বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
সালাত আদায়ের পদ্ধতি- পর্ব ৪
ড. সায়িদ ইব্ন আলি ইব্ন ওহাফ আল-কাহতানি
অনুবাদ : সানাউল্লাহ নজির আহমদ
সম্পাদনা : ড. মো: আব্দুল কাদের
৩১. সালাম শেষে নিম্ন বর্ণিত আযকার ও দো‘আ পড়বে:
এক.
«أستغفر الله، أستغفر الله، أستغفر الله، اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»؛
সাওবান থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে তিনবার ইস্তেগফার করতেন এবং বলতেন[1]:
«اللهم أنت السلام...» الحديث.
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাম ফিরিয়ে নিম্নের দোয়া পরিমাণ বসতেন[2]:
«اللهم أنت السلام ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام»،
এর দ্বারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার উদ্দেশ্য হচ্ছে তিনি এ দো‘আ পরিমাণ কিবলামুখী থাকতেন, অতঃপর মানুষের দিকে চেহারা ফিরাতেন। যেমন সামুরা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত শেষ করে আমাদের দিকে তার চেহারা ঘুরাতেন”। [3]
দুই.
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير»
তিনবার। কারণ মুগিরা থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: মুয়াবিয়া মুগিরার নিকট এ মর্মে পত্র লেখেন যে, আমাকে এমন একটি হাদিস শোনান যা আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শোনেছেন, তিনি লিখেন: আমি তাকে সালাত শেষে বলতে শোনেছি:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»
তিনবার। তিনি আরো বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিরিক্ত প্রশ্ন করা, সম্পদ নষ্ট করা, মায়ের অবাধ্য হওয়া ও মেয়েদের জীবিত দাফন করা থেকে নিষেধ করতেন।
[4]
তিন.
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد [يحيي ويميت، وهو حي لا يموت، بيده الخير][5] وهو على كل شيء قدير، اللهم لا مانعَ لما أعطيتَ، ولا مُعطيَ لما منعتَ [ولا رادّ لما قضيتَ][6] ولا ينفع ذا الجدِّ منك الجدُّ»؛
মুগিরা ইব্ন শোবা মুয়াবিয়া ইব্ন আবু সফিয়ানের নিকট লেখেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সালাতের পর বলতেন[7]: «لا إله إلا الله وحده لا شريك له...»
চার.
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد وهو على كل شيء قدير، لا حول ولا قوة إلا بالله، لا إله إلا الله، ولا نعبد إلا إياه، له النعمة، وله الفضل، وله الثناء الحسن، لا إله إلا الله مخلصين له الدين ولو كره الكافرون»؛
আব্দুল্লাহ ইব্ন জুবায়েরের হাদিসে আছে, তিনি প্রত্যেক সালাতের সালাম শেষে এগুলো বলতেন, অতঃপর বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাধ্যমে প্রত্যেক সালাতের পর তাহলিল পড়তেন”। [8]
পাঁচ.
«سبحان الله، والحمد لله، والله أكبر (ثلاثًا وثلاثين) لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد، وهو على كل شيء قدير»؛
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩বার আল্লাহর তাসবিহ পড়ে, ৩৩বার আল্লাহর তাহমিদ পড়ে, ৩৩বার আল্লাহর তাকবির পড়ে, এ হচ্ছে ৯৯বার, এবং একশত বারে বলে:
لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير،
তার সকল পাপ ক্ষমা করে দেয়া হবে, যদিও সমুদ্রের ফেনা পরিমাণ হয়”। [9]
বিভিন্ন প্রকারের তাসবিহ, তাহমিদ ও তাকবির বর্ণিত আছে, মুসলিমদের উচিত সবগুলোই পড়া, এক সালাতের পর এটা পড়া, আবার অন্য সালাতের পর অন্যটা পড়া। কারণ এতে অনেক উপকার বিদ্যমান: সুন্নতের অনুসরণ, সুন্নত জীবিত করণ ও অন্তরের উপস্থিতি। [10]
