সম্প্রতি ইউসুইচ ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট কর্তৃপক্ষ ইউরোপের ১০টি দেশের মধ্যে একটি গবেষণা চালায়। বিভিন্ন দেশের পণ্যের তুলনামূলক দাম নিয়ে তারা গবেষণা করে থাকে বলে ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে বলা হয়।
গবেষণার সময় ১৬টি বিষয়কে বিবেচ্য ধরা হয়েছে। এর মধ্যে প্রকৃত আয়, ভ্যাটের পরিমাণ, জ্বালানি, খাবারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ছাড়াও ছুটি ও বিনোদন, কর্মঘণ্টা এবং গড় আয়ুকে বিবেচনায় ধরা হয়েছে।
কী আছে এই গবেষনা প্রতিবেদনেঃ ব্রিটেনের জীবনযাত্রা ইউরোপের অন্য দেশগুলোর চেয়ে নিম্নতর মানের।
শুনতে অবাক লাগলেও উপরোক্ত গবেষণায় এমন তথ্যই পাওয়া গেছে। অপরাধ প্রবণতা ও সহিংসতার হার বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার উচ্চ ব্যয়ের কারণে ব্রিটিশরা দিন দিন হয়ে উঠছে অসুখী। শুধু তাই নয়, ব্রিটেনের চেয়ে কম আয়ের দেশ বিশেষ করে পোল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালি, স্পেনের মানুষ যেখানে সুখী ও স্বচ্ছলভাবে জীবনযাপন করছে, সেখানে মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্রিটিশ বলছে, তারা সুখী।
যুক্তরাজ্যে একেকটি পরিবারের আয় ৩৮ হাজার ৫৪৭ পাউন্ড। অন্যদিকে ফ্রান্সে ৩১ হাজার ৭৬৭ পাউন্ড, ইতালিতে ২৫ হাজার ৬০১ পাউন্ড, স্পেনে ২৩ হাজার ৩৯৩ পাউন্ড এবং পোল্যান্ডে মাত্র ৮ হাজার ৭৫৯ পাউন্ড।
তবে জীবনযাত্রার মান যুক্তরাজ্যের তুলনায় এসব দেশে অনেক ভাল। এর মধ্যে ফ্রান্সের অবস্থান সবার ওপরে। এরপরই আছে স্পেন ও ইতালি। আর ১০টি দেশের মধ্যে পোল্যান্ডের অবস্থান সপ্তম।
গবেষণায় বলা হয়, ব্রিটেনের তুলনায় পোল্যান্ড, ফ্রান্স, স্পেন ও ইতালির একেকটি পরিবারের সম্পদের পরিমাণ কম হলেও তারা তুলনামূলক সুখী।
আর মাত্র পাঁচ শতাংশ ব্রিটিশ বলেছেন তারা সুখী। আর ১০ শতাংশ ব্রিটিশ অন্য কোন দেশে অভিবাসী হওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। দীর্ঘ সময় কাজ, বছরে কম ছুটি ভোগ এবং বেশি বয়সে অবসরে যাওয়া ব্রিটেনের জীবনযাত্রার এক বিবর্ণ চিত্র। পাশাপাশি দেশটিতে খাদ্যপণ্য ও ডিজেলের মূল্য চড়া।
গবেষণায় দেখা যায়, লন্ডনের ৫৯ শতাংশ মানুষই দেশটির সামাজিক অবক্ষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সাম্প্রতিক দাঙ্গার পর তাদের এই উদ্বেগ আরও বেড়েছে। ৪৯ শতাংশ মানুষ বলেছে, সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা তাদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ৪৭ শতাংশ অপরাধ ও সহিংসতার ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় রীতিমতো আতঙ্কিত।
গবেষণায় আরো দেখানো হয়, ব্রিটিশরা বছরে ২৮ দিন ছুটি ভোগ করে। অন্যদিকে একজন ফ্রেঞ্চ ৩৬ দিন, পোলিশ ও সুইডিশরা ৩৮ দিন এবং স্প্যানিশরা ৩৯দিন ছুটি ভোগ করে থাকে।
ব্রিটেনে অবসরের বয়স ৬৩ বছর, পোল্যান্ডে ৫৯ বছর এবং ফ্রান্স ও ইতালিতে ৬০ বছর।
যুক্তরাজ্য স্বাস্থ্যখাতে মোট জাতীয় উত্পাদনের ৪.৮ শতাংশ ব্যয় করে থাকে। অন্যদিকে এই খাতে বাকি দেশগুলোর ব্যয় গড়ে ৫.৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে বেশি ব্যয় করে ডেনমার্ক ৮.৪ শতাংশ, এরপরে সুইডেন ৭.৬ শতাংশ।
শুধু তাই নয়, ব্রিটিশদের গড় আয়ুও অন্য কয়েকটি দেশের নাগরিকদের চেয়ে কম।
গড়ে একজন ব্রিটিশ ৮০.৪ বছর বাঁচেন। অন্যদিকে ফরাসিদের ৮১.৪ বছর, ইতালীয়দের ৮১.৬ বছর এবং ফ্রেঞ্চদের ৮১.৯ বছর।
তবে হতাশাবাদী কোন ব্রিটিশ এই ভেবে তুষ্ট হতে পারেন যে, যেহেতু তাদের গড় আয়ু অন্য দেশগুলোর তুলনায় কম, তাই হয়তো তাদেরকে বেশি দিন এসব দুর্দশা সহ্য হবে না।
সূত্রঃ চ্যানেল ফোর নিউজ
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।