শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেবদের মতানৈক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। এই মতানৈক্যকে অনেকে রহমতস্বরুপ বলে মনে করে থাকেন। সম্প্রতি ইউ কে তে একটি সামান্য অথচ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল তা সুস্থ সমাজে বিশেষ করে মুসলিম সমাজে মোটেই কাম্য নয়। তবুও কেন জানি কি থেকে কি হয়ে গেল। যদি ব্যাপারটা সংবাদপত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত তবুও ভাল ছিল, কিন্তু ব্যাপারটা আজ চলে গেছে সুদূর বাংলাদেশে, সেখানেও চ্যালেঞ্জ পাল্টা চ্যালেঞ্জ চলছে।
আমাদের আলেম ওলামারা তো সবসময় সত্যের দাওয়াত দিচ্ছেন। এই সত্যের দাওয়াতে কি করে ভেজাল ঢুকেছে তা খুঁজে বের করতে তো সাধারণ মানুষ অর্থাৎ কোরআন হাদিস না জানা লোকদের বলা যাবে না। তা বের করতে নিশ্চয় আলেমরাই প্রয়োজন। যেমনঃ আইটি ইঞ্জিনিয়ারের ভুল ধরতে হলে তাহার চাইতে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন ইঞ্জিনিয়ারের প্রয়োজন হয়। তা না করে অধিক হারে গালিবাজি করে কি কোন ফায়দা হবে?
এ ব্যাপারে মোটেই কোন মন্তব্য করার ইচ্ছে ছিল না।
কাজ -কর্ম নিয়েই দারুন ব্যস্ত, এত অবসর সময়ও নেই যে ব্যাপকভাবে আলোচনা করব। তবুও লিখতে বাধ্য হলাম। জানি অনেকেই নাখোশ হবেন। সত্য অপ্রিয় হলেও সত্যকে চেপে রাখা যায় না কোন না কোন কালেই। সত্যের প্রতি অনিহা প্রত্যেক যুগেই ছিল, আজও তেমনি আছে।
কিন্তু সত্য জানার সহজাত আকুতি বনি আদমের মধ্যে সব সময় পাওয়া যায়।
সে দিন এক ঘরোয়া আলোচনায় এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হচ্ছিল। এক পর্যায়ে ভদ্রলোক রেগে গিয়ে বললেন, যে মাওলানা ক্বিয়াম করেন তারাই মুনাফেক, ফাসিক বিশেষ করে যাকে নিয়ে এই বিতর্ক হচ্ছিল তাহাকেও গাল মন্দ দিচ্ছিলেন। আর এসবই দিচ্ছিলেন, মুফতি বলে কথিত আং হান্নান সাহেবের বক্তব্যের বদলৌতে। কেন বললাম? তখন তাহার হাতে ছিল রক্ষিত আং হান্নান সাহেবের ভিন্ন মত নামে কৈফয়ত এর ফটোকপি।
শুধু কি তাই? এক পর্যায়ে এ ও বললেন, যে নবী মোঃ মোস্তফা (সঃ) যে দিন জন্ম নিয়েছিলেন ও তিনি যে নবী হিসেবেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন, তা না কি আগেই জানা ছিল। তৎকালীন যুগের মানুষের যে শুরু থেকেই ক্বিয়াম চলে আসছে, বস্তুত এসব জিজ্ঞাসার জবাব আমার কাছে নেই। এসব নানান অবাস্তব প্রশ্ন আগে থেকেই উল্লেখ করেছি। এসবে আমি কৌতুহলি নই। কেননা মহব্বতে রাসুল বা হুব্বে রাসুল সম্পর্কে আমি মনে করি কোরআন হাদিসই যথেষ্ট নয় কোরআন হাদিসের আলোকে এজমাও।