নিম্নে কতক তাসবিহ, তাহমিদ ও তাকবিরের দেয়া হল:
প্রথম প্রকার: সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আল-হামদুলিল্লাহ ৩৩বার, আল্লাহু আকবার ৩৩বার, এবং শেষে বলবে:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك وله الحمد وهو على كل شيء قدير»
এভাবেই একশত পুরো হবে, যেমন পূর্বে আবু হুরায়রার হাদিসে রয়েছে।
[11]
দ্বিতীয় প্রকার: সুবহানাল্লাহ ৩৩বার, আল-হামদুলিল্লাহ ৩৩বার ও আল্লাহু আকবার ৩৪বার, এভাবে একশত পুরো হবে। কাব ইব্ন আজুরা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “সালাতের পর কিছু তাসবিহ আছে, যার পাঠকারীরা কখনো বঞ্চিত হয় না, ৩৩বার তাসবিহ, ৩৩বার তাহমিদ ও ৩৪বার তাকবির”। [12]
তৃতীয় প্রকার: “সুবহানাল্লাহ, আল-হামদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার ৩৩বার করে ৯৯বার”। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, গরিব মুহাজিরগণ রাসূলের নিকট এসে বলে: সম্পদশালীরা তো তাদের সম্পদের মাধ্যমে মহান মর্যদা ও জান্নাতের মালিক হয়ে যাচ্ছে, তিনি বললেন: “কিভাবে?” তারা বলল: আমরা যেরূপ সালাত আদায় করি, তারাও সেরূপ সালাত আদায় করে, আমরা যেরূপ সিয়াম পালন করি, তারাও সেরূপ সিয়াম পালন করে, তাদের অতিরিক্ত ফজিলত হচ্ছে তারা তাদের সম্পদ দ্বারা হজ করে, ওমরা করে, জিহাদ করে ও সদকা করে। তিনি বললেন: “আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেব, যার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের পূর্ববর্তীদের নাগাল পাবে ও পরবর্তীদের অতিক্রম করে যাবে, তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে না, তবে যারা তোমাদের ন্যায় আমল করে তারা ব্যতীত?” তারা বলল: অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল, তিনি বললেন: “তোমরা প্রত্যেক সালাতের পর ৩৩বার তাসবিহ, ৩৩বার তাকবির ও ৩৩বার তাহমিদ পড়বে”।
গরিব মুহাজিরগণ ফিরে এসে বলে, আমাদের সম্পদশালী ভাইয়েরা আমাদের আমল জেনে তারাও অনুরূপ আমল আরম্ভ করেছে, তিনি বললেন: “এটা আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে ইচ্ছা তিনি দান করেন”। [13]
চতুর্থ প্রকার: সুবহানাল্লাহ ১০বার, আল-হামদুলিল্লাহ ১০বার এবং আল্লাহু আকবার ১০বার। আব্দুল্লাহ ইব্ন আমর থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “দু’টি স্বভাব যে কোন মুসলিম আয়ত্ব করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে, যা খুবই সহজ কিন্তু তার উপর আমলকারীর সংখ্যা খুব কম”। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “পাঁচ ওয়াক্ত সালাত, প্রত্যেক সালাতের পর ১০বার তাসবিহ, ১০বার তাহমিদ ও ১০বার তাকবির বলবে। এভাবে মুখে ১৫০বার উচ্চারণ করা হবে, কিন্তু মিজানে তার ওজন হবে ১৫০০ বলার”।
[14] আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হাত দিয়ে গুনতে দেখি। “যখন তোমাদের কেউ শুতে বিছানায় যাবে ৩৩বার তাসবিহ পড়বে, ৩৩বার তাহমিদ পড়বে ও ৩৪বার তাকবির পড়বে, এভাবে মুখে ১০০বার হলেও মিজানে তার ওজন হবে ১০০০বার”। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের এমন কে আছে, যে দিনে দুই হাজার পাঁচ শত পাপ করে?” তাকে বলা হল: আমরা তাহলে এগুলো কেন পড়ব না? তিনি বললেন: “তোমাদের কেউ যখন সালাতে থাকে, তখন শয়তান আগমন করে বলে: এটা স্মরণ কর, ওটা স্মরণ কর, এবং ঘুমের সময় আসে অতঃপর তাকে ঘুম পারিয়ে দেয়”। ইব্ন মাজার শব্দ এরূপ: “শয়তান তাকে ঘুম পারানো চেষ্টা করে, অবশেষে সে ঘুমিয়ে যায়”। [15] আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে একটি মারফূ হাদিসে আছে: “প্রত্যেক সালাতের পর ১০বার তাসবিহ পড়বে, ১০বার তাহমিদ পড়বে ও ১০বার তাকবির বলবে”।
