আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমারও পা আছে কিন্তু বুট নেই... মাসুম বিল্লাহ

একজন নির্বোধের বয়ান সেই পিচ্চিকালে নানীর কোলে শুয়ে আবু জাহেলের কু-কর্মের কথা শুনে অবুঝ মনের ভিতর ভয় ধরে যেত। না বাবা বড় হয়ে আবু জাহেল হওয়া যাবে না। তখন থেকেই আবু জাহেলকে ঘৃণা করে এসেছি। কিন্তু আজ এতকাল পরে জীবন্ত আবু জাহেলকে থুক্কু আবু সাজ্জাদকে দেখে আমার বুড়ো মনের ভিতর দুঢ়– দুঢ়– কাপন শুরু হয়ে গেছে। তো আপনারা এই আবু সাজ্জাদকে চেনেন তো? কেন গত ২২শে সেপ্টেম্বর দিন যে লোকটা বাংলা ছিঃনেমার পা লম্বা নায়ক শাকিব খানের মত হাত-পায়ের ব্যবহার করেছে।

ওহ্ হো এখনো চেনেন নাই দেখছি, কেন পরের দিন পত্রিকার পাতায় সেই নায়ক বুট পরা পায়ের ছবি ছাপা হয়েছে, কী মনে পড়েছে? জানতাম এবার মনে পরবেই। দেখেছেন কেমন নায়কের মত পায়ের ব্যবহার করেছেন! একটা মানুষ শুয়ে আছে, ঠিক তার গলার কাছের বুকের উপর আবু জাহেল সাহেব তার বুট পরিহিত মতাবান পা খানি তুলে রেখেছেন। তো মানুষটা কী এমন কাণ্ড করেছিল যে, তার বুকের উপর অমন করে পা তুলে দিতে হবে? আহত হওয়া লোকটির কাছে সে কথা জানার কোন উপায় নেই আমাদের। চলুন সাজ্জাদের কাছ থেকেই আসল কথা শুনি। শনিবার সাজ্জাদকে ডাকা হয়েছিল ডিএমপি সদর দপ্তরে।

উপ-কমিশনারের প্রশ্নের জবাবে সাজ্জাদ বলেন ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের নেতাসহ দুইজনকে আটক করেছিলাম। তার সঙ্গেই ছিল ইউসুফ (যার বুকের উপর পা তুলে দিয়েছিলাম)। একজন পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ইউসুফকে পা দিয়ে আটকে আরেকজনকে ধরার চেষ্টা করি। এ সময় ফটো সাংবাদিকরা ছবি তোলেন। প্রকাশিত ছবিতে মনে হচ্ছে আমি একজনকে বুট দিয়ে চেপে ধরে নির্যাতন করছি।

কিন্তু প্রকৃত ঘটনা তা নয়। ’ সাজ্জাদের এ বক্তবে সন্তুষ্ট হতে পারেননি কর্মকর্তারা। পাঠক আপনারা কী পারছেন? জানি পারছেন না, পারবেন কী করে? যে ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা কেবল মাত্র অন্ধজনই অবিশ্বাস করতে পারে। আপনার আমার তো আল্লাহর দেয়া দুটি চোখ আছে। এখন সবার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে তবে কেন আবু সাজ্জাদ এই হিরো মার্কা কাজটি করতে গেলেন? হ্যাঁ, প্রশ্নের মধ্যেই তো উত্তর লুকিয়ে আছে।

বাংলা ছিঃনেমার শাকিব খানকে সাজ্জাদের ব্যাপক পছন্দ। সময় পেলেই লুকিয়ে শাকিব খানের সিনেমা দেখতে যান। আর সেই সিনেমা দেখেই শিখে গেছেন কিভাবে পায়ের ব্যবহার করতে হয়। কারণ শাকিব খানের পা যেমন শরীরের তুলনায় লম্বা, তেমনি সাজ্জাদেরও পা বেশ লম্বা শক্ত-পোক্ত। তো সিনেমা দেখেই উনারও সাধ হইছে পায়ের পূর্ণ ব্যবহার করতে।

