মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে গোলাম আযমের ৯০ বছরের কারাদণ্ড হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সন্তোষ প্রকাশ করলেও হতাশা প্রকাশ করেছে মহাজোটের শরিকেরা।
রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আজ দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করছি। যদিও গোটা জাতির প্রত্যাশা ছিল কুখ্যাত এই যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে, কিন্তু শারীরিকভাবে অসুস্থতার কারণে তাঁকে ৯০ বছর সাজা দেওয়া হয়েছে। ’
রায় নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে হানিফ বলেন, ‘শারীরিক অসুস্থতার কারণে একজন যুদ্ধাপরাধীর ক্ষেত্রে এ রকম সাজা দেয়ার নিদর্শন পৃথিবীতে আছে কি না, আমরা জানি না। এ রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ উচ্চতর আদালতে আপিল করবে কি না, জানি না।
এ ব্যাপারে আইনজীবীরা সিদ্ধান্ত নেবেন। ’
জামায়াতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ আঁতাত করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এ দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে, এটা মানুষ ভুলে গিয়েছিল। শেখ হাসিনা সংকল্প নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। এ বিচার নিয়ে অনেক প্রাণ ঝরেছে। তার পরও তিনি পিছপা হননি।
’ এ সরকারের আমলেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক বদিউজ্জামান ভূঁইয়া, তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক আফজাল হোসেন প্রমুখ।
এদিকে, মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে দেওয়া রায় প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি। রায় ঘোষণার পর আজ সোমবার এক বিবৃতিতে দলের সভাপতি রাশেদ খান মেনন ও সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘গোলাম আযমকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া কোনো যুক্তিতেই গ্রহণ করা যায় না। ’
বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, যুদ্ধাপরাধের সময় যে নারী-শিশু-বৃদ্ধনির্বিশেষে মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল, বয়স অথবা অন্য কিছুই এই অপরাধীরা তখন বিবেচনায় নেয়নি।
গোলাম আযম একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে প্রধান বিরোধিতাকারী ও পাকিস্তানিদের প্রধান সহযোগী হিসেবে রাজাকার-আলবদর-আলশামস বাহিনী গঠন করেছিলেন এবং তাঁরই নির্দেশে দেশব্যাপী হত্যাযজ্ঞ চলেছিল। এ ছাড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সংঘটিত নির্দিষ্ট গণহত্যার ক্ষেত্রেও তাঁর অপরাধ প্রমাণিত। সুতরাং তাঁকে কোনো বিবেচনায় রেহাই দেওয়া যায় না।
বিবৃতিতে নেতারা এই রায়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্টিতেও বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধসহ মৌলবাদ-সামপ্রদায়িকতার প্রশ্নে দ্বিধা-দোদুল্যমানতা ওই অপশক্তিকেই এ যাবত্ লাভবান করেছে এবং করবে।
’ বিবৃতিতে নেতারা এই রায়ের বিরুদ্ধে সরকারকে আপিল করার আহ্বান জানান।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শরীফ নুরুল আম্বিয়া প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘এই রায়ে আমরা পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি না। রায় দিতে গিয়ে গোলাম আযমের বয়সের হিসাব বিবেচনা করা উচিত হয়নি। আমরা পরামর্শ দেব, এ রায়ের বিরুদ্ধে যেন আপিল করা হয়। ’
গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক নূরুর রহমান সেলিম বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশিত রায় হয়নি।
এতে জনগণ হতাশ। বয়সের বিবেচনার এ রায় মানি না। ’ রায়ে আওয়ামী লীগের সন্তুষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা সন্তুষ্টির বিষয় নয়। আশা করি, যত দ্রুত সম্ভব সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে। ’।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।