[16]
পঞ্চম প্রকার: ১১বার তাসবিহ, ১১বার তাহমিদ ও ১১বার তাকবির। সুহাইল তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন: “১১, ১১ ও ১১ সব মিলে ৩৩বার”। [17]
ষষ্ট প্রকার:
«سبحان الله، والحمد لله، ولا إله إلا الله،والله أكبر»
সবগুলো তাসবিহ ২৫বার বলবে। যেমন যায়েদ ইব্ন সাবেত ও ইব্ন ওমরের হাদিসে এসেছে। [18]
সপ্তম প্রকার:
আয়াতুল কুরসি পড়বে:
﴿ٱللَّهُ لَآ إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ ٱلۡحَيُّ ٱلۡقَيُّومُۚ لَا تَأۡخُذُهُۥ سِنَةٞ وَلَا نَوۡمٞۚ لَّهُۥ مَا فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَمَا فِي ٱلۡأَرۡضِۗ مَن ذَا ٱلَّذِي يَشۡفَعُ عِندَهُۥٓ إِلَّا بِإِذۡنِهِۦۚ يَعۡلَمُ مَا بَيۡنَ أَيۡدِيهِمۡ وَمَا خَلۡفَهُمۡۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيۡءٖ مِّنۡ عِلۡمِهِۦٓ إِلَّا بِمَا شَآءَۚ وَسِعَ كُرۡسِيُّهُ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضَۖ وَلَا ئَُودُهُۥ حِفۡظُهُمَاۚ وَهُوَ ٱلۡعَلِيُّ ٱلۡعَظِيمُ ٢٥٥﴾[البقرة:255 ]
আবু উমামা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি প্রত্যেক সালাতের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, মৃত্যু ব্যতীত জান্নাতে প্রবেশ করার আর কোন বাঁধা তার থাকবে না”।
তাবরানি এর সাথে সূরা ইখলাসকেও সংযুক্ত করেছেন। [19]
অষ্টম প্রকার: প্রত্যেক সালাতের পর সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়বে। কারণ, উকবা ইব্ন আমের বলেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে প্রত্যেক সালাতের পর এগুলো পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন”। [20]
নবম প্রকার: ফজর ও মাগরিবের সালাতের পর ১০বার করে পড়বে:
«لا إله إلا الله وحده لا شريك له، له الملك، وله الحمد، يحيي ويميت [بيده الخير][21] وهو على كل شيء قدير»
কারণ আবু জর, মু‘য়ায, আবু আইয়াশ জারকি, আবু আইয়ূব, আব্দুর রহমান ইব্ন গুনম আশ‘আরি, আবু দারদা, আবু উমামা ও উমারাহ ইব্ন শাবিব সাবায়ি থেকে অনুরূপ বর্ণিত আছে। [22] এদের সকলের হাদিসের সারমর্ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি মাগরিব অথবা ফজর সালাতের পর দশবার বলবে, আল্লাহ তার জন্য এমন প্রহরী প্রেরণ করবেন, যে তাকে শয়তান থেকে হিফাযত করবে সকাল পর্যন্ত এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
তার দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করা হবে, সে ঐ দিন সকল অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে, আল্লাহ তার জন্য দশটি নেকি লিখবেন ও তার দশটি পাপ মোচন করবেন, এগুলো তার জন্য দশজন মুমিন দাসির বরাবর হবে, আল্লাহর সাথে শিরক ব্যতীত অন্য কোন পাপ সে দিন তাকে ক্ষতিগ্রস্থ করতে পারবে না। সেই সবচেয়ে উত্তম আমলকারী হিসেবে গণ্য হবে, যদি কেউ তার চেয়ে উত্তম বাক্য না বলে।
দশম প্রকার: ফজর সালাত শেষে বলবে:
اللهم إني أسألك علمًا نافعًا، ورزقًا طيبًا، وعملاً مُتَقَبَّلاً
উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজর সালাতের সালাম শেষে উপরোক্ত দোয়া পড়তেন। [23]
এগারতম প্রকার: বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে সালাত আদায় করতাম, তখন তার ডান পাশে দাঁড়াতে পছন্দ করতাম, তিনি আমাদের দিকে মুখ করে বসতেন। তিনি বলেন: আমি তাকে বলতে শোনেছি[24]:
«ربِّ قني عذابك يوم تبعث عبادك أو تجمع عبادك».