আবার যদি কোন ভাবেই পায়ের ব্যবহার দেখিয়ে সিনেমায় নামা যায়। অনেক দিনের শখ তো। এবার ঠিকই ব্যাটার মন বাসনা পূর্ণ হয়েছে। শাকিব খানকেও ছাড়িয়ে গেছে। সারা বিশ্ব শাকিব খানকে চেনে না।

শাকিবের পোষ্টার দেখে নাই। কিন্তু সাজ্জাদ পালোয়ানের ছবি সারাবিশ্ববাসী দেখেছে। নিজ দেশের মধ্যেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সাংবাদিকরা একের পর এক ইন্টারভিউ নিচ্ছে। একটা ছবিই তাকে বিখ্যাত করে দিল।

তবে তার পা খানি ও কালো বুট এক্ষেত্রে বিশেষ ভুমিকা পালন করেছে। তো এখন এই পা খানি থুক্কু বুট জোড়া জাদুঘরে রেখে দিতে হবে। ছোট ছোট বাচ্চারা জাদুঘরে গিয়ে বুট জোড়া দেখে গর্ববোধ করবে। আবু সাজ্জাদের এই সাফল্য দেখে তার কলিগরা জ্বলে-পুড়ে মরছে। তারাও মনে প্রাণে কামনা করছে, ইস্ আমাদেরও এমন সুযোগ কবে আসবে? যদি সামনে আর একটা হরতাল হত! তবে আমরাও দেখিয়ে দিতাম।

সাজ্জাদ কি সুনাম বয়ে এনেছে, তার দ্বিগুন আমরা আনতাম। তো ততোদিন আমাদেরও অপোয় থাকতে হচ্ছে, আরো সুন্দর সুন্দর দৃশ্য দেখার জন্য। বিখ্যাত বুটম্যান সাহেবের কর্মের তদন্ত করা হচ্ছে। এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক শাস্তি স্বরূপ বুটম্যানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এহেন খবরে আমরা যারপরনাই মর্মাহত, কেন রে বাবা বুটম্যান কী এমন করেছে যে, তাকে বরখাস্ত করতে হবে? বুটম্যান তো আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আরো শক্তিশালী হিসেবে পরিচিত করে দিয়েছে। কেউ নাকি আর পুলিশকে ভয় পায় না। আসামীকে গ্রেফতার করতে পারে না। এতসব মিথ্যে অভিযোগ বুটম্যান মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে। এদেশের পুলিশ বাহিনী যে কত শক্তিশালী তা বিশ্ব টের পাবে বুটম্যানের সাহসী পদেক্ষপ।

এদেশকে আক্রমন করতে হলে বুটম্যানের কথা মনে করে পিছিয়ে যাবে। তাই বুটম্যান সাজ্জাদকে আমাদের মাথায় করে নাচা উচিৎ। আমার বুটম্যান হতে ইচ্ছে করছে... অনেকেই আমাকে নির্বোধ বলে থাকে, আমি নাকি অনেক কিছুই বুঝি না, পারি না। কিন্তু এখন আমার যে বুটম্যান হবার ইচ্ছে। কারণ আমারও যে একজোড়া পা আছে কিন্তু সে পায়ে কোনো কালো বুট নেই।

তবুও আমার ইচ্ছে করছে পায়ের ব্যবহার বাড়িয়ে দিতে। বুট দিয়ে সব কিছু মাড়িয়ে দিতে। মিথ্যে বুলি আওড়ানো মুখের উপর বুট দিয়ে চাপা দিতে। আরো কত কিছু যে আমার ইচ্ছে করছে এই অসহায় পা দিয়ে কিন্তুু আমার যে কোন বুট নেই...!!!  প্রাপকঃ বিভাগীয় সম্পাদক, থেরাপি, নয়া দিগন্ত। ঋৎরফধু, ঝবঢ়ঃবসনবৎ ৩০, ২০১১ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।