......... খুব অদ্ভূত ছিল ওর চোখের মায়া। যত ঝামেলা,যত ঝগড়াঝাটিই হোক না কেন ওর চোখের দিকে তাকালেই সব রাগ পানি হয়ে যেত। খুব অদ্ভূত অদ্ভূত সারপ্রাইজ দিত আমাকে। বিয়ের পর আমার প্রথম বার্থডে। আমি ভেবেছিলাম ও সারা রাত জেগে গল্প করবে।
কিন্তু কীসের কী, অফিস থেকে এসেই দেখি ও গভীর ঘুমে। ডাক দিলাম, বলল টেবিলে খাবার দেওয়া,খেয়ে নিতে। কান্নাকে কোনোমতে আটকে নিঃশব্দে খেয়ে নিলাম। খুব রাগ নিয়ে ঘু্মুতে গেলাম। পরের দিন অফিস ছিল না, তাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম।
উঠেই দেখি এলাহী অবস্থা। চোখ মেলতেই বেজে উঠল হ্যাপি বার্থডে টু ইউ গান। সারা ঘরে শুধু ফুল আর ফুল। ও দেখি হাতে একটা ফুলের তোড়া নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পরে আছে আমার প্রিয় নীল শাড়ি।
কী ভয়ানক সুন্দর লাগছিল ওকে। প্রচন্ড আলোতে যেমন তাকানো যায় না, তেমনি ওর সৌন্দর্যের ধাক্কায় আমি আর চোখে দেখছিলাম না কিছু।
আমাদের বার্থডে ছিলো পরপর মাসে। তো পরের মাস আসতে না আসতেই ওর বার্থডে নিয়ে আমার উত্তেজনা বেড়ে গেল। ঠিক করলাম বান্দরবানে গিয়ে ওর বার্থডে উদযাপন করব।
পাহাড়ের চূড়ায় প্রথম সূর্যের আলোতে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাবো ওকে। ওর বার্থডে ছিলো ১৯ ডিসেম্বর। ১৭ তারিখে আমরা বান্দরবান পৌঁছাই। ১৮ তারিখ সারাদিন ওর সাথে ঘুরাঘুরি করলাম। বিকালে এক সাথে সূর্যাস্ত দেখলাম, এত সুন্দর সূর্যাস্ত আমি আর কখনও দেখিনি।
কনে সুন্দর আলোতে এত্ত সুন্দর লাগছিলো ওকে। মনে হল এই মানুষটার সাথে একটা জীবন অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যাবে। খুব টায়ার্ড ছিলাম দুজনে, তাই রাতে বার্থডে উইশ করেই ঘুমিয়ে গেলাম।
ঝলমলে রোদ দিয়ে শুরু হল সকাল। আমরা বেশ বড় একটা পাহাড়ের উপরে ছিলাম।
ও ঘুম থেকে ঊঠার আগেই আমি কেক নিয়ে চলে গেলাম পাহাড়ের কোনার দিকের একটা যায়গায়। ঐ যায়গাটাতে একদম সরাসরি সূর্যের আলো পড়ছিলো। সূর্যকে সাক্ষী রেখে একসাথে কেক কাটবো, এই ছিলো প্লেন। ও ঘুম থেকে উঠে বাংলোর বারান্দায় আসতেই পিছন থেকে ওর চোখ ধরে নিয়ে এলাম কেকের কাছে। প্রচন্ড খুশি লাগছিলো ওকে।
হাসি কোনোমতেই থামছিলো না যেন। যখনই কেক কাটতে যাব তখনই কেমন করে যেন পা পিছলে গেল ওর। নিমিষেই পড়ে যেতে থাকল নিচের দিকে। চোখের পলকেই ঘটে যেতে লাগল সব কিছু। আমি শুয়ে পড়ে কোনোমতে ওর হাতটা ধরে ফেললাম।
কিন্তু এরি মধ্যে ও নেমে পড়েছে অনেকটুকু। নিচে গভীর খাত, ছেড়ে দিলেই হয়ত পড়ে যাবে ও। ওকে ধরে রাখতে যেয়ে আমিও নেমে গেছি অনেকটুকু,আর একটু নামলেই হয়ত আমিও চলে যাব অনেক নিচে। ও কোনো চিৎকার করছিলো না, এমনকি কোনো কথাও না। শুধু চোখ দিয়ে টপটপ পানি পরছিলো ওর।
জানি না কোন এক অজানা ভ্রান্তিতে এক সময় ছেড়ে দিলাম ওর হাত। মনের ভুল হতে পারে কিন্তু তারপরেও স্পষ্ট শুনতে পেলাম তোমাকে অনেক ভালবাসি।
তারপরে কেটে গেছে অনেকটা বছর। এখনও আমার বার্থডে আসে, কিন্তু নীল শাড়ীতে কেউ আর আমাকে উইশ করে না। মৃত্যু হয়ত বাঁচিয়ে দিয়েছে তোমাকে, কিন্তু বেঁচে থাকা প্রতিনিয়ত দিচ্ছে আমায় মৃত্যুর স্বাদ।
নিজেকে হয়ত একটু বেশিই ভালোবাসতাম, যে ভালোবাসা কেড়ে নিয়েছে আমার বেঁচে থাকার আশ্রয়টুকু।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।