বারোতম প্রকার: ফরয সালাত শেষে উচ্চ স্বরে আজকার পড়া সুন্নত।
কারণ ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন: “তাকবিরের মাধ্যমেই আমরা জানতাম রাসূলুল্লাহ সালাত শেষ করেছেন”। [25] বুখারি বর্ণনা করেন: “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে ফরয সালাত শেষে উচ্চ স্বরে যিকির করার নিয়ম ছিল”। [26] ইব্ন হাজার রহ. বলেন: “উচ্চ স্বরে জিকির এর উদ্দেশ্য তারা উচ্চ স্বরে তাকবির বলতেন, অর্থাৎ তারা তাসবিহ ও তাহমিদের পূর্বে তাকবির বলতেন”। [27] এ ব্যাখ্যাকে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস আরো স্পষ্ট করে যে, আবু সালেহ বলেছেন: “আল্লাহু আকবার, সুবহানাল্লাহ ও আল-হামদুলিল্লাহ সবগুলোই ৩৩বার করে পড়বে,[28] তিনি তাকবির দ্বারা আরম্ভ করেছেন।
৩২. সুনানে রাওয়াতিবগুলো পড়বে।
কারণ, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে: “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও ফজরের পূর্বে দু’রাকাত কখনো ত্যাগ করতেন না”। [29] উম্মুল মুমিনিন উম্মে হাবিবা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি: “যে ব্যক্তি দিন ও রাতে বার রাকাত সালাত পড়বে, এর পরিবর্তে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন”। অপর বর্ণনায় আছে: “এমন কোন মুসলিম বান্দা নেই যে প্রতি দিন বার রাকাত নফল সালাত আদায় করে, কিন্তু আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করবেন না, অথবা তার জন্য জান্নাতে ঘর নির্মাণ করা হবে না”। [30] এর ব্যাখ্যায় ইমাম তিরমিযি বাড়িয়ে বলেন: “চার রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’রাকাত জোহরের পর, দু’রাকাত মাগরিবের পর, দু’রাকাত এশার পর ও দু’রাকাত ফজরের পূর্বে”। [31]
আব্দুল্লাহ ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দশ রাকাত মুখাস্ত করেছি: দু’রাকাত জোহরের পূর্বে ও দু’রাকাত জোহরের পর, মাগরিবের পর দু’রাকাত তার ঘরে, এশার পর দু’রাকাত তার ঘরে এবং ফজরের পূর্বে দু’রাকাত”।
অপর বর্ণনায় আছে: “জুমার পর দু’রাকাত তার ঘরে”। [32]
অতএব, সুনানে রাওয়াতেব দশ রাকাত, যেমন ইব্ন ওমর বলেছেন, অথবা বার রাকাত যেমন উম্মে হাবিবা ও আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেন। আমাদের শায়খ আল্লামা ইব্ন বাযকে বলতে শোনেছি: “যারা ইব্ন ওমরের হাদিস গ্রহণ করেছে, তারা বলে সুন্নত দশ রাকাত, আর যারা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদিস গ্রহণ করে, তারা বলে সুন্নত বারো রাকাত। ইমাম তিরমিযির ব্যাখ্যা আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিসকে শক্তিশালী করে, আর উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত হাদিস এসব সুন্নতের ফযিলত বর্ণনা করে। হয়তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বার রাকাত পড়েছেন, যেমন আয়েশা ও উম্মে হাবিবার হাদিসে আছে, কখনো দশ রাকাত পড়েছেন, যেমন ইব্ন ওমর থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে।
যখন আগ্রহ ও স্পৃহা থাকে বারো রাকাত পড়বে, আর যখন ব্যস্ততা থাকে দশ রাকাত পড়বে। তবে সবগুলো সুন্নতে রাওয়াতেব, হ্যাঁ পূর্ণতা হচ্ছে আয়েশা ও উম্মে হাবিবার হাদিস মোতাবিক বারো রাকাত পড়া”। [33]
