ব্যাপক অপপ্রচার চালাচ্ছে।

একই সঙ্গে ইসলামী জোটভুক্ত দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে সরকারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করে দাবি আদায়ে সোচ্চার হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম দলীয় কার্যক্রম বেগবান রাখতে বিশিষ্ট আলেম-ওলামাদের গণসংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা করছে। ইতিমধ্যে হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক জুনায়েদ আল বাবুনগরীকে সংবর্ধনা দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে আগাম খবর জানিয়ে বলা হয়েছে, ঈদের এক মাস পর হাটহাজারীতে জাতীয় ওলামা সম্মেলন আয়োজন করবে হেফাজত। ওই সম্মেলনে হেফাজতের ওপর জুলুম, নির্যাতন, মামলা, শাপলা চত্বরে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সরকারের বিরুদ্ধে কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে।

বিশেষ সূত্রে জানা যায়, হেফাজতে ইসলাম প্রায় এক কোটি লোকের সমাগম ঘটিয়ে ঢাকায় বিরাট আকারের মহাসমাবেশ কর্মসূচি পালন করে সরকারকে চাপে রাখার পরিকল্পনা নিতে পারে। এ ছাড়া পলাতক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনা করা এবং আটক নেতাকর্মীদের আর্থিক ও আইনগত সহায়তা দিচ্ছেন তারা। গোয়েন্দা রিপোর্টের শুরুতে বলা হয়েছে, হেফাজতে ইসলাম মূলত জামায়াত-শিবির এবং বিএনপি’র ইন্ধন ও সহায়তায় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করাসহ সরকার পতনের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেও সরকারের কৌশলী ও সময় উপযোগী পদক্ষেপের কারণে তাতে সফলতা পায়নি। সমপ্রতি জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা হওয়ার প্রতিবাদ, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো এবং বিএনপি’র তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ৫ই মে’র হতাহতের ঘটনাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হেফাজতে ইসলামকে উসকে দেয়া হচ্ছে। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র বা আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঈদ-পরবর্তী সময়ে হেফাজতকে মাঠে নামিয়ে সরকারকে বেদায়দায় ফেলার কলাকৌশল তৈরি ও তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে।

এ জন্য হেফাজতের ঈদ-পরবর্তী সম্ভাব্য কর্মসূচির বর্ণনা করা হয়। (মানবজমিন)

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.