ক্বিয়ামের যথেস্ট প্রয়োজন রয়েছে। মহব্বতে রাসুল কাহাকে বলে তা হযরত ওয়ায়েজ করণী (রাঃ) জীবনী অথবা হযরতে হানজালাহ (রাঃ) এর জীবনী পাঠ করনে শেখা সম্ভব বলে মনে করি। হযরত ওয়ায়েজ করণী (রাঃ) তো সাহাবী ছিলেন না, তারপরেও একে একে সব ক’টি দাঁত উপড়ে ফেলে দিয়েছিলেন তাহাতো ইসলামের জন্য নয়, এই ভালোবাসা ছিল নবী পাক (সঃ) এর জন্য। যার জন্য এ বিশ্ব ভূমন্ডল তৈরি করেছেন আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা। আমরা তো আর এমন কিছু করছি না কেউ কেউ শুধু দাঁড়িয়েই সালাম পাঠ করছেন, তাছাড়া সৌন্দর্য বলে তো কিছু কথা আছে এবং আমাদের নবী বিশ্ব মানবতার মুক্তির সনদ হযরত (সঃ) ও তো সৌন্দর্য্য প্রিয় ছিলেন।
তাহার খাতিরে ও অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে দাড়ালে যে পাপ হবে তাহাতো মনে করাই জগন্য পাপ হবে বলে মনে করি।
যাই হোক বলছিলাম গলাবাজী করে অন্য বা প্রতিপক্ষ আলেমের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে এর দায়-দায়িত্ব কে নেবেন? ভক্তদের তো ধর্য্যে ও সংযম কি করে করতে হয় তা শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। মসজিদে মসজিদে দাওয়াতে তাবলীগ করলেই তো দ্বীন প্রতিষ্ঠা পবে না। তার জন্য বদর, ওহুদ, খন্দকের ময়দানের প্রয়োজন। তাই অনুরোধ করছি বিতর্কে সংশ্লিষ্ট মাওলানা সাহেবদেরকে আপনাদের ব্যক্তিত্ব জাহির করতে আমাদের মত সাধারণ মানুষদের না করলেই ভাল এবং স্বীয় ভক্তদের নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে যার যার মত চলার জন্য বলেন, দেখবেন ল্যাটা চুকে যাবে।
আর আপনাদের নিশ্চয় জানা আছে সব ভাল কাজে শয়তান বাধা দেয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সাধারণ শয়তান থাকে কিন্তু একজন ফাজিল পাশ মাওলানার সাথে থাকে কামিল পাশ করা শয়তান। মুসলমান তথা আলেম সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত করতে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে সদাব্যস্ত থাকে। এবং এ কাজে কেউ সফল হলে পুরষ্কার দিয়ে পুরষ্কৃত করে থাকে। তাইতো ফ্যাসাদ সৃষ্টি করতে আজ কাল পুরষ্কার দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
কিন্তু এসব ব্যাপারে নীরব ভুমিকা নিলে সওয়াবসহ সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে বলেই বিশ্বাস। এমনিতেই আমি আলেমদের শ্রদ্ধা করি, কারণ আলেমরারাই নায়েব নবী বা বর্তমান যুগের পথ প্রদর্শক, তদুপরি তাদেরকে অন্য কেউ গালাগালি করুক তা মোটেই কাম্য নয়। শ্রদ্ধার পাত্রদের সব সময় শ্রদ্ধা করতে হয়। তাইতো বলি আমিত্বকে ফেলে দিয়ে একে অপরের ঘৃণা বিদ্বেষ না ছড়িয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীনের কাজ চালিয়ে যান। দেখবেন মুসলমানরা সঠিকভাবেই চলবে এবং আপনারা বিধর্মীদেরকেও কাছে টানতে পারবেন।
এসব ঐক্যবদ্ধভাবেই সম্ভব, অন্যথায় কাজের কাজও হবে না শুধু নিজের মেরুদন্ডই ভাঙবে। যত শ্রীর্ঘ সম্ভব ঐক্যবদ্ধ হোন, নয়তো আজ মসজিদে ঢুকছে কুকুড়, কাল হয়তো ঢুকবে খিঞ্জির। পরিশেষে কবির ভাষায় বলতে চাই-
”আল্লাহ নিজে খরিদদারে মোহাম্মদ
আল্লাহ মিলতাহি হে বাজারে মোহাম্মদ
রচনাকাল-২০০৫
পুরনো লিখা থেকে ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।