আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আইনস্টাইনের E=mC² কি তাহলে ভুল প্রমানিত হতে যাচ্ছে??!!!

আউলা মাথার বাউলা পোলা। কি মনে পড়ে আইনস্টাইনের সেই বিখ্যাত সমীকরণ E=mC²?? যা কিনা পদার্থ বিজ্ঞানের এ পর্যন্ত সবচেয়ে চমকপ্রদ তত্ত্ব ‘থিওরি অব স্পেশাল রিলেটিভিটি’ বা বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ফল ৷ যা আবিষ্কার হওয়ার পর থেকে যুগে যুগে বিজ্ঞানীদেরকে অবাক করছে। কিন্তু আজব ব্যাপার হল যে সাম্প্রতিক এক গবেষণা আইনস্টাইনের এই তত্তকে ভুল প্রমান করে দিতে যাচ্ছে। এবং এই কাজের নেপথ্যে আছেন সার্ন ল্যাবরেটরির গবেষকরা। যারা জানেন না তাদেরকে বলি, পৃথিবীতে পদার্থ বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড় ল্যাবরেটরির নাম হল সার্ন৷ এটা ইউরোপের সুইজারল্যান্ডের জেনেভা শহরের কাছে অবস্থিত৷ সেখানে কর্মরত পদার্থবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি তাদের করা একটি গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন৷ এতে তারা বলেন যে, নিউট্রিনো নামের একটি কণা নাকি আলোর চেয়েও দ্রুত গতিতে চলতে পারে।

অথচ আইনস্টাইন বলেছেন যে আলোর চেয়ে দ্রুতগতির আর কিছু থাকতে পারেনা৷ আজ থেকে প্রায় ১০৬ বছর আগে তিনি এই কথা বলেন যা কিনা পরে অনেক পরীক্ষার সন্মুখীন হয়৷ কিন্তু মজার ব্যাপার হল প্রতিবারই আইনস্টাইনের কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে৷ আর তাঁর এই তত্তই হলো বিশেষ আপেক্ষিকতা তত্ত্বের ভিত এবং এটার উপর নির্ভর করে পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যান্য অনেক তত্ত্ব দাঁড়িয়ে আছে। সুতরাং এই তত্তকে ভুল প্রমান করা গেলে পুরো দুনিয়ার পদার্থবিজ্ঞানীদের ভেতর এক মহা আলোড়ন সৃষ্টি হবে। সার্নের বিজ্ঞানীরা বলছেন তারা তিন বছর ধরে গবেষণা করেছেন৷ এসময় তারা জেনেভার সার্ন ল্যাবরেটরি থেকে ৭৩০ কিলোমিটার দূরে থাকা ইটালির রোমের কাছে মাটির নীচের গ্রান সাসো ল্যাবরেটরিতে নিউট্রিনো পাঠিয়েছেন৷ এসময় তারা দেখতে পান যে, আলোর চেয়েও দ্রুতগতিতে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে নিউট্রিনো৷ তারা বলেন সংখ্যার হিসেবে, নিউট্রিনো আলোর চেয়ে ৬০ ন্যানোসেকেন্ড বেশি দ্রুতগতির৷ অর্থাৎ এক সেকেন্ডকে যদি একশো কোটি ভাগ করা হয়, তাহলে তার ৬০ ভাগ যতটুকু সময় হবে ঠিক ততটুকু সময় আগে নিউট্রিনো রোমের ল্যাবরেটরিতে গিয়ে পৌঁছে৷ বিজ্ঞানীরা যখন গবেষনার শুরুতে নিউট্রিনোর এই ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত হন তখন তারা বিশ্বাস করতে পারেন নি৷ তাই তারা সম্ভাব্য সব ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করে বারবার একই পরীক্ষা করতে থাকেন এবং একই ফলাফল পান৷ ----------------------------------------- এই গবেষনার আশ্চর্য এই ফল নিয়ে বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং বলছেন সার্নের গবেষণার ফলাফল নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি৷ তিনি বলেন এর জন্য আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন৷ তবে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের কণা-পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক জেফ ফোরশাও এক মজার কথা বলেছেন। তিনি বলেন, "সার্নের গবেষণার ফলাফল যদি সত্যি হয় তার মানে হলো আজকের তথ্য পাঠিয়ে দেয়া যাবে অতীতে৷ অর্থাৎ তিনি বলতে চাইছেন আমরা কল্পবিজ্ঞানে হরহামেশাই যে ‘টাইম ট্রাভেল'এর কথা পড়ি সেটা সত্যি হবে৷ তবে সঙ্গে সঙ্গে তিনি এও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, তার মানে এই নয় আমরা খুব তাড়াতাড়িই টাইম মেশিন বানাতে যাচ্ছি৷" যাই হোক, সার্নের বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে জাপানি ও আমেরিকান বিজ্ঞানীদেরকে তাদের কাজ যাচাই করে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন। চূড়ান্ত ফলাফলের এবং বিজ্ঞানীদের ঘোষণা জানার জন্য আমাদেরকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

_________________________________________________ যে কণা সবাইকে অবাক করে দিলঃ হ্যাঁ এবার সেই নিউট্রিনো নিয়ে কিছু কথা বলবো। নিউট্রিনো হল এক ধরনের প্রাথমিক আন্ত পারমানবিক কণা। এটা ইলেকট্রনের মতই অতি ক্ষুদ্র জদিও এর ভর শুন্য নয়। তবে এটা তরিত নিরপেক্ষ। অর্থাৎ কোন ধরনের আধান বহন করেনা।

তাই এটা্ তরিত ক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা কখনও প্রভাবিত হয়না। ফলে এটা কোন বস্তুর ভেতর দিয়ে অনায়াসে যাতায়াত করতে পারে। এমনকি প্রতি মুহুর্তে আমাদের শরীরের ভেতর দিয়ে কোটি কোটি নিউট্রিনো যাওয়া আসা করছে যদিও আমরা টের পাইনা। নিউট্রিনো সাধারণত পরমাণু চুল্লিতে তৈরি হয়৷ এটা নানারকম তেজস্ক্রিয় বিভাজন, কস্মিক রশ্মি কর্তৃক পরমানু আঘাতপ্রাপ্ত হলেও তৈরি হয়। সুর্যকে নিউট্রিনো তৈরির এক বিশাল কারখানা বলা যাতে পারে।

সুর্য থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৬৫ বিলিয়ন নিউট্রিনো পৃথিবীর প্রতি বর্গ সেন্টিমিটার যায়গার ভেতর দিয়ে লম্বালম্বি ভাবে প্রবাহিত হয়। ১৯৩৪ সালে প্রথমবারের মতো নিউট্রিনোর অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। এবং এর পর থেকে এখন পর্যন্ত এটা শুধু বিজ্ঞানীদের অবাকই করে যাচ্ছে৷ এ কারণে অনেকে নিউট্রিনোকে ‘ভুতুড়ে কণা' বলে থাকে৷ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।