"পসার বিকিয়ে চলি জগৎ ফুটপাতে, সন্ধ্যাকালে ফিরে আসি প্রিয়ার মালা হাতে"
সিএনজি চালকের সততা
সিএনজি অটোরিক্সায় যাদের নিয়মিত যাতায়াত করতে হয় তারা স্বভাবতই সিনএনজি চালকদের উপর মহা বিরক্ত। তাদের স্বৈরাচারী ও লাপরোয়া মনোভাব, মিটারে যেতে না চাওয়া এমন কি ১০/২০ টাকা বাড়িয়ে দেয়ার কথা বললেও যেতে না চাওয়া উল্টোদিকে অস্বাভাবিক হারে ভাড়া আদায় করায় যাত্রীরা যেন তাদের হাতে রীতিমত জিম্মি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন কি একবার এই সিএনজিতেই ছিনতাইকারীর হাতেও পড়েছি একবার। কিছু করার নেই। অপ্রতুল পাবলিক বাস, অস্বাভাবিক ভীড়, অনিয়মিত সিডিয়্যুল ও কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাস ধরার ঝক্কি পোহানের চাইতে ভাড়া যথেষ্ট বেশী হলেও সিএনজি বেছে নিতে হয়।
অগত্যা যাতায়াতের বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই সিএনজি আমার অন্যতম ভরষা।
সকাল ১১টার দিকে মোহারম্মদপুর থানায় যেতে হলো একজনের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেবার জন্য। আমার হাতে একটা হ্যান্ড ব্যাগ। সেই ব্যাগে আমার এসএলআর ক্যামেরা, এনার্জি সেভিং দুটো বাল্ব এবং আরো কিছু জরুরী কাগজপত্র। পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেটটা নিয়ে সেটাও ব্যাগে রেখে দিলাম।
অতঃপর লালমাটিয়ার “লীড কম্পিউটারর্স” থেকে আমার পুরোনো পিসি যা সার্ভিসিং করতে দিয়েছিলাম সেটা নিয়ে রিক্সায় করে মোহাম্মদপুর টাউন হলে এলাম একটা সি্এনজি করে বাসায় ফিরবো বলে। তখন প্রায় সাড়ে ১২টা বাজে। অনেকগুলো সিএনজি চালককে জিজ্ঞেস করলাম কেউ বনানী আসতে চায়না। যাও দু’একটা আসতে রাজী হলো তারা ৮০ টাকার ভাড়া (যা মিটারে ৬০ টাকার বেশী ওঠেনা) ১৫০ টাকা/১২০ টাকার নীচে কিছুতেই আসবেনা। আমিও নাছোরবান্দা অত টাকা ভাড়া দিয়ে কক্ষনো সিএনজিতে আসবোনা, আর যদি ঐ ভাড়াতে আসতেই হয় তবে ট্যাক্সি ক্যাবে আসবো, সিএনজিতে নয়।
এদিকে রোদের তাপ যেন বাড়ছেই। প্রচন্ড গরমে দাঁড়িয়ে থাকতেও অস্বস্তি লাগছে। তবুও ভাড়ার কাছে আমি আপোষ করতে রাজী নই। যাই হোক অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর একজন সিএনজি চালক ভাড়া জিজ্ঞেস করতেই ১০০ টাকা চাইলো। আমি ৮০ টাকা বলায় রাজী হলোনা।
বললো এর কমে কেউ যাবেনা। কথাটা সত্যি মনে হলো। আমি রাজী হয়ে গেলাম। সিএনজি চালককে যথেষ্ট ভদ্র মনে হলো। গতকাল দেশ থেকে ফিরেছে।
তার দেশেও গতকাল বৃষ্টি হয়েছে। এই গরমের ভেতরেও রাতে নাকি বেশ ঠান্ডা ছিল তার দেশের বাড়ীতে। একটু শীত শীত ভাব ছিল। অথচ আজ দেশের বাড়ী থেকে ফিরেই দেখছে ঢাকায় প্রচন্ড গরম। গাছ কেটে ফেলার কথাও বললো।
দেশের বাড়ীতে গাছের ছায়া আছে বলেই অনেক ঠান্ডা পরিবেশ। ঢাকার রাজপথ ছায়াবিহীন তাই এতো গরম। অবশেষে বাসায় পৌঁছুলাম। পিসিটা নিয়ে নেমে গেলাম বাসায় ব্যাগটা তার সিএনজিতেই রয়ে গেল সেটা আর আমার মনে ছিলনা। বাসায় ফেরার পরেও মনে হয়নি আমি ক্যামেরা ও জরুরী কাগজপত্রসহ ব্যাগ সিএনজিতে রেখেই চলে এসেছি।
বাসায় এসে আবারো গোছল করলাম। দুপুরের খাবার খেলাম। ঘরে বিশ্রাম নিচ্ছি এমন সময় বাসার দারোয়ান এসে জানালো এক সিএনজি চালক আমাকে নীচে ডাকছে। আমি কিছুটা অবাক হয়ে নীচে নামলাম। স্মরণ করলাম ওকে কি ভাড়া দেইনি! পরে মনে পড়লো আরে আমার ব্যাগ! নিশ্চয়ই আমার ব্যাগ ফেলে রেখে গেছি।
সিএনজি চালককে বললাম আমি মনে হয় নীল রঙের একটা ব্যাগ ফেলে গেছি। সে বললো দেখেনতো এই ব্যাগটা সম্ভবত আপনার। আমি দেখলাম আসলেই আমার ব্যাগ। পরে সে জানালো, আমাকে বনানী নামিয়ে ভাসির্টির এক মেয়ে প্যাসেঞ্জার নিয়ে আবার মোহাম্মাদপুর ফেরার সময় হঠাৎ সিটের পেছনে মেয়েটা ব্যাগটা দেখতে পায়। পরে চালককে বলে, মামা কে যেন একটা ব্যাগ ফেলে গেছে।
সিএনজি চালক বুঝতে পারে সেটা সম্ভবত আমারই ব্যাগ। সে মেয়েটাকে নামিয়ে আবার আমার বাসায় ফিরে আসে এবং ব্যাগটা আমার হাতে তুলে দেয়। আমি মনে মনে ভাবলাম সিএনজি চালকেরদের যতই গালমন্দ করিনা কেন এখনো ওদের মধ্যে কিছু ভাল মানুষ রয়ে গেছে। ওদের এই সততার মূল্যায়ন আমি কিভাবে করবো। আমি ১০০ টাকা ওর হাতে দিয়ে বললাম আমার ব্যাগটা পৌঁছে দেবার ভাড়া।
সে খুশী মনে টাকাটা নিল। আমিও আমার ব্যাগ ফেরৎ পেয়ে খুব খুশী হলাম। কারণ ব্যাগে ক্যামেরা ছাড়াও জরুরী কিছু কাগজ ছিল যা সত্যিই খুব দরকারি। নইলে সেই পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট নেবার জন্য আমাকে আবারো মোহাম্মদপুর থানায় দৌড়াতে হতো। ধন্যবাদ আপনাকে নাম না জানা সিএনজি চালক।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।