মাত্র ৩ মাসের মাথায় আবার গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধিতে দেখা দিয়েছে নৈরাজ্য। সিএনজি অটোরিকশা চালুর পর এ পর্যন্ত ৫ বার ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। গত সোমবার সিএনজি অটোর ভাড়া সরকার কিলোমিটারে ১৪ পয়সা বাড়ালেও এর ‘সঠিক পরিমাণ’ নির্ধারণ করে দিচ্ছেন চালকরা। মিটার ক্যালিবারেশন ছাড়া বর্ধিতভাড়া আদায়ের সুযোগ নেই ফলে মিটারের বদলে মনগড়া ভাড়া নিচ্ছেন অটোচালকরা। গন্তব্যভেদে চলছে ৩-৪ গুণ বেশি ভাড়া আদায়।
ভাড়া নিয়ে অরাজকতা ঠেকাতে প্রতিবারের মতো এবারও মাত্র দুটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছে বিআরটিএ। সাড়ে ৫ লাখ যানবাহনের জন্য দুজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে অভিযান বরাবরই ব্যর্থ।
গতকাল নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করছেন সিএনজি অটোচালকরা। কিলোমিটারপ্রতি ১৪ পয়সা বাড়লেও আদায় করা হচ্ছে গন্তব্যভেদে বাড়তি ২০০-২৫০ টাকা। যেমন শেওড়াপাড়া থেকে বিমানবন্দরের ভাড়া সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ৩৫০-৪০০ টাকা।
আবার তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে মিরপুর ১১ নম্বরের ভাড়া ১০০-১২০ টাকার পরিবর্তে নেওয়া হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা। দূরের গন্তব্যে অতিরিক্ত ৪০০ টাকা নেওয়ারও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। মতিঝিল থেকে ফার্মগেটগামী যাত্রী জহির জানান, মিটারে যাওয়ার বিধানটি চালকরা ভুলে গেছেন। সর্বশেষ কবে মিটারে গেছেন তাও মনে নেই। এ প্রসঙ্গে চালকদের সেই খোঁড়া যুক্তি-মালিকের জমাবৃদ্ধি।
কিন্তু মালিকদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করার ব্যাপারে আগ্রহী নন কেউ। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির পরদিনই ভাড়া বাড়িয়েছে সরকার তবু কয়েকগুণ বেশি আদায় প্রসঙ্গে পরিবহনকর্মীদের পুরনো বক্তব্য, যন্ত্রাংশের মূল্যবৃদ্ধি। যাত্রীরা জানান, প্রতিবার ভাড়া বৃদ্ধির সুযোগে পরিবহনকর্মীদের ভাড়া-ডাকাতির সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
চলতিবছরের জানুয়ারিতে সিএনজিঅটোর ভাড়া বাড়ানো হয়। তখন ২ দফা সময় নিয়ে মিটারে ভাড়া প্রতিস্থাপন করা হয়।
গত ১৩ মে সিএনজির দাম বৃদ্ধির পর আবার বাড়ানো হয়েছে। এরপর গত ১৯ মে এবং সর্বশেষ গত ১৯ সেপ্টেম্বর বাস, মিনিবাস ও সিএনজি অটোরিকশার নতুন ভাড়া নির্ধারণ করে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। তবু মিটারে যেতে কোনওভাবেই রাজি নয় অটোরিকশা চালকরা।
এদিকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গতকাল জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে মৌখিকভাবে ৫ ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছে বিআরটিএ। তবে এখনও নতুন ভাড়ার প্রজ্ঞাপন না পাওয়ায় অভিযান শুরুর দিনক্ষণ নিশ্চিত করতে পারছে না সংস্থাটি।
এছাড়া কাল বৃহস্পতিবার হরতাল এবং পরের দুইদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় আগামী সপ্তাহ ছাড়া অভিযান শুরুর সুযোগ কম। অন্যদিকে রুটভেদে ভাড়ার চার্ট প্রণয়ন করতে সময় লাগবে আরও এক সপ্তাহ। নেই সিএনজি অটোর নতুন হার নির্ধারণ করে মিটার ক্যালিবারেশনের তৎপরতা। ফলে ভাড়া নিয়ে অরাজকতা থেকে নিস্তার পেতে যাত্রীদের জন্য আপাতত সুখবর নেই। ততদিনে সরকারি ভাড়ার প্রজ্ঞাপন হয়ে যাবে কাগুজে।
অগত্যা ভাড়াডাকাতি মেনে নিয়ে যাতায়াত করতে হবে যাত্রীদের।
পরিবহন নেতারা জানান, আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর দূরত্বভেদে নতুন ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হবে। এখনও আগের হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, গত রোববার সরকারের নতুন ভাড়া নির্ধারণী বৈঠকে ছিলেন না যাত্রীদের কোনও প্রতিনিধি। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান ও তার অনুগত পরিবহন নেতাদের উপস্থিতিতেই ১০ ভাগ ভাড়া বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত হয়।
ওই বৈঠকে অ্যাসোসিয়েশন অব বাস কোম্পানিজের সভাপতি রফিকুল হোসেন কাজল, ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এনায়েত উল্লাহও ছিলেন অনুপস্থিত।
জানা গেছে, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ও রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) রুটভেদে নতুন ভাড়ার চার্ট প্রণয়ন না করলেও গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাসে বাড়তি ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা হয়েছে। কিছু বাসের কাউন্টারে টিকিটে নতুন সিল লাগিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় চলছে। আর লোকাল বাসে চলছে মনগড়া ভাড়া। গাবতলী, মহাখালি ও সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়া দূরপাল্লার কিছু বাসে কিলোমিটারপ্রতি ৫ পয়সার পরিবর্তে বেড়েছে ৫০ পয়সা।
এছাড়া রাজধানীতে রয়েছে প্রায় ৪ হাজার ট্যাক্সিক্যাব। মিটারে না চললেও এসব ক্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কেউ নেই।
সুত্র:
Click This Link
আরেকটি পোস্ট:http://www.somewhereinblog.net/blog/paikpara/29420694
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।