যদি কোন মুসলিম জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও জোহরের পর চার রাকাত পড়ার ইচ্ছা করে আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দেবেন। যেমন উম্মে হাবিবা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শোনেছি, তিনি বলেন: “যে ব্যক্তি জোহরের পূর্বে চার রাকাত ও জোহরের পর চার রাকাত নিয়মিত পড়বে, আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনের জন্য হারাম করে দেবেন”। [34]
যদি কোন মুসলিম আসরের পূর্বে চার রাকাত পড়ার ইচ্ছা করে, আল্লাহ তার উপর রহম নাজিল করবেন।
ইব্ন ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«رحم الله امرءًا صلى أربعًا قبل العصر»
“আল্লাহ সে ব্যক্তির উপর রহম করুন, যে আসরের পূর্বে চার রাকাত সালাত আদায় করল”। [35]
সমাপ্ত
--------------------------------------------------------------------------------
[1] মুসলিম: (৫৯১)
[2] মুসলিম: (৫৯২)
[3] বুখারি: (৮৪৫)
[4] বুখারি: (৬৪৭৩) মুসলিম: (৫৯৩)
[5] বন্ধনির মাঝখানের অংশ মুজামে তাবরানি: (২০/৩৯২), হাদিস নং (৯২৬) থেকে নেয়া,
[6] বন্ধনির মাঝখানের অংশ মুসনাদে আবদ ইব্ন হুমাইদ: (১৫০-১৫১) হাদিস নং: (৩৯১) থেকে নেয়া।
[7] বুখারি: (৬৩৩০), মুসলিম: (৫৬৩)
[8] মুসলিম: (৫৯৪)
[9] মুসলিম: (৫৯৭)
[10] দেখুন: শারহুল মুমতি: (৩/৩৭), ফতোয়া শায়খুল ইসলাম ইব্ন তাইমিয়া: (২২/৩৫-৩৭)
[11] মুসলিম: (৫৯৭)
[12] মুসলিম: (৫৯৬)
[13] বুখারি: (৮৪৩), হাদিস নং: (৫৯৫), মুসলিম: (৫৯৫)
[14] এটা এ কারণে যে, প্রত্যেক নেকি দশগুন বৃদ্ধি পাবে।
[15] নাসায়ি: (১৩৪৮), ইব্ন মাজাহ: (৯২৬), আবু দাউদ: (৫০৬৫), তিরমিযি: (৩৪১০), আহমদ: (২/৫০২), সহিহ সুনানে নাসায়ি: (১/২৯০), সহিহ ইব্ন মাজাহ: (১/১৫২), হাকেম হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমাম জাহাবি তার সমর্থন করেছেন, হাকেম: (১/২৫৫)
[16] বুখারি: (৬৩২৯)
[17] মুসলিম: ৪৩-(৫৯৫)
[18] নাসায়ি: (১৩৫০) ও (১৩৫১), তিরমিজি: (৩৪১৩), ইব্ন খুজাইমাহ: (৫৭২), আহমদ: (৫/১৮৪), দারামি: (১/৩১২), তাবরানি, হাদিস নং: (৪৮৯৮), ইব্ন হিব্বান, হাদিস নং: (২০১৭), হাকেম: (১/২৫৩), তিনি হাদিসটি সহিহ বলেছেন, ইমান জাহাবি তার সমর্থন করেছেন।
[19] নাসায়ি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১০০), ইব্ন সুন্নি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলা: (১২১), তাবরানি ফিল কাবির: (১/১১৪), হাদিস নং: (৭৫৩২)
[20] আবু দাউদ: (১৫২৩), নাসায়ি: (১৩৩৬), তিরমিযি: (২৯০৩), সহিহ সুনানে আবু দাউদ: (১/২৮৪), সহিহ সুনানে তিরমিযি: (২/৮)
[21] বন্ধনির অংশের জন্য দেখুন কাশফুল আসতার: (৪/২৫), হাদিস নং: (৩১০৬)
[22] দেখুন: আবু যর থেকে বর্ণিত হাদিস, তিরমিযি: (৩৪৭৪), তিনি হাদিসটি হাসান, গরিব ও সহিহ বলেছেন।
আহমদ: (৫/৪২০)। দেখুন: আব্দুর রহমান ইব্ন গুনম আশআরি থেকে বর্ণিত হাদিস, আহমদ: (৪/২২৭), দেখুন: আবু আইয়ূব থেকে বর্ণিত হাদিস, আহমদ: (৫/৪১৪), সহিহ ইব্ন হিব্বান: (২০২৩), দেখুন: আবু আইয়াশ থেকে বর্ণিত হাদিস, আহমদ: (৪/৬০), আবু দাউদ: (৫০৭৭), ইব্ন মাজাহ: (৩৮৬৭), দেখুন: মুয়াজ থেকে বর্ণিত হাদিস, নাসায়ি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১২৬), ইব্ন সুন্নি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলাহ: (১৩৯), তাবরানি: (৭০৫), দেখুন: উমারা ইব্ন শাবিব থেকে বর্ণিত হাদিস, নাসায়ি ফি আমালিল ইয়াওম ও লাইলা: (৫৭৭), তিরমিজি: (৩৫৩৪), দেখুন: আবু উমামাহ থেকে বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে মুনজিরি বলেন, “তাবরানি তার আওসাত গ্রন্থে সুন্দর সনদে এটা বর্ণনা করেছেন”, তারগিব ও তারহিব: (১/৩৭৫) হায়সামি বলেন: (এ হাদিসটি তাবরানি তার আওসাত ও কাবির গ্রন্থে বর্ণনা করেন, আওসাত গ্রন্থের বর্ণনাকারী সকলেই নির্ভরযোগ্য”। মাজমাউ‘য যাওয়ায়েদ : (১০/১১১), দেখুন: আবু দারদা থেকে বর্ণিত হাদিস, হায়সামি তা মাজমাউ‘য যাওয়ায়েদ গ্রন্থে উল্লেখ করে বলেন, এ হাদিস তাবরানি তার কাবির ও আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (১০/১১১)
[23] ইব্ন মাজাহ: (৯২৫), আহমদ: (৬/৩০৫), সহিহ সুনানে ইব্ন মাজাহ: (১/১৫২), দেখুন: মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (১০/১১১)
[24] মুসলিম: (৭০৯)
[25] বুখারি: (৮৪২), মুসলিম: (৫৮৩)
[26] বুখারি: (৮৪১), মুসলিম: (৫৮৩)
[27] ফাতহুল বারি: (২/৩২৬)
[28] মুসলিম: (৫৯৫)
[29] বুখারি: (১১৮২)
[30] মুসলিম: (৭২৮)
[31] তিরমিযি: (৪১৫)
[32] বুখারি: (১১৮), মুসলিম: (৭২৯)
[33] বুলুগুল মারামের (৩৭৪) নং হাদিসের ব্যাখ্যার সময় তার মুখে এ কথাগুলো আমি শ্রবণ করি।
[34] আহমদ: (৬/৩২৬), আবু দাউদ: (১২৬৯), তিরমিজি: (৪২৭), নাসায়ি: (১৮১৪), ইব্ন মাজাহ: (১১৬০), সহিহ সুনানে ইব্ন মাজাহ: (১/১৯১)।
আমি আল্লামা ইব্ন বাজ রহ. কে বুলুগুল মারামের (৩৮১) নং হাদিসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদিসের সনদ খুব সুন্দর, তবে ইব্ন ওমর ও আয়েশার হাদিসে যা রয়েছে, তার উপর রাসূলের নিয়মিত আমল ছিল”। আমি বলি: আমি তাকে জীবনের শেষ বয়সেও দেখেছি, তিনি বসে বসে জোহরের আগে চার রাকাত ও জোহরের পরে চার রাকাত পড়তেন, আল্লাহ তার উপর রহম করুন।
[35] আহমাদ: (২/১১৭), আবু দাউদ: (১২৭১), তিরমিযি: (৪৩০), সহিহ ইব্ন খুজাইমা: (১১৯৩), সহিহ সুনানে আবু দাউদ: (১/২৩৭)। আমি আল্লাহ ইব্ন বাজ রহ. কে বলতে বুলুগুল মারামের (৩৮২) নং হাদিসের ব্যাখ্যায় বলতে শোনেছি: “এ হাদিসের সনদ গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই, এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হয় যে, আসরের পূর্বে চার রাকাত পড়া বৈধ ও সুন্নত, তবে এটা সুন্নতে রাতেব নয়, কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এগুলো এটা নিয়মতি পড়েননি। আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসরের পূর্বে দু’রাকাত পড়তেন, এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আসরের পূর্বে দু’রাকাত অথবা চার রাকাত পড়া মুসলিমদের জন্য মুস্তাহাব”।
সমাপ্ত
সালাত আদায়ের পদ্ধতি- পর্ব ৩
সালাত আদায়ের পদ্ধতি- পর্ব ২
সালাত আদায়ের পদ্ধতি - পর্ব ১ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।